৭১ এর প্রথম প্রহরে কি ঘটেছিলো চট্রগ্রামে , তার একটি বর্ণনা প্রত্যক্ষ দর্শীর জবানীতে ;-


   

          ৭১-  এর   মুক্তিযুদ্ধের   প্রথম   প্রহরে   কি   ঘটেছিল  চট্রগ্রামে ,    তার   একটি   বর্ণনা  ;

    ( সূত্র ; বইয়ের  নাম;- “ বাংলাদেশের  মুক্তিযুদ্ধ  ও  সর্বাধিনাক   ওসমানী  ”
               লেখক ;  মোঃ  আব্দুল  আজিজ  ,  সময়  প্রকাশন   থেকে  ,  এপ্রিল      ২০০০  সালে   প্রথম   প্রকাশিত   হয়েছে  ,  এখানে   বইটির  আট   অধ্যায়ের  
        কিছু   অংশের বর্ণনা  হুবহু   এখানে   উল্লেখিত   হলো  ৷  )    

          ২৬  মার্চ ’    ৭১  সকালের   দিকে   ইংরেজিতে   লেখা   একটা   হ্যান্ডবিল   চট্রগ্রামে   লোকের   হাতে   হাতে   পৌঁছে   যায়  ৷  এ  হ্যান্ডবিলটির  বঙ্গানুবাদ  করেছিলেন   ডাক্তার  মনজুলা  ৷  এর  ভাষ্যটি  ছিলো  নিম্নরূপ  :

        “  বাঙ্গালী  ভাইবোনদের   কাছে   এবং   বিশ্ববাসীর   কাছে   আমার  আবেদন  ,   রাজরবাগ  পুলিশ  ক্যাম্প  ও  পিলখানা  ই  পি  আর  ক্যাম্পে  রাত  ১২  টায়  পাকিস্তানী  সৈন্যরা  অতর্কিতে  হামলা  চালিয়ে  হাজার  হাজার  লোককে  হত্যা   করেছে  ৷  হানাদার   পাকিস্তানী  সৈন্যদের  সঙ্গে  আমরা  লড়ে  যাচ্ছি  ৷  আমাদের  সাহায্য  প্রয়োজন  এবং   পৃথিবীর  যে  স্থান  থেকেই   হোক  ৷  এমতবস্তায়  আমি  বাংলাদেশকে  স্বাধীন  সার্বভোম  রাষ্ট্র  বলে   ঘোষণা   করছি ৷  তোমরা  তোমাদের  সমস্ত  শক্তি  দিয়ে  মাতৃভূমিকে   রক্ষা  কর  ৷  আল্লাহ্   তোমাদের   সহায়  হউন  ৷”

         (  শেখ  মুজিবুর  রহমান )

    ( সূত্র; দৈনিক  বাংলা ,  ২৬  মার্চ  , চৌধুরী, শামসুল  হুদা , একাত্তরের  রণাঙ্গন,  প্রকাশ  ১৯৮৪ , পৃ, ১৫ )
  
           ওই  দিন  চট্রগ্রামের   কালুরঘাটে  সংগঠিত   ‘ স্বাধীন  বাংলা  বিপ্লবী  বেতার  কেন্দ্রে’র  প্রথম  সান্ধ্য  অধিবেশনে  আবুল  কাশেম  সন্দীপের  উপস্থাপনায়  এ  হ্যান্ডবিলটি  প্রচারিত  হয়েছিল  ৷  ইতিপূর্বে  চট্রগ্রাম  জেলা  আওয়ামী  লীগের  তৎকালীন  সভাপতি  জনাব  আব্দুল  হান্নান  অপরাহ্ন  প্রায়  দু’টার  সময়  চট্রগ্রাম  বেতার ( আগ্রাবাদ ) থেকে  আনুমানিক  পাঁচ  মিনিটের  এক  সংক্ষিপ্ত  ভাষণ  রেখেছিলেন  দেশবাসীর  উদ্দেশ্যে  ৷  বঙ্গবন্ধু  কর্তৃক  স্বাধীনতা  ঘোষণার  বাণীর  আলোকেই   ছিল  জনাব  এম ,  এ ,  হান্নানের  এই  ভাষণ  ৷  স্পষ্টতঃই  চট্রগ্রাম  বেতার  কেন্দ্র  থেকে  বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  ঘোষণার  পক্ষে  বিপ্লবী  ভাষণ  প্রচারের  গৌরব  অর্জন  করেছিলেন  জনাব  এম  ,  এ ,  হান্নান  ৷

 ( সূত্র; চৌধুরী,  শামসুল  হুদা , একাত্তরের  রণাঙ্গন, প্রকাশ- ১৯৮৪ , পৃ , ১৬ ,  ৩০-৩১   )

          বেলাল  মোহাম্মদ  ও  আবুল  কাশেম  সন্দ্বীপ  প্রমুখের    উদ্যেগে  ২৬  মার্চ  সন্ধ্যা  ৭-৪০  মিঃ  কালুরঘাটের  বেতার  কেন্দ্রে  যে    “ স্বাধীন  বাংলা  বিপ্লবী  বেতার  কেন্দ্র”  চালু  হয়  সেখানে  এসেও   জনাব  হান্নান  নিজ  নাম  ঘোষণা  ছাড়াই  একটি  ভাষণ  প্রচার  করেছিলেন  ৷

          পরদিন  এই  বেতার  কেন্দ্রটির   প্রহরার  ব্যবস্থা  করার  জন্যে  বেলাল  মোহাম্মদ  ও  আরো  কয়েকজন  পটিয়ায়   গেলেন  এবং  সেখান  থেকে  মেজর  জিয়াকে  নিয়ে  আসেন ৷ 
          বেলাল  মোহাম্মদের  পরামর্শে  মেজর  জিয়া  ২৭  মার্চ  বেতারের  সান্ধ্য  অধিবেশনে   স্বকণ্ঠে  ইংরেজিতে  একটি   ঘোষণা  প্রচার  করেন  ৷  বেলাল  মোহাম্মদের  স্মৃতি  অনুযায়ী  সেদিন  মেজর  জিয়া  ঘোষণা  করেছিলেন , 
       “ I , Major  Zia ,  on  behalf  of  our  great  national  leader  Bangabandhu  Sheickh  Mujibur  Rahman , do  hereby  declare  Independence  of  Bangladesh”  (  আমি  মেজর  জিয়া , আমাদের  মহান  নেতা  বঙ্গবন্ধু  শেখ  মুজিবুর  রহমানের  পক্ষে  বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  ঘোষণা  করছি  ) ৷
      ( সূত্র; মোহাম্মদ  বেলাল ,  স্বাধীন  বাংলা  বেতার  কেন্দ্র ,  অনুপম  প্রকাশনী , ১৯৯৭ , পৃ, ৪০ )

          ২৮  মার্চ  দুপুর  থেকে   বেতার  কেন্দ্রের  নাম  থেকে  বিপ্লবী  শব্দটি  বাদ  দেয়া  হয়  ৷  ওই  দিন  সন্ধ্যায়  মেজর  জিয়া  আবার  নিজকে  অন্তবর্তীকালীন  সরকার  প্রধান  ও  মুক্তিবাহিনীর  প্রধান  ঘোষণা  করে  বেতারে  একটি  ঘোষণা  প্রচার  করেন  ৷

          ৩০  মার্চ  প্রভাতী  অধিবেশনে  মেজর  জিয়ার  আরেকটি  ইংরেজী  ভাষণ  প্রচার  করা  হয়  ৷  এতে  এ  কে  খানের  পরামর্শে  পূর্বতম  ঘোষণা  সংশোধন  করে  মহান  নেতা  বঙ্গবন্ধুর  নামে  ঘোষিত  হয়েছিলো  ৷  সেদিন  দুপুরে  ২-৩০  মিঃ  কালুরঘাট  বেতার  ভবনে  হানাদার  বাহিনী  বোমা  বর্ষণ  করে  ৷  এতে  বেতারের  ৩১  কলোওয়াট  শক্তির  প্রেরক  যন্ত্রটি  ছিন্নভিন্ন  হয়ে  যায়  ৷  এরপর  সেই  ভবনে  রক্ষিত  ১  কিলোওয়াট  শক্তিসম্পন্ন  প্রেরকযন্ত্রটি  খুলে  রামগড়  নিয়ে  যাওয়া  হয়  ৷  সেখান  থেকে  ৩  এপ্রিল  অন্যসূত্র  থেকে  পাওয়া  ২০০  কিলোওয়াট  শর্টওয়েভ  প্রেরকযন্ত্র  থেকে  রাতের  বেলা  ১  ঘন্টা  স্থায়ী  একটি  অধিবেশন  চালানো  হয়  ৷  ৪  এপ্রিল  ১ কি.  ওয়াট  যন্ত্রটি  স্থাপন  করে  সমবেত  কর্মীরা  দু’দলে  ভাগ  হয়ে  দু’টি  কেন্দ্রের  অনুষ্ঠান  প্রচার  শুরু  করেন  ৷  ২৫  মে  সকাল  পর্যন্ত  এ  ব্যবস্থা  অব্যাহত  থাকে    ওই  দিন  সন্ধ্যায়  মুজিব  নগরে  ৫০ কি. ওয়াট  শক্তির  একটি  কেন্দ্র  চালু  হলে  বেতার  কর্মীরা  সে  কেন্দ্রে  যোগদানের  উদ্দেশ্যে  পরদিন  মুজিব  নগর  পৌছেন  ৷ 

         এই  সময়ে   চট্রগ্রামের  ষোল   শহর  ৮ম  ইস্ট  বেঙ্গল  রেজিমেন্ট  ও  চট্রগ্রাম  সেনানিবাসে  রেজিমেন্টাল  সেন্টারে   প্রায়  ২০০০  নতুন   রিক্রুট   বাঙালি  সৈন্য   ছিল  ৷  রাত  ১১-৩০  মিঃ  বেলুচ  রেজিমেন্টের  সৈন্যরা  অতর্কিতে   রেজিমেন্ট   সেন্টারে  আক্রমণ  চালায়  এবং  এতে  এক  হাজারের  বেশী  বাঙালি  সৈন্য  নিহিত  হয়  ৷  কিছু  সৈনিক  পালিয়ে  গিয়ে  ষোল  শহরে  ৮ম  ইস্টবেঙ্গলে  সাহায্য  প্রার্থী  হলে  ও  তারা  প্রত্যাশিত  সাহায্য  পায়নি  ৷  রেজিমেন্টের  উপ-প্রধান  মেজর  জিয়াকে  তখন  পাঠিয়ে  দেয়া  হয়েছিলো  বন্দরে  এম ,  ভি  , সোয়াত  থেকে  অস্ত্র  খালাসে  সাহায্য  করার  জন্য  ৷ 
          তিনি  পথে  ব্যারিকেডের  সম্মুখীন  হন  ৷  ব্যারিকেড  পরিস্কার  করার  সময়  তিনি  খবর  পান  যে  বেলুচ  রেজিমেন্ট  কর্তৃক  রেজিমেন্ট  সেন্টার  আক্রান্ত  হয়েছে  ৷
এ  খবর  পাওয়া  মাত্র  তিনি  সিদ্ধান্ত  পাল্টে  ষোল  শহর  যাত্রা  করেন  এবং  সেখানে  পৌঁছে  ব্যাটালিয়ান  কম্যাণ্ডারকে  ঘুম  থেকে  ডেকে  তুলে  গ্রেফতার  করেন  ৷  তখন  মিলিটারি  টেলিফোন  অকেজো  হয়ে  গেছে  ৷  তাই  সিভিল  টেলিফোন  অপারেটরকে  ফোনে  পেয়ে  অনুরোধ  জানান  যে  ইস্ট  বেঙ্গল  রেজিমেন্টের  ব্যাটালিয়ান  স্বাধীনতা  যুদ্ধ  ঘোষণা  করেছে   এ  সংবাদটি  যেন  চট্রগ্রামের  কমিশনার  ,  পুলিশের  ডি  আই  জি  আর  রাজনৈতিক  নেতাদের  জানিয়ে  দয়া  হয়  ৷ মার্চের  ২৬  তারিখে  পায়ে  হেঁটে  তিনি  পটিয়া  পাহাড়ে  পৌঁছে  গেলেন  ৷  তাঁর  ভাষায়  “ স্বাধীনতা  যুদ্ধের  প্রথম  পাহাড়  ”  ৷
(  সূত্র; চৌধুরী ,  শামসুল  হুদা  ,  পূর্বোক্ত ,  পৃ. ১৮ )

        অন্যদিকে  ই  পি  আর  এর  চট্রগ্রাম  সেক্টরের  এডজুটেন্ট  ক্যাপ্টেন  রফিক  পূর্ব  থেকেই  যোগাযোগ  রক্ষা  করে  চলছিলেন  ই  পি  আর  বাহিনী  এবং  আরো  কিছু  কর্মকর্তা  ও  রাজনৈতিক  নেতৃবৃন্দের  সাথে  ৷  ২৫  মার্চ  রাতে  যখনই  খবর  পাওয়া  গেল  যে  ঢাকার  রাস্তায়  ট্যাঙ্ক  নেমেছে  তখনই  তিনি  রওয়ানা  হয়ে  গেলেন  ওয়ারলেস  কলোনীর  দিকে  ৷  সেখানে  অবস্থানরত  ক্যাপ্টেন  হায়াত  একটি  প্লাটুন  কম্যাণ্ড  করছিলেন  ৷  তিনি  অতর্কিত  আক্রমনে  বিনা  রক্তপাতে  ক্যাপ্টেন  হায়াত  ও  তার  পাকিস্তানী  সাঙ্গোপাঙ্গোদের  বন্দি  করতেই  বাঙালি  সেন্যরা  তাদের  সাথে  যোগ  দিল  ৷  সেখান  থেকে  হালিশহরে  এসে  ৩০০  পাকিস্তানী  সেনাকে  গ্রেফতার      করেন  ৷  এখানকার  তটি  অস্ত্রাগার  তাদের  নিয়ন্ত্রনে  আসে  ৷  “  রাতের  অন্ধকারে  ক্যাপ্টেন  রফিক  প্রায়  সারা  চট্রগ্রাম  শহর  নিজ  দখলে  আনেন  ৷  তিনি  কাপ্তাই  ও  রামগড়ে  ওয়ারলেস  বার্তা  পাঠান  এবং  বাঙালি  ই পি  আর  সৈন্যদের  চট্রগ্রাম  এসে  তাঁর  সঙ্গে  যোগ  দিতে  আহ্বান  জানান  ৷   কিন্তু  কাপ্তাই  ও  রামগড়  থেকে  আগত  ই পি  আর  সৈন্যদের  মেজর  জিয়া  কালুরঘাটে  থামিয়ে  দেন  এবং  অষ্টম  ইস্ট  বেঙ্গলের  অন্তর্ভুক্ত  করেন ” ৷ 
 ( সূত্র ;  হক , কায়সুল , সম্পাদক  পাক্ষিক  শৈলী ,  ১৬  ড়িসেম্বর ’ ৯৯  প্রবন্ধ : মেজর  অবসরপ্রাপ্ত  রফিকুল  ইসলাম  পিএসসি ,    ‘ মুক্তিযুদ্ধে  প্রাথমিক  প্রতিরোধ’ )


          ২৫  মার্চ  রাতের  প্রথম  প্রহরে  ক্যাপ্টেন   এস  এম  ভূইয়া  ছিলেন  চট্রগ্রামের  শেরশাহ  কলোনীতে  ৷  গুলির   শব্দে  তিনি  জেগে  ওঠেন  এবং  তখনই  একজন  বাঙালি  হাবিলদার  ইস্টবেঙ্গল  রেজিমেন্ট  সেন্টার  থেকে  দৌড়াতে  দৌড়াতে  এসে  জানায়  যে  সকল  বাঙালি   সৈন্যকে  হত্যা  করা  হয়েছে  ৷  প্রতিরোধের  স্পৃহা  নিয়ে  তিনি  মুহূর্তেই  ফোনে  ৮ম  বেঙ্গল  রেজিমেন্টে  মেজর  জিয়ার  সাথে  যোগাযোগের  চেষ্টা  করে  ব্যর্থ  হন  ৷  পরে  ভোরের  দিকে  পায়ে  হেঁটে  হাজির  হন  ৮ম  বেঙ্গল  রেজিমেন্টে  ৷  কিন্তু  সেখানে  কারো  সাথে  দেখা  হয়নি  ৷  চলে  আসেন  শহরে  ৷  সেখানে  তিনি  বেঙ্গল  রেজিমেন্টর  কিছু  জোয়ান , ই পি  আর  ও  পুলিশ  বাহিনীর  লোক  জড়ো  করে  ক্যান্টনমেন্ট  আক্রমন  করবেন  সাব্যস্ত  করেন  ৷  কিন্তু  ক্যাপ্টেন  রফিকের  পরামর্শে  সে  পরিকল্পনা  বাদ  দিয়ে  সন্ধ্যার  দিকে  কুমিরায়  পৌঁছান  কুমিল্লা  থেকে  চট্রগ্রামগামী  হানাদার  বাহিনীর  মোকাবিলা  করতে  ৷  ৭  টার  দিকে  শত্রুবাহিনী  সেখানে  পৌঁছলে  অধিনায়ক  ইকবাল  শফি  “  তাঁর  জীবনের  সবচেয়ে  মারাত্মক  চ্যালেঞ্জের  মুখামুখি  হয়ে  গেলেন  ৷  সুশিক্ষিত  এবং  আধুনিক  অস্ত্রে  সজ্জিত  তার  সৈন্যদের   অর্ধেকের   বেশি  নিয়ে  আমাদের  এমবুশের  মধ্যে  ধরা  পড়ে  গেলেন  ইকবাল  শফি  ৷  কুমিরায়  মহাসড়কটির  এই  অংশে  স্থানীয়  জনগণ  আগ  থেকেই  ব্যারিকেড  স্থাপন  করেছিল  ৷ ….. তখন  সন্ধ্যা  ৭  টা ৷  আমাদের  সব  সৈন্যরা  একযোগে  পাকিস্তানীদের  উপর  ব্যাপক  গুলিবর্ষণ  শুরু    করে  ৷  ডান  ,  বাম  , ও  সম্মুখ  তিন  দিক  থেকেই  ঝাঁকে  ঝাঁকে  গুলি  ছুটে  আসতে  থাকে  ৷  …..কুমিরায়   এই  এমবুশে  পাকিস্তানীদের  অনেক  যানবাহন  ধ্বংস  হয়  এবং  ৭০  জনের  অধিক  হতাহত  হয়  ৷  …..পার্শ্ববর্তী  এক  পাহাড়ের  দিকে  পালিয়ে  প্রাণ  বাঁচালেন  ইকবাল  সফি  ৷  ….কুমিরায়  এমবুশ  এবং  পরবর্তী  রক্তক্ষয়ী  সংঘর্ষে  আমাদের  ১৪  জন  হতাহত  হয়  ৷…….
          এক  পর্যায়ে  মেশিনগানের  গুলি  শেষ  হয়ে  যাওয়ায়   ও  ক্যাপ্টেন  রফিক  সহ  অন্যান্যদের  সাথে  যোগাযোগে  ব্যর্থ  হওয়ায়  ক্যাপ্টেন  ভুইয়া  শহরে  প্রত্যাবর্তন  করেন  এবং  মেজর  জিয়ার  বাহিনীর  সাথে  যোগ  দেন  ৷
         
  (  সূত্র;  বীর  উত্তম, রফিকুল  ইসলাম  ,  লক্ষ  প্রাণের  বিনিময়ে  ,  অন্যান্য , প্রকাশ  ১৯৯৭ ,  পৃ , ১২০-২১ )

          পকিস্তানবাহিনী  নৌ  ও  বিমানযোগে  চট্রগ্রামে  নতুন  শক্তি  সষ্ণয়  করে  ৷  ২৮  মার্চ  তারিখের  মধ্যে  পক  সেনারা  চট্রগ্রাম  সার্কিট  হাউসে  হেডকোয়ার্টার  স্থাপনে  সক্ষম  হয়  ৷  ৩১  মার্চ  বীরত্বপূর্ণ  সংগ্রামের  মধ্যে  দিয়ে  হালিশহর  ই  পি  আর  সদর  দফতরের  পতন  ঘটে  ৷  ক্যাপ্টেন  রফিক  তখন  সাহায্যের  আশায়  ছিলেন  সীমান্তের  ওপারে  ৷ 

         
“  চট্রগ্রাম  শহর  ছেড়ে  মুক্তিযুদ্ধারা  কালুরঘাটে  সমবেত  হয়  ৷  ক্যাপ্টেন  হারুন  এবং  লেফটেন্যান্ট  শমসের  মবিন  চৌধুরীর  নেতৃত্বে  মুক্তিযুদ্ধারা    এখানে  প্রতিরক্ষাব্যুহ  রচনা  করে  ৷
  (  সূত্র; হক ,  কায়সুল     …পূর্বোক্ত  প্রবন্ধ  )

          ১০  এপ্রিল  নাগাদ  পাকিস্তানীরা  কালুরঘাট  ব্রিজের  কাছাকাছি  এসে  অবস্থান  নেয় ৷   ১১  এপ্রিল  সকাল  ৮  টায়  পাকিস্তানীদের  আর্টিলারি  এবং  নৌবাহিনীর  কামান  সমূহ  মুক্তিবাহিনীর  অবস্থানের  ওপর  তীব্র  আক্রমন  শুরু    করে  ৷  “  পাকিস্তানী  বাহিনী  কালুরঘাট  ব্রিজ  এলাকা  দখলের  জন্য  মরণপণ  লড়াইয়ে  অবতীর্ণ  হয়  ৷  ক্যাপ্টেন  হারুন  এই  যুদ্ধে  গুরুতরভাবে  আহত  হন  এবং  লেফটেন্যান্ট  শমসের  মবিন  চৌধুরী  শত্রুর  হাতে  ধরা  পড়েন  ৷  অষ্টম  ইষ্ট  বেঙ্গল  তিনটি  দলে  বিভক্ত  হয়ে  পিছনে  সরে  আসে  ৷  মেজর  মীর  শওকত  আলীর  নেতৃত্বে  একটি  দল  রাঙামাটি  ,   দ্বিতীয়  দলটি  ক্যাপ্টেন  মাহফুজের  নেতৃত্বে  কাপ্তাই  এবং  তৃতীয়  দলটি  ক্যাপ্টেন  খালিকুজ্জামানের  নেতৃত্বে  কক্সবাজারের  দিকে  অগ্রসর  হয়  ৷  অবশেষে  তারা  সবাই  ভারতীয়  এলাকায়  অবস্থান  করে  ৷
 (  সূত্র ; হক,  কায়সুল….পূর্বোক্ত )

          মেজর  জিয়া  ৩০  মার্চ  সীমান্তবর্তী  রামগড়ে  পৌছেন  ৷  এ  সম্পর্কে  ফরুক  আজিজ    খান  লিখেছেন  ,   “  Maj….Zia’s  quick  departure  from  the  scene  had  a  disasterous  effect  on  the  morale  of  the  fighting  men  who  were  now  in  total  disarray  .  It  is  an  anticlimax  after  the  inspiration  and  courage  his  radio  broadcast  had  given  to  the  freedom  fighters  and  many  others  like  us  .
  (  মেজর  জিয়ার  তড়িঘড়ি  করে  ঘটনাস্থল  ত্যাগ  করায়  সৈন্যদের  নৈতিক  মনোবলের  ওপর  প্রভাব  পড়ে  এবং  তারা  সম্পূর্ণ  বিশৃঙ্খল  হয়ে  পড়ে  ৷  বিশেষ  করে  উৎসাহ  ব্যঞ্জক  রেডিও  ঘোষণায়  মুক্তিযোদ্ধা  ও  অন্যান্যদের  মনে  সাহস  যোগানোর  পর  এটি  ছিলো  একটি  বৈপরিত্যমূলক  ঘটনা  ) 
   ( সূত্র ;   khan , F . A .   ….পূর্বোক্ত,.. পৃ,  ৯৮  )


      এর  পর  চট্রগ্রামের  নানাস্থানে  বিক্ষিপ্তভাবে  লড়াই  করে  ২ মে  রাত্রে  মুক্তিযুদ্ধারা  পিছু  হটে  ভারতীয়  এলাকা  সাব  রুমে  আশ্রয়  নিতে  বাধ্য  হয়  ৷
          সারা  চট্রগ্রাম  চলে  যায়  হানাদার  বাহিনীর  কবলে  ৷ ……….

          ইতোমধ্যে  ৩  এপ্রিল  মেজর  জিয়া  চট্রগ্রাম  থেকে  সিলেটের  তেলিয়াপাড়া  এসে  মেজর  খালেদ  মোশাররফ  ও  সফিউল্লার  যৌথ  কমান্ড  থেকে  দু’কোম্পানি  সৈন্য  চেয়ে  নেন  ৷

        মুক্তিযুদ্ধের  প্রাথমিক  পর্যায়ে  ৪  এপ্রিল  তেলিয়াপাড়া  চা  বাগানে  মেজর  সফিউল্লার    সদরদফতরে  এক  সভায়  অবসরপ্রাপ্ত  কর্ণেল  মুহাম্মদ  আতাউল  গনি  ওসমানী  ,  লে. ক .আব্দুর  রব ,  মেজর  জিয়াউর  রহমান ,  মেজর  খালেদ  মোশাররফ ,  মেজর  সফিউল্লাহ্ ,  মেজর  কাজী  নুরুজ্জামান  ,  মেজর  নুরুল  ইসলাম  ,  মেজর  মমিন  চৌধুরী , মেজর  শাফায়াত  জামিল ,  মেজর  মঈনুল  হোসেন  চৌধুরী     এবং  আরও  কয়েকজন উপস্থিত  হন  ৷  সেখানে  তারা  মুক্তিযুদ্ধের  বিভিন্ন  দিক  পর্যালোচনা  করে  সরকার  গঠনের  জন্যে  অপেক্ষা  না  করে  সমস্ত  বিদ্রোহী  ইউনিটের  সমবায়ে  সম্মিলিত  মুক্তিফৌজ  গঠন  করেন  এবং  কর্নেল  ওসমানীকে  তা  পরিচালনার  দায়িত্ব  অর্পন  করেন  ৷  এ  সভায়  যুদ্ধ  সম্পর্কিত  এলাকার  দায়িত্ব  বন্টন  করা  হয়  ৷  মেজর  জিয়াউর  রহমানের  কম্যাণ্ডে  আসে  চট্রগ্রাম - পার্বত্য  এলাকা  ৷ 
  (  সূত্র ;  হাসান,  মঈদুল,  মূলধারা’ ৭১ , ইউ , পি  , এল , ১৯৮৬, পৃ , ১৫  এবং  সফিউল্লা  বরউত্তম ,  মে. জে . কে এম , মুক্তিযুদ্ধে  বংলাদেশ , আগামী , ১৯৯৫ , পৃ, ৯০-৯১  ) 
         
   এই  লেখা   থেকে   আগ্রহীরা   মেজর   জিয়া  ,  চট্রগ্রামের  মুক্তি  যুদ্ধের  প্রাথমিক  পর্যায়ে ,  স্বাধীনতার   ঘোষণা   সহ   আর  কি  কি  ভূমকা   পালন   করেছিলেন   এবং   অন্যান্যরা   কি  ভূমিকা   পালন  করে  ছিলেন   তা   সহজে   জানতে পারবেন   ,  তার  সহ   যুদ্ধাদের   বিভিন্ন   লেখা  থেকে  ৷

মন্তব্যসমূহ