প্রাচীন ও বর্তমান ধর্ম বিশ্বাস ও পৌরাণিক কাহিনীর আলোকে স্বর্গ ও নর ক এবং শেষ বিচার প্রসঙ্গে কিছু তথ্য ;-



 

         প্রাচীন   ও  বর্তমান   ধর্ম  বিশ্বাস  ও  পৌরাণিক  কাহিনীর  আলোকে  স্বর্গ  ও  নর ক  এবং  শেষ  বিচার  প্রসঙ্গে  কিছু  তথ্য ;-

            আমাদের  দেশের  এক  দার্শনিক  কবি  স্বর্গ  ও  নরক  এর  অবস্থানের  ব্যাপারে  তাঁর  উপলব্ধি  প্রকাশ  করতে  গিয়ে  বলেছেন  যে  মানুষের  আধ্যাত্মিক  চিন্তা  এবং  তার  মনোরাজ্যের  কল্পনার  জগতেই  স্বর্গ  ও  নরকের  অবস্থান  ৷  তাই  বোধকরি  কবি  তাঁর  কবিতায়  লিখেছেন ; - 
              “ কোথায়  স্বর্গ  ,  কোথায়  নরক  ,  কে  বলে  তা  বহুদুর  ?
                 মানুষেরই  মাঝে  স্বর্গ  - নরক , মানুষেই  সুরাসুর ” 

          ঐতিহাসিকদের  মতে  পৃথিবীতে  বর্তমানে  প্রচলিত  যতো  ধর্ম  আছে  তার  মধ্যে  বৈদিক  বা  হিন্দু  ধর্ম  সবচেয়ে  প্রাচীন  ৷  তাই  প্রথমে  পৌরাণিক  হিন্দু  শাস্ত্র  থেকে  আলোচনা  আরম্ভ  করা  হলো  ৷

          পৌরাণিক  হিন্দুশাস্ত্র  অনুসারে  স্বর্গ  শুধু  দেব  দেবীদের  বাসস্থানের  জন্যে  নির্ধারিত  আছে  ৷  তাই  স্বর্গে  কোনো  শোক  ,  তাপ ,  জরা  মৃত্যু  কিছুই  নেই  ৷  স্বর্গতে  সব  সময়  চির  বসন্ত  বিরাজমান  থাকে  ৷  আর  স্বর্গবাসীদের  মনের  আনন্দের  জন্যে  সেখানে  রয়েছে  যেমন  নন্দন  কানন ,  প্যারিজাত  বৃক্ষ  ,  তেমনি  রয়েছে  সুরভী  গাভী ,  ঐরাবত  হস্তী ,  ঊচ্চঃশরা  অশ্ব  প্রভৃতি  ৷  আর  আছে  স্বর্গবাসীদের  কামনা  বাসনা  পুরণের  জন্যে  অপ্সরা,  কিংকরী  ,  গন্ধর্ব  ইত্যাদি  দেহবিলাসিনিরা ও  চির  মজুত ৷

          হিন্দু  পৌরাণিক  শাস্ত্রানুসারে  স্বর্গের  অবস্থান  এক  দূর্গম  ও  দূরারোহ  এবং  অতি  উচুঁতে  অবস্থিত  একটি  স্থানে  ৷  যার  অবস্থান  সুমেরু  পর্বতের  উপরে  ধারণা  করা  হয়   ৷  ভৌগলিকদের  মতে  ঐ  স্থানটি  ছিল  বর্তমান  হিমালয়  পর্বতের  অংশ  বিশেষ  ৷ (সূত্র ;- অমল দাস গুপ্তের লেখা  গ্রন্থ  -সরল বংলা অভিধানের  ৮৭ পৃষ্টা ) 

          আজকাল  হিমালয়   পর্বতে  যে  ভাবে  সহজে  আরোহণ  করা  যায়  , তখনকার  দিনে  অসাধারণ  শারিরিক  ও  মানসিক  শক্তি  সম্পন্ন  না  হলে  কেউ  সেখানে  পৌঁছাতে  পারতনা  ৷   সেখানে  শুধু  দেব  দেবী  যেতে  পারত  ৷  তাই ঐ  উঁচুস্থান  থেকে নীচু  সমতল ভূমিকে  বলা  হতো  মর্ত্যলোক  ৷ আর  সাধারণ  মানুষেদের এই সমতল মর্ত্যেলোকে  বসবাস  করতে  হত  ৷  কারণ  দেবদেবী  ছাড়া  কাউকে  স্বর্গে  যেতে  দেয়া  হতো  না  ৷   

        মহাভারত  ও  রামায়ন  , 
              বেধ  বা  উপনিষদ  এর  সমপর্যায়ের  না  হলেও  এই  দুই  গ্রন্থকে  ও  হিন্দু  ধর্মের  গুরুত্বপূর্ণ  ধর্মীয়  গ্রন্থের  মতো  স্থান  দেয়া  হয়ে  থাকে  ৷  মহাভারত  থেকে  জানা  যায় যে , ধর্মপুত্র  যুধিষ্ঠির  পদব্রজে  এবং  সশরীরে  স্বর্গে  আরোহণ  করতে  সক্ষম  হয়েছেন  ৷  পরে  তাঁর  স্বর্গে  গমনের  পথ  বিশ্লেষণ  করে  দেখা  যায়   যে , ঐ  স্থানটি  কৈলাস   পর্বত   হিসেবে  পরিচিত  ছিলো  ৷  যা  বর্তমানে  হিমালয়  পর্বতের  এক  অংশে  অবস্থিত আছে ৷ (সূত্র;- পূর্বে  উল্লেখিত  গ্রন্থের  ২৫১  পৃষ্টা ) 

          রামায়ন  থেকে  জানা  যায়  যে  লঙ্কাধিপতি  রাবণ  মর্ত্যলোক  থেকে  স্বর্গে  আরোহন  করে  দেবগণের  সঙ্গে  যুদ্ধে  লিপ্ত  হয়েছেন    এবং  রাবণের  পুত্র  মেঘনাদ  স্বর্গবাসী  দেবরাজ  ইন্দ্রোকে  ঐ  যুদ্ধে  পরাজিত  করে  বন্দী  করতে ও সক্ষম  হয়েছেন  , বলেই  মেঘনাদকে          “ ইন্দ্রজিৎ ”  উপাধীতে  ভূষিত  করা  হয়েছিলো  ৷  
                   এ   থেকে  প্রমাণিত  হয়ে  যায়  যে  , গায়ের  জোরে  পৌরাণিক  শাস্ত্রের  উল্লেখিত  স্বর্গে  মর্ত্যবাসী  মানুষ  আরোহন  করে  পারত  ৷  আর  বৈদিক  মতে  স্বর্গকে  অতি  উঁচ্চে  বা  উর্ধ্বলোকে  অবস্থিত  একটি  স্থান হিসেবে   গণ্য  করা  হয়েছে  ৷  আবার  কিছু  ধর্মযাজকের  মতে পুণ্যবাণদের  কবরের  সঙ্গে  স্বর্গের  এবং  পাপিদের  কবরের  সঙ্গে  নরকের  যোগাযোগ হতে  ও  পারে  ৷   অর্থাৎ  ঐ  মত   যদি  সঠিক  হয়  তবে  স্বর্গ  ও  নরকের  অবস্থান  ভূগর্ভেই  বলে  মনে  হয়  ৷

                হিন্দুমতে  আরো  দেখা  যায় যে  মানুষ  পুণ্যের  তারতম্যানুসারে  ক্রমান্নয়ে  ঊর্ধ্ব  হতে  ঊর্ধ্বতম  স্বর্গের  অধিকারী  হতে  পারে   ৷   আবার মানুষের পাপ  অনুসারে  নিম্ন  থাকে  নিম্নতর  নরকে  নিপতিত  হতে  হয় ৷  অবশ্য  এর  আগে একটি  বৈতরণী পার  হতে হয়  ৷ আর  নিরাপদে  অতিক্রমকারীরা  স্বর্গ  লাভ  করে  থাকে   আর   যারা ঐ  বৈতরণী  অতিক্রম  করতে  ব্যর্থ  হয়   তারা   পচা , রক্তমাংশে  পরিপূর্ণ  দুর্গন্ধযুক্ত  ও  অগ্নিগরম  নদীর  জলে  পড়ে যায়  ৷  আর  সেখানেই  থাকতে  হবে তাদের  অনন্তকাল পর্যন্ত  ৷  হিন্দু  শাস্ত্রেও  পাপ  পূণ্য  তুলা  দণ্ডে  ওজন  করে  পরিমাপের   কম   বেশি  অনুসারে   পাপ  পূণ্যের  বিচার  ও  শাস্তির  ব্যবস্থা  আছে  ৷     বৈদিক ও পৌরাণিক  ঋষি- মুনিগণ  এই  তথ্য প্রচার       করেছেন সাধারণ  মানুষের  কাছে   ৷    

          মিশরীয়  মত :  
                                এই  মতে  স্বর্গে  অন্যান্য  সুযোগ  সুবিধার  সঙ্গে  কৃষিকাজের ব্যবস্থা ও  নাকি  থাকে  ৷  তাদের  আর  এক  বিশ্বাস  ছিল  যে  যুগ  বিবর্তনান্তে  তিন  থেকে  দশ  সহস্র  বছর  পরে  মৃত  ব্যক্তির  আত্মা  দুনিয়াতে  ফিরে  আসতে  পারবে  ৷  তাই  বোধহয়  এই  বিশ্বাসের  কারণে  মিশরে  মৃতদেহ  রক্ষার  প্রথা  প্রবর্তিত  হয়েছিল ৷ প্রাচীন  মিশরীয়রা  প্যাপিরাস  বা  সমাধিগাত্রে  মৃত  ব্যক্তিরদের  জীবন  সংক্রান্ত  বিভিন্ন  কথা     লিখে  রাখার  প্রচলন  ছিল  ৷  পরে  একসময়  সেই  সব  লেখা  সংকলন  করে আমদুয়াত  গ্রন্থ  ,  ফটকের  গ্রন্থ  এবং  মৃতের  গ্রন্থ  নামক  তিনটি  গ্রন্থ  রচিত  হয়  ৷  মৃতের  গ্রন্থের  বর্ণনায়  দেখা  যায়  যে  প্রত্যেক  মৃতকে  পরমেশ্বরের  কাছে  একটা  শপথ বা এফিডেভিট  দিয়ে  জীবিত কালে  তার  পাপ  পূণ্য  কাজের  হিসেব  দেয়ার  বিধান  ছিল ৷  পরে  ঐ  সত্যপাঠের  সত্য  মিথ্যা  যাচাই  করতেন   জ্ঞানের  দেবতা  থৎ  এবং  হোরাস  ৷ মৃতের  হৃৎপিণ্ড  দাঁড়িপাল্লায়  ওজন  করা  হত   অনেকটা  হিন্দু  শাস্ত্রের  অনুরূপ  ৷ যে  ভাবে  পাপ - পুণ্য এর  পরিমান  নির্ধারণের  জন্যে যা  করা  হবে  বলে  বলা  হয়েছে  , সে  রকম  ৷  বিচারের  বর্ণনায়  দেখা  যায়   যে  দুইটি  দ্বার  দিয়ে  স্বর্গ  ও  নরককুণ্ডে  প্রবেশ  করতে  হওয়ার  নিয়মের  বিধান  ছিল   ৷  পুণ্যাত্মাগণ  আলু  নামক  স্বর্গধামে  প্রবেশ  করে  মনের  আনন্দে  শস্যক্ষেত্র  চাষ  করতে  পারত  ৷  আর  পাপাত্মাদের  নরককুণ্ডে  পাঠিয়ে  খুঁটির  সঙ্গে  বেঁধে  রেখে  পরে  জ্বলন্ত  আগুনে  বা  গভীর  সমুদ্রে  নিক্ষেপ  করা  হওয়ার  বিধান  ছিল  ৷  আরো  কিছু  আনুষ্ঠানিকতার  পর  অধিকতম  পুণ্যবানগণ  এক পর্যায়ে  নিম্নতম  স্বর্গে  দেবগণের  অন্তর্ভূক্ত  হওয়ার  বিধান  ও  ছিলো ঐ  মতে  ৷  

          ইরানীয়দের  মত:

                                  ইরানীয়  ঋষি  বা  ধর্মগুরু  জোরওয়াষ্টার   “  জেন- আভেস্তা ”  নামক গ্রন্থখানা  পেয়েছিলেন  ইরানীয়  দেবতা  “ অহুর  মজদা ”  এর  কাছ  থেকে  কোনো  এক  বজ্রবিদ্যুৎ  সমাকীর্ণ  ঘোর  নিনাদ  সম্বলিত  রাতে  এক  পর্বতে  বসে ৷  আর তা  প্রায়  খৃষ্টের  জন্মের  দু-হাজার  বছর  পূর্বে   খ্রী. পূ .  ১৯২০  সালের  দিকে  বলে    ঐতিহাসিকরা  মনে  করেন  ৷  ইরানীয়  দেবতা  অহুর মজদা  একেবারে  নিরাকার  ব্রহ্ম  ছিলেন  না   ৷  তাকে  ব্যাক্তিসত্তার  অধিকারী  এক  স্বর্গবাসী  দেবতা  মনে  করা  হত   ৷  ঐ  মত  অনুসারে  ও  মৃত্যুর  পর  জীবিত  কালের  পাপ  ও  পূণ্যের  দণ্ড  ও  পুরস্কারের  বিধান  ছিল  ৷ তবে  প্রথমে  মৃতের  দেহকে  এক  দানব  অধিকার  করে  নেয়ার  বিধান  ছিল  ৷   তখন ঐ  আত্মাকে  বিভিন্ন  পরীক্ষার  পরে  এক  পর্যায়ে  এসে  আত্মার  মাঝে  জ্ঞানের  সঞ্চার  করার  বিধান  ছিল  ৷  তখন  আত্মাকে  হিন্দু  মতের  মত   চিনাভাদ  নামক  এক  পুল  পার  হতে  দেয়া  হত  ৷  পূণ্যবানরা  অনায়াসে  সে  পুল  পার  হয়ে  গিয়ে  দেবতার  সঙ্গে  মিলিত  হতে  পারত  ৷  আর  তখন  দেবতা  অহুর  মজদা  ঐ  পূণ্যবান  আত্মাকে  স্বর্ণ  সিংহাসনে  সমাসীন  করে  হুরান -ই -বেহেস্ত  নামী  পরীগণের  সহবাসে থাকার  ব্যবস্থা  করে  তাকে  সর্বপ্রকার  আনন্দ  উপভোগের  সুযোগ  করে  দেয়ার  বিধান   ছিল ৷  আর  যে  আত্মা  পুল  পার  হতে  ব্যর্থ  হত   অর্থাৎ  যে  আত্মা   জীবিত  কালে  পাপ  কার্য  করেছে  সে  নরকার্ণবে  নিপতিত  হয়ে  চির  শাস্তি  ভোগ  করার  জন্য  মনোনিত  হত  ৷  ইরানীয়দের  ধর্মগ্রন্থ  জেন্দ- আভেস্তায়  স্বর্গ - নরকের  শ্রেণীবিভাগের  বিধান  ছিলো  না  ৷  তাদের  স্বর্গের  নাম  গারো - ডে মান, যা  পারস্যভাষায়  গাবাৎ  মান  নামে  অভিহিত  ৷  ঐ  মতে  আরো  এক  নিয়মের  আবাস  মেলে  যে  ,  পাপী  আত্মা  উপাসনা  দ্বারা  এবং  স্বর্গ   লাভ   প্রাপ্ত   বন্ধু - বান্ধবের  মধ্যস্থতায়  কারো  কারো  নরকভোগের  সময়  হ্রাসপ্রাপ্তের  বিধানের ও  প্রচলন  ছিলো  ৷

          ইরানীয়দের  মতে  পৃথিবী  ধ্বংসের  ( কিয়ামতের )  পরে  সওসন্ত  নামক  এক  অবতারের  ( ইয়াজুঝ- মাজুঝ  এর  মত  নাকী ?)  আবির্ভাব  হবে  ৷  আর  তিনি  অত্যাচার - অবিচার  থেকে  পৃথিবীকে  মুক্ত করে  এক  অনন্ত  সুখের  রাজ্য   পৃথিবীব্যাপী  সর্বত্র  প্রতিষ্ঠা  করবেন ৷  তখন  বিশ্বব্যাপী  এই  পুনরুথ্থানের  পর  আবার  বন্ধু-বান্ধব ,  এবং  আত্মীয়- স্বজন  পুনরায়  একত্রে  মিলিত  হবে  এবং  তখন  সৎ ও  অসতের  মধ্যে  একটা  নির্ধারণী  পর্ব  অনুষ্ঠিত  হয়ে  পাপি  এবং  অসতদেরকে  আজীবন ভীষণ  যন্ত্রণা  ভোগ  করতে  দেয়া  হবে,  ইত্যদি  ..৷ 

          চৈনিক  মত  :  

                              চীন  দেশের  প্রাচীন  ধর্ম  মতানুসারে  ও  পাপ - পূণ্য  অনুসারে   স্বর্গ  ও  নরক  লাভের  বিধানের  প্রচলিত  ছিলো  ৷  খৃস্টের  জন্মের  প্রায়  ১৪০০  বছর  পূর্বে  সেখানে পান  করং  নামক  এক  চৈনিক  রাজা  প্রজাদের  ভাল-মন্দের  যে সব উপদেশ  দিয়েগেছেন  , তা  ঐ  সময়ে  ধর্ম গ্রন্থের  বিধানের  মত  বিশ্বাস  করে  তা  গ্রন্থে  প্রকাশ  করা  হয়েছে  ৷  ঐ  উপদেশযুক্ত  গ্রন্থে  ন্যায়- অন্যায়, ও  পাপ - পূণ্যের বিচারের  ব্যাপার  , পুরুস্কারের  ও  শাস্তির  কথা  সহ  অনেক  কিছুর  উল্লেখ  ছিলো  ৷  যা  দ্বারা  মানুষ  ন্যায়-অন্যায়  , ভালমন্দ  বুঝে  চলতে  পারে, ইত্যাদি  ৷ তবে সু -কিং  নামক  গ্রন্থটি  চীনদেশের  সর্বোৎকৃষ্ট  প্রাচীন  গ্রন্থ  বলে  পরিচিত   যা  কনফুসিয়াস  সংকলন  করেন  যাতে  মৃত্যুর  পরে  স্বর্গ  নরকের    ব্যাপারে  সুষ্পষ্ট  কোন  কিছুর  উল্লেখ  নেই,  তেমন  ভাবে ৷   তবে  কনফুসিয়াস  এ  প্রসঙ্গে   বলে  গেছেন  যে , যেখানে  “ বর্তমান  জীবনের  বিষয়েই  আমরা  অবগত  নই ,  তাই  মৃত্যুর  পরে  কি  হবে,  তা  কে  বলতে  পারবে  ?”  তাঁর  দর্শনানুসারে  দেহাংশ  পঞ্চভূত ,  পঞ্চভূতে  মিশে  যাবে  এবং  অশরীরী  আত্মা  সংসারে  অদৃশ্য  আকারে  উপস্থিত  থেকে  আপন  সংসার  ও  জগতের  মঙ্গল  সাধন  করতে  থাকবে  ইত্যাদি   ৷ অর্থাৎ  মানুষের  শারীরিক  মৃত্যু  হবে , তবে  তার  আত্মার  মৃত্যু  নেই , তাই  কনফুসিয়াসের  প্রলয়ান্তে  পুনঃসৃষ্টি  বা  পরলোক  বিষয়ে  তাঁর  কোনো  স্পষ্ট  বক্তব্য  দিয়ে  যান  নি ৷

 ইহুদিদের  মত : 

                ভূমিকা:  পবিত্র  বাইবেল  গ্রন্থটি  ৬৬  খানা  ক্ষুদ্র  পুস্তকের  সমষ্টি  এবং  দুই  ভাগে  ইহাকে     বিভক্ত  করে ,  প্রথম  ভাগের  ৩৯  টা  পুস্তক  নিয়ে  ঘটিত  অংশকে  পুরাতন  নিয়ম  বা  old  Testament  হিসেবে  অভিহিত  করে  এই  অংশকে  যারা  মানেন তাদেরকে  ইহুদি  বলা  হয়  ৷ 

 পুরাতন  অংশের  গ্রন্থগুলোকে  মুসলমানরা  তৌরিত  ও  জব্বুর  কিতাব  বলে  থাকেন  ৷ 

 আর  পরের  ২৭  গ্রন্থের  অনুসারিদেরকে  খ্রীস্টিয়ান  বলা  হয়  এবং  তাঁদের  ঐ  ২৭  পর্বের  গ্রন্থকে  ইঞ্ছিল  কিতাবের  অনুসারী  বা  নূতন  নিয়মের বা  New  Testament  এর  অন্তর্ভূক্ত  হিসেবে  গণ্য  করা  হয় ৷  

 ইহুদি  এবং  খ্রীস্টিয়ান  উভয়  সম্প্রদায়ের  অনুসারিরা  উক্ত  গ্রন্থাবলীকে  ঐশ্বরিক  গ্রন্থ  বলে  বিশ্বাস  করেন  ৷
  কিন্তু  প্রথমাংশের  “ আদিপুস্তক”  বা Genesis  খানা  ইহুদি  ও  খ্রীস্টান  উভয়  সম্প্রদায়ই  মেনে  থাকেন  এবং  সৃষ্টিতত্ত্ব  বিষয়ে  আদিপুস্তকটির  লিখিত  বিবরণে  ইহুদি  ও  খ্রীস্টান  উভয়  সম্প্রদায়ই  বিশ্বাস  করে  চলেন  ৷  

         সৃষ্টিতত্ত্ব  বিষয়ে  আদিপুস্তকে  ( ১ ; ১  )  বলা  হয়েছে  , “  আদিতে  ঈশ্বর  আকাশমণ্ডল  ও  পৃথিবী  সৃষ্টি  করেন  ”   ৷ 
         আদি  (১ ; ২ )  “  পৃথিবী  ঘোর  ও  শূন্য  ছিল  এবং  অন্ধকার  জলধির  উপরে  ছিল  আর  ঈশ্বরের  আত্মা  জলের   উপরে   অবস্থিতি  করছিল ”  ( এই  বর্ণনা  হিন্দু  ধর্মের  মনুসংহিতার ১ ; ৮  এর  বর্ণনার  সঙ্গে  সাদৃশ্যপূণ্য )   ৷  

       আদি ( ১ ;৩-৫ )  “ পরে  ঈশ্বর  কহিলেন , ‘  দীপ্তি  হউক  ’ ; তাহাতে  দীপ্তি  হলো  ৷ তখন  ঈশ্বর  দীপ্তিকে  উত্তম  দেখে   তা  অন্ধকার  থেকে আলাদা  করেন  আর  দীপ্তির  নাম  ‘ দিবস ’ ও  অন্ধকারের  নাম ‘ রাত্রি ’ রাখেন , আর সন্ধ্যা  ও  তঃকাল  হলে  প্রথম  দিবস  হয় ”  ৷  
              পরে  ঈশ্বর  জলের  মধ্যে  বিতান (শূণ্য ) সৃষ্টি  করে  জলকে  পৃথক  করেন  এবং  উর্ধ্বস্থিত  জলের  বিতানের  নাম  আকাশমণ্ডল  রাখলেন  ৷ 
 পরে  ঈশ্বরের  নির্দেশে  আকাশমণ্ডলের  নীচস্থ  জলে ,   ভূমি  ও  সমুদ্রের  জলের  সৃষ্টি  হলো  ৷ 
          পরের  নির্দেশে  ( তৃতীয়  দিনের  নির্দেশ )  ফলজ  ভূমি  সহ , সকল  প্রকার  তৃণ  ও  উৎপাদক  বৃক্ষ  উৎপন্ন  হলো  ৷
          ৪র্থ  দিবসে  আকাশ  মণ্ডলকে  সুবিন্যস্ত  করা  হলো  ৷ 
          পঞ্চম  দিবসে  পৃথিবীকে  বিভিন্ন  প্রাণীবর্গে  প্রণীময়  করা  হয়,  ইত্যাদি .. ৷ 
 এবং  ষষ্ঠ  দিবসে  প্রাণীবর্গের  স্ব  স্ব  শ্রেণীবিন্যাস  ইত্যাদি  করা  হলো  ৷ 
           এভাবে  পৃথিবীর  সৃষ্টির  যাবতীয়  কাজ  ছয়  দিনে  সমাপ্ত  করেন  ঈশ্বর ,  এবং  সপ্তম  দিনে  ঈশ্বর  নিজে  বিশ্রামে  গেলেন  ইত্যাদি  বর্ণনা  আদি পুস্তকের  অন্তর্ভূক্ত  ৷  ( সূত্র ; আদি- পুস্তক  ১  ও  ২ এর  অংশ )

       তৌরিতঃ

              ইহুদিদের  মতে ,  হজরত  মুসা (আ)  তূর  পর্বতের  চূড়ায়  ইহুদিদের  কথিত  ঈশ্বর  “ জাভে ” এর  দর্শন  লাভ  করেন  ৷ এই  সময়ে তিনি   তাঁর  বাণী  শ্রবণ  করেন  এবং  জাভের  স্বহস্তে  লিখিত  দশটি  আদেশ  সম্বলিত  দুইটা  প্রস্তরফলক  প্রাপ্ত  হয়েছেন  বলে  জানা  যায়  ৷  আর  তাহাই  তৌরিতের  মূল  সূত্র  হিসেবে  গণ্য  হয়ে  আসছে  এত  দিন   থেকে  ৷  ঐ  সময়ে  তূর  পর্বতকে  মেঘগর্জন  সহ  বিদুৎ  চমকে ও  ধূম্রবৎ  মেঘে  আচ্ছন্ন  সহ  অগ্নিময়   রূপে দেখাচ্ছিল  ৷ 

                পার্সি  ধর্ম  প্রবর্তক  জোরওয়াস্টার 
                             ও  অনুরূপ  ভাবে  বজ্র  বিদুৎ চমকানো  ও  মেঘে  আচ্ছন্ন  পর্বতের  চুড়ায়  তাদের  ধর্মগ্রন্থ  জেন্দা - আভেস্তা  পেয়েছিলেন  তাদের  ঈশ্বর অহুর- মজদা  এর  কাছ  থেকে  , যা  পূর্বেই  উল্লেখিত  হয়েছে  ৷  
                  তৌরাতের  বর্ণনানুসারে  হজরত  মুসা (আ)  ঐ  সময়ে  সীনয় বা  তূর  পর্বতকে  ধুলাময়  ও  বজ্র মেঘ ও  ঘোর  অন্ধকার  অবস্থায়  ছিলো  বলে  বর্ণনা  করেছেন ৷  তবে  বজ্র  বিদুৎ  চমকের  জন্যে  তখন  ঐ  পর্বতকে  অগ্নিময়  অবস্থায়  দেখতে  পেয়েছেন বলে  ও   উল্লেখ  করছেন  তিনি   ৷  আর  ঠিক  সেই  মুহুর্তেই  ইহুদিদের  সদাপ্রভু  অগ্নিসহ  পর্বতের  উপর  আরোহন  করেন  ৷   পর্বত  তখন  কাঁপতে  ছিলো  আর  শব্দ  ক্রমশঃ  বৃদ্ধি  পেতে  থাকলে  মৌশি  বা  মুসা  আঃ  তাঁর  সঙ্গে  কথা  বলেন  এবং   ঈশ্বর তাঁর  বাণীর  দ্বারা  মুসার  কথার  জবাব  দেন  ৷  আর  এই  সঙ্গে  তাঁর  ঐ  বাণী  সম্বলিত   দুইটা  প্রস্তরফলক  মুসা (আঃ) কে  হস্তান্তর  করে  ঐ  স্থান  ত্যাগ  করেন  ৷ যা পরবর্তীতে  টেন  কমান্ড  হিসেবে  পরে  পরিচিতি  পেয়েছে  ৷   

          ঐতিহাসিকদের  হিসেব  অনুসারে  মুসা  (আঃ)  মিশরে  খ্রী. পূর্ব  ১৩৫১  সালে  জন্ম  গ্রহন  করেছেন  ৷   এবং  খ্রী, পূ. ১২৮৫  সালে  তূর  পর্বতে  তৌরিতের  মূল  দশ  আদেশ  প্রাপ্তির  পরবর্তি  ৫৪  বছর  আরো  আদেশ  নির্দেশ  গ্রহন  করে  প্রায়  ৫৪  বছর  কাল    পর্যন্ত  তাঁর  ঐ  ইহুদি  ধর্ম  প্রচার  করেন  এবং   খ্রি, পূ . ১২৩১  সালে  দেহত্যাগ  করেন  ৷  ঐ  হিসেব  মতে  তৌরিত  গ্রন্থের বর্তমান   বয়স   প্রায়   ৩২০০   বছর  ৷ 

          তৌরিত  এর  কিছু  বর্ণনা  মতে   (  লেবীয়  পুস্তক  এর  বিভিন্ন  অংশের  বর্ণনা  অনুসারে    ) দেখা  যায়  যে ,

  1.   ত্বকচ্ছেদ  ( পুরুষের ) , 
  2.  খাদ্য  ও  অখাদ্য  নির্ণয়  ,
  3.   অশুচিতা   ( মহিলাদের )  ,
  4.   রেতস্খলন  পরে  শরীর  ধৌত  করা  , 
  5.   বিবাহ  নিষিদ্ধা  নারী  চিহ্নিত  করন  ,
  6.   অশৌচকালে  যৌনমিলন  নিষিদ্ধ  করন  , 
  7.   ঈশ্বরের  নিন্দায়  মৃত্যুদণ্ডের  বিধান  ( ব্লাশফেমি  আইন )  ,
  8.   খুনের  বদলে  খুনের  বিধান  , 
  9.   সুদের  নীতি ,
  10.   মানত  করা  , 
  11.   উৎসর্গ  (   পশু  সিন্নী  দেয়া  ) ,
  12.   উত্তরাধিকার  নির্ণয়ের  বিধান , 
  13.   বিজাতি  বিদ্বেষ ( পরাজিতকে  ক্ষমা  না  করা )  ,
  14.   বলিদানে  পশু  নির্বাচন ( কূরবাণী ) , 
  15.   ব্যাভিচারের  বিচার  (  ক্ষেত্র  বিশেষে  প্রস্তরাঘাতে  বধ  করার  বিধান )
  16.   সত্রীত্যাগ  ( তালাকের  বিধান )   সহ  বিখ্যাত  দশ  আদেশের  গুরুত্বপূর্ণ  উল্লেখ  পাওয়া  যায় ,

 যা  পরবর্তি  খৃস্টান  ও  ইসলাম  ধর্মের    ধর্মগ্রন্থে  ও এর কিছু  পরিবর্তিত  রূপে  উল্লেখিত হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে   গ্রহণ  করা ও  বিশ্বাস  করে  তা  পালন  করাও   হচ্ছে  ৷ 

          জব্বুর  গ্রন্থ : 

                 হজরত  দাউদ  (আঃ)  এর  উপর  অবতীর্ণ  গ্রন্থের  নাম  জব্বুর   ৷ এবং  ঐ  কিতাবে  বর্ণিত  আদেশ  উপদেশ  গুলোই  জব্বুর  কিতাবের  অন্তর্ভূক্ত  হয়েছে ৷    যা  বাইবেলের  পুরাতন  অংশের  ও  অন্তর্ভুক্ত  ৷  তাঁর  জন্ম  হয়েছিল  খ্রী, পূ . ৯৭১  সালে , অর্থাৎ  প্রায়  ৩০০০  বছর  আগে  ঐ  কিতাবের  আবির্ভাব  হয়েছিল  ৷

          ইহুদিদের  জুডাইজম  

                         ধর্মমতে  মানুষের  মৃত্যুর  পর  বিচারের  একটি  শেষদিন  নির্দিষ্ট  করা  আছে  ৷  সেই  দিন  মৃতদের  আত্মার  পুনরুথ্থান  ঘটবে  এবং  তাদের  জীবিতকালের  পাপ-পূণ্যের  বিচার  হবে  ৷  ইরানীয়দের  মত  ইহুদিদের  আত্মাকেও  একটি  নির্দিষ্ট  সেতু  পার  হতে  হবে  এবং  তুলাদণ্ডে  পরিমাপ  করে  পাপ- পূণ্যের  বিচার  হবে ৷  সেতু  অতিক্রমে  ব্যর্থরা  নিচের  নরক  কার্ণবে  নিপতিত  হয়ে  শাস্তি  ভোগ  করবে  ৷   ইত্যাদি  সবই  প্রায় অন্যান্য  পূর্বের  ধর্ম  গুলোর   বিধানের  মত একই  রকম বর্ণনা  দেখা  যায়  ৷  তবে  ইহুদিদের  মতে  মানুষের  পাপ- পূণ্যের  পরিমান  দুইটা  গ্রন্থে  লিপিবদ্ধ  থাকে  এবং  তা  তুলাদণ্ডের  দু’দিকে  স্থাপন  করে  প্রতিজনের  পাপ-পূণ্যের  পরিমান  নির্ধারণ  করে  যে  দিকে  পাল্লা  ভারি  হবে  সে  অনুসারে  পরবর্তি  ব্যবস্থা  হবে বলে  বলা  হয়েছে  ৷ অর্থাৎ  পূণ্যের   ভাগ  বেশি  হলে  স্বর্গ  লাভ  আর  পাপের  ভাগ  ভারি  হলে  নরকের  যন্ত্রণা  ভোগ  করতে  হবে  ৷

          ইহুদিদের  স্বর্গের  নাম  ইডেন  ৷ 

                 ঐ  স্বর্গ  বহুমূল্যবান  প্রস্তরে  ঘঠিত  এবং    তিনটি  দ্বার  বিশিষ্ট  ও  চারটি  প্রবাহমান  নদী  থাকবে  ঐ  স্বর্গে বলে  উল্লেখ  আছে ৷ আর   নদীগুলোর  একটিতে দুগ্ধ ,  একটিতে  মধু  ,  একটিতে  মদ্য   আর   চতুর্থ টিতে  সুগন্ধিযুক্ত  নির্যাস  প্রবাহিত  হতে  থাকবে  ৷  এছাড়া  ইহা  একটি  উৎকৃষ্ট  উদ্যান  ও বটে  ৷  সেখানে  বহু  সুমিষ্ট  ফলে  এবং  সুগন্ধ - সদৃশ্য  ফুলেও  পরিপূর্ণ  ভরপূর  থাকবে  ৷  বৈদিক  বা  হিন্দু  ধর্ম  মতের  অনুকরণে  ইহুদিদের  স্বর্গেও  অতিরিক্ত  পূণ্যবানদের  স্বর্গের  উচ্চ  থেকে  উচ্চতর  স্থান  অধিকারের  সুযোগ  এর  নিয়মের  কথা  উল্লেখ  আছে  ৷ (সূত্র; আদি- পুস্তক ২; ৮-১৪ )

         
          ইহুদিদের  ধর্মগ্রন্থ  ইশিয়া  ,  এজিকিল  ,  ডেনিয়েল  ,  ও  যব  ইত্যাদিতে  ও  মৃত্যুর  পরে  পুনরুথ্থানের  বিষয়ের  উল্লেখ  আছে  ৷  ঐ  মতে  শুষ্ক  অস্থিখণ্ড  পুরর্জীবিত  হয়ে  আপন  কর্মাকর্মের  ফল  ভোগ  করার   বিধান  দেয়া  আছে   ৷  আরো  বলা  হয়েছে  যে  শরীর  বিনষ্ট  হলে  ও  শরীরের  লুজ  নামক  একটি  অস্থি  অবিকৃত  থাকবে  এব  শেষ  বিচারের  পূর্বে  পুনরুথ্থানের  সময়ে  পৃথিবীতে  ভয়ানক  এক  শিশিরপাত  হবে  ,  এবং  তাতে  ঐ  লুজ  নামক  অস্থি  শিশিরে  সিক্ত  হয়ে  অঙ্কুরিত  হয়ে  আবার  নরদেহকে  পনরুজিবিত  করবে,  ইত্যাদি  ৷

          তৌরিত  থেকে  জানা  যায়  যে  আদিমানব  আদমকে  সৃষ্টির  পর  ঈশ্বর  তাকে ইডেন  নামক  স্বর্গে  থাকতে  দেয়েছিলেন   ৷  ইডেনের  অবস্থানের  ব্যাপারে  বাইবেলে  বলা  হয়েছে যে ,  “  আর  সদাপ্রভু  ঈশ্বর  পূর্বদিকে  এদনে  (ইডেনে ) এক  উদ্যান  প্রস্তুর  করেন  আর  তাঁর  নির্মিত  মানুষ্য  আদমকে  তথায়  থাকতে  দেন  ৷  আর  সদাপ্রভু  ঈশ্বর  ভূমি  থেকে  সর্বজাতীয়  সুদৃশ্য  ও  সুখাদ্যদায়ক  বৃক্ষ এনে  স্থাপন করেন সেখানে এবং  সেই  উদ্যানের  মধ্যস্থানে  জীবনবৃক্ষ  ও  সদাসদজ্ঞানদায়ক  বৃক্ষ  উৎপন্ন  করেন  ৷  আর  উদ্যানে  সেচনার্থে  এদন  থেকে  এক  নদী  নির্গিত  করে  তার  প্রবাহকে  চতুর্মুখী  করা  হয়  ৷ প্রথম  প্রবাহিত  নদীর  নাম  পীশোন , যা  সমস্ত  হবিলাদেশ  বেষ্টন  করে  প্রবাহিত  ছিলো  , আবার  তথায়  উত্তম  স্বর্ণ  পাওয়া  যেত  এবং  সেই  স্থানে  গুলগুল  ও  গোমেদক  মনি  জন্মিত বলে  ও  উল্লেখ  আছে  ৷  দ্বিতীয়  নদীর  নাম  ছিলো  গীহোন ,  যা  সমস্ত  কুশদেশ  বেষ্টন  করে  প্রবাহিত  ছিলো  ৷  তৃতীয়  নদীর  নাম  হিদ্দেকল,  ইহা  অশুরিয়া  দেশের  মধ্য  দিয়ে  প্রবাহিত  হয়  ৷  আর  চতুর্থ  নদীর  নাম  ছিলো  ফরাৎ  ৷ ( সূত্র ; আদিপুস্তক - ২ ; ৮ -১৪ ) 

          ঐতিহাসিকদের  মতে  পীশোন ,  গীহোন ,  হিদ্দেকল ,  ও  ফরাৎ  এই  চারটি  নদীর  উৎপত্তির  এলাকার  মধ্যে  ঐ  সময়ে  ইডেন  নামে  একটা  জায়গা  ছিলো  ৷  ধারণা  করা  হয়ে  থাকে  যে  ইডেন  স্থানটি  বর্তমান  তুরস্ক  দেশের  পূর্বভাগের  পার্বত্য  অঞ্চলে  অবস্থিত একটি  অঞ্চল  ছিল ৷  অর্থাৎ  তৌরিতে  উল্লখিত  নদী  চারটি  ঐ  অঞ্চল  থেকেই  উৎপন্ন  হয়ে ,  পীশোন  ও  গীহোন  নদীদ্বয়  কৃঞ্চসাগর  ও  কাস্পিয়ান  সাগরে  এবং  হিদ্দেকল  ফরাৎ  নদীদ্বয়  একত্রিত  হয়ে  পারস্য  উপসাগরে  পতিত  হয়েছে৷  তাই  সহজেই  বলা  যায়  যে  ইডেন  উদ্যানে  বসবাস  করার  কালকেই  আদমের  স্বর্গবাস  হিসেবে  চিহ্নিত  হয়েছে  ৷  

          মহাপ্রভুর  নিষিদ্ধ  ফল  ভক্ষণের  অপরাধে  আদম  এদন  উদ্যান  হতে  বিতাড়িত  হয়ে  বহু  বছর  পৃথিবীতে  ঘোরাফেরার  পর  আরবের  আরাফাতে  তাঁর  স্ত্রী  বিবি  হাওয়ার  সঙ্গে  মিলিত  হন  এবং  পরে  ঐ  অঞ্চলেই  কালাতিপত  করেন ৷  সূত্র ; অমল  দাসগুপ্তের  গ্রন্থ-  পৃথিবীর  ঠিকানা )   

          আদিকালে  পৃথিবীতে  মানুষ  ছিলো  কম  আর ভূপৃষ্ঠের  সর্বত্র  মানুষের  বসতি ও  ছিল না ,  ছিল  শুধু  উর্বর  অঞ্চলে  ৷  তাই  নীলনদ  ,  ইউফ্রেটিস  ,  ও  টাইগ্রীস  নদী  বিধৌত  মিশর  ও  মেসোপটেমিয়ায়  এবং  ভারতের  সিন্ধু  নদের  অববাহিকায়  প্রথম  লোকবসতি  ও  সভ্যতা  বৃদ্ধি  পেয়েছিল ৷  বোধহয়  ইডেন  বা  এদন  ও  এমন  একটি  স্থানে  অরস্থিত  ছিলো  ৷  

        বিভিন্ন  সূত্র  মতে  অনেক  অনেক  দিন  পূর্বে  পাশ্চাত্যের  এক  স্থানের  নাম  নাকি  ছিলো    “ গেহেন্না ” ৷ শহরের  সব  ময়লা  আবর্জনা  সহ  মৃত  লাশ  সেখানে  ফেলে  পরে  জ্বালিয়ে  দেয়া  হতো  এবং  অপরাধীদেরকে ও  সেখানে  নিয়ে  গিয়ে  শাস্তি  দিয়ে  পুড়িয়ে  মারা  হতো  ৷  তাই  ঐ  নোংরা  স্থানে  ভয়ে  ও  ঘৃণায়  কেহ  স্বেচ্ছায়  যেতে  চাইতো  না  ৷ বরং  অসৎ  কাজ  করলে  লোকে  তাকে  শাসাইতো  এই  বলে  যে  “ তুমি  কি  গেহেন্না  যেতে  চাও  ?” ইত্যাদি  ৷ 
       অনেকের  ধারনা  উক্ত  “ গেহেন্না” শব্দটি  কালক্রমে  ভাষান্তরিত  হয়ে  গেহেন্নাম  বা  জেহেন্নাম  ( ইংরেজি  G এর  অক্ষরটির  “ জ” উচ্চারণ  অনুসারে ) রূপান্তরিত  হয়েছে  এবং  পরবর্তিতে  আরবী  ভাষায়  ইহা  নাকি  হয়ে  গেছে  “ জাহান্নাম ”  ৷ 
          এ  প্রসঙ্গে  উল্লেখ  যোগ্য  যে  প্রাচীন  হিব্রু  জাতির  বহু  পৌরাণিক  কাহিনী  ইহুদিদের  ধর্মগ্রন্থে  ও  স্থান  পেয়ে  গেছে ,  যা  এর  পরবর্তি  দুইটি  সিমেটিক  ধর্মের  ধর্মগ্রন্থে  ও  উল্লেখিত  হয়েছে  ৷ 

                  যেমন  ইহুদিদের   প্রাচীন   ধর্মমতে  , তালমুদ  রূপকথা  গ্রন্থের  উল্লেখিত  দেবদূত  শব্দটি  যা  তাদের  ধর্ম  গ্রন্থে  স্বর্গদূতে  রূপান্তরিত  হয়েছে  ,
 এবং  তা  তিন  শ্রেণীতে  বিভক্ত  হয়েছে , 
 তাদের  ধর্মগ্রন্থে  এবং  এদের ( স্বর্গদূতদের ) নাম   ,
 ১. সিরাফিম , 
২ . চিরাবিম ও
৩ .ওনাকিম  এবং   অগ্নি  উপাদানে  এদের  দেহ  গঠিত বলে  উল্লেখিত  ছিলো ,

      পরবর্তি  সিমেটিক  ধর্মের  ফেরেস্তারা ও  নাকি  আগুনের  তৈরি  ৷  ইহুদিদের  স্বর্গদূতদের  কাজ  ও  নির্দিষ্ট  করা  আছে , যেমন  স্বর্গদূত  আফাত্রিয়েল  এর  কাজ  মানুষের  চিন্তা  ও  কথাবার্তা  বা  বাক্য  স্বর্গে  বহন  করে  নিয়ে  যাওয়া  আর  স্বর্গদূত  বা  এন্জেল  গাল্- লিজুর  বরাদ্ধকরা  কাজ  হলো  ঈশ্বরের  বাণী  পৃথিবীর  গোচরে  অনা  ,
      এরকম  ১২ জন  নির্দিষ্ট  কাজের  এন্জেল  ছাড়াও  আরো  কয়েকজন  আর্কেন্জেল  বা  প্রধান  এন্জেলের  নাম  ( যেমন, মাইকেল , রাফেল  , গ্যাব্রিয়েল  ইত্যাদি  )  ও  উল্লেখ  আছে ,  যারা  ঈশ্বরের  আদেশে  নিজ নিজ  কর্তব্য  পালন  করে  থাকেন  ৷  
         আর  শয়তানের  ব্যাপারে  ঐ  মতে  দেখা  যায়  সে  ছিলো  সিরাফিল  গোষ্ঠির  একজন  আর্কেন্জেল  ,আর  তার  ইহুদি  নাম  হচ্ছে  সাম মায়েল ৷  ঈশ্বরের  আদেশ  অমান্য  করায়  তার অনুচরসহ  তাকে  দণ্ডাদেশ  দিয়ে  স্বর্গ থেকে  ঈশ্বর  পৃথিবীতে  নির্বাসিত  করেন  ৷     যা  পরের  দুই  ধর্মমতের  সঙ্গে  অনেকটা  মিলেগেছে  বলে  প্রতিয়মান  হয়  ৷ আর  এসবের  মূল  সূত্র  হচ্ছে  হিব্রু  জাতির  রূপকথা  ও  উপকথার  সংকলিত  গ্রন্থ  তালমুদ  ও  মিদ্রাস  ৷   (সূত্র ; প্রাচীন  প্যালেস্টাইন , লেখক;  শচীন্দ্রনাথ  চট্রোপাধ্যায়, পৃ-২১৩-২১৮ )


          বৌদ্ধ  ধর্ম  মত : 

              বৌদ্ধ  ধর্মমতে  এই  পৃথিবীর  কোনো  সৃষ্টিকর্তা  নেই  ৷  ঐ  মতে  জগত  অনন্তকাল  থেকে  বিদ্যমান  আছে  এবং  অনন্ত  কাল  এ  ভাবেই  থাকবে ৷  বৌদ্ধ  ধর্ম  অনুসারে  বিশ্বের  আকৃতি  চিরকালই  একরূপ  আছে  এবং  ভবিষ্যতেও  ঐ  একরূপই  থাকবে  ৷  কর্মানুসারে  প্রাণীসমূহ  সংসারে  ঘুরে  বেড়াচ্ছে  মাত্র  ৷ 

          খ্রীস্টের  জন্মের  প্রায়  ৫০০  বছর  আগে  ভারতীয়  উপমহাদেশ  সহ  দক্ষিন  পূর্ব  এশিয়ার  কয়েক  দেশে  বৌদ্ধ  ধর্মমত  প্রচারিত  হয়  ৷  এই  এলাকাটি  মধ্য  ও  দূর-প্রাচ্য  এবং  আফ্রিকা  থেকে  আলাদা  থাকায়  বোধহয়  হিব্রু  জাতির  রূপকথার  কাহিনির  বিস্তার  এবং  ইহুদিদের  ধর্মের  বিস্তার  ঘটেনি  তখনও  ৷  তাই  স্বর্গ - নরক ,  দেবদূত, নবী  বা  পয়গম্বর  এবং  শেষ  বিচার   ও  শয়তান  সহ  অন্যান্য  বিষয়াদির  উল্লেখ  নেই বৌদ্ধ  ধর্মে , আরার  বৈদিক  বা  হিন্দু  ধর্মের  ও  প্রভাব  মুক্ত  দেখা  যায় এই বৌদ্ধ   ধর্ম  বিশ্বাসে  ৷ 

          খ্রী. পূ . ৫৫৬  সালে  কপিলাবস্তু  নগরে  বুদ্ধদেবের  জন্ম  হয়  এবং  তাঁর  প্রবর্তিত  ধর্মের  নাম  বৌদ্ধধর্ম  ৷  এই  ধর্মে  , এর  অনুসারীরা  পরকাল  বা  স্বর্গ - নরকের  অস্তিত্ব  স্বীকার  করেন  না  ৷  তাই  এই  ধর্মে,  তার  প্রবর্তক  ছাড়া  অন্য  কারো  অস্তিস্থ  নেই  ৷  

বৌদ্ধমতে  জীব  কামনাবশে  পুনঃ  পুনঃ  জন্ম  নেয়  এবং  রোগ , শোক , ও  নানাবিধ  দুঃখ  ভোগ  করে  ৷  তাই  দুঃখভোগের  চির  সমাপ্তির  উপায়  হলো  জন্ম  না  নেয়া  ৷ তার  একমাত্র  উপায়  মানুষের  মনে  যখন  কোনোরূপ  কামনা  বাসনা  একেবারেই  থাকবেনা , তখন  আর  তার  পুনজর্ন্ম  হবে  না ,  আর  এই  অবস্থাকে  ঐ  মতে  মোক্ষলাভ  হিসেবে  অভিহিত  করা  হয়  ৷  আর  জন্মরহিতাবস্থাকে  বলা  হয়  নির্বাণ  ৷  

  বৌদ্ধ  মতে  নির্বাণই  মানুষ্য  জীবনের  শেষ  পরিণতি  ৷  তাই  এতে  স্বর্গ -নরক  বা  শেষ  বিচারাদির  পরিকল্পনা  নেই  ৷  ধর্মপদ  নামক  একটি  গ্রন্থে  তাদের  ধর্ম  বিষয়ের  বিষয়াদি  উল্লেখিত  হয়েছে ৷ 
        

          খ্রীস্টান  ধর্ম  মত:

                পবিত্র  বাইবেলের  দ্বিতীয়  অংশ  ( ৬৬- ৩৯ = ২৭পুস্তক ) যারা  মেনে  চলেন  তাদেরকে  খ্রীস্টান  বলা  হয়  ৷
  তবে  বাইবেলের  প্রথম  অংশের  আদি  পুস্তক (Genesis )  ইহুদি  ও  খ্রীস্টান  উভয়  সম্প্রদায়ই  মেনে  চলেন  এবং  ঐ  পুস্তকে  বর্ণিত  সৃষ্টিতত্ত্বে  উভয়  সম্প্রদায়ই বিশ্বাসী  ৷ 

                খৃস্ট  ধর্মগুরু  যীশুখৃস্ট  ঈশ্বরের  প্রতিনিধিত্ব  পেয়েছিলেন  স্বর্গ  থেকে    আগত  এক  কবুতর  পাখির  মাধ্যমে  ৷  পবিত্র  বাইবেলে  এ  ব্যাপারে  যে  বর্ণনা  আছে  তা  হলো  - “  আর  পরে  যীশু  বাপ্তাইজিত  ( দীক্ষা  প্রাপ্ত  )  হয়ে  অমনি   জল  হতে ( জর্দান  নদীর  জল )  উঠলেন  ,  আর  দেখ  ,  তাঁর  নিমিত্ত   স্বর্গ  খুলে  গেল    এবং  তিনি  (তখন )  ঈশ্বরের  আত্মাকে  কপোতের  ন্যায়  ( কবুতর পাখির  বেশে )  আপনার  উপর  আসতে  দেখলেন  ,  আর  দেখ  ,  স্বর্গ  হতে  এই  বাণী  ( শব্দ )  হলো  ,  ইনিই  আমার  প্রিয়  পুত্র  ,  এতেই  আমি  প্রীত  ৷ ”    (সূত্রবাইবেলের  ক্ষুদ্র  পুস্তক  মথি - ৩ ; ১৬ - ১৭ ) 

  উক্ত  কবুতরটা  ছিলো  স্বর্গিয়  কবুতর  ,  কেননা , পৃথিবীর  কবুতর  মানুষের  মত  কথা  বলতে  পারে  না  ৷  তাই  এই  ঘটনাকে  সহজ - সরল  ও  বিশ্বাস  যোগ্য  হিসেবে  খ্রীস্টানরা  গ্রহণ  করেছেন ৷ দার্শনিক  ডানিকেনের  মতে  যীশুর  শ্রুতি  বাণীটি  হয়তো  যীশুর  সাময়িক  ভাবালুতা  ও  হতে  পারে ) 

                হজরত  ইয়াহিয়া  (আঃ)  ছিলেন  হজরত  জাকারিয়া  (আঃ)  এর  পুত্র  এবং  ইহুদিদের  ধর্মযাজক  ৷
                          ৩০  বছর  বয়সে  যীশু  হজরত  ইয়াহিয়া  (আঃ)এর  নিকট  ইহুদি  ধর্মমতে  বাপ্তাইজিত  হয়েছেন ৷  অর্থাৎ  দীক্ষা  গ্রহন  করেছেন   ৷  আর  এর  ধারাবাহিকতায়  যীশু  যখন  ( ইহুদি  মতে )  জর্দান  নদীতে  বাপ্তাইজিত  হয়ে  নদীর  তীরে  উঠে  আসেন  ,   তখন  তিনি  দেখেন একটি  কবুতর  পাখি   উপর  থেকে উড়ে  তাঁর  মাথার  উপর  আসছে , তিনি  ঐ  কবুতরকে  ঈশ্বরের  আত্মা  বলে  ভাবেন   ,যেহেতু  এই  পাখিটি  উপরের  দিক থেকে  তাঁর  দিকে  আসছিল  ৷  আর কাছে  আসতেই     তিনি  শুনতে  পান যে ,  কবুতরটি  তাকে  বলছে  “  ইনিই  আমার  পুত্র  , এতেই  আমি  প্রীত ”  ৷  

           এই  বাণীর  দ্বারাই  যীশু  ঈশ্বরের  প্রতিনিধিত্ব  পেলেন    মাত্র  ৩০  বছর  বয়সে  ৷   এবং  ঐ  সময়  হতে  তিনি  স্বীয়  ধর্মমত  খ্রীস্টানিটি  ( ইহুদি  মতে  দীক্ষিত  হয়ে  ও  )  প্রচার  শুরু  করেন  ৷ পরবর্তীকালে   ধর্ম  বিষয়ে  তাঁর  মতামত  সমূহকে  পুস্তকারে  প্রকাশিত  হয়ে  ইঞ্জিল  কিতাব  হিসেবে  প্রতিষ্ঠা  পেয়েছে  ৷  ( যা ,   নুতন  নিয়মের  বাইবেল  বা  New Testament  হিসেবে  পরিচিতি  পেয়েছে ) 

                     খ্রীস্ট  ধর্মের  বর্তমান  বয়স  প্রায়  ২০০০  বছর  ৷ আর  তার  প্রচারিত  ধর্ম  গ্রন্থ  ইঞ্জিলকে  ঐশ্বরীক  ধর্ম  গ্রন্থ  বলা  হয়ে  থাকে  ৷  কারণ ,  যীশু  কুমারী  মাতা  মরিয়মের  গর্ভে  জন্ম  গ্রহন  করেন  ৷    স্বাভাবিক  নিয়মের  মত  তাঁর  কোনো  পিতা  ছিলেন  না  ৷  তাই  তাকে  খ্রীস্টানরা  স্বয়ং  ঈশ্বরের  পুত্র  মনে  করেন  ৷ আর  পিতার  পক্ষ  থেকে  পুত্রের   নিশ্চয়  পিতার  বাণী  প্রচারের  অধিকার  দেয়া হয়েছে ৷  তাই ,  সেই  মর্মে  যীশুর  আদেশ- উপদেশ  ও  বিধি  -  নিষেধ  সমূহকে  ঈঁসায়ীগণ  বা  খ্রীস্টধর্মে  বিশ্বাসীগণ  ঈশ্বরের  ঐশ্বরিক  বাণীরূপে  গ্রহন  করেছেন    ৷

                     তবে  তৌরিতের  মতো  ইঞ্জিলের  বাণী  মহাপ্রভুর  নিজের  মূখের  বাণী   নয়  ,  ইহা  যীশুর  মূখের  বাণী  ৷ হয়ত  পিতার  পক্ষ  থেকে  পুত্রের  মূখে  পিতার  বাণী  ৷  বা  পুত্রের  মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে  ঈশ্বর  পিতার  বাণী  ৷ 

               খ্রীস্টানদের  বাইবেলের (New  Testament এর )  ম্যাখু  ,  লুক  ,  রিভিলেশন  ,  কোরিন্থিয়ান্ স  ও  রোমান্স্  প্রভৃতি  অংশের  বর্ণনা  মতে ,  মানুষ  আপন  পাপকর্ম  দ্বারাই  মৃত্যুমুখে  পতিত  হয়   ৷ কারণ  সকল  মানুষই  কমবেশি  পাপকাজে  রত  থাকে  ৷  তাই  সকলেই  মৃত্যুর  অধীন  ৷  মৃত্যুর  পর  আত্মা  দেহ  হতে  বিকারপ্রাপ্ত  ও  ধূলায়  পরিণত  হয়  ৷  
                       আর  মৃতদের  মধ্যে  যারা  পূণ্যবান ,  দেহত্যাগের  পরেই  তাদের  আত্মা  স্বর্গে  গমন  করে   ৷  আর  পাপিদের  আত্মা  শেষ  বিচারের  দণ্ডের  জন্য  প্রস্তুত  হয়  ৷  এবং  শেষে  একদিন  তাদের  বিচার  হয়  ৷  বিচারের  দিন  পবিত্র  আত্মা  যীশু   খ্রীস্ট  স্বর্গ  হতে  মর্ত্যে  অবতরণ  করেন  ৷  
                  যীশুখ্রিস্ট   স্বর্গীয়  বেশে  সুসজ্জিত  হয়ে  এবং  স্বর্গীয়  দূত  ও  পরিষদবর্গের  দ্বারা  পরিবৃত  হয়ে  আসেন এবং  পরে  একপর্যায়ে   বিচারাসনে  উপবিষ্ট  হন   ৷  সেদিন  মৃতগণ  কবর  থেকে  উথ্থিত  হয়   বিচারের  সম্মূখিন  হতে  ৷ বিচারে   দণ্ডপ্রাপ্ত  পাপিগণকে  চিরপ্রজ্জ্বলিত  অগ্নিকুণ্ডে  নিক্ষিপ্ত  হয়  ৷ 

                             আর  পূণ্যবানদের  অত্যুজ্জ্বল  আলোকমালায়  শোভিত  প্রসাদে   প্রেরিত  হয়  ৷   যেখানে  তারা  তাদের  পূর্বপুরুষগণ  সহ  দেবদূতগণ  এবং  স্বয়ং  যীশুখ্রীস্ট  ও  তাদের  সঙ্গে  তাদের আনন্দোৎসবে  যোগদান  করেন  ইত্যাদি ..৷ 

                         খ্রীস্ট  মতে  বিচারকর্তা  , স্বয়ং  ঈশ্বর  নয় ,
                    যীশুই  হবেন  শেষ  বিচারের  বিচার  কর্তা  ৷ 
 সূত্র ;   আলোচ্য  পুস্তক  সমূহে  প্রলয়ান্তে  পুনরুথ্থান  সম্বন্ধে  যে  বিষয়  লিপিবদ্ধ  আছে  তার  মর্মার্থ  এখানে  সংক্ষেপে  বর্ণিত  হয়েছে  মাত্র  ৷ )

                ইসলাম  ধর্ম  মত:  

            মুসলমানদের  পবিত্র  ধর্মগ্রন্থ  পবিত্র  কোরান  অনুসারে  নির্দিষ্ট  সময়ে  আল্লহ্  পৃথিবী  সৃষ্টি  করেছেন  এবং  আল্লাহ্ র  নির্ধারিত  নির্দিষ্ট  সময়ে  ইহা  ধ্বংসপ্রাপ্ত  হবে  ৷

     সৃষ্টিতত্ত্ব  সম্বন্ধে  পবিত্র  কোরানের  সুরা  সেজদায়  ( ১; ৪ আয়াতে  ) বলা  হয়েছে  -
 “ তিনি  আল্লাহ্ , যিনি  নভোমণ্ডল ও  ভূমণ্ডল  এবং এতদুভয়ের  মধ্যে  যাহা  আছে  ,  তাহা  ছয়  দিনে  সৃষ্টি  করেছেন ”   ৷

            সুরা  সেজদা; ৭নং  আয়াত - 
 “  তিনিই  মৃত্তিকা  হতে  মানবসৃষ্টি  আরম্ভ  করেছেন ” ৷  

            সুরা  সাফফাত  ৬নং  আয়াত 

           - “ নিশ্চয়  আমি  পার্থিব  আকাশকে  নক্ষত্রপুঞ্জের  শোভায়  শোভিত  করেছি ” ৷ 

            সুরা  হামিম  ৯নং , ১০নং  ও  ১২নং  আয়াতের  অংশবিশেষ  ;

            - “ তোমরা  কি  তাঁর  প্রতি  অবিশ্বাস  করছো --যিনি  দুই  দিনে  এই  পৃথিবী  সৃষ্টি  করেছেন ……এবং  তন্মধ্যে  উহা  হতে  সমুচ্চ  পর্বতমালা  সৃষ্টি  করেছেন  এবং  চার  দিবসে  তন্মধ্যে  উহার  উৎপাদিকা  শক্তি  নির্ধারিত  করেছেন  ৷ …..অনন্তর  তিনি  দুই  দিবসের  মধ্যে   সপ্ত  আকাশ  সুপ্রতিষ্ঠিত  করেছেন ”  ৷

            সুরা  ক্বাফ  আয়াত  ৩৮নং  
              - “ নিশ্চয়  আমি  নভোমণ্ডল  ও  ভূমণ্ডল  এবং  এতদুভয়ের  অন্তর্গত  বিষয়সমূহ  ছয়  দিবসে  সৃষ্টি  করেছি ”  ৷  ইত্যাদি  সৃষ্টিকালিন  বহু  বর্ণনা  পবিত্র  কোরানে  বিক্ষিপ্তভাবে  উল্লেখিত  আছে  ৷ 
            মুসলিম  ধর্মগ্রন্থমতে  আল্লাহ্  সৃষ্ট  প্রাণীর  স্তর  চারটা  যথা  -
 ১।  ফেরেশতা  , 
 ২।  জ্বীন  , 
 ৩।  মনুষ্য  ও 
 ৪।  শয়তান  ৷ 

            ১। ফেরেশতারা  স্বর্গীয়  দূত  এবং  অগ্নি  বা  নূরের  তৈরি  , তাঁরা  নির্মল  এবং  বিভিন্ন  আকৃতি  ধারণে  সমর্থ ,  তাদের  পানাহারের  দরকার  হয়  না  ,  আর  মানুষের  মত  তাদে  জন্ম -মৃত্যু  নেই ,  আর  তাদের  কোনো  সন্তানাদি  জন্মগ্রহন  করে  না ৷   জেব্রাইল  ,  মেকাইল  ,  এস্রাফিল  ও  আজরাইল  স্বর্গীয়  দূত  ফেরেশতাদের  মধ্যে  প্রধান  স্থানীয়  ৷ 

         ২।  জ্বীন  - ইহাদের  মানুষের  মত  জন্ম - মৃত্যু  এবং  নারী - পুরুষ  ভেদ  ও সন্তানাদি  আছে  ৷  পাপ - পুণ্য  অনুসারে  এদের  স্বর্গ  ও  নরকবাস  ও  নির্ধারিত  আছে  , ইহারা  ধূমশূন্য  অগ্নীর  তৈরি  এবং  মানুষের  অনিষ্টকারী  ৷ 

       ৩। মানুষ্য -- মানুষের  আদিপুরুষ  আদম  , যাকে  আল্লাহ্  মাটি  দ্বারা  সৃষ্টি  করে  পরে  তার  শরীরের  কিছু  অংশ  দিয়ে  আদি  মনবী  হাওয়াকে  সৃষ্টি  করেন   , এবং  উভয়কে  আল্লাহ্  বেহেশতে  বসবাসের  ব্যবস্থা  করে  দেন  ৷  তবে  পরবর্তিতে  আল্লাহ্ র  হুকুম  অমান্য  করে গন্ধম নামক  ফল  ভক্ষণের  অপরাদে  আদম ও  হাওয়াকে  পৃথিবীতে  নির্বাসিত  করা  হয়  ৷  পৃথিবীতে  বহুবছর  আলাদা  ভাবে  ঘুরাফেরার  পরে  তাঁদের  একস্থানে ( আরাফাত  নামক  স্থানে  নাকি ?) পুনর্মিলন হয়  ৷ তখন   তাঁরা  দীর্ঘদিন  পৃথিবীতে  ঘর - সংসার  করেন  এবং  পরে  তাদের  সন্তানাদিতে  ও  বংশাবলীতে  পৃথিবী  মানুষে  ভরে  উঠেছে  ৷   

           ৪। শয়তান  - শয়তান  পূর্বে  মকরম  নামক  বেহেশত বাসী  এক  প্রথম  শ্রেণীর  ফেরেশতা  ছিলো  ৷  আদমকে  আল্লাহ্  সৃষ্টি  করে  সকল  ফেরেশতাকে  আদমকে  সেজদা  করতে  নির্দেশ  দিলে  এই  মকরম  আদমকে  সেজদা  না  করে  আল্লাহ্ র  নির্দেশ  অমান্য  করলে , স্বয়ং  আল্লাহ্  তাকে  “ শয়তান ”    আখ্যা  দিয়ে  বেহেশত থেকে  পৃথিবীতে  নির্বাসিত   করেন ,  শয়তান  তখন  আদম-বংশকে  চিরকাল  অসৎকাজে  প্ররোচনা  দেয়ার  প্রতিজ্ঞা  করে  পৃথিবীতে  নেমে  অাসে  এবং অদ্যাবধি  মানুষকে  অসৎকাজের  প্ররোচনা  বা  দাগা  দিয়ে  বেড়াচ্ছে  ৷     

            পবিত্র  কোরান :

                    পবিত্র  কোরান  মুসলমানদের  ধর্মগ্রন্থ  এবং  ঐশ্বরিক  গ্রন্থের  মধ্যে  পবিত্র  কোরান  সর্বশ্রেষ্ট  ও  অতুলনীয়   ধর্মগ্রন্থ    বলে   পরিচিত  ৷  

                    পবিত্র  কোরানের  প্রচারক  হজরত  মোহাম্মদ  ( সা. ) ৫৭১  খ্রীস্টাব্দের  ২০  এপ্রিল  পবিত্র  মক্কা  নগরে  জন্মলাভ  করেন  ৷  শৈশবে  মাতৃ-পিতৃহীন  হয়ে  পিতামহ  কর্তৃক  প্রতিপালিত  হয়েছিলেন  ৷ শৈশবে  লেখাপড়ার  কম  সুযোগের  মধ্যে  ও  তিনি  ছিলেন    শান্ত  ,  ধীর-স্থির  ,  সত্যবাদী  ও  চিন্তাশীল  আর  বড়োহয়ে  তিনি  একাধারে  বিশ্বাসী  ,  ন্যায়বান  ,  দয়ালু  ,  নির্ভীক  ,  পরোপকারী  , ভাবুক  ও  ক্ষমাশীল  সহ  শত  শত  সদগুণের  অধিকারী  হয়েছিলেন  ৷  সেকালে   আরবে  ইহুদি  ও  খ্রস্টান  ধর্ম  ছাড়াও  মূর্তিপূজার  প্রচলন  ছিলো  ৷  আর  ছিলো  মারামারি ,  কাটাকাটি  ,  হিংসা  ,  দ্বেষ  ও  পরনিন্দা  ইত্যাদি  এবং  মানুষের  প্রতি  ছিলো  অন্যায়  অবিচার  ইত্যাদি  ৷  যা  দেখে  তিনি  কেবল  চিন্তা  করতেন  কি  করে  এর  থেকে  এদেরকে  অজ্ঞানান্ধকার  থেকে  মুক্তকরে  জ্ঞানের  আলো  দান  করে  একতাবদ্ধ  করে  ইহকাল  ও  পরকালের  সরল  পথ  দেখানো  যায়  ৷  আর  তাঁর  বয়স  বৃদ্ধির  সঙ্গে  সঙ্গে  সেই  চিন্তা  ও  চেতনার  পরিধি  বেড়ে  আরব  জাহান  ছাড়াও  বিশ্বমানবের  কল্যাণের  চিন্তায়  পর্যবসিত  হলে  , তিনি  তখন  মক্কার  অদূরবর্তী  হেরা  পর্বতের  গুহায়  গভীর  চিন্তাসমুদ্রের  তলদেশে  ডুব  দেন  এর  প্রকৃত  সমাধান  বের  করতে  ৷

                 ৬১০  খ্রস্টাব্দের  আগস্ট  মাসের  ৬ তারিখে  হজরত  মোহাম্মদ (সা. ) ৪০  বছর  বয়সে  যখন  মক্কার  হেরা  পর্বতের  গুহায়  ধ্যানমগ্নাবস্থায়  বসে  ছিলেন  , ঠিক  তখন  শুনতে  পান  যে  ,  আল্লাহ্'র  ফেরেশতা  হজরত  জেব্রাইল (আ) এসে  তাঁকে  সম্বোধন  করে  বলছেন ,  “  আল্লাহ্'র  বাণী  আপনার  উপর  নাজেল  হলো  ,  আপনি  আল্লাহ্ র  রসূল ” ৷  আর  সেই  দিন   হতে  হজরত  মোহাম্মদ (সা. ) হলেন  পয়গম্বর  ,  অর্থাৎ  আল্লাহ্ র  প্রেরিত  মহান  বাণীবাহক  ৷ 

                ঐদিন  হতে  হজরত  তাঁহার  সকল   সমস্যাসমূহের  সমাধানে  প্রাপ্ত  হতে  থাকেন  জেব্রাইল  ফেরেশতা  মারফত  আল্লাহ্ 'র  বাণীসমূহ  আর   তা  মানুষের  মধ্যে  প্রকাশ  করতে থাকেন   “ ভববাণী” বা  আল্লাহ্   প্রেরিত   ‘ওহী’  রূপে  ৷  ইহকাল  ও  পরকাল  বিষয়ে  মানুষের  কর্তব্য  সম্বন্ধে  আল্লাহর  বাণীরূপে  জেব্রাইল  ফেরেশতার  মারফত   হজরত  মোহাম্মদ  ( সা. ) আমরণ  কাল  পর্যন্ত  যে  সমস্ত  আদেশ - উপদেশাদি  সমূহ  প্রাপ্ত  হয়েছেন  ,  তারই  সংকলন  পবিত্র  কোরান  মহাগ্রন্থখানা  ৷

                পবিত্র  কোরানের  বিধান  ব্যতীত  হজরত  স্বয়ং  ধর্মবিষয়ে  আবশ্যকীয়  অনেক  বিধান  ও  প্রদান  করেছেন  ৷  সেই  সমস্ত  বিধানের  সংকলনকে  বলা  হয়  পবিত্র  হাদিস  গ্রন্থ  ৷  ইসলাম  ধর্ম  প্রধানত  পবিত্র  কোরান  ও  হাদিস  গ্রন্থের  বিধানের  উপর  প্রতিষ্ঠিত  ৷  

                    মুসলমানদের  ধর্ম  মত  ;-

                         ইসলামীয়  মতে ,  প্রলয়য়ের  বা  কেয়ামতের  চল্লিশ  বছর  (মতান্তরে  চল্লিশ  দিন )  পরে  এস্রাফিল  ফেরেশতা  দ্বিতীয়  বার  শিঙ্গা  বাজাবেন  ( কিয়ামতের  সৃষ্টির  জন্যে  প্রথমবার  শিঙ্গা  বাজায়েছিলেন )  এবং   তখন  পুনঃ  জগত  সৃষ্ট  হবে  ,  হয়তোবা  নূতন  রূপে  ৷  তখন  মৃতের  পুনরুথ্থান  ঘটবে  এবং  বিচারান্তে  নিজ  নিজ  পাপ -পুণ্যের  ফল  ভোগ  করবেন  ৷ 

    কোনো  কোনো  মতে ,একমাত্র  আত্মাই  বিচারের  দিনে  উপস্থিত  হবে  বিচারের  জন্যে  ৷  আবার অন্য  বিশ্বাসে  বিচারের  দিন দেহ ও আত্মা  পূর্বাকারপ্রাপ্ত  হয়েই  বিচারে  উপনীত  হবে,তাই  বিচারক্ষেত্রে  হাশর  ময়দানে  পাপিদের  হস্ত  ,  পদ  ,  চক্ষু  ,   কর্ণ  ইত্যাদি  পাপকর্মের  সাক্ষ্য  প্রদান  করবে  ৷  আর  দোজকের  শাস্তির  বর্ণনায়  বলা  হয়েছে  যে ,  পাপীদেরকে  পুঁজ - রক্ত  ইত্যাদি  খেতে  বাধ্য  করা  ছাড়াও  অগ্নির  উত্তাপে  মস্তিষ্ক  বিগলিত  হবে,  যে  পরস্ত্রী  দর্শন  করেছে  ,  সাঁড়াশী  দিয়ে  তার  চোখ  উৎপাটন  করা  হবে  ইত্যাদি  ..৷    স্বর্গের  বর্ণনায়  বলা  হয়েছে  , পুণ্যবানরা  স্বর্গে  নানাবিধ  সুমিষ্ট  ফল  আহার  করা  ছাড়াও  নেশাহীন  মধ্য  পান  করবেন  আর  হুর  দের  সঙ্গে  সহবাস  করবেন  , ইত্যাদি  বলা  হয়ছে  এই  বর্ণনায় ৷

                মৃত্যুর  পরে  শরীর  বিলয়প্রাপ্ত  হলেও  আল -আজব ( মানুষের  মেরুদণ্ডের  নিম্নভাগের  একটা  হাড় )  কখনও  ধ্বংসপ্রাপ্ত  হয়  না  ,  ইহা  বীজস্বরূপ  বিদ্যমান  থাকে  ৷  শেষ  বিচারের  পূর্বে  ৪০  দিন  ব্যাপী  একটানা  বৃষ্টিপাত  হবে  এবং  ঐ  বৃষ্টির  জলে  মেরুদণ্ডের  অস্থি  সিক্ত  হয়ে  অঙ্কুরিত  হয়ে  আবার  নরদেহ  উদ্ গত  হবে  ৷  এই  পর্যায়ে এস্রাফিল  ফেরেশতা  তৃতীয়বারের  মতো  শিঙ্গা  ফুঁকলে , শিঙ্গায়  রক্ষিত  আত্মাসমূহ  মক্ষিকার  ন্যায়  ইতস্তত  ভাবে  উড়ে  গেয়ে  নিজ  নিজ  দেহে  প্রবেশ  করবে  এবং  মানুষ  তখন  সজীব  হয়ে  উঠবে  আর  প্রথম  সজীব  হয়ে  জীবন  লাভ  করবেন  হজরত  মোহাম্মদ  ( সাঃ ) ৷  

            পুনরুথ্থানের   সময়ে  মানুষ্য ,  জ্বীন  ,  ফেরেশতা  ও  অন্যান্য  জীবজন্তু  সকলেই  পুনর্জীবিত  হলে  ও  শুধু  মানুষ  ও  জ্বীনের  বিচার  হবে  ৷  মুসলমানগণ  বলে  থাকেন  পাপ- পুণ্যের  হিসেবের  লিখিত  পুস্তক  বিচারার্থীদের  হাতে  প্রধান  করা  হবে  এবং  তারা  নিজেরা  তা  পাঠ  করবেন  ৷  বিচারক্ষেত্রের  তুলাদণ্ডে  পুস্তকে  লিখিত  পাপ - পুণ্যের  পরিমাপ  নির্ধারণ  করে  শাস্তি  নির্ধারিত  হবে  ৷  যাদের পাপের  পরিমান  বেশি তাদের  স্বর্গের  বামদিকের  নরকের  পথে  যেতে  হবে  , আর  বিচারে  নির্ধারিত  পুণ্যবানরা  স্বর্গের  দিকে  দক্ষিণ  পথে  যেতে  হবে  ৷ 

            তবে  এই  মতে ও  পূর্বের  অনেক  মতের  মতো  পাপী  ও  পুণ্যবান  সকলকে  “ আল  সিরাত ” নামক  একটি  সেতু  , যা  চুল  অপেক্ষা  সূক্ষ্ম  ও তরবারির  থেকেও  বেশী  ধারসম্পন্ন  , তা  পার  হতে  হবে  ৷  আর  পুণ্যবাণরা  সহজেই  তা  অতিক্রম  করে  স্বর্গে  প্রবেশাধিকর  পাবে  ,  পাপীগণ  সেতু  পার  হতে  গিয়ে  নিম্নে  ভীষণ  অগ্নিময়  নরককুণ্ডে  বা  নরকার্ণবে  পতিত  হয়ে  শাস্তি  ভোগ  করতে  থাকবে  ৷

              মুসলমানদের  মতে  ,  নরকের  সাত  ভাগ  এবং  স্বর্গের  ভাগ  আটটি     সাত  নরক  বা  দোজখ  হলো ;-

  1.    জাহান্নাম   
  2.    লধা
  3.   হোতামা  
  4.  আল - সৈর  
  5.  সাকা  
  6. আল-জাহিম  ও 
  7.  আল - হায়াইত  বা  হাবিয়া  দোজখ  ৷ 

 পাপের  ধরণে  ভিন্ন  ভিন্ন  শ্রেশীর  নরকের  প্রাপ্তি  ঘটবে  ,  যেমন -সর্বোচ্চ  পাপীর  জন্যে  নির্ধারিত  হবে  সর্বনিম্ন  নরক  হাবিয়া   , 
 আর  এর  প্রতি  প্রকোষ্ঠে  ১৯  জন  করে  প্রহরী  ফেরেশতা  কর্তব্যরত  থাকবে  , ( একটা  কৌতুক, বাঙালিদের  দোজখে  নাকি  কোনো  প্রহরীর  প্রয়োজন হবে  না, কারণ  এক  পাপী  অন্যকে  পাপীকে  পাহারা  দিয়ে  রাখবে  যাতে  কেউ  পালাতে  না পারে  ৷ ) 
 আর  দুজখের  প্রধান  প্রহরীর  নাম  মালেক  ৷ 

         আটটি  স্বর্গ  বা  বেহেশতের  নাম  ;

  1.  লদ
  2.  দারুস  সালাম 
  3.  দারুল  করার
  4.  উদন  
  5.  আল- মাওয়া
  6.  জান্নাতুল  নঈম
  7.  জান্নাতুল  ইলিন    
  8.  জান্নাতুল  ফেরদাউস  ৷ 


 স্বর্গের  প্রধান  প্রহরীর  নাম - রেজওয়ান  ৷ 
 আর  জান্নাতুল  ফেরদাউসের  উর্ধ্বভাগে  অবস্থিত  আসনটি  নির্ধারিত  আছে  আল্লাহ্ র  জন্যে  ৷ 

স্বর্গে  মনোহর  উদ্যান  ,  নদী  ইত্যাদি  বিরজমান  আছে  ৷নদীর  একটিতে  পরিশ্রুত  জল  , একটিতে  দুগ্ধ  , একটিতে  মধু  এবং  চতুর্থটিতে  সুগন্ধী  নির্যাস  প্রবাহিত  আছে  এবং  সেখানকার  অট্টালিকা  স্বর্ণে  বা  রৌপ্যে  নির্মিত  আর  বৃক্ষের  কাণ্ডসমূহ  সুবর্ণময় ,  এবং  প্রস্তরসমূহ  , মুক্তা  ও  প্রবাল  ইত্যাদি  মরকতময়  ও  বটে  ৷

        ঐ  স্বর্গের  তুবা  নামক  বৃক্ষে  যিনি  যেই  ফল  আশা  করবেন  , তিনি  তাৎক্ষণিক  ঐ  বৃক্ষ থেকে  সেই  ফলই  প্রাপ্ত  হবেন  ৷ 
 আর  স্বর্গে  প্রবাহিত  আল-কাওসার  নদীর  সুগন্ধ  সুস্বাদু  জল  একবার  পান  করলে  তার  আর  কখনও  তৃষ্ণা  পাবে  না  ৷ 

                 এ  সব  ছাড়াও  স্বর্গে  অপরূপ  রূপ-লাবণ্য  সম্পন্ন  এবং  সুবৃহৎ  কৃষ্ণবর্ণ চোখ  বিশিষ্ট    হুর - অল - ঐন  নামে  পরিচিত  হুরীগণ  সর্বদা  স্বর্গবাসীদের  মনোরঞ্জনের জন্যে নিযুক্ত ও সদামজূতথাকবে ,যারা   মর্ত্যের   রমণীদের   মতো মৃত্তিকায়  তৈরি  নয় বরং হুররা  মৃগনাভি  দ্বারা  গঠিত  হয়েছে ইত্যাদি  , যা  পূর্বের  দুই  সিমেটিক  ধর্মমতের  অনুরূপ  বলে  কিছু  কিছু  ক্ষেত্রে  প্রতিয়মান    হয়  ৷  

এই  লেখা  বা  বর্ণানা  আরো  বিস্তারিত  ভাবে  উল্লেখ  করার  সুযোগ  ছিলো  কিন্তু  বোধগম্য  কারণে  তা  না  করে,  এইখানে  এর  সমাপ্তি  টানা  হলো  ৷

  ( বি  : দ্র :  এই  লেখাটি  শুধু  কিছু  পৌরাণিক  ও  ধর্মের  তথ্যের  উপর  ভিত্তি  করে  কোনো  মন্তব্য  ছাড়া  প্রকাশ  করা  হয়েছে,  কারো  ধর্মবিশ্বাসে  আঘাত  করতে, এই  লেখাটি  সংকলিত  করা  হয়নি,  তাই  ইহা  কোনো  গণমাধ্যমে  প্রকাশ  করা  যাবে  ন৷, অনুমতি  ছাড়া,  ইহা  শুধু  আগ্রহী  পাঠকদের  জন্যে  লেখা  হয়েছ,  সবাইকে  ধন্যবাদ  ,  লেখক  )

 (সূত্র ;-  আরজ আলী  মাতুব্বরের  লিখিত  গ্রন্থ  - আরজআলী মাতুব্বর  রচনা  সমগ্র - ১ ও ২  , এর  অনুকরণ  করে  এবং  ক্ষেত্রবিশেষে  সংক্ষেপ  করে  এই  লেখাটি  তৈরি  করা  হয়েছে , তাই  এর    লেখক  আরজ আলী  মাতুব্বরই, বর্তমান  লেখক  নন , তিনি  শুধু  সংকলিত  করেছেন  মূল  লেখাগুলোকে  একত্রে  )

মন্তব্যসমূহ