প্রাচীন ও বর্তমান ধর্ম বিশ্বাস ও পৌরাণিক কাহিনীর আলোকে স্বর্গ ও নর ক এবং শেষ বিচার প্রসঙ্গে কিছু তথ্য ;-
প্রাচীন ও বর্তমান ধর্ম বিশ্বাস ও পৌরাণিক কাহিনীর আলোকে স্বর্গ ও নর ক এবং শেষ বিচার প্রসঙ্গে কিছু তথ্য ;-
আমাদের দেশের এক দার্শনিক কবি স্বর্গ ও নরক এর অবস্থানের ব্যাপারে তাঁর উপলব্ধি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন যে মানুষের আধ্যাত্মিক চিন্তা এবং তার মনোরাজ্যের কল্পনার জগতেই স্বর্গ ও নরকের অবস্থান ৷ তাই বোধকরি কবি তাঁর কবিতায় লিখেছেন ; -
“ কোথায় স্বর্গ , কোথায় নরক , কে বলে তা বহুদুর ?
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ - নরক , মানুষেই সুরাসুর ”
ঐতিহাসিকদের মতে পৃথিবীতে বর্তমানে প্রচলিত যতো ধর্ম আছে তার মধ্যে বৈদিক বা হিন্দু ধর্ম সবচেয়ে প্রাচীন ৷ তাই প্রথমে পৌরাণিক হিন্দু শাস্ত্র থেকে আলোচনা আরম্ভ করা হলো ৷
পৌরাণিক হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে স্বর্গ শুধু দেব দেবীদের বাসস্থানের জন্যে নির্ধারিত আছে ৷ তাই স্বর্গে কোনো শোক , তাপ , জরা মৃত্যু কিছুই নেই ৷ স্বর্গতে সব সময় চির বসন্ত বিরাজমান থাকে ৷ আর স্বর্গবাসীদের মনের আনন্দের জন্যে সেখানে রয়েছে যেমন নন্দন কানন , প্যারিজাত বৃক্ষ , তেমনি রয়েছে সুরভী গাভী , ঐরাবত হস্তী , ঊচ্চঃশরা অশ্ব প্রভৃতি ৷ আর আছে স্বর্গবাসীদের কামনা বাসনা পুরণের জন্যে অপ্সরা, কিংকরী , গন্ধর্ব ইত্যাদি দেহবিলাসিনিরা ও চির মজুত ৷
হিন্দু পৌরাণিক শাস্ত্রানুসারে স্বর্গের অবস্থান এক দূর্গম ও দূরারোহ এবং অতি উচুঁতে অবস্থিত একটি স্থানে ৷ যার অবস্থান সুমেরু পর্বতের উপরে ধারণা করা হয় ৷ ভৌগলিকদের মতে ঐ স্থানটি ছিল বর্তমান হিমালয় পর্বতের অংশ বিশেষ ৷ (সূত্র ;- অমল দাস গুপ্তের লেখা গ্রন্থ -সরল বংলা অভিধানের ৮৭ পৃষ্টা )
আজকাল হিমালয় পর্বতে যে ভাবে সহজে আরোহণ করা যায় , তখনকার দিনে অসাধারণ শারিরিক ও মানসিক শক্তি সম্পন্ন না হলে কেউ সেখানে পৌঁছাতে পারতনা ৷ সেখানে শুধু দেব দেবী যেতে পারত ৷ তাই ঐ উঁচুস্থান থেকে নীচু সমতল ভূমিকে বলা হতো মর্ত্যলোক ৷ আর সাধারণ মানুষেদের এই সমতল মর্ত্যেলোকে বসবাস করতে হত ৷ কারণ দেবদেবী ছাড়া কাউকে স্বর্গে যেতে দেয়া হতো না ৷
মহাভারত ও রামায়ন ,
বেধ বা উপনিষদ এর সমপর্যায়ের না হলেও এই দুই গ্রন্থকে ও হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থের মতো স্থান দেয়া হয়ে থাকে ৷ মহাভারত থেকে জানা যায় যে , ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির পদব্রজে এবং সশরীরে স্বর্গে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছেন ৷ পরে তাঁর স্বর্গে গমনের পথ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে , ঐ স্থানটি কৈলাস পর্বত হিসেবে পরিচিত ছিলো ৷ যা বর্তমানে হিমালয় পর্বতের এক অংশে অবস্থিত আছে ৷ (সূত্র;- পূর্বে উল্লেখিত গ্রন্থের ২৫১ পৃষ্টা )
বেধ বা উপনিষদ এর সমপর্যায়ের না হলেও এই দুই গ্রন্থকে ও হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থের মতো স্থান দেয়া হয়ে থাকে ৷ মহাভারত থেকে জানা যায় যে , ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির পদব্রজে এবং সশরীরে স্বর্গে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছেন ৷ পরে তাঁর স্বর্গে গমনের পথ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে , ঐ স্থানটি কৈলাস পর্বত হিসেবে পরিচিত ছিলো ৷ যা বর্তমানে হিমালয় পর্বতের এক অংশে অবস্থিত আছে ৷ (সূত্র;- পূর্বে উল্লেখিত গ্রন্থের ২৫১ পৃষ্টা )
রামায়ন থেকে জানা যায় যে লঙ্কাধিপতি রাবণ মর্ত্যলোক থেকে স্বর্গে আরোহন করে দেবগণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন এবং রাবণের পুত্র মেঘনাদ স্বর্গবাসী দেবরাজ ইন্দ্রোকে ঐ যুদ্ধে পরাজিত করে বন্দী করতে ও সক্ষম হয়েছেন , বলেই মেঘনাদকে “ ইন্দ্রজিৎ ” উপাধীতে ভূষিত করা হয়েছিলো ৷
এ থেকে প্রমাণিত হয়ে যায় যে , গায়ের জোরে পৌরাণিক শাস্ত্রের উল্লেখিত স্বর্গে মর্ত্যবাসী মানুষ আরোহন করে পারত ৷ আর বৈদিক মতে স্বর্গকে অতি উঁচ্চে বা উর্ধ্বলোকে অবস্থিত একটি স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ৷ আবার কিছু ধর্মযাজকের মতে পুণ্যবাণদের কবরের সঙ্গে স্বর্গের এবং পাপিদের কবরের সঙ্গে নরকের যোগাযোগ হতে ও পারে ৷ অর্থাৎ ঐ মত যদি সঠিক হয় তবে স্বর্গ ও নরকের অবস্থান ভূগর্ভেই বলে মনে হয় ৷
এ থেকে প্রমাণিত হয়ে যায় যে , গায়ের জোরে পৌরাণিক শাস্ত্রের উল্লেখিত স্বর্গে মর্ত্যবাসী মানুষ আরোহন করে পারত ৷ আর বৈদিক মতে স্বর্গকে অতি উঁচ্চে বা উর্ধ্বলোকে অবস্থিত একটি স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ৷ আবার কিছু ধর্মযাজকের মতে পুণ্যবাণদের কবরের সঙ্গে স্বর্গের এবং পাপিদের কবরের সঙ্গে নরকের যোগাযোগ হতে ও পারে ৷ অর্থাৎ ঐ মত যদি সঠিক হয় তবে স্বর্গ ও নরকের অবস্থান ভূগর্ভেই বলে মনে হয় ৷
হিন্দুমতে আরো দেখা যায় যে মানুষ পুণ্যের তারতম্যানুসারে ক্রমান্নয়ে ঊর্ধ্ব হতে ঊর্ধ্বতম স্বর্গের অধিকারী হতে পারে ৷ আবার মানুষের পাপ অনুসারে নিম্ন থাকে নিম্নতর নরকে নিপতিত হতে হয় ৷ অবশ্য এর আগে একটি বৈতরণী পার হতে হয় ৷ আর নিরাপদে অতিক্রমকারীরা স্বর্গ লাভ করে থাকে আর যারা ঐ বৈতরণী অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয় তারা পচা , রক্তমাংশে পরিপূর্ণ দুর্গন্ধযুক্ত ও অগ্নিগরম নদীর জলে পড়ে যায় ৷ আর সেখানেই থাকতে হবে তাদের অনন্তকাল পর্যন্ত ৷ হিন্দু শাস্ত্রেও পাপ পূণ্য তুলা দণ্ডে ওজন করে পরিমাপের কম বেশি অনুসারে পাপ পূণ্যের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা আছে ৷ বৈদিক ও পৌরাণিক ঋষি- মুনিগণ এই তথ্য প্রচার করেছেন সাধারণ মানুষের কাছে ৷
মিশরীয় মত :
এই মতে স্বর্গে অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সঙ্গে কৃষিকাজের ব্যবস্থা ও নাকি থাকে ৷ তাদের আর এক বিশ্বাস ছিল যে যুগ বিবর্তনান্তে তিন থেকে দশ সহস্র বছর পরে মৃত ব্যক্তির আত্মা দুনিয়াতে ফিরে আসতে পারবে ৷ তাই বোধহয় এই বিশ্বাসের কারণে মিশরে মৃতদেহ রক্ষার প্রথা প্রবর্তিত হয়েছিল ৷ প্রাচীন মিশরীয়রা প্যাপিরাস বা সমাধিগাত্রে মৃত ব্যক্তিরদের জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন কথা লিখে রাখার প্রচলন ছিল ৷ পরে একসময় সেই সব লেখা সংকলন করে আমদুয়াত গ্রন্থ , ফটকের গ্রন্থ এবং মৃতের গ্রন্থ নামক তিনটি গ্রন্থ রচিত হয় ৷ মৃতের গ্রন্থের বর্ণনায় দেখা যায় যে প্রত্যেক মৃতকে পরমেশ্বরের কাছে একটা শপথ বা এফিডেভিট দিয়ে জীবিত কালে তার পাপ পূণ্য কাজের হিসেব দেয়ার বিধান ছিল ৷ পরে ঐ সত্যপাঠের সত্য মিথ্যা যাচাই করতেন জ্ঞানের দেবতা থৎ এবং হোরাস ৷ মৃতের হৃৎপিণ্ড দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হত অনেকটা হিন্দু শাস্ত্রের অনুরূপ ৷ যে ভাবে পাপ - পুণ্য এর পরিমান নির্ধারণের জন্যে যা করা হবে বলে বলা হয়েছে , সে রকম ৷ বিচারের বর্ণনায় দেখা যায় যে দুইটি দ্বার দিয়ে স্বর্গ ও নরককুণ্ডে প্রবেশ করতে হওয়ার নিয়মের বিধান ছিল ৷ পুণ্যাত্মাগণ আলু নামক স্বর্গধামে প্রবেশ করে মনের আনন্দে শস্যক্ষেত্র চাষ করতে পারত ৷ আর পাপাত্মাদের নরককুণ্ডে পাঠিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে পরে জ্বলন্ত আগুনে বা গভীর সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হওয়ার বিধান ছিল ৷ আরো কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর অধিকতম পুণ্যবানগণ এক পর্যায়ে নিম্নতম স্বর্গে দেবগণের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিধান ও ছিলো ঐ মতে ৷
ইরানীয়দের মত:
ইরানীয় ঋষি বা ধর্মগুরু জোরওয়াষ্টার “ জেন- আভেস্তা ” নামক গ্রন্থখানা পেয়েছিলেন ইরানীয় দেবতা “ অহুর মজদা ” এর কাছ থেকে কোনো এক বজ্রবিদ্যুৎ সমাকীর্ণ ঘোর নিনাদ সম্বলিত রাতে এক পর্বতে বসে ৷ আর তা প্রায় খৃষ্টের জন্মের দু-হাজার বছর পূর্বে খ্রী. পূ . ১৯২০ সালের দিকে বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন ৷ ইরানীয় দেবতা অহুর মজদা একেবারে নিরাকার ব্রহ্ম ছিলেন না ৷ তাকে ব্যাক্তিসত্তার অধিকারী এক স্বর্গবাসী দেবতা মনে করা হত ৷ ঐ মত অনুসারে ও মৃত্যুর পর জীবিত কালের পাপ ও পূণ্যের দণ্ড ও পুরস্কারের বিধান ছিল ৷ তবে প্রথমে মৃতের দেহকে এক দানব অধিকার করে নেয়ার বিধান ছিল ৷ তখন ঐ আত্মাকে বিভিন্ন পরীক্ষার পরে এক পর্যায়ে এসে আত্মার মাঝে জ্ঞানের সঞ্চার করার বিধান ছিল ৷ তখন আত্মাকে হিন্দু মতের মত চিনাভাদ নামক এক পুল পার হতে দেয়া হত ৷ পূণ্যবানরা অনায়াসে সে পুল পার হয়ে গিয়ে দেবতার সঙ্গে মিলিত হতে পারত ৷ আর তখন দেবতা অহুর মজদা ঐ পূণ্যবান আত্মাকে স্বর্ণ সিংহাসনে সমাসীন করে হুরান -ই -বেহেস্ত নামী পরীগণের সহবাসে থাকার ব্যবস্থা করে তাকে সর্বপ্রকার আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার বিধান ছিল ৷ আর যে আত্মা পুল পার হতে ব্যর্থ হত অর্থাৎ যে আত্মা জীবিত কালে পাপ কার্য করেছে সে নরকার্ণবে নিপতিত হয়ে চির শাস্তি ভোগ করার জন্য মনোনিত হত ৷ ইরানীয়দের ধর্মগ্রন্থ জেন্দ- আভেস্তায় স্বর্গ - নরকের শ্রেণীবিভাগের বিধান ছিলো না ৷ তাদের স্বর্গের নাম গারো - ডে মান, যা পারস্যভাষায় গাবাৎ মান নামে অভিহিত ৷ ঐ মতে আরো এক নিয়মের আবাস মেলে যে , পাপী আত্মা উপাসনা দ্বারা এবং স্বর্গ লাভ প্রাপ্ত বন্ধু - বান্ধবের মধ্যস্থতায় কারো কারো নরকভোগের সময় হ্রাসপ্রাপ্তের বিধানের ও প্রচলন ছিলো ৷
ইরানীয় ঋষি বা ধর্মগুরু জোরওয়াষ্টার “ জেন- আভেস্তা ” নামক গ্রন্থখানা পেয়েছিলেন ইরানীয় দেবতা “ অহুর মজদা ” এর কাছ থেকে কোনো এক বজ্রবিদ্যুৎ সমাকীর্ণ ঘোর নিনাদ সম্বলিত রাতে এক পর্বতে বসে ৷ আর তা প্রায় খৃষ্টের জন্মের দু-হাজার বছর পূর্বে খ্রী. পূ . ১৯২০ সালের দিকে বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন ৷ ইরানীয় দেবতা অহুর মজদা একেবারে নিরাকার ব্রহ্ম ছিলেন না ৷ তাকে ব্যাক্তিসত্তার অধিকারী এক স্বর্গবাসী দেবতা মনে করা হত ৷ ঐ মত অনুসারে ও মৃত্যুর পর জীবিত কালের পাপ ও পূণ্যের দণ্ড ও পুরস্কারের বিধান ছিল ৷ তবে প্রথমে মৃতের দেহকে এক দানব অধিকার করে নেয়ার বিধান ছিল ৷ তখন ঐ আত্মাকে বিভিন্ন পরীক্ষার পরে এক পর্যায়ে এসে আত্মার মাঝে জ্ঞানের সঞ্চার করার বিধান ছিল ৷ তখন আত্মাকে হিন্দু মতের মত চিনাভাদ নামক এক পুল পার হতে দেয়া হত ৷ পূণ্যবানরা অনায়াসে সে পুল পার হয়ে গিয়ে দেবতার সঙ্গে মিলিত হতে পারত ৷ আর তখন দেবতা অহুর মজদা ঐ পূণ্যবান আত্মাকে স্বর্ণ সিংহাসনে সমাসীন করে হুরান -ই -বেহেস্ত নামী পরীগণের সহবাসে থাকার ব্যবস্থা করে তাকে সর্বপ্রকার আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দেয়ার বিধান ছিল ৷ আর যে আত্মা পুল পার হতে ব্যর্থ হত অর্থাৎ যে আত্মা জীবিত কালে পাপ কার্য করেছে সে নরকার্ণবে নিপতিত হয়ে চির শাস্তি ভোগ করার জন্য মনোনিত হত ৷ ইরানীয়দের ধর্মগ্রন্থ জেন্দ- আভেস্তায় স্বর্গ - নরকের শ্রেণীবিভাগের বিধান ছিলো না ৷ তাদের স্বর্গের নাম গারো - ডে মান, যা পারস্যভাষায় গাবাৎ মান নামে অভিহিত ৷ ঐ মতে আরো এক নিয়মের আবাস মেলে যে , পাপী আত্মা উপাসনা দ্বারা এবং স্বর্গ লাভ প্রাপ্ত বন্ধু - বান্ধবের মধ্যস্থতায় কারো কারো নরকভোগের সময় হ্রাসপ্রাপ্তের বিধানের ও প্রচলন ছিলো ৷
ইরানীয়দের মতে পৃথিবী ধ্বংসের ( কিয়ামতের ) পরে সওসন্ত নামক এক অবতারের ( ইয়াজুঝ- মাজুঝ এর মত নাকী ?) আবির্ভাব হবে ৷ আর তিনি অত্যাচার - অবিচার থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করে এক অনন্ত সুখের রাজ্য পৃথিবীব্যাপী সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করবেন ৷ তখন বিশ্বব্যাপী এই পুনরুথ্থানের পর আবার বন্ধু-বান্ধব , এবং আত্মীয়- স্বজন পুনরায় একত্রে মিলিত হবে এবং তখন সৎ ও অসতের মধ্যে একটা নির্ধারণী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে পাপি এবং অসতদেরকে আজীবন ভীষণ যন্ত্রণা ভোগ করতে দেয়া হবে, ইত্যদি ..৷
চৈনিক মত :
ইহুদিদের মত :
ভূমিকা: পবিত্র বাইবেল গ্রন্থটি ৬৬ খানা ক্ষুদ্র পুস্তকের সমষ্টি এবং দুই ভাগে ইহাকে বিভক্ত করে , প্রথম ভাগের ৩৯ টা পুস্তক নিয়ে ঘটিত অংশকে পুরাতন নিয়ম বা old Testament হিসেবে অভিহিত করে এই অংশকে যারা মানেন তাদেরকে ইহুদি বলা হয় ৷
পুরাতন অংশের গ্রন্থগুলোকে মুসলমানরা তৌরিত ও জব্বুর কিতাব বলে থাকেন ৷
আর পরের ২৭ গ্রন্থের অনুসারিদেরকে খ্রীস্টিয়ান বলা হয় এবং তাঁদের ঐ ২৭ পর্বের গ্রন্থকে ইঞ্ছিল কিতাবের অনুসারী বা নূতন নিয়মের বা New Testament এর অন্তর্ভূক্ত হিসেবে গণ্য করা হয় ৷
ইহুদি এবং খ্রীস্টিয়ান উভয় সম্প্রদায়ের অনুসারিরা উক্ত গ্রন্থাবলীকে ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করেন ৷
কিন্তু প্রথমাংশের “ আদিপুস্তক” বা Genesis খানা ইহুদি ও খ্রীস্টান উভয় সম্প্রদায়ই মেনে থাকেন এবং সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে আদিপুস্তকটির লিখিত বিবরণে ইহুদি ও খ্রীস্টান উভয় সম্প্রদায়ই বিশ্বাস করে চলেন ৷
পুরাতন অংশের গ্রন্থগুলোকে মুসলমানরা তৌরিত ও জব্বুর কিতাব বলে থাকেন ৷
আর পরের ২৭ গ্রন্থের অনুসারিদেরকে খ্রীস্টিয়ান বলা হয় এবং তাঁদের ঐ ২৭ পর্বের গ্রন্থকে ইঞ্ছিল কিতাবের অনুসারী বা নূতন নিয়মের বা New Testament এর অন্তর্ভূক্ত হিসেবে গণ্য করা হয় ৷
ইহুদি এবং খ্রীস্টিয়ান উভয় সম্প্রদায়ের অনুসারিরা উক্ত গ্রন্থাবলীকে ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করেন ৷
কিন্তু প্রথমাংশের “ আদিপুস্তক” বা Genesis খানা ইহুদি ও খ্রীস্টান উভয় সম্প্রদায়ই মেনে থাকেন এবং সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে আদিপুস্তকটির লিখিত বিবরণে ইহুদি ও খ্রীস্টান উভয় সম্প্রদায়ই বিশ্বাস করে চলেন ৷
সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে আদিপুস্তকে ( ১ ; ১ ) বলা হয়েছে , “ আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেন ” ৷
আদি (১ ; ২ ) “ পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে অবস্থিতি করছিল ” ( এই বর্ণনা হিন্দু ধর্মের মনুসংহিতার ১ ; ৮ এর বর্ণনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূণ্য ) ৷
আদি ( ১ ;৩-৫ ) “ পরে ঈশ্বর কহিলেন , ‘ দীপ্তি হউক ’ ; তাহাতে দীপ্তি হলো ৷ তখন ঈশ্বর দীপ্তিকে উত্তম দেখে তা অন্ধকার থেকে আলাদা করেন আর দীপ্তির নাম ‘ দিবস ’ ও অন্ধকারের নাম ‘ রাত্রি ’ রাখেন , আর সন্ধ্যা ও তঃকাল হলে প্রথম দিবস হয় ” ৷
আদি (১ ; ২ ) “ পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে অবস্থিতি করছিল ” ( এই বর্ণনা হিন্দু ধর্মের মনুসংহিতার ১ ; ৮ এর বর্ণনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূণ্য ) ৷
আদি ( ১ ;৩-৫ ) “ পরে ঈশ্বর কহিলেন , ‘ দীপ্তি হউক ’ ; তাহাতে দীপ্তি হলো ৷ তখন ঈশ্বর দীপ্তিকে উত্তম দেখে তা অন্ধকার থেকে আলাদা করেন আর দীপ্তির নাম ‘ দিবস ’ ও অন্ধকারের নাম ‘ রাত্রি ’ রাখেন , আর সন্ধ্যা ও তঃকাল হলে প্রথম দিবস হয় ” ৷
পরে ঈশ্বর জলের মধ্যে বিতান (শূণ্য ) সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করেন এবং উর্ধ্বস্থিত জলের বিতানের নাম আকাশমণ্ডল রাখলেন ৷
পরে ঈশ্বরের নির্দেশে আকাশমণ্ডলের নীচস্থ জলে , ভূমি ও সমুদ্রের জলের সৃষ্টি হলো ৷
পরের নির্দেশে ( তৃতীয় দিনের নির্দেশ ) ফলজ ভূমি সহ , সকল প্রকার তৃণ ও উৎপাদক বৃক্ষ উৎপন্ন হলো ৷
৪র্থ দিবসে আকাশ মণ্ডলকে সুবিন্যস্ত করা হলো ৷
পঞ্চম দিবসে পৃথিবীকে বিভিন্ন প্রাণীবর্গে প্রণীময় করা হয়, ইত্যাদি .. ৷
এবং ষষ্ঠ দিবসে প্রাণীবর্গের স্ব স্ব শ্রেণীবিন্যাস ইত্যাদি করা হলো ৷
এভাবে পৃথিবীর সৃষ্টির যাবতীয় কাজ ছয় দিনে সমাপ্ত করেন ঈশ্বর , এবং সপ্তম দিনে ঈশ্বর নিজে বিশ্রামে গেলেন ইত্যাদি বর্ণনা আদি পুস্তকের অন্তর্ভূক্ত ৷ ( সূত্র ; আদি- পুস্তক ১ ও ২ এর অংশ )
পরের নির্দেশে ( তৃতীয় দিনের নির্দেশ ) ফলজ ভূমি সহ , সকল প্রকার তৃণ ও উৎপাদক বৃক্ষ উৎপন্ন হলো ৷
৪র্থ দিবসে আকাশ মণ্ডলকে সুবিন্যস্ত করা হলো ৷
পঞ্চম দিবসে পৃথিবীকে বিভিন্ন প্রাণীবর্গে প্রণীময় করা হয়, ইত্যাদি .. ৷
এবং ষষ্ঠ দিবসে প্রাণীবর্গের স্ব স্ব শ্রেণীবিন্যাস ইত্যাদি করা হলো ৷
এভাবে পৃথিবীর সৃষ্টির যাবতীয় কাজ ছয় দিনে সমাপ্ত করেন ঈশ্বর , এবং সপ্তম দিনে ঈশ্বর নিজে বিশ্রামে গেলেন ইত্যাদি বর্ণনা আদি পুস্তকের অন্তর্ভূক্ত ৷ ( সূত্র ; আদি- পুস্তক ১ ও ২ এর অংশ )
তৌরিতঃ
ইহুদিদের মতে , হজরত মুসা (আ) তূর পর্বতের চূড়ায় ইহুদিদের কথিত ঈশ্বর “ জাভে ” এর দর্শন লাভ করেন ৷ এই সময়ে তিনি তাঁর বাণী শ্রবণ করেন এবং জাভের স্বহস্তে লিখিত দশটি আদেশ সম্বলিত দুইটা প্রস্তরফলক প্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা যায় ৷ আর তাহাই তৌরিতের মূল সূত্র হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে এত দিন থেকে ৷ ঐ সময়ে তূর পর্বতকে মেঘগর্জন সহ বিদুৎ চমকে ও ধূম্রবৎ মেঘে আচ্ছন্ন সহ অগ্নিময় রূপে দেখাচ্ছিল ৷
পার্সি ধর্ম প্রবর্তক জোরওয়াস্টার
ও অনুরূপ ভাবে বজ্র বিদুৎ চমকানো ও মেঘে আচ্ছন্ন পর্বতের চুড়ায় তাদের ধর্মগ্রন্থ জেন্দা - আভেস্তা পেয়েছিলেন তাদের ঈশ্বর অহুর- মজদা এর কাছ থেকে , যা পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে ৷
তৌরাতের বর্ণনানুসারে হজরত মুসা (আ) ঐ সময়ে সীনয় বা তূর পর্বতকে ধুলাময় ও বজ্র মেঘ ও ঘোর অন্ধকার অবস্থায় ছিলো বলে বর্ণনা করেছেন ৷ তবে বজ্র বিদুৎ চমকের জন্যে তখন ঐ পর্বতকে অগ্নিময় অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন বলে ও উল্লেখ করছেন তিনি ৷ আর ঠিক সেই মুহুর্তেই ইহুদিদের সদাপ্রভু অগ্নিসহ পর্বতের উপর আরোহন করেন ৷ পর্বত তখন কাঁপতে ছিলো আর শব্দ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকলে মৌশি বা মুসা আঃ তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং ঈশ্বর তাঁর বাণীর দ্বারা মুসার কথার জবাব দেন ৷ আর এই সঙ্গে তাঁর ঐ বাণী সম্বলিত দুইটা প্রস্তরফলক মুসা (আঃ) কে হস্তান্তর করে ঐ স্থান ত্যাগ করেন ৷ যা পরবর্তীতে টেন কমান্ড হিসেবে পরে পরিচিতি পেয়েছে ৷
ইহুদিদের মতে , হজরত মুসা (আ) তূর পর্বতের চূড়ায় ইহুদিদের কথিত ঈশ্বর “ জাভে ” এর দর্শন লাভ করেন ৷ এই সময়ে তিনি তাঁর বাণী শ্রবণ করেন এবং জাভের স্বহস্তে লিখিত দশটি আদেশ সম্বলিত দুইটা প্রস্তরফলক প্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা যায় ৷ আর তাহাই তৌরিতের মূল সূত্র হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে এত দিন থেকে ৷ ঐ সময়ে তূর পর্বতকে মেঘগর্জন সহ বিদুৎ চমকে ও ধূম্রবৎ মেঘে আচ্ছন্ন সহ অগ্নিময় রূপে দেখাচ্ছিল ৷
পার্সি ধর্ম প্রবর্তক জোরওয়াস্টার
ও অনুরূপ ভাবে বজ্র বিদুৎ চমকানো ও মেঘে আচ্ছন্ন পর্বতের চুড়ায় তাদের ধর্মগ্রন্থ জেন্দা - আভেস্তা পেয়েছিলেন তাদের ঈশ্বর অহুর- মজদা এর কাছ থেকে , যা পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে ৷
তৌরাতের বর্ণনানুসারে হজরত মুসা (আ) ঐ সময়ে সীনয় বা তূর পর্বতকে ধুলাময় ও বজ্র মেঘ ও ঘোর অন্ধকার অবস্থায় ছিলো বলে বর্ণনা করেছেন ৷ তবে বজ্র বিদুৎ চমকের জন্যে তখন ঐ পর্বতকে অগ্নিময় অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন বলে ও উল্লেখ করছেন তিনি ৷ আর ঠিক সেই মুহুর্তেই ইহুদিদের সদাপ্রভু অগ্নিসহ পর্বতের উপর আরোহন করেন ৷ পর্বত তখন কাঁপতে ছিলো আর শব্দ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকলে মৌশি বা মুসা আঃ তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং ঈশ্বর তাঁর বাণীর দ্বারা মুসার কথার জবাব দেন ৷ আর এই সঙ্গে তাঁর ঐ বাণী সম্বলিত দুইটা প্রস্তরফলক মুসা (আঃ) কে হস্তান্তর করে ঐ স্থান ত্যাগ করেন ৷ যা পরবর্তীতে টেন কমান্ড হিসেবে পরে পরিচিতি পেয়েছে ৷
ঐতিহাসিকদের হিসেব অনুসারে মুসা (আঃ) মিশরে খ্রী. পূর্ব ১৩৫১ সালে জন্ম গ্রহন করেছেন ৷ এবং খ্রী, পূ. ১২৮৫ সালে তূর পর্বতে তৌরিতের মূল দশ আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তি ৫৪ বছর আরো আদেশ নির্দেশ গ্রহন করে প্রায় ৫৪ বছর কাল পর্যন্ত তাঁর ঐ ইহুদি ধর্ম প্রচার করেন এবং খ্রি, পূ . ১২৩১ সালে দেহত্যাগ করেন ৷ ঐ হিসেব মতে তৌরিত গ্রন্থের বর্তমান বয়স প্রায় ৩২০০ বছর ৷
তৌরিত এর কিছু বর্ণনা মতে ( লেবীয় পুস্তক এর বিভিন্ন অংশের বর্ণনা অনুসারে ) দেখা যায় যে ,
যা পরবর্তি খৃস্টান ও ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থে ও এর কিছু পরিবর্তিত রূপে উল্লেখিত হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে গ্রহণ করা ও বিশ্বাস করে তা পালন করাও হচ্ছে ৷
- ত্বকচ্ছেদ ( পুরুষের ) ,
- খাদ্য ও অখাদ্য নির্ণয় ,
- অশুচিতা ( মহিলাদের ) ,
- রেতস্খলন পরে শরীর ধৌত করা ,
- বিবাহ নিষিদ্ধা নারী চিহ্নিত করন ,
- অশৌচকালে যৌনমিলন নিষিদ্ধ করন ,
- ঈশ্বরের নিন্দায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান ( ব্লাশফেমি আইন ) ,
- খুনের বদলে খুনের বিধান ,
- সুদের নীতি ,
- মানত করা ,
- উৎসর্গ ( পশু সিন্নী দেয়া ) ,
- উত্তরাধিকার নির্ণয়ের বিধান ,
- বিজাতি বিদ্বেষ ( পরাজিতকে ক্ষমা না করা ) ,
- বলিদানে পশু নির্বাচন ( কূরবাণী ) ,
- ব্যাভিচারের বিচার ( ক্ষেত্র বিশেষে প্রস্তরাঘাতে বধ করার বিধান )
- সত্রীত্যাগ ( তালাকের বিধান ) সহ বিখ্যাত দশ আদেশের গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ পাওয়া যায় ,
যা পরবর্তি খৃস্টান ও ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থে ও এর কিছু পরিবর্তিত রূপে উল্লেখিত হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে গ্রহণ করা ও বিশ্বাস করে তা পালন করাও হচ্ছে ৷
জব্বুর গ্রন্থ :
হজরত দাউদ (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ গ্রন্থের নাম জব্বুর ৷ এবং ঐ কিতাবে বর্ণিত আদেশ উপদেশ গুলোই জব্বুর কিতাবের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে ৷ যা বাইবেলের পুরাতন অংশের ও অন্তর্ভুক্ত ৷ তাঁর জন্ম হয়েছিল খ্রী, পূ . ৯৭১ সালে , অর্থাৎ প্রায় ৩০০০ বছর আগে ঐ কিতাবের আবির্ভাব হয়েছিল ৷
হজরত দাউদ (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ গ্রন্থের নাম জব্বুর ৷ এবং ঐ কিতাবে বর্ণিত আদেশ উপদেশ গুলোই জব্বুর কিতাবের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে ৷ যা বাইবেলের পুরাতন অংশের ও অন্তর্ভুক্ত ৷ তাঁর জন্ম হয়েছিল খ্রী, পূ . ৯৭১ সালে , অর্থাৎ প্রায় ৩০০০ বছর আগে ঐ কিতাবের আবির্ভাব হয়েছিল ৷
ইহুদিদের জুডাইজম
ধর্মমতে মানুষের মৃত্যুর পর বিচারের একটি শেষদিন নির্দিষ্ট করা আছে ৷ সেই দিন মৃতদের আত্মার পুনরুথ্থান ঘটবে এবং তাদের জীবিতকালের পাপ-পূণ্যের বিচার হবে ৷ ইরানীয়দের মত ইহুদিদের আত্মাকেও একটি নির্দিষ্ট সেতু পার হতে হবে এবং তুলাদণ্ডে পরিমাপ করে পাপ- পূণ্যের বিচার হবে ৷ সেতু অতিক্রমে ব্যর্থরা নিচের নরক কার্ণবে নিপতিত হয়ে শাস্তি ভোগ করবে ৷ ইত্যাদি সবই প্রায় অন্যান্য পূর্বের ধর্ম গুলোর বিধানের মত একই রকম বর্ণনা দেখা যায় ৷ তবে ইহুদিদের মতে মানুষের পাপ- পূণ্যের পরিমান দুইটা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ থাকে এবং তা তুলাদণ্ডের দু’দিকে স্থাপন করে প্রতিজনের পাপ-পূণ্যের পরিমান নির্ধারণ করে যে দিকে পাল্লা ভারি হবে সে অনুসারে পরবর্তি ব্যবস্থা হবে বলে বলা হয়েছে ৷ অর্থাৎ পূণ্যের ভাগ বেশি হলে স্বর্গ লাভ আর পাপের ভাগ ভারি হলে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে ৷
ধর্মমতে মানুষের মৃত্যুর পর বিচারের একটি শেষদিন নির্দিষ্ট করা আছে ৷ সেই দিন মৃতদের আত্মার পুনরুথ্থান ঘটবে এবং তাদের জীবিতকালের পাপ-পূণ্যের বিচার হবে ৷ ইরানীয়দের মত ইহুদিদের আত্মাকেও একটি নির্দিষ্ট সেতু পার হতে হবে এবং তুলাদণ্ডে পরিমাপ করে পাপ- পূণ্যের বিচার হবে ৷ সেতু অতিক্রমে ব্যর্থরা নিচের নরক কার্ণবে নিপতিত হয়ে শাস্তি ভোগ করবে ৷ ইত্যাদি সবই প্রায় অন্যান্য পূর্বের ধর্ম গুলোর বিধানের মত একই রকম বর্ণনা দেখা যায় ৷ তবে ইহুদিদের মতে মানুষের পাপ- পূণ্যের পরিমান দুইটা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ থাকে এবং তা তুলাদণ্ডের দু’দিকে স্থাপন করে প্রতিজনের পাপ-পূণ্যের পরিমান নির্ধারণ করে যে দিকে পাল্লা ভারি হবে সে অনুসারে পরবর্তি ব্যবস্থা হবে বলে বলা হয়েছে ৷ অর্থাৎ পূণ্যের ভাগ বেশি হলে স্বর্গ লাভ আর পাপের ভাগ ভারি হলে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে ৷
ইহুদিদের স্বর্গের নাম ইডেন ৷
ঐ স্বর্গ বহুমূল্যবান প্রস্তরে ঘঠিত এবং তিনটি দ্বার বিশিষ্ট ও চারটি প্রবাহমান নদী থাকবে ঐ স্বর্গে বলে উল্লেখ আছে ৷ আর নদীগুলোর একটিতে দুগ্ধ , একটিতে মধু , একটিতে মদ্য আর চতুর্থ টিতে সুগন্ধিযুক্ত নির্যাস প্রবাহিত হতে থাকবে ৷ এছাড়া ইহা একটি উৎকৃষ্ট উদ্যান ও বটে ৷ সেখানে বহু সুমিষ্ট ফলে এবং সুগন্ধ - সদৃশ্য ফুলেও পরিপূর্ণ ভরপূর থাকবে ৷ বৈদিক বা হিন্দু ধর্ম মতের অনুকরণে ইহুদিদের স্বর্গেও অতিরিক্ত পূণ্যবানদের স্বর্গের উচ্চ থেকে উচ্চতর স্থান অধিকারের সুযোগ এর নিয়মের কথা উল্লেখ আছে ৷ (সূত্র; আদি- পুস্তক ২; ৮-১৪ )
ঐ স্বর্গ বহুমূল্যবান প্রস্তরে ঘঠিত এবং তিনটি দ্বার বিশিষ্ট ও চারটি প্রবাহমান নদী থাকবে ঐ স্বর্গে বলে উল্লেখ আছে ৷ আর নদীগুলোর একটিতে দুগ্ধ , একটিতে মধু , একটিতে মদ্য আর চতুর্থ টিতে সুগন্ধিযুক্ত নির্যাস প্রবাহিত হতে থাকবে ৷ এছাড়া ইহা একটি উৎকৃষ্ট উদ্যান ও বটে ৷ সেখানে বহু সুমিষ্ট ফলে এবং সুগন্ধ - সদৃশ্য ফুলেও পরিপূর্ণ ভরপূর থাকবে ৷ বৈদিক বা হিন্দু ধর্ম মতের অনুকরণে ইহুদিদের স্বর্গেও অতিরিক্ত পূণ্যবানদের স্বর্গের উচ্চ থেকে উচ্চতর স্থান অধিকারের সুযোগ এর নিয়মের কথা উল্লেখ আছে ৷ (সূত্র; আদি- পুস্তক ২; ৮-১৪ )
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ইশিয়া , এজিকিল , ডেনিয়েল , ও যব ইত্যাদিতে ও মৃত্যুর পরে পুনরুথ্থানের বিষয়ের উল্লেখ আছে ৷ ঐ মতে শুষ্ক অস্থিখণ্ড পুরর্জীবিত হয়ে আপন কর্মাকর্মের ফল ভোগ করার বিধান দেয়া আছে ৷ আরো বলা হয়েছে যে শরীর বিনষ্ট হলে ও শরীরের লুজ নামক একটি অস্থি অবিকৃত থাকবে এব শেষ বিচারের পূর্বে পুনরুথ্থানের সময়ে পৃথিবীতে ভয়ানক এক শিশিরপাত হবে , এবং তাতে ঐ লুজ নামক অস্থি শিশিরে সিক্ত হয়ে অঙ্কুরিত হয়ে আবার নরদেহকে পনরুজিবিত করবে, ইত্যাদি ৷
তৌরিত থেকে জানা যায় যে আদিমানব আদমকে সৃষ্টির পর ঈশ্বর তাকে ইডেন নামক স্বর্গে থাকতে দেয়েছিলেন ৷ ইডেনের অবস্থানের ব্যাপারে বাইবেলে বলা হয়েছে যে , “ আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে এদনে (ইডেনে ) এক উদ্যান প্রস্তুর করেন আর তাঁর নির্মিত মানুষ্য আদমকে তথায় থাকতে দেন ৷ আর সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি থেকে সর্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্যদায়ক বৃক্ষ এনে স্থাপন করেন সেখানে এবং সেই উদ্যানের মধ্যস্থানে জীবনবৃক্ষ ও সদাসদজ্ঞানদায়ক বৃক্ষ উৎপন্ন করেন ৷ আর উদ্যানে সেচনার্থে এদন থেকে এক নদী নির্গিত করে তার প্রবাহকে চতুর্মুখী করা হয় ৷ প্রথম প্রবাহিত নদীর নাম পীশোন , যা সমস্ত হবিলাদেশ বেষ্টন করে প্রবাহিত ছিলো , আবার তথায় উত্তম স্বর্ণ পাওয়া যেত এবং সেই স্থানে গুলগুল ও গোমেদক মনি জন্মিত বলে ও উল্লেখ আছে ৷ দ্বিতীয় নদীর নাম ছিলো গীহোন , যা সমস্ত কুশদেশ বেষ্টন করে প্রবাহিত ছিলো ৷ তৃতীয় নদীর নাম হিদ্দেকল, ইহা অশুরিয়া দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় ৷ আর চতুর্থ নদীর নাম ছিলো ফরাৎ ৷ ( সূত্র ; আদিপুস্তক - ২ ; ৮ -১৪ )
ঐতিহাসিকদের মতে পীশোন , গীহোন , হিদ্দেকল , ও ফরাৎ এই চারটি নদীর উৎপত্তির এলাকার মধ্যে ঐ সময়ে ইডেন নামে একটা জায়গা ছিলো ৷ ধারণা করা হয়ে থাকে যে ইডেন স্থানটি বর্তমান তুরস্ক দেশের পূর্বভাগের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত একটি অঞ্চল ছিল ৷ অর্থাৎ তৌরিতে উল্লখিত নদী চারটি ঐ অঞ্চল থেকেই উৎপন্ন হয়ে , পীশোন ও গীহোন নদীদ্বয় কৃঞ্চসাগর ও কাস্পিয়ান সাগরে এবং হিদ্দেকল ফরাৎ নদীদ্বয় একত্রিত হয়ে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে৷ তাই সহজেই বলা যায় যে ইডেন উদ্যানে বসবাস করার কালকেই আদমের স্বর্গবাস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৷
মহাপ্রভুর নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের অপরাধে আদম এদন উদ্যান হতে বিতাড়িত হয়ে বহু বছর পৃথিবীতে ঘোরাফেরার পর আরবের আরাফাতে তাঁর স্ত্রী বিবি হাওয়ার সঙ্গে মিলিত হন এবং পরে ঐ অঞ্চলেই কালাতিপত করেন ৷ সূত্র ; অমল দাসগুপ্তের গ্রন্থ- পৃথিবীর ঠিকানা )
আদিকালে পৃথিবীতে মানুষ ছিলো কম আর ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র মানুষের বসতি ও ছিল না , ছিল শুধু উর্বর অঞ্চলে ৷ তাই নীলনদ , ইউফ্রেটিস , ও টাইগ্রীস নদী বিধৌত মিশর ও মেসোপটেমিয়ায় এবং ভারতের সিন্ধু নদের অববাহিকায় প্রথম লোকবসতি ও সভ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছিল ৷ বোধহয় ইডেন বা এদন ও এমন একটি স্থানে অরস্থিত ছিলো ৷
বিভিন্ন সূত্র মতে অনেক অনেক দিন পূর্বে পাশ্চাত্যের এক স্থানের নাম নাকি ছিলো “ গেহেন্না ” ৷ শহরের সব ময়লা আবর্জনা সহ মৃত লাশ সেখানে ফেলে পরে জ্বালিয়ে দেয়া হতো এবং অপরাধীদেরকে ও সেখানে নিয়ে গিয়ে শাস্তি দিয়ে পুড়িয়ে মারা হতো ৷ তাই ঐ নোংরা স্থানে ভয়ে ও ঘৃণায় কেহ স্বেচ্ছায় যেতে চাইতো না ৷ বরং অসৎ কাজ করলে লোকে তাকে শাসাইতো এই বলে যে “ তুমি কি গেহেন্না যেতে চাও ?” ইত্যাদি ৷
অনেকের ধারনা উক্ত “ গেহেন্না” শব্দটি কালক্রমে ভাষান্তরিত হয়ে গেহেন্নাম বা জেহেন্নাম ( ইংরেজি G এর অক্ষরটির “ জ” উচ্চারণ অনুসারে ) রূপান্তরিত হয়েছে এবং পরবর্তিতে আরবী ভাষায় ইহা নাকি হয়ে গেছে “ জাহান্নাম ” ৷
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ যোগ্য যে প্রাচীন হিব্রু জাতির বহু পৌরাণিক কাহিনী ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে ও স্থান পেয়ে গেছে , যা এর পরবর্তি দুইটি সিমেটিক ধর্মের ধর্মগ্রন্থে ও উল্লেখিত হয়েছে ৷
যেমন ইহুদিদের প্রাচীন ধর্মমতে , তালমুদ রূপকথা গ্রন্থের উল্লেখিত দেবদূত শব্দটি যা তাদের ধর্ম গ্রন্থে স্বর্গদূতে রূপান্তরিত হয়েছে ,
এবং তা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়েছে ,
তাদের ধর্মগ্রন্থে এবং এদের ( স্বর্গদূতদের ) নাম ,
১. সিরাফিম ,
২ . চিরাবিম ও
৩ .ওনাকিম এবং অগ্নি উপাদানে এদের দেহ গঠিত বলে উল্লেখিত ছিলো ,
পরবর্তি সিমেটিক ধর্মের ফেরেস্তারা ও নাকি আগুনের তৈরি ৷ ইহুদিদের স্বর্গদূতদের কাজ ও নির্দিষ্ট করা আছে , যেমন স্বর্গদূত আফাত্রিয়েল এর কাজ মানুষের চিন্তা ও কথাবার্তা বা বাক্য স্বর্গে বহন করে নিয়ে যাওয়া আর স্বর্গদূত বা এন্জেল গাল্- লিজুর বরাদ্ধকরা কাজ হলো ঈশ্বরের বাণী পৃথিবীর গোচরে অনা ,
এরকম ১২ জন নির্দিষ্ট কাজের এন্জেল ছাড়াও আরো কয়েকজন আর্কেন্জেল বা প্রধান এন্জেলের নাম ( যেমন, মাইকেল , রাফেল , গ্যাব্রিয়েল ইত্যাদি ) ও উল্লেখ আছে , যারা ঈশ্বরের আদেশে নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে থাকেন ৷
আর শয়তানের ব্যাপারে ঐ মতে দেখা যায় সে ছিলো সিরাফিল গোষ্ঠির একজন আর্কেন্জেল ,আর তার ইহুদি নাম হচ্ছে সাম মায়েল ৷ ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করায় তার অনুচরসহ তাকে দণ্ডাদেশ দিয়ে স্বর্গ থেকে ঈশ্বর পৃথিবীতে নির্বাসিত করেন ৷ যা পরের দুই ধর্মমতের সঙ্গে অনেকটা মিলেগেছে বলে প্রতিয়মান হয় ৷ আর এসবের মূল সূত্র হচ্ছে হিব্রু জাতির রূপকথা ও উপকথার সংকলিত গ্রন্থ তালমুদ ও মিদ্রাস ৷ (সূত্র ; প্রাচীন প্যালেস্টাইন , লেখক; শচীন্দ্রনাথ চট্রোপাধ্যায়, পৃ-২১৩-২১৮ )
যেমন ইহুদিদের প্রাচীন ধর্মমতে , তালমুদ রূপকথা গ্রন্থের উল্লেখিত দেবদূত শব্দটি যা তাদের ধর্ম গ্রন্থে স্বর্গদূতে রূপান্তরিত হয়েছে ,
এবং তা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়েছে ,
তাদের ধর্মগ্রন্থে এবং এদের ( স্বর্গদূতদের ) নাম ,
১. সিরাফিম ,
২ . চিরাবিম ও
৩ .ওনাকিম এবং অগ্নি উপাদানে এদের দেহ গঠিত বলে উল্লেখিত ছিলো ,
পরবর্তি সিমেটিক ধর্মের ফেরেস্তারা ও নাকি আগুনের তৈরি ৷ ইহুদিদের স্বর্গদূতদের কাজ ও নির্দিষ্ট করা আছে , যেমন স্বর্গদূত আফাত্রিয়েল এর কাজ মানুষের চিন্তা ও কথাবার্তা বা বাক্য স্বর্গে বহন করে নিয়ে যাওয়া আর স্বর্গদূত বা এন্জেল গাল্- লিজুর বরাদ্ধকরা কাজ হলো ঈশ্বরের বাণী পৃথিবীর গোচরে অনা ,
এরকম ১২ জন নির্দিষ্ট কাজের এন্জেল ছাড়াও আরো কয়েকজন আর্কেন্জেল বা প্রধান এন্জেলের নাম ( যেমন, মাইকেল , রাফেল , গ্যাব্রিয়েল ইত্যাদি ) ও উল্লেখ আছে , যারা ঈশ্বরের আদেশে নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে থাকেন ৷
আর শয়তানের ব্যাপারে ঐ মতে দেখা যায় সে ছিলো সিরাফিল গোষ্ঠির একজন আর্কেন্জেল ,আর তার ইহুদি নাম হচ্ছে সাম মায়েল ৷ ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করায় তার অনুচরসহ তাকে দণ্ডাদেশ দিয়ে স্বর্গ থেকে ঈশ্বর পৃথিবীতে নির্বাসিত করেন ৷ যা পরের দুই ধর্মমতের সঙ্গে অনেকটা মিলেগেছে বলে প্রতিয়মান হয় ৷ আর এসবের মূল সূত্র হচ্ছে হিব্রু জাতির রূপকথা ও উপকথার সংকলিত গ্রন্থ তালমুদ ও মিদ্রাস ৷ (সূত্র ; প্রাচীন প্যালেস্টাইন , লেখক; শচীন্দ্রনাথ চট্রোপাধ্যায়, পৃ-২১৩-২১৮ )
বৌদ্ধ ধর্ম মত :
বৌদ্ধ ধর্মমতে এই পৃথিবীর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই ৷ ঐ মতে জগত অনন্তকাল থেকে বিদ্যমান আছে এবং অনন্ত কাল এ ভাবেই থাকবে ৷ বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে বিশ্বের আকৃতি চিরকালই একরূপ আছে এবং ভবিষ্যতেও ঐ একরূপই থাকবে ৷ কর্মানুসারে প্রাণীসমূহ সংসারে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাত্র ৷
বৌদ্ধ ধর্মমতে এই পৃথিবীর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই ৷ ঐ মতে জগত অনন্তকাল থেকে বিদ্যমান আছে এবং অনন্ত কাল এ ভাবেই থাকবে ৷ বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে বিশ্বের আকৃতি চিরকালই একরূপ আছে এবং ভবিষ্যতেও ঐ একরূপই থাকবে ৷ কর্মানুসারে প্রাণীসমূহ সংসারে ঘুরে বেড়াচ্ছে মাত্র ৷
খ্রীস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার কয়েক দেশে বৌদ্ধ ধর্মমত প্রচারিত হয় ৷ এই এলাকাটি মধ্য ও দূর-প্রাচ্য এবং আফ্রিকা থেকে আলাদা থাকায় বোধহয় হিব্রু জাতির রূপকথার কাহিনির বিস্তার এবং ইহুদিদের ধর্মের বিস্তার ঘটেনি তখনও ৷ তাই স্বর্গ - নরক , দেবদূত, নবী বা পয়গম্বর এবং শেষ বিচার ও শয়তান সহ অন্যান্য বিষয়াদির উল্লেখ নেই বৌদ্ধ ধর্মে , আরার বৈদিক বা হিন্দু ধর্মের ও প্রভাব মুক্ত দেখা যায় এই বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসে ৷
খ্রী. পূ . ৫৫৬ সালে কপিলাবস্তু নগরে বুদ্ধদেবের জন্ম হয় এবং তাঁর প্রবর্তিত ধর্মের নাম বৌদ্ধধর্ম ৷ এই ধর্মে , এর অনুসারীরা পরকাল বা স্বর্গ - নরকের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না ৷ তাই এই ধর্মে, তার প্রবর্তক ছাড়া অন্য কারো অস্তিস্থ নেই ৷
বৌদ্ধমতে জীব কামনাবশে পুনঃ পুনঃ জন্ম নেয় এবং রোগ , শোক , ও নানাবিধ দুঃখ ভোগ করে ৷ তাই দুঃখভোগের চির সমাপ্তির উপায় হলো জন্ম না নেয়া ৷ তার একমাত্র উপায় মানুষের মনে যখন কোনোরূপ কামনা বাসনা একেবারেই থাকবেনা , তখন আর তার পুনজর্ন্ম হবে না , আর এই অবস্থাকে ঐ মতে মোক্ষলাভ হিসেবে অভিহিত করা হয় ৷ আর জন্মরহিতাবস্থাকে বলা হয় নির্বাণ ৷
বৌদ্ধ মতে নির্বাণই মানুষ্য জীবনের শেষ পরিণতি ৷ তাই এতে স্বর্গ -নরক বা শেষ বিচারাদির পরিকল্পনা নেই ৷ ধর্মপদ নামক একটি গ্রন্থে তাদের ধর্ম বিষয়ের বিষয়াদি উল্লেখিত হয়েছে ৷
বৌদ্ধমতে জীব কামনাবশে পুনঃ পুনঃ জন্ম নেয় এবং রোগ , শোক , ও নানাবিধ দুঃখ ভোগ করে ৷ তাই দুঃখভোগের চির সমাপ্তির উপায় হলো জন্ম না নেয়া ৷ তার একমাত্র উপায় মানুষের মনে যখন কোনোরূপ কামনা বাসনা একেবারেই থাকবেনা , তখন আর তার পুনজর্ন্ম হবে না , আর এই অবস্থাকে ঐ মতে মোক্ষলাভ হিসেবে অভিহিত করা হয় ৷ আর জন্মরহিতাবস্থাকে বলা হয় নির্বাণ ৷
বৌদ্ধ মতে নির্বাণই মানুষ্য জীবনের শেষ পরিণতি ৷ তাই এতে স্বর্গ -নরক বা শেষ বিচারাদির পরিকল্পনা নেই ৷ ধর্মপদ নামক একটি গ্রন্থে তাদের ধর্ম বিষয়ের বিষয়াদি উল্লেখিত হয়েছে ৷
খ্রীস্টান ধর্ম মত:
পবিত্র বাইবেলের দ্বিতীয় অংশ ( ৬৬- ৩৯ = ২৭পুস্তক ) যারা মেনে চলেন তাদেরকে খ্রীস্টান বলা হয় ৷
তবে বাইবেলের প্রথম অংশের আদি পুস্তক (Genesis ) ইহুদি ও খ্রীস্টান উভয় সম্প্রদায়ই মেনে চলেন এবং ঐ পুস্তকে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বে উভয় সম্প্রদায়ই বিশ্বাসী ৷
তবে বাইবেলের প্রথম অংশের আদি পুস্তক (Genesis ) ইহুদি ও খ্রীস্টান উভয় সম্প্রদায়ই মেনে চলেন এবং ঐ পুস্তকে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বে উভয় সম্প্রদায়ই বিশ্বাসী ৷
খৃস্ট ধর্মগুরু যীশুখৃস্ট ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব পেয়েছিলেন স্বর্গ থেকে আগত এক কবুতর পাখির মাধ্যমে ৷ পবিত্র বাইবেলে এ ব্যাপারে যে বর্ণনা আছে তা হলো - “ আর পরে যীশু বাপ্তাইজিত ( দীক্ষা প্রাপ্ত ) হয়ে অমনি জল হতে ( জর্দান নদীর জল ) উঠলেন , আর দেখ , তাঁর নিমিত্ত স্বর্গ খুলে গেল এবং তিনি (তখন ) ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় ( কবুতর পাখির বেশে ) আপনার উপর আসতে দেখলেন , আর দেখ , স্বর্গ হতে এই বাণী ( শব্দ ) হলো , ইনিই আমার প্রিয় পুত্র , এতেই আমি প্রীত ৷ ” (সূত্র; বাইবেলের ক্ষুদ্র পুস্তক মথি - ৩ ; ১৬ - ১৭ )
উক্ত কবুতরটা ছিলো স্বর্গিয় কবুতর , কেননা , পৃথিবীর কবুতর মানুষের মত কথা বলতে পারে না ৷ তাই এই ঘটনাকে সহজ - সরল ও বিশ্বাস যোগ্য হিসেবে খ্রীস্টানরা গ্রহণ করেছেন ৷ ( দার্শনিক ডানিকেনের মতে যীশুর শ্রুতি বাণীটি হয়তো যীশুর সাময়িক ভাবালুতা ও হতে পারে )
উক্ত কবুতরটা ছিলো স্বর্গিয় কবুতর , কেননা , পৃথিবীর কবুতর মানুষের মত কথা বলতে পারে না ৷ তাই এই ঘটনাকে সহজ - সরল ও বিশ্বাস যোগ্য হিসেবে খ্রীস্টানরা গ্রহণ করেছেন ৷ ( দার্শনিক ডানিকেনের মতে যীশুর শ্রুতি বাণীটি হয়তো যীশুর সাময়িক ভাবালুতা ও হতে পারে )
হজরত ইয়াহিয়া (আঃ) ছিলেন হজরত জাকারিয়া (আঃ) এর পুত্র এবং ইহুদিদের ধর্মযাজক ৷
৩০ বছর বয়সে যীশু হজরত ইয়াহিয়া (আঃ)এর নিকট ইহুদি ধর্মমতে বাপ্তাইজিত হয়েছেন ৷ অর্থাৎ দীক্ষা গ্রহন করেছেন ৷ আর এর ধারাবাহিকতায় যীশু যখন ( ইহুদি মতে ) জর্দান নদীতে বাপ্তাইজিত হয়ে নদীর তীরে উঠে আসেন , তখন তিনি দেখেন একটি কবুতর পাখি উপর থেকে উড়ে তাঁর মাথার উপর আসছে , তিনি ঐ কবুতরকে ঈশ্বরের আত্মা বলে ভাবেন ,যেহেতু এই পাখিটি উপরের দিক থেকে তাঁর দিকে আসছিল ৷ আর কাছে আসতেই তিনি শুনতে পান যে , কবুতরটি তাকে বলছে “ ইনিই আমার পুত্র , এতেই আমি প্রীত ” ৷
এই বাণীর দ্বারাই যীশু ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব পেলেন মাত্র ৩০ বছর বয়সে ৷ এবং ঐ সময় হতে তিনি স্বীয় ধর্মমত খ্রীস্টানিটি ( ইহুদি মতে দীক্ষিত হয়ে ও ) প্রচার শুরু করেন ৷ পরবর্তীকালে ধর্ম বিষয়ে তাঁর মতামত সমূহকে পুস্তকারে প্রকাশিত হয়ে ইঞ্জিল কিতাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ৷ ( যা , নুতন নিয়মের বাইবেল বা New Testament হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে )
খ্রীস্ট ধর্মের বর্তমান বয়স প্রায় ২০০০ বছর ৷ আর তার প্রচারিত ধর্ম গ্রন্থ ইঞ্জিলকে ঐশ্বরীক ধর্ম গ্রন্থ বলা হয়ে থাকে ৷ কারণ , যীশু কুমারী মাতা মরিয়মের গর্ভে জন্ম গ্রহন করেন ৷ স্বাভাবিক নিয়মের মত তাঁর কোনো পিতা ছিলেন না ৷ তাই তাকে খ্রীস্টানরা স্বয়ং ঈশ্বরের পুত্র মনে করেন ৷ আর পিতার পক্ষ থেকে পুত্রের নিশ্চয় পিতার বাণী প্রচারের অধিকার দেয়া হয়েছে ৷ তাই , সেই মর্মে যীশুর আদেশ- উপদেশ ও বিধি - নিষেধ সমূহকে ঈঁসায়ীগণ বা খ্রীস্টধর্মে বিশ্বাসীগণ ঈশ্বরের ঐশ্বরিক বাণীরূপে গ্রহন করেছেন ৷
তবে তৌরিতের মতো ইঞ্জিলের বাণী মহাপ্রভুর নিজের মূখের বাণী নয় , ইহা যীশুর মূখের বাণী ৷ হয়ত পিতার পক্ষ থেকে পুত্রের মূখে পিতার বাণী ৷ বা পুত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ঈশ্বর পিতার বাণী ৷
খ্রীস্টানদের বাইবেলের (New Testament এর ) ম্যাখু , লুক , রিভিলেশন , কোরিন্থিয়ান্ স ও রোমান্স্ প্রভৃতি অংশের বর্ণনা মতে , মানুষ আপন পাপকর্ম দ্বারাই মৃত্যুমুখে পতিত হয় ৷ কারণ সকল মানুষই কমবেশি পাপকাজে রত থাকে ৷ তাই সকলেই মৃত্যুর অধীন ৷ মৃত্যুর পর আত্মা দেহ হতে বিকারপ্রাপ্ত ও ধূলায় পরিণত হয় ৷
আর মৃতদের মধ্যে যারা পূণ্যবান , দেহত্যাগের পরেই তাদের আত্মা স্বর্গে গমন করে ৷ আর পাপিদের আত্মা শেষ বিচারের দণ্ডের জন্য প্রস্তুত হয় ৷ এবং শেষে একদিন তাদের বিচার হয় ৷ বিচারের দিন পবিত্র আত্মা যীশু খ্রীস্ট স্বর্গ হতে মর্ত্যে অবতরণ করেন ৷
যীশুখ্রিস্ট স্বর্গীয় বেশে সুসজ্জিত হয়ে এবং স্বর্গীয় দূত ও পরিষদবর্গের দ্বারা পরিবৃত হয়ে আসেন এবং পরে একপর্যায়ে বিচারাসনে উপবিষ্ট হন ৷ সেদিন মৃতগণ কবর থেকে উথ্থিত হয় বিচারের সম্মূখিন হতে ৷ বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত পাপিগণকে চিরপ্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয় ৷
আর পূণ্যবানদের অত্যুজ্জ্বল আলোকমালায় শোভিত প্রসাদে প্রেরিত হয় ৷ যেখানে তারা তাদের পূর্বপুরুষগণ সহ দেবদূতগণ এবং স্বয়ং যীশুখ্রীস্ট ও তাদের সঙ্গে তাদের আনন্দোৎসবে যোগদান করেন ইত্যাদি ..৷
খ্রীস্ট মতে বিচারকর্তা , স্বয়ং ঈশ্বর নয় ,
যীশুই হবেন শেষ বিচারের বিচার কর্তা ৷
( সূত্র ; আলোচ্য পুস্তক সমূহে প্রলয়ান্তে পুনরুথ্থান সম্বন্ধে যে বিষয় লিপিবদ্ধ আছে তার মর্মার্থ এখানে সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে মাত্র ৷ )
ইসলাম ধর্ম মত:
মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরান অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে আল্লহ্ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আল্লাহ্ র নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ে ইহা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে ৷
সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে পবিত্র কোরানের সুরা সেজদায় ( ১; ৪ আয়াতে ) বলা হয়েছে -
“ তিনি আল্লাহ্ , যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যে যাহা আছে , তাহা ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন ” ৷
“ তিনি আল্লাহ্ , যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যে যাহা আছে , তাহা ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন ” ৷
সুরা সেজদা; ৭নং আয়াত -
“ তিনিই মৃত্তিকা হতে মানবসৃষ্টি আরম্ভ করেছেন ” ৷
“ তিনিই মৃত্তিকা হতে মানবসৃষ্টি আরম্ভ করেছেন ” ৷
সুরা সাফফাত ৬নং আয়াত
- “ নিশ্চয় আমি পার্থিব আকাশকে নক্ষত্রপুঞ্জের শোভায় শোভিত করেছি ” ৷
- “ নিশ্চয় আমি পার্থিব আকাশকে নক্ষত্রপুঞ্জের শোভায় শোভিত করেছি ” ৷
সুরা হামিম ৯নং , ১০নং ও ১২নং আয়াতের অংশবিশেষ ;
- “ তোমরা কি তাঁর প্রতি অবিশ্বাস করছো --যিনি দুই দিনে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ……এবং তন্মধ্যে উহা হতে সমুচ্চ পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন এবং চার দিবসে তন্মধ্যে উহার উৎপাদিকা শক্তি নির্ধারিত করেছেন ৷ …..অনন্তর তিনি দুই দিবসের মধ্যে সপ্ত আকাশ সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন ” ৷
- “ তোমরা কি তাঁর প্রতি অবিশ্বাস করছো --যিনি দুই দিনে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ……এবং তন্মধ্যে উহা হতে সমুচ্চ পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন এবং চার দিবসে তন্মধ্যে উহার উৎপাদিকা শক্তি নির্ধারিত করেছেন ৷ …..অনন্তর তিনি দুই দিবসের মধ্যে সপ্ত আকাশ সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন ” ৷
সুরা ক্বাফ আয়াত ৩৮নং
- “ নিশ্চয় আমি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের অন্তর্গত বিষয়সমূহ ছয় দিবসে সৃষ্টি করেছি ” ৷ ইত্যাদি সৃষ্টিকালিন বহু বর্ণনা পবিত্র কোরানে বিক্ষিপ্তভাবে উল্লেখিত আছে ৷
- “ নিশ্চয় আমি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের অন্তর্গত বিষয়সমূহ ছয় দিবসে সৃষ্টি করেছি ” ৷ ইত্যাদি সৃষ্টিকালিন বহু বর্ণনা পবিত্র কোরানে বিক্ষিপ্তভাবে উল্লেখিত আছে ৷
মুসলিম ধর্মগ্রন্থমতে আল্লাহ্ সৃষ্ট প্রাণীর স্তর চারটা যথা -
১। ফেরেশতা ,
২। জ্বীন ,
৩। মনুষ্য ও
৪। শয়তান ৷
১। ফেরেশতা ,
২। জ্বীন ,
৩। মনুষ্য ও
৪। শয়তান ৷
১। ফেরেশতারা স্বর্গীয় দূত এবং অগ্নি বা নূরের তৈরি , তাঁরা নির্মল এবং বিভিন্ন আকৃতি ধারণে সমর্থ , তাদের পানাহারের দরকার হয় না , আর মানুষের মত তাদে জন্ম -মৃত্যু নেই , আর তাদের কোনো সন্তানাদি জন্মগ্রহন করে না ৷ জেব্রাইল , মেকাইল , এস্রাফিল ও আজরাইল স্বর্গীয় দূত ফেরেশতাদের মধ্যে প্রধান স্থানীয় ৷
২। জ্বীন - ইহাদের মানুষের মত জন্ম - মৃত্যু এবং নারী - পুরুষ ভেদ ও সন্তানাদি আছে ৷ পাপ - পুণ্য অনুসারে এদের স্বর্গ ও নরকবাস ও নির্ধারিত আছে , ইহারা ধূমশূন্য অগ্নীর তৈরি এবং মানুষের অনিষ্টকারী ৷
৩। মানুষ্য -- মানুষের আদিপুরুষ আদম , যাকে আল্লাহ্ মাটি দ্বারা সৃষ্টি করে পরে তার শরীরের কিছু অংশ দিয়ে আদি মনবী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন , এবং উভয়কে আল্লাহ্ বেহেশতে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন ৷ তবে পরবর্তিতে আল্লাহ্ র হুকুম অমান্য করে গন্ধম নামক ফল ভক্ষণের অপরাদে আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে নির্বাসিত করা হয় ৷ পৃথিবীতে বহুবছর আলাদা ভাবে ঘুরাফেরার পরে তাঁদের একস্থানে ( আরাফাত নামক স্থানে নাকি ?) পুনর্মিলন হয় ৷ তখন তাঁরা দীর্ঘদিন পৃথিবীতে ঘর - সংসার করেন এবং পরে তাদের সন্তানাদিতে ও বংশাবলীতে পৃথিবী মানুষে ভরে উঠেছে ৷
৪। শয়তান - শয়তান পূর্বে মকরম নামক বেহেশত বাসী এক প্রথম শ্রেণীর ফেরেশতা ছিলো ৷ আদমকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করে সকল ফেরেশতাকে আদমকে সেজদা করতে নির্দেশ দিলে এই মকরম আদমকে সেজদা না করে আল্লাহ্ র নির্দেশ অমান্য করলে , স্বয়ং আল্লাহ্ তাকে “ শয়তান ” আখ্যা দিয়ে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে নির্বাসিত করেন , শয়তান তখন আদম-বংশকে চিরকাল অসৎকাজে প্ররোচনা দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে পৃথিবীতে নেমে অাসে এবং অদ্যাবধি মানুষকে অসৎকাজের প্ররোচনা বা দাগা দিয়ে বেড়াচ্ছে ৷
পবিত্র কোরান :
পবিত্র কোরান মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ এবং ঐশ্বরিক গ্রন্থের মধ্যে পবিত্র কোরান সর্বশ্রেষ্ট ও অতুলনীয় ধর্মগ্রন্থ বলে পরিচিত ৷
পবিত্র কোরানের প্রচারক হজরত মোহাম্মদ ( সা. ) ৫৭১ খ্রীস্টাব্দের ২০ এপ্রিল পবিত্র মক্কা নগরে জন্মলাভ করেন ৷ শৈশবে মাতৃ-পিতৃহীন হয়ে পিতামহ কর্তৃক প্রতিপালিত হয়েছিলেন ৷ শৈশবে লেখাপড়ার কম সুযোগের মধ্যে ও তিনি ছিলেন শান্ত , ধীর-স্থির , সত্যবাদী ও চিন্তাশীল আর বড়োহয়ে তিনি একাধারে বিশ্বাসী , ন্যায়বান , দয়ালু , নির্ভীক , পরোপকারী , ভাবুক ও ক্ষমাশীল সহ শত শত সদগুণের অধিকারী হয়েছিলেন ৷ সেকালে আরবে ইহুদি ও খ্রস্টান ধর্ম ছাড়াও মূর্তিপূজার প্রচলন ছিলো ৷ আর ছিলো মারামারি , কাটাকাটি , হিংসা , দ্বেষ ও পরনিন্দা ইত্যাদি এবং মানুষের প্রতি ছিলো অন্যায় অবিচার ইত্যাদি ৷ যা দেখে তিনি কেবল চিন্তা করতেন কি করে এর থেকে এদেরকে অজ্ঞানান্ধকার থেকে মুক্তকরে জ্ঞানের আলো দান করে একতাবদ্ধ করে ইহকাল ও পরকালের সরল পথ দেখানো যায় ৷ আর তাঁর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেই চিন্তা ও চেতনার পরিধি বেড়ে আরব জাহান ছাড়াও বিশ্বমানবের কল্যাণের চিন্তায় পর্যবসিত হলে , তিনি তখন মক্কার অদূরবর্তী হেরা পর্বতের গুহায় গভীর চিন্তাসমুদ্রের তলদেশে ডুব দেন এর প্রকৃত সমাধান বের করতে ৷
৬১০ খ্রস্টাব্দের আগস্ট মাসের ৬ তারিখে হজরত মোহাম্মদ (সা. ) ৪০ বছর বয়সে যখন মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্নাবস্থায় বসে ছিলেন , ঠিক তখন শুনতে পান যে , আল্লাহ্'র ফেরেশতা হজরত জেব্রাইল (আ) এসে তাঁকে সম্বোধন করে বলছেন , “ আল্লাহ্'র বাণী আপনার উপর নাজেল হলো , আপনি আল্লাহ্ র রসূল ” ৷ আর সেই দিন হতে হজরত মোহাম্মদ (সা. ) হলেন পয়গম্বর , অর্থাৎ আল্লাহ্ র প্রেরিত মহান বাণীবাহক ৷
ঐদিন হতে হজরত তাঁহার সকল সমস্যাসমূহের সমাধানে প্রাপ্ত হতে থাকেন জেব্রাইল ফেরেশতা মারফত আল্লাহ্ 'র বাণীসমূহ আর তা মানুষের মধ্যে প্রকাশ করতে থাকেন “ ভববাণী” বা আল্লাহ্ প্রেরিত ‘ওহী’ রূপে ৷ ইহকাল ও পরকাল বিষয়ে মানুষের কর্তব্য সম্বন্ধে আল্লাহর বাণীরূপে জেব্রাইল ফেরেশতার মারফত হজরত মোহাম্মদ ( সা. ) আমরণ কাল পর্যন্ত যে সমস্ত আদেশ - উপদেশাদি সমূহ প্রাপ্ত হয়েছেন , তারই সংকলন পবিত্র কোরান মহাগ্রন্থখানা ৷
পবিত্র কোরানের বিধান ব্যতীত হজরত স্বয়ং ধর্মবিষয়ে আবশ্যকীয় অনেক বিধান ও প্রদান করেছেন ৷ সেই সমস্ত বিধানের সংকলনকে বলা হয় পবিত্র হাদিস গ্রন্থ ৷ ইসলাম ধর্ম প্রধানত পবিত্র কোরান ও হাদিস গ্রন্থের বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত ৷
মুসলমানদের ধর্ম মত ;-
ইসলামীয় মতে , প্রলয়য়ের বা কেয়ামতের চল্লিশ বছর (মতান্তরে চল্লিশ দিন ) পরে এস্রাফিল ফেরেশতা দ্বিতীয় বার শিঙ্গা বাজাবেন ( কিয়ামতের সৃষ্টির জন্যে প্রথমবার শিঙ্গা বাজায়েছিলেন ) এবং তখন পুনঃ জগত সৃষ্ট হবে , হয়তোবা নূতন রূপে ৷ তখন মৃতের পুনরুথ্থান ঘটবে এবং বিচারান্তে নিজ নিজ পাপ -পুণ্যের ফল ভোগ করবেন ৷
কোনো কোনো মতে ,একমাত্র আত্মাই বিচারের দিনে উপস্থিত হবে বিচারের জন্যে ৷ আবার অন্য বিশ্বাসে বিচারের দিন দেহ ও আত্মা পূর্বাকারপ্রাপ্ত হয়েই বিচারে উপনীত হবে,তাই বিচারক্ষেত্রে হাশর ময়দানে পাপিদের হস্ত , পদ , চক্ষু , কর্ণ ইত্যাদি পাপকর্মের সাক্ষ্য প্রদান করবে ৷ আর দোজকের শাস্তির বর্ণনায় বলা হয়েছে যে , পাপীদেরকে পুঁজ - রক্ত ইত্যাদি খেতে বাধ্য করা ছাড়াও অগ্নির উত্তাপে মস্তিষ্ক বিগলিত হবে, যে পরস্ত্রী দর্শন করেছে , সাঁড়াশী দিয়ে তার চোখ উৎপাটন করা হবে ইত্যাদি ..৷ স্বর্গের বর্ণনায় বলা হয়েছে , পুণ্যবানরা স্বর্গে নানাবিধ সুমিষ্ট ফল আহার করা ছাড়াও নেশাহীন মধ্য পান করবেন আর হুর দের সঙ্গে সহবাস করবেন , ইত্যাদি বলা হয়ছে এই বর্ণনায় ৷
মৃত্যুর পরে শরীর বিলয়প্রাপ্ত হলেও আল -আজব ( মানুষের মেরুদণ্ডের নিম্নভাগের একটা হাড় ) কখনও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না , ইহা বীজস্বরূপ বিদ্যমান থাকে ৷ শেষ বিচারের পূর্বে ৪০ দিন ব্যাপী একটানা বৃষ্টিপাত হবে এবং ঐ বৃষ্টির জলে মেরুদণ্ডের অস্থি সিক্ত হয়ে অঙ্কুরিত হয়ে আবার নরদেহ উদ্ গত হবে ৷ এই পর্যায়ে এস্রাফিল ফেরেশতা তৃতীয়বারের মতো শিঙ্গা ফুঁকলে , শিঙ্গায় রক্ষিত আত্মাসমূহ মক্ষিকার ন্যায় ইতস্তত ভাবে উড়ে গেয়ে নিজ নিজ দেহে প্রবেশ করবে এবং মানুষ তখন সজীব হয়ে উঠবে আর প্রথম সজীব হয়ে জীবন লাভ করবেন হজরত মোহাম্মদ ( সাঃ ) ৷
পুনরুথ্থানের সময়ে মানুষ্য , জ্বীন , ফেরেশতা ও অন্যান্য জীবজন্তু সকলেই পুনর্জীবিত হলে ও শুধু মানুষ ও জ্বীনের বিচার হবে ৷ মুসলমানগণ বলে থাকেন পাপ- পুণ্যের হিসেবের লিখিত পুস্তক বিচারার্থীদের হাতে প্রধান করা হবে এবং তারা নিজেরা তা পাঠ করবেন ৷ বিচারক্ষেত্রের তুলাদণ্ডে পুস্তকে লিখিত পাপ - পুণ্যের পরিমাপ নির্ধারণ করে শাস্তি নির্ধারিত হবে ৷ যাদের পাপের পরিমান বেশি তাদের স্বর্গের বামদিকের নরকের পথে যেতে হবে , আর বিচারে নির্ধারিত পুণ্যবানরা স্বর্গের দিকে দক্ষিণ পথে যেতে হবে ৷
তবে এই মতে ও পূর্বের অনেক মতের মতো পাপী ও পুণ্যবান সকলকে “ আল সিরাত ” নামক একটি সেতু , যা চুল অপেক্ষা সূক্ষ্ম ও তরবারির থেকেও বেশী ধারসম্পন্ন , তা পার হতে হবে ৷ আর পুণ্যবাণরা সহজেই তা অতিক্রম করে স্বর্গে প্রবেশাধিকর পাবে , পাপীগণ সেতু পার হতে গিয়ে নিম্নে ভীষণ অগ্নিময় নরককুণ্ডে বা নরকার্ণবে পতিত হয়ে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে ৷
মুসলমানদের মতে , নরকের সাত ভাগ এবং স্বর্গের ভাগ আটটি সাত নরক বা দোজখ হলো ;-
- জাহান্নাম
- লধা
- হোতামা
- আল - সৈর
- সাকা
- আল-জাহিম ও
- আল - হায়াইত বা হাবিয়া দোজখ ৷
পাপের ধরণে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেশীর নরকের প্রাপ্তি ঘটবে , যেমন -সর্বোচ্চ পাপীর জন্যে নির্ধারিত হবে সর্বনিম্ন নরক হাবিয়া ,
আর এর প্রতি প্রকোষ্ঠে ১৯ জন করে প্রহরী ফেরেশতা কর্তব্যরত থাকবে , ( একটা কৌতুক, বাঙালিদের দোজখে নাকি কোনো প্রহরীর প্রয়োজন হবে না, কারণ এক পাপী অন্যকে পাপীকে পাহারা দিয়ে রাখবে যাতে কেউ পালাতে না পারে ৷ )
আর দুজখের প্রধান প্রহরীর নাম মালেক ৷
আটটি স্বর্গ বা বেহেশতের নাম ;
স্বর্গে মনোহর উদ্যান , নদী ইত্যাদি বিরজমান আছে ৷নদীর একটিতে পরিশ্রুত জল , একটিতে দুগ্ধ , একটিতে মধু এবং চতুর্থটিতে সুগন্ধী নির্যাস প্রবাহিত আছে এবং সেখানকার অট্টালিকা স্বর্ণে বা রৌপ্যে নির্মিত আর বৃক্ষের কাণ্ডসমূহ সুবর্ণময় , এবং প্রস্তরসমূহ , মুক্তা ও প্রবাল ইত্যাদি মরকতময় ও বটে ৷
- লদ
- দারুস সালাম
- দারুল করার
- উদন
- আল- মাওয়া
- জান্নাতুল নঈম
- জান্নাতুল ইলিন
- জান্নাতুল ফেরদাউস ৷
স্বর্গের প্রধান প্রহরীর নাম - রেজওয়ান ৷
আর জান্নাতুল ফেরদাউসের উর্ধ্বভাগে অবস্থিত আসনটি নির্ধারিত আছে আল্লাহ্ র জন্যে ৷ স্বর্গে মনোহর উদ্যান , নদী ইত্যাদি বিরজমান আছে ৷নদীর একটিতে পরিশ্রুত জল , একটিতে দুগ্ধ , একটিতে মধু এবং চতুর্থটিতে সুগন্ধী নির্যাস প্রবাহিত আছে এবং সেখানকার অট্টালিকা স্বর্ণে বা রৌপ্যে নির্মিত আর বৃক্ষের কাণ্ডসমূহ সুবর্ণময় , এবং প্রস্তরসমূহ , মুক্তা ও প্রবাল ইত্যাদি মরকতময় ও বটে ৷
ঐ স্বর্গের তুবা নামক বৃক্ষে যিনি যেই ফল আশা করবেন , তিনি তাৎক্ষণিক ঐ বৃক্ষ থেকে সেই ফলই প্রাপ্ত হবেন ৷
আর স্বর্গে প্রবাহিত আল-কাওসার নদীর সুগন্ধ সুস্বাদু জল একবার পান করলে তার আর কখনও তৃষ্ণা পাবে না ৷
আর স্বর্গে প্রবাহিত আল-কাওসার নদীর সুগন্ধ সুস্বাদু জল একবার পান করলে তার আর কখনও তৃষ্ণা পাবে না ৷
এ সব ছাড়াও স্বর্গে অপরূপ রূপ-লাবণ্য সম্পন্ন এবং সুবৃহৎ কৃষ্ণবর্ণ চোখ বিশিষ্ট হুর - অল - ঐন নামে পরিচিত হুরীগণ সর্বদা স্বর্গবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্যে নিযুক্ত ও সদামজূতথাকবে ,যারা মর্ত্যের রমণীদের মতো মৃত্তিকায় তৈরি নয় বরং হুররা মৃগনাভি দ্বারা গঠিত হয়েছে ইত্যাদি , যা পূর্বের দুই সিমেটিক ধর্মমতের অনুরূপ বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিয়মান হয় ৷
এই লেখা বা বর্ণানা আরো বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করার সুযোগ ছিলো কিন্তু বোধগম্য কারণে তা না করে, এইখানে এর সমাপ্তি টানা হলো ৷
এই লেখা বা বর্ণানা আরো বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করার সুযোগ ছিলো কিন্তু বোধগম্য কারণে তা না করে, এইখানে এর সমাপ্তি টানা হলো ৷
( বি : দ্র : এই লেখাটি শুধু কিছু পৌরাণিক ও ধর্মের তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোনো মন্তব্য ছাড়া প্রকাশ করা হয়েছে, কারো ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করতে, এই লেখাটি সংকলিত করা হয়নি, তাই ইহা কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে ন৷, অনুমতি ছাড়া, ইহা শুধু আগ্রহী পাঠকদের জন্যে লেখা হয়েছ, সবাইকে ধন্যবাদ , লেখক )
(সূত্র ;- আরজ আলী মাতুব্বরের লিখিত গ্রন্থ - আরজআলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র - ১ ও ২ , এর অনুকরণ করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংক্ষেপ করে এই লেখাটি তৈরি করা হয়েছে , তাই এর লেখক আরজ আলী মাতুব্বরই, বর্তমান লেখক নন , তিনি শুধু সংকলিত করেছেন মূল লেখাগুলোকে একত্রে )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন