নবীজী(সঃ) এর ইসলাম , খলিফাহ্ দের শাসন এবং শিয়া ও সুন্নী ধারার
বিকাশের প্রাথমিক কাহিনী প্রসঙ্গে
ইসলামে শিয়া ও সুন্নি ধারা বিকাশের কাহিনি : ( ১ম পর্বের শেষ অংশ )
সুন্নি ইসলাম :
ইসলামের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যারা পয়গম্বর মুহাম্মদের ( সঃ ) স্বভাব ও ধর্মীয় অনুশীলনের রীতি বা সুন্নাহ্ মেনে চলেন তারাই সুন্নি মুসলিম বা সুন্নি নামে পরিচিত ৷ সুন্নিরা শিয়াদরকেও মুসলিম হিসেবে মানে কিন্তু মুসলিম শাসকদের পয়গম্বর মুহাম্মদ ( সঃ) ও তাঁর মেয়ের জামাই আলী ইবনে আবি তালিবের বংশধরদের থেকেই যে মুসলিম সম্প্রদায়ের শাসক নিযুক্ত হতে হবে সুন্নিরা সেটা বিশ্বাস করে না ৷ যেমন শিয়ারা বিশ্বাস করে ৷
( সুন্নিদের শাখা অধিক
তবে শিয়াদের শাখাও কম নয় ৷ এ ছাড়াও আরো কছি ধারা -উপধারা বিদ্যমান আছে এখন ৷ তাই শিয়া ও সুন্নিদের ছাড়াও অন্যান্য ধারা -উপধারা নিয়ে তথ্যপূর্ণ একটি লেখা যুক্ত করা হল মূল লেখার কোনো পরিবর্তন ছাড়াই , সৌজন্য শাহিনুর রহমান শাহিন ও আমার ব্লগ ডট কম )
( ইসলামের বৃহত্তম শাখা সুন্নি।
এদের মতে, মেয়েদের বিয়ের সময় অভিভাবককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে, দাড়ি কেটে ফেলা জায়েজ, দাবা খেলা না জায়েজ ইত্যাদি।
তিন, মালেকি উপশাখা; উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা, আরব আমিরাত, কুয়েত এবং সৌদি আরব ও মিসরের একাংশের মুসলমানগণ মালেকি মাযহাব মেনে চলে। এরাও অন্য সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো করে ধর্ম-কর্ম পালন করে।
এদের মতে, একজনের হজ্জ অন্যজন প্রক্সি দিতে পারবে না, দীর্ঘশ্বাস ফেললে নামাজ ভেঙ্গে যাবে, কাকের মাংস খাওয়া জায়েজ, মিসওয়াক করা জায়েজ নয়, শুক্রবারে রোজা রাখতে হবে ইত্যাদি।
চার,
এদের মতে, ওজু নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ হলে বা মাংস খেলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, সামান্য রক্ত বের হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, নগদ টাকায় যাকাত দেয়া যাবে না, এজিদ ছিল ন্যায়ের পক্ষে ও ইমাম হোসাইন ছিল অন্যায়ের পক্ষে ইত্যাদি।
হানাফি-শাফেয়ি-মালেকি ও হাম্বলি হচ্ছে ইসলামের বিখ্যাত চার মাযহাব।
মুহাম্মদের জন্মদিন পালন করা, তার বিষয়ে কোন স্মরণসভার আয়োজন করা কিংবা তার কবর জেয়ারত করাকে এরা শিরক ও হারাম মনে করে। মক্কা ও মদিনার সকল সাহাবার কবর ভেঙ্গে-চুরে এরা সমতল করে দিয়েছে। অতিরিক্ত প্রতিটি ধর্মীয় কাজকেই এরা ভাবে বিদ'আত। তারা নবীগণকেও নিষ্পাপ বলে মনে করে না।
ছয়,
ইসলামের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যারা পয়গম্বর মুহাম্মদের ( সঃ ) স্বভাব ও ধর্মীয় অনুশীলনের রীতি বা সুন্নাহ্ মেনে চলেন তারাই সুন্নি মুসলিম বা সুন্নি নামে পরিচিত ৷ সুন্নিরা শিয়াদরকেও মুসলিম হিসেবে মানে কিন্তু মুসলিম শাসকদের পয়গম্বর মুহাম্মদ ( সঃ) ও তাঁর মেয়ের জামাই আলী ইবনে আবি তালিবের বংশধরদের থেকেই যে মুসলিম সম্প্রদায়ের শাসক নিযুক্ত হতে হবে সুন্নিরা সেটা বিশ্বাস করে না ৷ যেমন শিয়ারা বিশ্বাস করে ৷
( সুন্নিদের শাখা অধিক
তবে শিয়াদের শাখাও কম নয় ৷ এ ছাড়াও আরো কছি ধারা -উপধারা বিদ্যমান আছে এখন ৷ তাই শিয়া ও সুন্নিদের ছাড়াও অন্যান্য ধারা -উপধারা নিয়ে তথ্যপূর্ণ একটি লেখা যুক্ত করা হল মূল লেখার কোনো পরিবর্তন ছাড়াই , সৌজন্য শাহিনুর রহমান শাহিন ও আমার ব্লগ ডট কম )
( ইসলামের বৃহত্তম শাখা সুন্নি।
এর অসংখ্য উপশাখা রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান উপশাখাসমূহ হলো-
এক,
এক,
হানাফি উপশাখা;
এদেরকে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়। এদের ধর্ম পালনের রীতি-নীতি সম্পর্কে আমাদের সবার কমবেশী ধারনা রয়েছে। তাই সেগুলো আলাদা করে উল্লেখ করছি না। এখন এরা মোটামুটি বেরেলভি, দেওবন্দি, ইলিয়াসি জামাত, মওদুদি জামাত প্রভৃতি আকিদায় বিভক্ত হয়ে গেছে।
বেরেলভি বা বালাকোটি সুন্নিগণ
বেরেলভি বা বালাকোটি সুন্নিগণ
শুরুতে ওহাবি মতবাদের অনুসারি হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ইসলামি ব্যক্তিত্বকে, যেমন মাওলানা সৈয়দ আহমদ বেরেলভি, মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী প্রভৃতি মৌলবিকে আল্লাহর মতো আলিমুল গায়েব বা অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানী বলে বিবেচনা করে এবং এদেরই আদেশ-নির্দেশের অন্ধ অনুকরণ করতে থাকে। এরা বিখ্যাত ‘দারুল হারব’ তত্ত্বের স্রষ্টা। দেওবন্দিগণ ও আহলে হাদিসগণ এদেরকে কাফের হিশেবে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি এদের সাথে মেলামেশা করা কিংবা সৌহার্দ্র প্রকাশের বিরুদ্ধেও ফতোয়া জারি করেছে।
মাওলানা কাসেম নানতুবি আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় ভারতের উত্তর প্রদেশে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসা থেকে যে ইসলামের জন্ম হয়, তা ‘দেওবন্দি ইসলাম’ নামে পরিচিত। আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্বওমি মাদ্রাসা এদের নেতৃত্ব মেনে চলে। আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ মূলত এদের হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে।
ইলিয়াসি তাবলিগ জামাত
মাওলানা কাসেম নানতুবি আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় ভারতের উত্তর প্রদেশে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসা থেকে যে ইসলামের জন্ম হয়, তা ‘দেওবন্দি ইসলাম’ নামে পরিচিত। আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্বওমি মাদ্রাসা এদের নেতৃত্ব মেনে চলে। আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ মূলত এদের হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে।
ইলিয়াসি তাবলিগ জামাত
চিল্লার দ্বারা প্রচারকেই ইসলামের মূল লক্ষ্য বলে মনে করে। এরা ছয় উশুলে আস্থা রাখে এবং বলে যে, ভালো করে দোয়া-দরুদ পাঠ, নামাজ-রোজা পালন ও বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেয়াই মুসলমানদের ধর্মীয় কাজ।
মওদুদি জামাত
মওদুদি জামাত
রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা দখলকে ভাবে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের দেশের জামাতে ইসলামির কর্মকাণ্ড হচ্ছে মওদুদি জামাতের চিন্তা-ধারার স্পষ্ট প্রতিফলন। এরা নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব-যাকাতকে সাধারন ট্রেনিং কোর্স মনে করে, যা মূলত ঈমানকে মজবুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সহায়ক হয়। অন্যান্য সুন্নীগণ এদের পেছনে নামাজ আদায় করাকে মাকরুহে তাহরিমি বলে ঘোষণা দিয়েছে।
বেরেলভি-দেওবন্দি-ইলিয়াসি জামাত ও মওদুদি জামাত
বেরেলভি-দেওবন্দি-ইলিয়াসি জামাত ও মওদুদি জামাত
প্রমুখ ইসলামের একই শাখার একই উপশাখার অন্তভূর্ক্ত। কিন্তু এরা কেউ কাউকে সঠিক মনে করে না, সহ্য করতে পারে না। আমি মওদুদি জামাত সংশ্লিষ্ট ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিলাম। আমি দেখেছি, ইলিয়াসি তাবলিগ জামাতকে এরা ঠিক কতোটা ঘৃণা করে।
দুই,
দুই,
শাফেয়ি উপশাখা;
মূলত ফিলিস্তিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জর্দান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, কুর্দিস্তানের অধিকাংশ এবং সৌদি আরব, ইয়েমেন ও মিসরের কিছু অংশের মুসলমানগণ ইমাম শাফেয়ি'র অনুসারি।
এরা হানাফিদের থেকে ভিন্ন ভাবে নামাজ-রোজা পালন করে থাকে। শাফেয়ি ও হানাফি মাযহাবের রক্তাক্ত দ্বন্দ্বে ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণ।
এদের মতে, মেয়েদের বিয়ের সময় অভিভাবককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে, দাড়ি কেটে ফেলা জায়েজ, দাবা খেলা না জায়েজ ইত্যাদি।
তিন, মালেকি উপশাখা; উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা, আরব আমিরাত, কুয়েত এবং সৌদি আরব ও মিসরের একাংশের মুসলমানগণ মালেকি মাযহাব মেনে চলে। এরাও অন্য সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো করে ধর্ম-কর্ম পালন করে।
এদের মতে, একজনের হজ্জ অন্যজন প্রক্সি দিতে পারবে না, দীর্ঘশ্বাস ফেললে নামাজ ভেঙ্গে যাবে, কাকের মাংস খাওয়া জায়েজ, মিসওয়াক করা জায়েজ নয়, শুক্রবারে রোজা রাখতে হবে ইত্যাদি।
চার,
হাম্বলি উপশাখা;
সৌদি আরবের অধিকাংশ মানুষ এই মাযহাবের অনুসারি। সৌদি আরব ছাড়াও কাতারের অধিকাংশ এবং সিরিয়া ও ইরাকের কিছু মুসলমান এই মাযহাব অনুসরন করে থাকে। অন্যদের মতো এদেরও নিজস্ব নিয়ম রয়েছে।
এদের মতে, ওজু নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ হলে বা মাংস খেলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, সামান্য রক্ত বের হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, নগদ টাকায় যাকাত দেয়া যাবে না, এজিদ ছিল ন্যায়ের পক্ষে ও ইমাম হোসাইন ছিল অন্যায়ের পক্ষে ইত্যাদি।
হানাফি-শাফেয়ি-মালেকি ও হাম্বলি হচ্ছে ইসলামের বিখ্যাত চার মাযহাব।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এরা মুহাম্মদকে পাশ কাটিয়ে তার সাহাবাদের উক্তি ও কাজ-কর্মকে শরয়ি দলিল হিশেবে গ্রহণ করে। এতদসত্ত্বেও এদের মধ্যে প্রচুর দ্বন্দ্ব বিরাজমান। এদের কেউ একটি বিষয়কে ফরজ বা আবশ্যক বলে মনে করলে অন্যজন মনে করে মুস্তাহাব এবং অন্য আরেকজন মনে করে হারাম! এধরনের মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ দ্বন্দ্বের ফলে অতীতে প্রত্যেকের জন্য একই স্থানে আলাদা আলাদা মসজিদ নির্মান করতে হয়েছিল। এমনকি, এক মাযহাব অন্য মাযহাবে বিয়ে করা হারাম বলে ফতোয়া জারি করেছিল। এখন প্রত্যেককে সমানভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে দ্বন্দ্ব কিছুটা কমে গেছে।
পাঁচ,
পাঁচ,
ওহাবি বা সালাফি উপশাখা;
সৌদি রাজপরিবারের সদস্যগণ এসব মতবাদ পালন করে থাকে। এরা কোরান-হাদিস ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রথম দিকের আলেমগণ তথা সাহাবি, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের অনুসরন করে। এরা সুফিবাদের সম্পূর্ণ বিরোধী। এরা আল্লাহকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সহকারে সশরীরে অস্তিত্বশীল মনে করে, যিনি আকাশের অনেক উপরে অবস্থান করছেন।
মুহাম্মদের জন্মদিন পালন করা, তার বিষয়ে কোন স্মরণসভার আয়োজন করা কিংবা তার কবর জেয়ারত করাকে এরা শিরক ও হারাম মনে করে। মক্কা ও মদিনার সকল সাহাবার কবর ভেঙ্গে-চুরে এরা সমতল করে দিয়েছে। অতিরিক্ত প্রতিটি ধর্মীয় কাজকেই এরা ভাবে বিদ'আত। তারা নবীগণকেও নিষ্পাপ বলে মনে করে না।
ছয়,
আহলে হাদিস উপশাখা;
এই মতবাদের জন্ম ভারতীয় উপমহাদেশে। এরা সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন মাযহাব অনুসরন করে না। মাযহাব অনুসরন করাকে এরা শিরক বা অমার্জনীয় অপরাধ হিশেবে চিহ্নিত করে থাকে। অর্থাৎ, এদের চোখে হানাফি-মালেকি-শাফেয়ি-হাম্বলিগণ মুশরিক। এরা মনে করে, যারা নামাজ পড়ে না, তারা কাফির এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। দেওবন্দি ও বেরেলভি আলেমগণ এদেরকে কাফের ঘোষণা করেছে।
সাত,
সাত,
জাহিরি উপশাখা;
সুদান, মরক্কো ও পাকিস্তানের বেশকিছু মানুষ এই মাযহাব অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম করে। আগে অনেক মানুষ এর অনুসারী ছিল। এখন দিনে দিনে এটি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এদের সাথে আহলে হাদিস মতাদর্শের অনেক মিল পরিলক্ষিত হয়।
সৌজন্য; আমার ব্লগ.কম এবং ঐ লেখাটির লেখক শাহিনুর রহমান শাহিন )
শিয়া ইসলাম :
ইসলামের সংখ্যালঘু গোষ্ঠি যারা সুন্নি থেকে ধর্মতত্তীয় ভাবে ভিন্ন , কিন্তু আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করে যে পয়গম্বর মুহাম্মদের ( সঃ ) একমাত্র বংশধরদেরই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতূত্ব দেয়া উচিত ৷ এই চিন্তাধারার অনুসারীদেরকে শিয়া বা শিয়ামুসলিম নামে অভিহিত করা হয় ৷ শিয়ারা বিশ্বাস করে যে খলিফাদের প্রথম নির্বাচনে পয়গম্বরের নিকট পুরুষ আত্মীয় আলীকে নির্বাচন করা উচিত ছিল ৷ শিয়ারা বেশ কয়েকজন ( ৬জন বা ১২ জন ) ঈমামকে মানে , যারা আলী বা ফাতেমার প্রত্যক্ষ পুরুষ বংশধর বা তাদের মনোনিত কোনো ইমাম ৷ তবে সুন্নি ও শিয়াদের মত পার্থক্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক , ধর্মীয় বিশ্বাসে কোনো পার্থক্য নাই ৷
ইসলামের সংখ্যালঘু গোষ্ঠি যারা সুন্নি থেকে ধর্মতত্তীয় ভাবে ভিন্ন , কিন্তু আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করে যে পয়গম্বর মুহাম্মদের ( সঃ ) একমাত্র বংশধরদেরই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতূত্ব দেয়া উচিত ৷ এই চিন্তাধারার অনুসারীদেরকে শিয়া বা শিয়ামুসলিম নামে অভিহিত করা হয় ৷ শিয়ারা বিশ্বাস করে যে খলিফাদের প্রথম নির্বাচনে পয়গম্বরের নিকট পুরুষ আত্মীয় আলীকে নির্বাচন করা উচিত ছিল ৷ শিয়ারা বেশ কয়েকজন ( ৬জন বা ১২ জন ) ঈমামকে মানে , যারা আলী বা ফাতেমার প্রত্যক্ষ পুরুষ বংশধর বা তাদের মনোনিত কোনো ইমাম ৷ তবে সুন্নি ও শিয়াদের মত পার্থক্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক , ধর্মীয় বিশ্বাসে কোনো পার্থক্য নাই ৷
(
( ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা শিয়া।
শিয়াদের মধ্যেও রয়েছে অনেকগুলো উপশাখা। চিন্তা-ভাবনা ও কর্মপদ্ধতির দিক থেকে এই উপশাখাগুলোও পরস্পর থেকে আলাদা।
এক,
ইশনা আশারিয়া বা জাফরিয়া উপশাখা;
ইরাক, ইরান, আজারবাইজান, লেবানন ও বাহরাইনের অধিকাংশ মানুষ এর অনুসারি। এছাড়া পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কুয়েত ও আলবেনিয়ার অনেক মানুষ ইশনা আশারিয়া শিয়া।
এদের ধারনা, মুহম্মদের মৃত্যুর পর হযরত আলী হচ্ছেন মুসলমানদের নেতা বা ইমাম। সাহাবাগণ হযরত আলীকে ইমাম না বানিয়ে আবুবকর-ওমর-উসমানকে খলিফা বানিয়েছে, যা আল্লাহর আদেশের সরাসরি লঙ্ঘন। তারা অধিকাংশ সাহাবিকে মুনাফিক মনে করে এবং খুতবায় নিয়মিত গালিগালাজ করে। তারা বিশ্বাস করে বারো ইমামতে, যা মুহম্মদ থেকে শুরু করে আলীর বংশধর ইমাম মাহদির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই ইমামগণের মর্যাদা নবী-রাসুলদের চেয়ে বেশী।
ইশনা আশারিয়াদের কিছু কর্মকাণ্ড অদ্ভূত। এরা মুতা বিবাহ বা পতিতাবৃত্তিকে জায়েজ মনে করে, তিনবারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, হজ্জ্বের চেয়ে হযরত আলীর মাজার দর্শনকে অধিক পূণ্যের বলে বিবেচনা করে। এদের নিজস্ব হাদিস আছে। বোখারি, মুসলিম প্রমুখ হাদিসগ্রন্থে এরা আস্থা রাখে না।
দুই,
জাইদিয়া উপশাখা;
ইয়েমেনের অর্ধেক মানুষ এই মতাদর্শের শিয়া। বহুল আলোচিত হুথিগণ এদের মধ্যে অন্যতম। শিয়াদের মধ্যে এরা সবচেয়ে প্রাচীন। আগে এদের রমরমা অবস্থা থাকলেও ১৯৬২ সালে ইমামত লোপের পরে তারা বেকায়দায় পড়েছে।
অনেক শতাব্দী আগে ইমাম নির্বাচনের প্রশ্নে মতানৈক্য হওয়ায় অন্য একদল শিয়া আলাদা হয়ে ইশনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে। এরা বিশ্বাস করে মুহাম্মদ আল বাকিরের ইমামতে, আর জাইদিয়া শিয়াগণ জাইদ ইবনে আলীর ইমামতে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এরা ইমাম হোসাইন পর্যন্ত আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে, তারপরের ইমামগণের স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে না।
তিন,
ইসমাঈলিয়া উপশাখা;
এরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভারত, চীন, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপে এদের দেখা মেলে। এরা বলে, ইসলামের সপ্তম ইমাম হচ্ছেন ইসমাঈল ইবনে জাফর। অন্যদিকে জাফরিয়া শিয়াগণ বলে, সপ্তম ইমাম মুসা ইবনে কাজিম। এত্থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে শিয়াদের এই নতুন উপশাখা যাত্রা শুরু করে।
এদের বিশ্বাস হলো, আধ্যাত্নিকতা মুহাম্মদ হতে হয়রত আলী এবং তার থেকে বংশানুক্রমে প্রবাহিত হতে হতে বর্তমান পর্যন্ত চলে এসেছে। এই স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতা এখন অবস্থান করছে তাদের বর্তমান ইমাম প্রিন্স করিম আগা খানের শরীরে। আগা খান তাদের ৪৯তম ইমাম। কোন পাপ বা ভুল তাকে স্পর্শ করতে পারে না। প্রতিটি ইসমাঈলিয়াকে তাদের আয়ের বারো ভাগের এক ভাগ ইমাম আগা খানের ভাণ্ডারে প্রদান করতে হয়। অধঃস্তনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থে ফুলে-ফেপে ওঠা এই সম্পদশালী ব্যক্তিকে প্রায়ই খবরে দেখা যায়।
বর্তমানে ঈসমাইলিয়া শিয়াগণ নিজারি, হাফিজি, তাইয়াবি প্রভৃতি বিভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
চার,
এদের বিশ্বাস হলো, আধ্যাত্নিকতা মুহাম্মদ হতে হয়রত আলী এবং তার থেকে বংশানুক্রমে প্রবাহিত হতে হতে বর্তমান পর্যন্ত চলে এসেছে। এই স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতা এখন অবস্থান করছে তাদের বর্তমান ইমাম প্রিন্স করিম আগা খানের শরীরে। আগা খান তাদের ৪৯তম ইমাম। কোন পাপ বা ভুল তাকে স্পর্শ করতে পারে না। প্রতিটি ইসমাঈলিয়াকে তাদের আয়ের বারো ভাগের এক ভাগ ইমাম আগা খানের ভাণ্ডারে প্রদান করতে হয়। অধঃস্তনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থে ফুলে-ফেপে ওঠা এই সম্পদশালী ব্যক্তিকে প্রায়ই খবরে দেখা যায়।
বর্তমানে ঈসমাইলিয়া শিয়াগণ নিজারি, হাফিজি, তাইয়াবি প্রভৃতি বিভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
চার,
আলাভি বা নুসাইরি বা আনসারি উপশাখা;
ক্ষমতাসীন সরকারসহ সিরিয়া ও তুরস্কের বেশকিছু মুসলমান আলাভি শিয়া। এরা মূলত ইশনা আশারিয়া থেকে এসেছে। এরা মনে করে, আল্লাহ অনেকবার মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে আগমন করেছেন। এমনকি মুহাম্মদ, হযরত আলী ও সালমান ফার্সি'র বেশ ধরেও তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। অর্থাৎ মুহম্মদ, সালমান ফার্সি ও হযরত আলী ছিলেন মূলত আল্লাহ। তারা পূনর্জন্মে বিশ্বাস করে।
ইসলামের তৃতীয় বৃহত্তম শাখা
ইসলামের তৃতীয় বৃহত্তম শাখা
আহমদিয়া। অনেকের কাছে এরা কাদিয়ানি নামে পরিচিত।
প্রথমদিকে তারা হানাফিদের একটি উপশাখা ছিল। পরবর্তীতে হানাফিদের চিন্তা-ধারা পরিত্যাগ করে এরা নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে।
আমাদের উপমহাদেশে অসংখ্য আহমদিয়া মুসলমান বসবাস করে। এরাও মোটামুটি দু’ভাগে বিভক্ত।
এক,
এক,
আহমদিয়া আঞ্জুমান ইশাত ই ইসলাম উপশাখা;
এদের মতে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি হচ্ছেন প্রতিশ্রুত মসিহ, ইমাম মাহদি ও যীশু খ্রিস্ট। তবে তিনি নবী নন। তারা মনে করে, যীশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ অবস্থা থেকে পালিয়ে এসে কাশ্মীরে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি এখানেই মারা যান। তার কবর কাশ্মীরের উয আসাফে। এখন তিনি বেহেশতে আছেন। নতুন যীশু যিনি এসেছেন, তিনি শেষ নবী মুহাম্মদের উম্মত। আর তিনি হচ্ছেন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি।
দুই,
দুই,
জামাতে আহমদিয়া;
এরা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে একজন নবী বলে দাবী করে। মুহাম্মদকেও এরা নবী বলে মানে, তবে শেষ নবী হিশেবে স্বীকার করে না। এরা বলে, মুহাম্মদ হচ্ছে পূর্নাঙ্গ নবী। তারপরে অনেক নবী এসেছেন, যারা পূর্ণাঙ্গ নবী নন। গোলাম আহমদ কাদিয়ানি হচ্ছেন এমনি একজন নবী।
চতুর্থ
চতুর্থ
বৃহত্তম শাখা ইবাদি। ওমান ও আফ্রিকার জাঞ্জিবার দ্বীপে এদের দেখা মেলে।
এছাড়া আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায় এদের বসবাস রয়েছে। ধারনা করা হয়, এরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খারেজিদের একটি উপশাখা।
ইবাদিগণ খলিফা আবু বকর ও খলিফা উমরকে সঠিক বলে মানে। তবে অনেকক্ষেত্রে খলিফা আলী ও খলিফা উসমানের বিরোধিতা করে। শিয়াদের মতো এদের নিজস্ব ধর্মীয় নেতা বা ইমাম রয়েছে। এই ইমাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন। এদের মতে, আল্লাহ কখনো দেখা দেবেন না, বিচার দিবসেও না। কোরানকে এরা সৃষ্টগ্রন্থ মনে করে, আল্লাহর কথা বলে মনে করে না।
ইসলামের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা সুফিজম।
এদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন। দেখা যায়, একেক এলাকায় একেকজন সুফি আসন গেড়ে বসেছেন। সেখানে তিনি নিজের আস্তানা তৈরী করেছেন, মানুষজনকে মুরিদ বানিয়েছেন। মুরিদগনের ধর্ম-কর্মের সবকিছু তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি মুরিদকে যা যা করতে বলেন, যেভাবে নামাজ পড়তে বলেন, রোজা রাখতে বলেন, মুরিদগণ তাই করে। এক্ষেত্রে অনেক সুফি নিজস্ব স্বতন্ত্র নিয়ম-কানুন অনুসরন করেন। আমাদের দেশের শাহজালাল, চরমোনাই, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী প্রমুখ হচ্ছেন সুফিবাদের উদাহরণ।
এদের সংখ্যা অসংখ্য। তবে এদেরকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে আলেভি,
বেকতাশি,
বোরহানিয়া,
মেভলেভি, বা’লাভিয়া,
চিশতিয়া,
রিফাঈ,
খালবাতি,
নকশাবন্দি,
নি’মাতুল্লাহি,
কাদেরিয়া,
বোস্তামিয়া,
সাধিলিল্লা,
মাইজভান্ডারি,
মোজাদ্দেদিয়া,
কালান্ধারিয়া,
সোহরাওয়ার্দিয়া ইত্যাদি।
এদের বাইরেও ইসলামের অসংখ্য শাখা উপশাখা রয়েছে,
এদের বাইরেও ইসলামের অসংখ্য শাখা উপশাখা রয়েছে,
যাদের মধ্যে দ্রুজ,
বাহাই,
আলাভিয়া ইত্যাদি অন্যতম।
এছাড়াও অসংখ্য শাখা-উপশাখা সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা নতুন কোন শাখায় পরিবর্তিত হয়েছে।
যারা বিলুপ্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে
খারেজি,
মুরজিয়া,
মুতাজিলা,
মুশাব্বিয়া,
জাহমিয়া,
জারারিয়াহ,
নাজ্জারিয়া
,
কালবিয়াহ ইত্যাদি অন্যতম।
প্রতিটি ধর্মই এরকম অজস্র শাখা-উপশাখায় বিভক্ত।
প্রতিটি ধর্মই এরকম অজস্র শাখা-উপশাখায় বিভক্ত।
ক্রিশ্চিয়ানদের মধ্যে ক্যাথলিক-
প্রোটেস্টান্টদের মধ্যকার সংঘাত সম্পর্কে সবার ধারনা আছে।
- সৌজন্য; আমার ব্লগ.কম এবং ঐ লেখাটির লেখক শাহিনুর রহমান শাহিন )
আবদাল্লাহ্ ইবনে যুবায়ের ছিলেন উটের যুদ্ধে
আলীর বিরুদ্ধে অংশগ্রহণকারী
এক বিদ্রোহীর সন্তান
৷ তিনি উমাঈয়াহ্ দের
কাছ থেকে ক্ষমতা
ছিনিয়ে নিয়ে আবার মক্কা ও মদীনায় পয়গম্বরের
প্রথম আমলের ইসলামী
মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার একটা প্রয়াস
নেন এক ভয়াবহ অভ্যুথ্থানের মাধ্যমে ৷
ফলে মুসলিম উম্মাহ্
আবার ইসলামী আদর্শের
কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ে নতুন এক গৃহযুদ্ধের
মাধ্যমে ৷ ইবনে আল-
যুবায়ের খলিফাহ্ হিসেবে
ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেন ৷ কিন্তু ৬৮৩ সালে উমাঈয়াহ্
বাহিনী মদীনা দখল করে নিলেও প্রথম ইয়াযিদ
ও তার শিশু পুত্র দ্বিতীয়
মুয়াবিয়াহ্ র মৃত্যু হলে কিছু বিশৃঙ্খলার
সৃষ্টি হয় , ফলে তারা মক্কা নগরী থেকে তাদের অবরোধ তুলে নেয় ৷ তবে ৬৮৪ সালে মধ্য আরবে খারেজিরা স্বাধীন
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ায় আল-যুবায়ের
আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ৷ এই সময়ে ইরাক ও ইরানেও খারেজি
বিদ্রোহ সংঘটিত হয় এবং কুফাহ্য়
শিয়ারা হুসেইনের হত্যাকাণ্ডের
বদলা নিতে তার প্রত্রকে খলিফাহ্
হিসেবে প্রার্থী দাঁড় করাতে সিন্ধান্ত
নেয় ৷ খারেজি
ও শিয়া সহ সব বিদ্রোহীরা তখন আবার সকলে মিলে
মিশে কোরানের সাম্যবাদী
নীতির আলোকে ইসলামী
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে যে কোনো উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা
দখলের মাধ্যমে ৷ কিন্তু একাজে তারা সফল হতে পারেনি
৷
তবে ক্ষমতা দখল করেছিল আবার এক রাজনৈতিক
ব্যক্তিত্ব , সিরিয়ায় প্রথম মুয়াবিয়াহ্
র এক
উমাঈয়াহ্ কাজিন মারওয়ান
এবং তাঁর পুত্র আব্দ আল-মালিক
৷
৬৯১ সালে পয়গম্বেরের ইন্তেকালের
মাত্র ৬০ বছর পর
সকল ইসলামী বিদ্রোহীদের
দমন করে এবং ইসলাম পন্থী স্ব -ঘোষিত খলাফাহ্ আল-যুবায়েরকে
হত্যা করে , আব্দ আল-মালিক
(৬৮৫-৭০৫ ) আবার উমাঈয়াহ্ শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন ৷ তিনি আবার প্রশাসনের কেন্দ্রীয়করণের নীতি অনুসরণ করেন এবং
স্থানীয় আরব গোত্র প্রধানদের বিরুদ্ধে
পদক্ষেপ নিয়ে উম্মাহ্ র
সংহতি বজায় রাখেন ৷ তিনি প্রথম বারের মত ইসলামী
মুদ্রা প্রচলন করেন এবং মুদ্রাতে কোরানের বাণী উৎকীর্ন
করেন ৷
আর সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয়
ভাষা পারসির স্থলে আরবী ভাষাকে
প্রতিষ্ঠিত করেন ৷ তিনি ৬৯১ সালে জেরুজালেমে
প্রথম এবং প্রধান
ইসলামী মনুমেনটের নির্মাণকাজ
শেষ করে ইসলামকে
বিশ্বাসীদের অন্তর থেকে বের করে এনে প্রদর্শনীর পর্যায়ে
ধর্মকে স্থাপন করেন , যাতে মুসলিমরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে তাকে সমর্থন
করতে থাকে ৷
তখন মুসলিমরাও
সাধারণ প্রজাদের সঙ্গে বসবাস
আরম্ভ করে এবং অমুসলিমরা গ্যারিসন
শহরগুলতে বসতি স্থাপন
আরম্ভ করে ৷ কৃষিজীবীরা মুসলিম এলাকায় কাজ পায় এবং আরবীতে কথা বলা শেখে ,
আর বণিকনণ মুসলিমদের
সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে ৷ তবে তখন পর্যন্ত ধর্মান্তরকরণের বিষয়ে
উৎসাহ দেয়া না হলেও কিছু রাজকীয় কর্মকর্তা
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ৷ তখন পুরানো বিভেদ ভেঙে পড়ায় সাধারণ মানুষ আরব মুসলিমদের
দেয়া বাড়তি সুবিধার
ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ
শুরু করে সমান অধিকার
দাবী করতে থাকে ৷ অন্যরা
আবার ইসলামী আদর্শের
আরও কঠোর প্রযোগের
দাবী আরম্ভ করে এবং আরো দাবী করে যে , যেসব নব্য রাজনৈতিক ও নব্য ধর্মানুরাগীরা খলিফাহ্ কে শিখণ্ডি হিসেবে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ আদায় করছেন
, তাদেরকে প্রত্যাহার
করে খলিফাহ্ তাঁর শাসনকার্য কোরানের কঠোর আদেশ অনুযায়ী
পরিচালিত করতে হবে ৷
কারণ
গৃহযুদ্ধগুলো তখন বহু জটিল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল ,
যেমন-
১ . যে সমাজ তার নিবেদিত
নেতাদের বা ইমানদের
হত্যা করে সে সমাজ ব্যবস্থাকে আল্লাহ্
পরিচালিত বলে দাবী করা হয় কীভাবে ?
২ . কোন ধরনের লোকের উম্মাহ্ র
নেতৃত্ব দেয়া উচিত ?
৩ . খলিফাহ্ রা কী সবচেয়ে ধার্মিক
মুসলিম ( যেমন খারেজিরা বিশ্বাস করে )
হতে হবে , না কি পয়গম্বরের বংশধর
( যেমন শিয়ারা মনে করে ) হতে হবে , নাকি বিশ্বাসীদের
উচিত শান্তি আর ঐক্যের খাতিরে
সকল ব্যর্থতা এবং বিরাট ত্রুটি
সত্ত্বেও উমাঈয়াহ্ দের শাসন মেনে নেয়া উচিত ?
৪ .
আপস প্রচেষ্টায় কে সঠিক ছিলেন
, আলী না মুয়াবিয়াহ্ ?
৫
. উমাঈয়াহ্ দের শাসিত রাষ্ট্র
কতখানি ইসলামী ?
৬ . যে সব শাসক নিজেরা
বিলাসী জীবনযাপন করে আর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের
দারিদ্রতাকে মেনে নেয় তারা কি প্রকৃত অর্থে মুসলিম
হতে পারে ?
৭
. যেসব অনআরব ইসলাম গ্রহণ করে আরব গোত্রের
ক্লায়েন্ট বা মাউয়ালিতে
পরিণত হয়েছে , সমাজে
তাদের অবস্থানটা কী
? ইত্যাদি , জনগণের
নানা প্রশ্ন থেকে এ ধারণা উঠে আসে যে , পয়গম্বরের
ইন্তিকালের মাত্র ৬০ বছরের মাথায় আসতে না আসতেই মুসলিম
সাম্রাজ্যে এমন এক বৈষম্যের সৃষ্টি
হয়েছে এবং সমাজে
যা প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে ব্যাপক
ভাবে , তা কী কোরান ও সুন্নাহ্ র
সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান নয় ? তাই মুসলিম শাসকগোষ্ঠী এবং ইসলাম ধর্মানুসারীদের মধ্যে একটা বিভেদের
সূত্রপাত হয়ে যায় তখন থেকেই ৷
তখন
এই প্রশ্নটিও সামনে চলে আসে যে , কোরান
যেখানে সমগ্র মানবজীবনের একীভূতকরণের
বা তাওহীদের কথা বলে এবং ব্যক্তি জীবন ও রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকাণ্ডে আল্লাহ্ র
ইচ্ছার প্রতি নতি স্বীকার করার কথা বলে , বর্তমান শাসন
ব্যবস্থা কি সে দিকে চলেছে
? নাকি প্রাক-ইসলামী
আমলের শাসন ব্যবস্থার
দিকে ফিরতে শুরু করেছে ?
এইসব রাজনৈতিক
আলোচনার ভেতর দিয়েই ইসলামের ধর্ম ও ধার্মিকতা আর রাজনৈতিক
বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করে ৷ কোরানের
আবৃত্তিকার সহ অন্যান্য
ধর্মীয় চিন্তাশীলরা প্রশ্ন
উথ্থাপন করে জিজ্ঞাসা
করেন যে মুসলিম
হওয়ার প্রকৃত অর্থ কী ? কারণ তারা মুসলিম সমাজকে প্রথমে ইসলামী এবং তারপর আরব হিসেবে
দেখতে চেয়েছে ৷
তাই
চিন্তাশীল ইসলামিক ধার্মিক ও
দার্শনিক মুসলিমরা ধর্মের ব্যাপারে নতুন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ
আরম্ভ করতে বাধ্য হন সময় ও পরিবেশের
সঙ্গে সমন্নয় করে , এবং পয়গম্বরর
ধর্ম থেকে কিছুটা
হলেও সরে এসে ৷
এ ব্যাপারে
প্রথম পুরুষ ছিলেন হাসান
- আল- বাসরি ( মৃত্যু -৭২৮ সালে ) যিনি পার্থিব জিনিসের
প্রতি বৈরাগ্যের ওপর ভিত্তি করে পয়গম্বরের সহজ-সরল
জীবনধারার অনুরূপ এক আধ্যাত্মিকতা গড়ে তোলেন ৷ তিনি তার অনুসারীদের গভীরভাবে
কোরান নিয়ে ধ্যান করার তাগিদ দিয়ে বলেন যে গভীর চিন্তা , আত্মপর্যালোচনা এবং আল্লাহ্
র ইচ্ছার
প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্থনই
প্রকৃত সুখের উৎস ৷ কারণ এগুলোই মানবীয়
আকাঙ্ক্ষা এবং মানুষের
জন্যে আল্লাহ্ র ইচ্ছার
মাঝে বিরাজিত টানাপোড়েন
দূর করে দেয় ৷ তিনি কাদেরিয়াহ্
নামে পরিচিত থিয়োলজির
পক্ষ বেছে নিয়ে বলেন যে মানবজাতির স্বাধীন
ইচ্ছা রয়েছে তাই মানুষ তার কর্মকাণ্ডের জন্যে দায়ী ; কোনও সুনির্দিষ্ট
কাজ করার ব্যাপরে সে বাধ্য নয় ৷
আর আল্লাহ্
যেহেতু ন্যায় বিচারক
সেহেতু মানুষের সাধ্যের
মধ্যে না থাকলে তিনি তাদের সৎপথে জীবনযাপনের
নির্দেশ দিতেন না ৷ তাই খলিফাহ্দের অবশ্যই
তাঁদের কাজের জবাবদিহি
করতে হবে ৷ তবে উমাঈয়াহ্
শাসনকে কাদেরিয়ারা মেনে নিয়েছিল এই জন্য যে তারা উম্মাহ্ র
ঐক্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল
বলে , যেখানে খারেজিরা
বিরোধিতা করে বলেছে যে উমাঈয়াহ্ রা
ধর্মত্যাগী এবং মৃত্যুদণ্ড
লাভের যোগ্য অপরাধী
৷
হাসানের শিষ্য ওয়াসান ইবনে আতা
( মূত্যু-৭৪৮ সালে ) এক মধ্যপন্থী
মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন
৷ যাদের মুতাযিলা
নামে অভিহিত করা হয়েছে ৷ তারা রাজনৈতক
ক্ষেত্রে আলী ও মুয়াবিয়াহ্
র ব্যাপারে রায় দেয়া থেকে বিরত থেকেছে
এই যুক্তিতে যে একমাত্র আল্লাহ্ই
জানেন মানুষের মনে কী আছে ৷ তবে মুতাযিলারা রাজনীতিতে
যুক্ত হয়েছে এবং শিয়া বিদ্রোহে
সমর্থন দিয়েছে ৷ ফলে শতাব্দী
কালের মধ্যেই মুতাযিলারা
ইরাকের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে প্রধান্য বিস্তার
করতে পেরেছিল ৷ মুতাযিলারা আল্লাহ্ র
কঠোর একত্ব ও সরলতার ওপর জোর দিয়ে এক থিয়োলজি
গড়ে তুলেছিল ৷
এই
মতবাদের অনুসারী হয়ে পড়েন কুফাহ্ র
এক ব্যবসায়ী আবু হানিফাহ্ ( ৬৯৯-৭৬৭ ) তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং
ইসলামে ফিকাহ্ শাস্ত্রের
প্রবর্তনে যথেষ্ট ভূমিকা
পালন করেন , যা মুসলিম বিশ্বের
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মূল শাস্ত্রে পরিণত হয় পরবর্তীকালে
৷ আবু হানিফাহ্
উমাঈয়াহ্ আমলের শ্রেষ্ট
আইনবিদে পরিণত হয়েছিলেন
এবং জুরিসপ্রডেন্সের একটি মাযহাব বা মতবাদ প্রতিষ্ঠা
করেন যা সুন্নি
মুসলিমের এক বিরাট অংশ আজও তার অনুসরণ
করে চলেছে ৷ অবশ্য পরবর্তী
সময়ে আরো ৩ জন জুরিস্টগণ
সামান্য পৃথক তত্ত্ব
আবিষ্কার করে আরো ৩টি মাযহাব
প্রতিষ্ঠা করেছেন ৷
খলিফাহ্ রা ও তাদের প্রশাসন
যেখানে কৃষিভিত্তিক সামাজ্যের
ওপর সৃষ্টি হওয়া নানা সমস্যা
মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী
রাজশক্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট
ছিলেন , সেখানে
ধার্মিক ব্যক্তিরা এধরনের
যে কোনো সমাধানের
চরম বিরোধিতা করেছেন
৷ অর্থাৎ প্রথম থেকেই শাসকদের
আচরণ এবং নীতিমালা
এক ধর্মীয় তাৎপর্য
পেয়ে গেছে যার সঙ্গে মুসলিম
বিশ্বের ভাববাদ , অতীন্দ্রিয়বাদ
, পবিত্র জুরিসপ্রুডেন্স এবং প্রাথমিক থিয়োলজিক্যাল
চিন্তার ভাবনার সঙ্গে এক গভীর বিপরীত সম্পর্কের
সৃষ্টি হয়ে যায় ৷
কিন্তু
উমাঈয়াহ্ দের শাসনের শেষ বছরগুলোতে ( ৭০৫-৭৫০ )
উমাঈয়াহ্ বংশ তাদের শাসন আমলের সর্ব্বোচ্চ শিখরে পৌছে গিয়েছিল
৷ ধার্মিকদের আপত্তি
সত্ত্বেও খলিফাহ্ আব্দ আল-মালিক তাঁর ছেলে আল-ওয়ালিদের
উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে প্রথম বারের মুসলিম উম্মাহ্ য়
বংশধারার নীতি গ্রহণ
করেন ৷
আল-ওয়ালিদ খলিফাহ্
হয়েই সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী
করেন এবং তিনি তখন উত্তর আফ্রিকা ও স্পেন আধিকার
করতে সক্ষম হলেও লুণ্টনের মালের পরিমান কমে য়াওয়ায় পশ্চিম
অভিমুখী অভিযান ও শেষ পর্যন্ত
বন্ধ করে দিতে হয় ৷
দ্বিতীয় উমর ( ৭১৭-২০
)এর শাসনের শেষ দিকে সাম্রাজ্য
অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে , কারণ তখন অভিযাত্রা
বন্ধ হয়ে যায় আর প্রজাদের কিছু সুযোগ সুবিধা ও বৃদ্ধি করা হয় ৷ ফলে খরচ বেড়ে যায় এবং আয় কমে যায় ৷ তাই তার মত
ধার্মিক বা
দ্বিতীয় ইয়াযিদের ( ৭২০-২৪
) মত অসচ্চরিত্রের অথবা হিসামের
( ৭২৪-৪৩ ) মত ধার্মকরা যে-ই খলিফাহ হউক না কেন , উম্মাহ্
র তাতে
কিছু আসে যায় নি ৷ অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড
মজবুত না করতে পারলে উম্মাহ্ র
শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাকরা
সম্ভব ছিল না ৷
তাই খলাফাহ্ হিসাম তার শাসনকালকে
শক্তিশালী এবং কার্যকর
করতে অধিক স্বেচ্ছাচারী
হয়ে সবকিছুকে কেন্দ্রিয়করণ
করে নিজকে স্বৈরাচারী
শাসকে রূপান্তরিত করে এর একটা সমাধান বের
করেন
৷ কিন্তু এধরনের
স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা
ধার্মিকদের চোখে ঘৃর্ণিত
এবং মৌলিকভাবে ইসলামিক
নীতির পরিপন্থী ছিল ৷
এই পরিস্থিতিতে শিয়ারা
আবার ক্রমবর্ধমান হারে সক্রিয় হয়ে ওঠে ৷ তাদের তখনকার
নেতারা নিজেদেরকে আলীর বংশধর দাবী করে প্রচার
আরম্ভ করেন এবং এই যুক্তি
দেখান যে , এক মাত্র সঠিক ইলিম বা জ্ঞানই
মুসলিমদের ন্যায়- বিচার ভিক্তিক
ইসলামী সমাজ গঠনে সক্ষম করে তুলতে পারবে ৷ আর এই ইলিম বা জ্ঞান সম্পূর্ণ ভাবে রক্ষিত আছে কেবল মুহাম্মদ (সঃ) এর বংশধর ও পরিবার
বর্গের কাছে ৷ তাই মুসলিম
সাম্রাজ্যের কেবল তাদরই শাসন করার অধিকার আছে ৷
চরমপন্থী শিয়ারা
বর্তমান উম্মাহ্ র সব সংকট আর সমস্যার জন্যে প্রথম তিন খলিফাহ্ আবুবকর ,
উমর ও উসমানকে
দায়ী করে বলেন যে এই ৩ জনেরই উচিত ছিল প্রথমেই আলীর হাতে নেতৃত্ব
তুলে দেয়া ৷ এইসব শিয়া চরমপন্থীদের বেশীরভাগই
ছিল ধর্মান্তরিত মুসলিম
যাদের ভেতরে তদের পূর্বের কিছু বিশ্বাস ও রয়ে গিয়েছিল
৷ সে হিসেবে
আলীকে তারা জেসাসের
মত আল্লাহ্ র এক অবতার ধরে নিয়েছিল ৷ তাদের আরো বিশ্বাস ছিল যে
, বিভিন্ন ন্যায় যুদ্ধের বিদ্রোহে
নিহিত শিয়া নেতৃবিন্দ
ইন্তেকাল না করে জেসাসের মত এক অস্থায়ী
গোপন স্থানে বা
occultation এ অবস্থান
নিয়েছেন এবং তারা শেষ জামানায়
ন্যায়-বিচার ও শান্তির
এক স্বপ্নরাজ্যের উদ্বোধন
করতে আবার আবির্ভূত
হবেন ৷
ধার্মিকরা সহ ধর্মান্তরিতরা এবং মাওয়ালিরাও এই রকম শাসনে
আপত্তি উথ্থাপন করে ৷ ফলে ইসলামী সেন্টিমেন্টের
বিস্তার এমন ব্যাপক হয়ে পড়ে যে বিভিন্ন আন্দোলন
ও বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই কোনও না কোনও ধর্মীয়
আদর্শ বেঁচে নিয়ে তার অন্তর্ভূক্ত
হয়ে পড়ে ৷ এই সুযোগ গ্রহণকরে
, বহুদিন
থেকে সুযোগ গ্রহণের
চেষ্টায় রত আব্বাসীয়
একটি উপদল ৷ এই উপদলটি
সিংহাসনে পয়গম্বরের পরিবারের
সদস্যদের এবং শিয়া চরমপন্থীদের আন্দোলনকে
পুঁজি করে বৃহত্তর আন্দোলনের
সূচনা করতে সমর্থ হয় এবং ৭৪৩ সালে ইরান সহ বিভিন্ন
স্থানে তাদের আন্দোলনে
সমর্থন আদায়ে সফল ও হয়
এবং ৭৪৯ সালের আগষ্টে কুফাহ্
প্রথম অধিকার করে নেয় এবং পরের বছর
ইরাকে উমাঈয়াহ্ খলিফাহ্ দ্বিতীয়
মনসুরকে পরাস্ত করে আরব সাম্রাজ্য
অধিকার করে নিতে সক্ষম হয় ৷ আর তখন মুসলিম
উম্মাহ্ য় আব্বাসীহ খলিফাহ্গণ
সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক সমাজ গঠন শুরু করে ৷
ফলে পরবর্তীতে
পয়গম্বরের প্রচারিত ইসলাম ধর্মের ভিন্ন এক রাজনৈতিক
রূপ পরিলক্ষিত হবে আমাদের পরের আলোচনায় যাহা সময় সময় শাসকদের পরিবর্তনের
সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যার
ও কিছু কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য
করা যাবে ৷ কিন্তু
মূলধারার কিছু ধার্মিক
ও
বিশ্বাসীরা সবসময়ে পয়গম্বরের
প্রবর্তীত প্রকৃত ইসলামে ফিরে যওয়ার চেষ্টা অব্যাহত
রাখেন ৷
আব্বাসীয় খলিফাহ্ দের
শাসনকাল ছিল ৭৫০ সাল থেকে ৯৩৫ সাল পর্যন্ত ৷ প্রায় ১৮৫ বছর তাঁরা ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে পেরেছিলেন
৷ যদিও প্রথমে
তাঁরা নিজেদের সযত্নে
শিয়াদের ইমামী আলোয় তুলে ধরার মাধ্যমে শিয়াদের
সমর্থন আদায় করেন ৷
কিন্তু
ক্ষমতা আরোহণের পর পরই ধর্মীয়
সব ক্যামফ্লাজ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে তাদের মূল উদ্দেশ্য পরিষ্কার
করে প্রতিপালিত করে দেখান যে তাঁরা কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠা
করতে ক্ষমতায় বসেন নি ৷ বরং তাঁরা প্রচলিত কৃষিভিত্তিক সমাজর উপযোগী
এক চরম রাজতন্ত্র গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর ৷ ধর্মবিশ্বাস বা পয়গম্বের ইসলাম ইত্যাদি রাষ্ট্রপরিচালনার জন্যে যেটুকু অতি অবশ্যক তা ছাড়া এর অতিরিক্ত কিছু তাঁরা বাস্তবায়নে
বিশ্বাসী ছিলেন না ৷ তবে প্রয়োজনে
ইসলামকে তাঁরা রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন
৷
প্রথম
আব্বাসীয় খলিফাহ্ আলা- আব্বাস
আল-সাকাহ্ ( ৭৫০-৫৪ ) যেখানে উমাঈয়াহ্ দের
পেয়েছেন সেখানেই তাদের নির্বিচারে হত্যা করেছেন , যাহা
পূর্বে কেউ কল্পনাও
করেনি ৷
আর
খলিফাহ্ আবু জাফর আল-মনসুর
( ৭৫৪-৭৫ ) ইসলামকে ব্যবহার
করে নিজের নামের সঙ্গে আল-মনসুর
উপাধি ধারণ করেন এ জন্যে যে প্রজারা
যেন মনে করে যে ইহা আল্লাহ্
র দেয়া
, অর্থাৎ তাঁর ওপর আল্লহ্
র বিশেষ
অনুগ্রহ বিদ্যমান
আছে ৷
পরবর্তীতে তাঁর ছেলে (৭৭৫-৮৫ )
আল-মাহদি উপাদি ধারণ করেন নিজের নামের সঙ্গে একথা বুঝাতে
যে স্বয়ং আল্লাহ্ তকে পঠিয়েছেন সমাজে ন্যায়-বিচার আর শান্তি প্রতিষ্ঠা
করতে . অর্থাৎ তিনি শুধু সাধারণ
খলিফাহ্ নন , একথা
প্রমান করতে এই উপাধি গ্রহণ করেছিলেন ৷ আব্বাসীয় খলিফাহ্ রা
প্রায় সকলেই ধর্মকে ব্যবহার করে ভন্ডামী করেছেন
৷ তাঁরা রাজধানী দামাস্কাস
থেকে প্রথমে কুফাহ্
এর পরে বাগদাদে
স্থানান্তরিত করেন আর রাজদরবার ও রাজপরিবারবর্গের বাসস্থানের
ধারে কাছে সাধারণদের
বাসস্থান নির্মাণ করতে দেন নি ৷
খলিফাহ্ হারূন আল-রশিদের
( ৭৮৬-৮০৯ )আমল নাগাদ পরিবর্তন
চুড়ান্ত হয়ে যায় যে আব্বাসীয়
খলিফাহ্ রা, বিশেষ করে আল-রশিদ ইসলামের
রাশিদুনদের মত খলিফাহ্
নন ৷ তিনি প্রাচীন কেতার রাজাধিরাজের মত শাসন কর্তা এবং প্রজাদের
থেকে আলাদা ৷ দরবারে তাঁর সামনে
আসতে
হলে মাটিতে চুম্বন
করে তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোর
পর ভেতরে প্রবেশ
করতে হত ৷ আবার ধর্মকে
ব্যবহার করে তিনি “
পৃথিবীতে আল্লাহ্ র ছায়া ”
উপাধি ধারণ করে বসেন ৷ সেনাবাহিনী তখন খলিফাহ্
র ব্যক্তিগত বাহিনী
হিসেবে বিবেচিত হত ৷ শুক্রবারের
প্রার্থনায় আবার তিনি নেতৃত্ব দিতেন ৷ তাই আব্বাসীয়দের সবকিছুই
ধর্মীয় আন্দোলনকারীদের চোখে ঘৃণিত ছিল ৷ অন্যদিকে
তাঁর প্রভাব বলয় বাড়াতে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের
কাছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে
কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি ৷ হারূন আল-রশিদ
চিত্রকলা , সাহিত্য , দর্শন , কাব্য
, ঔষদ , গণিত আর জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি
বাগদাদ ছাড়াও কুফাহ্
, বসরাহ্ , জানজিবার এবং হারানে বিস্তার
ঘটার সুযোগ সৃষ্টি
করেন ৷ জিম্মিদের
দ্বারা ক্লাসিক্যাল হেলেনিজমের
দার্শনক ও চিকিৎসা
বিজ্ঞান বিষয়ক বিষয়াদির
অনুবাদ আরবী ভাষাতে
করে দেয়ার ব্যবস্থা
করেন ৷ পরবর্তীতে
এগুলোর ওপর ভিত্তি
করে মুসলিম পণ্ডিতগণ
এই সময়কালে অতীতের
লিপিবদ্ধ গোটা ইতিহাসের
চেয়ে অনেক বেশী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার
করতে সক্ষম হয়েছিলেন
৷ এসময়ে শিল্প ও বাণিজ্যও
বিকশিত হয় ৷ কোরান নির্দেশিত
৪ জন স্ত্রীর
বিপরিতে স্যাসানিয় রাজাদের অনুকরণে তাদেরও বিরাট
হারেমখানা ছিল ৷
পয়গম্বরের ইসলাম ছিল একটা বাস্তববাদী ও বাস্তবমুখী ধর্ম বিশ্বাস যা সাধারণভাবে শহীদি চেতনা বা অর্থহীন ঝুঁকি গ্রহণ উৎসাহিত
করে না ৷ ( বর্তমান মুসলিম
বিশ্বে অবশ্য এই ধারার বিপরিতটাই
প্রবল আকার ধারণ করছে ৷ ) তাই ধর্মীয়
সংস্কারকদের পক্ষে এবং ইসলামের মূল নীতির বাস্তবতায়
আব্বাসীয়দের প্রকাশ্যে মেনে নেয়া ছাডা অন্য উপায় ছিল না তাদের তখন
এই
বাস্তববাদীতা শিয়াদের মাঝে বেশী দেখা যায় ৷ তাই ক্ষমতা
দখলের রাজনীতি পরিহার
করে শিয়ারা কারবালাহ্ য়
হুসেইনের দুঃখজনক মৃত্যুর
পর তাঁর নিকট বংশধরেরা মদীনায়
যথারীতি ধার্মিকের জীবনযাপন
করে গেছেন, যদিও তাদের অনেকেই উম্মাহ্ র সঠিক ইমাম হিসেবে দেখেছিল শিয়ারা ৷
আলী ,
হাসান এবং হুসেইনেন
পরবর্তী চতুর্থ ইমাম হিসেবে শিয়ারা
যাকে মানে ,. তিনি ছিলেন হুসেইনের
জ্যেষ্ঠ পুত্র আলী যায়েন আল-আবিদিন (মৃত্যুঃ ৭১৪ ) তিনি একজন সাধু ছিলেন এবং চমৎকার এক প্রার্থনা
সংকলন
রেখে গছেন ৷
৫ম
ইমাম মুহাম্মদ আল-বাকির ( মৃত্যু : ৭৩৫ ) কোরান পাঠের এক গূঢ় পদ্ধতির
আবিষ্কার করেন : তার মতে কোরানের প্রতিটি
শব্দ প্রতিটি আয়াতের
একটি গোপন বা বতিনি অর্থ রয়েছে , যা কেবল মনোযোগ নিবদ্ধ
করার অতীন্দ্রীয় কৌশলের
সাহায্যেই উপলব্ধি করা সম্ভব ৷ তবে অনেকের
মতে এপদ্ধতিটি আসলে অন্যান্য বিশ্ব ধর্মে বিকাশিত পরম সত্তার গভীরে প্রবেশ করার পদ্ধতির অনুরূপ ৷ তাঁর
মতে প্রত্যেক ইমাম তাঁর উত্তরাধিকার
মনোনীত করেছেন এবং ঐশীগ্রন্থের গুপ্ত অর্থ আবিষ্কারে
সক্ষম করার জন্য গুপ্তবিদ্যা তার হাতে তুলে দিয়ে গেছেন ৷ তাই একমাত্র ইমাম তিনিই যে তাঁর পৃর্বসূরীদের
কাছ থেকে বিশেষ খেতাব বা নাস লাভ করেছেন , তিনিই মুসলিমদের বৈধ নেতা ৷ আল- বকির- তার
পিতার কাছ থকে নাস পেয়েছেন ,
তাঁর ভাই যায়েদ পাননি , অর্থাৎ
যায়েদ নাস প্রাপ্ত
ইমাম ছিলেন না ৷ তবুও আল-বকিরের থেকে যায়েদের সমর্থনকারীর
সংখ্যা বেশী ছিল তার বিপ্লবী
নীতিমালার জন্যে ৷ কিন্তু
অধিকাংশ শিয়ারা এই দুই ভাইয়ের
মধ্যের বিতর্কের জন্যে এবং তাদের ওপর আব্বাসীয়দের
অত্যাচার বৃদ্ধি পেলে শিয়ারা তখন তাদের ৬ষ্ঠ ইমাম জাফর আল-সাদিকের ( মৃত্যু : ৭৬৫ )নির্দেশনা মানতে মানুষিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে যায় এবং তাঁর অপেক্ষা
করতে আরম্ভ করে ৷
( ১ম
পর্বের শেষাংশ সমাপ্ত )
(
সূত্র ; ইসলাম
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ক্যারেন আর্মস্ট্রং
অনুবাদ : শওকত হোসেন ৷ )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন