বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার প্রসঙ্গে কিছু কথা :

                          বাংলাদেশের  রাজনীতিতে  ধর্মের  ব্যবহার  প্রসঙ্গে  কিছু  কথা  :

            আজকে   আল-কায়েদা    প্রধান   আরমান   আল - জাওয়াহিরির    এনটারনেটে    তাদের   ওয়েবসাইডে    এক   ভিডিও    বার্তা    প্রকাশ    করেছে   ৷    এতদিন    তার    এসব    ভিডিও    বার্তা    পশ্চিমা    বিশ্বের    ব্যাপার   থাকলেও    ,   এবারের    বার্তায়    বাংলাদেশকে    সংশ্লিষ্ট    করা   হয়েছে   ৷   এতদিন    আল-কায়েদার   সঙ্গে    জামায়াত   ও    হেফাজেতের    সম্পর্ক  থাকার   কথা   বাতাসে   চাউর   থাকলে   ও    অনেকের   কাছেই    এটা   বিশ্বাস    যোগ্য   ছিল   না   ৷   আরমান    জাওয়াহিরির   আজকের   এই   ভিডিও বার্তা   সকল    সন্দেহের    অবসান   ঘটালো   ৷ অবশ্য   সঠিক   না  বেঠিক   তা   নিয়ে   কিছু   টানাটানি   চলবে হয়ত   কিছুদিন   ৷   তবে   এতে   এই   বার্তার   অর্থ    ভিন্ন   হয়ে   যাবে  না   নিশ্চয়  ৷

            আল-কায়েদা   প্রধান    সরাসরি   বংলাদেশ   জামায়াত   ও   তাদের   সৃষ্ট   বর্তমানে    বাংলাদেশে   বহুল    আলোচিত    ১৩   দফা    দাবীনামা   পেশকরা  কারী   ইসলামী   নামদারি    সংঘটন    হেফাজতি    ইসলামের   উদ্দেশ্যে  বলেছেন  ,   তারা   যেন   অচীরেই    বাংলাদেশে    আল-কায়েদা    স্টাইলে    ইসলামী   জিহাদের   ডাক   দেয়   এবং    জিহাদ   আরম্ভ   করে   ৷   তিনি   বাংলাদেশের   ৭১  সালের  স্বাধীনতার   যুদ্ধ   ও   মুক্তিযুদ্ধকে   ইসলাম   ধ্বংসের   একটি   পদক্ষেপ    মনে   করেন   বলে   তার   বক্তব্যে    উল্লেখ     করেছেন   ৷ এ প্রসঙ্গে  আল-কায়েদা  সংক্রান্ত  কিছু  তথ্য  যা  পত্র  , পত্রিকাতে  বিভিন্ন  সময়ে  প্রকাশিত  হয়েছিল , তা  এখান  সংযোজন  করা  হলো, আগ্রহীদের  জন্যে  ৷ 

        ২০০১ সালে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেবহুল আলোচিত আফগান যুদ্ধে অন্তত ১২ হাজার বাংলাদেশী অংশ নেয় যার মধ্যে ১ হাজার ৮২ জন ছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরেরআফগান ফেরত যোদ্ধারা দেশে ফিরে ঢাকার খিলগাঁওয়ের তালতলায় জাগো মুজাহিদনামে একটি সংগঠন করে১৯৯৫ সালের দিকে মুফতি হান্নান অন্তত ৩ হাজার আফগান ফেরত যোদ্ধাকে সংগঠিত করেসংগঠিত দলটিকে হরকত-উল-জিহাদ অব বাংলাদেশ সংক্ষেপে (হুজিবি) নাম দেয়া হয়হুজিবিই পরবর্তীতে হুজি নাম ধারণ করেহুজি গঠনে বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশ নানাভাবে সহযোগিতা করেএছাড়া পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হুজি গঠনে আর্থিক সহায়তা করেআফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতীয় ও পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার মুজাহিদরা হুজি ও জেএমবির সঙ্গে যোগ দেয়এ দেশীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রাপ্ত মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আফগান ফেরত জঙ্গীরা দেশের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মাদ্রাসার নামে ১৫টি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করেট্রেনিংয়ের দায়িত্ব পালন করে মুফতি হান্নান, মুফতি মাওলানা আব্দুস সালাম, শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, ভারতীয় জঙ্গী মুফতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুল্লাহ 
২০০২ সালের ২০ অক্টোবর টাইম ম্যাগাজিনের এলেক্স পেরি জঙ্গীবাদের ওপর প্রতিবেদন করেনসেখানে বলা হয় ২০০১ সালের ২১ ডিসেম্বর আল-কায়দা ও তালেবান জঙ্গী বাংলাদেশে প্রবেশ করে; বিন লাদেনের সেকেন্ড ম্যান মিসরীয় নাগরিক চট্টগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং কয়েক মাস এখানে থাকেবাংলাদেশে পরিপূর্ণভাবে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলার মধ্যে দিয়ে২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ বাদে) গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে ৪শস্থানে প্রায় সাড়ে ৫শবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জঙ্গী হামলার প্রকাশ্যে প্রচার চালায়হামলায় দুজন নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রকাশ্যে জঙ্গী কার্যক্রম 
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়াতিনি, তাঁর সন্তান ও তাঁর কিছু মন্ত্রীবর্গের সহায়তায় জঙ্গী গোষ্ঠীর প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু হয়এ কথাটিকে এত জোর দিয়ে বলা সম্ভব হচ্ছে এর কারণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ২০০৪ সালে ছাত্র শিবিরের এক সম্মেলনে বলেছিলেন যে ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদল একই মায়ের দুই সন্তানএতে জঙ্গী সংগঠনগুলো উৎসাহ নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় বাংলাদেশে জঙ্গীদের অবস্থান সম্পর্কে তৎকালীন সরকারকে জানানো হলে তারা রাগান্বিত হয়এভাবেই তারা জঙ্গীদের মদদ দিয়ে এসেছে এবং দিচ্ছেএর পরিণতি আমরা দেখেছি, সিরিজ বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন নিহত হন; আহত হন ৪ শতাধিক 
বাংলাদেশ জঙ্গীকবলিত হয়ে পড়ায় সেই ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিম-লে আলোচিত হয়সিরিজ বোমা হামলার স্থান হিসেবে হাইকোর্ট, সুপ্রীমকোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারী-আধাসরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বেছে নেয়া হয়হামলার স্থানসমূহে জামাতুল মুজাহিদীনের লিফলেট পাওয়া যায়লিফলেটগুলোতে বাংলাদেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে বক্তব্য লেখা ছিলদেশের কর্মরত বিচারকদের প্রতি একটি বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়তাতে বলা হয়, দ্রুত এদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে হবেনতুবা কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে জেএমবিইসলামী হুকুমত কায়েমের বিষয়ে তাদের সঙ্গে দেশ-বিদেশের অনেক শক্তিশালী দেশ ও শীর্ষ রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছেঐ সময় জঙ্গী গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গ্রেফতার হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহসহ আরও অনেকেরিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের অনেকের সঙ্গেই তাদের সখ্য ছিল
আমাদের দেশে ইসলামী জঙ্গীবাদের আদি উৎসস্থল হচ্ছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের শিরোমণি হচ্ছে জামায়াতে ইসলামবাংলাদেশে এরকম ১২৫টি জঙ্গী সংগঠন রয়েছেএগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ, শাহাদৎ-ই-আল হিকমা, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ (আহাব), হিজবুত তওহিদ, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হিজবুত তাহরির, আনসারুল্লাহ মুসলামিন, বাংলাদেশ ইসলাম রক্ষা কমিটি, আল হারাত আল ইসলামিয়া, জামায়াতুল ফালাইয়া, তওহিদী জনতা ইত্যাদিএ সকল ইসলামী দলগুলো বিভিন্ন নামীদামী ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় থেকে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেতারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।  
(সূত্র ; ওয়ালিয়র  রহমান )

            বাংলাদেশের   মানুষ   কোনো   সময়েই    রাজনীতিকে    ধর্মের   সঙ্গে   একত্রিত   করতে   চায়   না   ৷    তাই    কোনো    ধর্মীয়   রাজনৈতিক    সভা   সমাবেশে    কেউকে   তেমন   ভাবে    যোগদান   করতে    দেখা   যায়   না  ৷  যেমন   অরাজনৈতিক    ধর্মীয়    সংগঠন     তাবলীগ   জামাত   এর   বার্ষিক   সভা    বিশ্ব-ইস্তিমাতে      স্বেচ্ছায়    লাখে   লাখে   সর্বস্তরের   মানুষ    যোগ  দিয়ে   থাকে   ৷

            এই   উপ-মহাদেশের       যেন   বর্তমানে   আবার  জোর   করে   নতুন   ভাবে   ধর্মীয়    উগ্রবাদ    ও   সন্ত্রাসবাদ   প্রতিষ্ঠার   চেষ্টা   করা   হচ্ছে  ৷   আর   বাংলাদেশে   জামায়াত    ও   হেফাজত    এ  ব্যাপারে   কার্যকর   ভূমিকা    পালনে    এগিয়ে   এসেছে   ?   তারা অর্থ  ,  বুদ্ধি  ও  পেশাশক্তি  বলে    বিএনপি  সহ   ১৮ দলভূক্ত  জোটের  সকল রাজনৈতিক   দলকে    তাদের    কার্যক্রমের   অংশীদার   করতে   সফল   হয়েছে  ৷  যদিও ঐ সব    দলের   বা   জোটের   তৃণমূল পর্যায়ের  নেতাকর্মীদের  অনেকেই  ধর্মভিত্তিক  দল  জামায়াত  এবং  হেফাজতের  সঙ্গে  রাজনীতিতে  থাকতে  আগ্রহী  নয়  ৷ দলের  উচ্চ-পর্যায়ের  নেতাদের  সাথে  তরা  একটি  সমজোতায়  পৌছার  ফলে  জামায়াতরা  এই  জোটভূক্ত  হতে  পেরেছে  ৷

           তবে   ব্রিটিশ    ঔপনিবেশিক    শাসকরাই   প্রথমে  এই   উপমহাদেশের   রাজনীতিতে   ধর্মের    ব্যবহার    শুরু   করেছিলো    তাদের    শাসন   কার্যের   সুবিধার্থে   ৷   তারা   তাদের   বহুল  আলোচিত    ডিভাইড   এন্ড   রুল   পলিসির   আওতায়   তারা    পাক-ভারতে    হিন্দু   ও   মুসলমানদের   ধর্মের     মাধ্যমে   বিভক্ত   করে    সুফল    অর্জন  করে ৷      পরে    মুসলমানদের    মধ্যে  ও  বিভাজনের   সৃষ্টি   করতে    পেরেছিল  ৷  প্রথমে   শিয়া   ও   সুন্নি    এবং    পরে    সুন্নিদের   মধ্যে  ,  দেওবন্দি  ,   বাহলভী  ,   সুফিবাদী  ,   তরিকাপন্থি   ইত্যাদি    বিভিন্ন   উপ-দলে   বিভক্ত   করে   ৷   আর   এই   সবকাজে   নেপথ্যে  তাদের ( ব্রিটিশদের ) আর্থিক   সহায়তা   সহ   অন্যান্য   সহায়তা   বিদ্যমান   ছিলো   বলে     পরবর্তীতে    প্রকাশ   পেয়েছে  ৷

            পাকিস্তানিরা   ও   দেশ   বিভাগের   পরে   রাজনীতিতে   ধর্মের       ব্যবহারের    চেষ্টা    করে ৷  আর  পাকিস্তানিরই   বাঙালীদের  বাংলাদেশকে  একটি    স্বাধীন  সার্বভৌম  রাষ্ট্র   গঠনের   সুযোগ   সৃষ্টি    করে   দিয়েছিলো    ৷    পাকিস্তানিরা  রাজনীতিতে   শুধু   ধর্মের   ব্যবহারই    করে   নাই     তারা    বাঙালী   এবং    অবাঙালী    বিহারীদের   মধ্যেও     দাঙ্গা    সৃষ্টি   করে    রাজনৈতিক    ফায়দা    নিতে    চেষ্টা   করেছিলো   ৷   কিন্তু   দূর্জয়    এই   বাংলায়    পাকিস্তানিদের    কোনো    প্রচেষ্টাই    সফল   হতে   পারেনি  শেষ  পর্যন্ত    ৷   বাংলাদেশে   ভবিষ্যতেও    নিশ্চয়    বিএনপি ,   জামায়াত   এবং   হেফাজতের    মাধ্যমে    পাকিস্তান    আই এস আই  ও   অন্যান্যদের     সকল    চেষ্টা     ব্যর্থ   হবে   ৷ 

                পাকিস্তানিরা  বাঙালীদের    বায়ান্নের    ভাষা   আন্দোলন   ,   চুয়ান্নের    প্রাদেশিক   নির্বাচন   ,   উনসত্তরের   গণ  অভ্যূথ্থান    ,   সত্তরের   নির্বাচন   এবং   সর্বশেষ   ৭১-  এর    মুক্তিযুদ্ধ  ও   স্বাধীনতা   যুদ্ধসহ    জনগণের    সকল   গণতান্তিক   ও   অসাম্প্রদায়িক   আন্দোলনে   রাজনৈতিক   ভাবে   ধর্মকে    এসব   আন্দোলনের   বিরোধ্যে   ব্যাপকভাবে    ব্যবহার    করেছে  ৷   তবে   সবসময়েই   এদেশের  রাজনীতিতে  ধর্মের  ব্যবহার ব্যর্থ        হয়েছে   ৷    যেমন   এবার   তরুণদের    শাহবাগ    গণজাগরণ   মঞ্চের    আন্দোলনকে   রাজনৈতিক  ভাবে ব্যর্থ   করতে    বিএনপি  ,   জামায়াত ,   হেফাজত    সম্মলিত   হয়ে  একজোটবদ্ধ   হয়ে    মাঠে   নেমেছিলো   ৷ তবে  তারা  সফল   হতে   পারেনি  ,  বরং   তারাই   জনবিচ্ছিন্ন    হয়ে    পড়েছে   বর্তমানে   নতুন  প্রজন্মর  কাছে  ৷

              বাংলাদেশের   মুক্তিযুদ্ধের   সময়ে   ও    মুসলিম  লীগ  ,  জামায়াত   ,  নেজামী   ইসলাম   ও    পিডিপি    শুধু    এর   বিরোধ্যে    অবস্থান    নেয়নি  ,   তারা    সরাসরিভাবে    বাংলাদেশের    স্বাধীনতা    যুদ্ধের    বিরুদ্ধে   ও  অংশ         নিয়েছিলো   ৷      জামায়াতে    ইসলামী    পাকিস্তানকে    সাহায্যে  করতে  গঠন   করেছিলো   রাজাকার  ,   আল-বদর   ও   আল-শামস    বাহিনীর   এবং   নেজামে   ইসলাম   প্রতিষ্ঠা   করেছিলো    মাদ্রাসাভিত্তিক    মোজাহিদ    বাহিনীর    আর    মসলিম   লীগ   ও   পিডিপি    মুক্তিযুদ্ধ    চলাকালিন   সময়ে   জাতিসঙ্ঘ   সহ   সমস্ত   বিশ্বে    পাকিস্তানর   পক্ষে    এবং   মুক্তিযুদ্ধদের    বিপক্ষে    প্রচারে    অংশ   নিয়ে   ছিলো   ৷   জেনারেল   জিয়ার    মন্ত্রীসভার    প্রধানমন্ত্রী    শহ্    আজিজ   এবং   পরবর্তীকালে    পাকিস্তানের   সমাজকল্যাণ    মন্ত্রী   সিলেটের    মাহমদ   আলী    জাতিসংঘের    জেনারেল   অধিবেশনে    যোগদান  করেন  এবং    বাংলাদেশের    মুক্তিযুদ্ধের   বিপক্ষে  বক্তব্য   পেশ   করেন  ৷   আর    এদের    সহায়তায়   পাকিস্তানিরা   মুক্তিযুদ্ধ   চলাকালিন   সময়ে    ত্রিশ   লাখ    মানুষকে    হত্যা   করেছে    এবং   তিন   লাখের    বেশী    নারীদের    তারা    অত্যাচার   ও    ধর্ষণ    সহ      অনেককে    হত্যাও   করেছে   ৷  

           ৭১-এ   বংলাদেশের   স্বাধীনতা    অর্জনের   পর    এই    ধারার    রাজনীতির    সমাপ্তি   ঘোষিত   হয়েছিলো  সংবিধানে  ধর্মনিরপেক্ষ  রাজনীতির   বাইরে যে  কোনো ধর্মভিত্তিক  রাজনীতিকে  নিষিদ্ধের  কারণে ৷   কিন্তু   ৭৫-এর ক্ষমতার পটপরির্তনে    অর্থাৎ   প্রতিবিপ্লবী    এবং   পাকিস্তানি    ধারার    রাজনৈতিক    নেতাদের   ষড়যন্ত্রে    স্বাধীন   বাংলাদেশের    স্থাপতি   বঙ্গবন্ধু   শেখ  মুজিবুর   রহমানকে   সপরিবারে   হত্যা   করা  হলে   পরবর্তিতে   মুক্তিযুদ্ধের চেতনার   ধারার    বিপরিতে    দেশকে    পরিচালিত   করার   পেক্ষাপট    তৈরি   হয়  ৷ 

            এরই   ধরাবাহিকতার    অংশ   হিসেবে    অবৈধভাবে   ক্ষমতা   দখলকারী  ও অনির্বাচিত   জেনারেল   জিয়া   এবং    তাকে    হত্যা    করা   হলে   তার   পরবর্তী   সাকসেসার    জেনারেল    এরশাদ  ,     মানুষের   কাছে   সস্তা   জনপ্রিয়তার   আশায়   নিজের এবং দলের   ক্ষমতা   চিরস্থায়ি   করতে ,  ধর্মকে   নতুন   আঙ্গিকে   রাজনীতিতে   আমদানি   করেন  ৷       প্রথম  জন , অর্থাৎ  জেনারেল  জিয়া  সংবিধানে   বিছমিল্লাহ… যোগ   করেন  ৷   আর    পরের   জন  জেনারেল  এরশাদ   ইসলামকে   সংবিধানে  রাষ্ট্রধর্ম  হিসেবে   যুক্ত   করেন ৷ কিন্তু রাজনীতিতে  ধর্মকে  ব্যবহার  করেও  শেষ   অবধি  ক্ষমতায়   ঠিকে  থাকতে           পারেন  নি   ৷  তবে   তার শাসনের  ১০   বছরে   তার   অনুসারী   সুবিধাভোগী   একটি   শ্রেণী   প্রতিষ্ঠায়   অবশ্য  তিনি  সক্ষম   হয়ে   ছিলেন  ৷  যাদের   অবস্থান   মুক্তিযুদ্ধের   চেতনার  বিপরিতে   ছিলো  এবং   ধর্ম  ব্যবসায়িদের পক্ষে   ছিলো  ৷  তবে   তাদের   কোনো   আদর্শ   ছিলো   না  ৷ তাই   তারা   সব   সময়েই   পরিস্থিতি   বুঝে   পক্ষ   বদল   করেছেন      নিজেদের  ক্ষমতার  অংশীদাররূপে  ঠিকে   থাকার  স্বার্থে  ৷   বংলাদেশে    এখনও এই  ধারাসহ   এদের   অস্থিত্ব্    বিদ্যমান   আছে   ৷  হয়ত  চিরকালও  থাকবে এই  ধারা   এই  দেশে  ৷

     ৯১-এর  পরে   বহুদলীয়   গণতন্ত্রের  নামে   এবং   মুক্তযুদ্ধে  স্বাধীনতার   ঘোষনাকারী  হিসেবে  জেনারেল   জিয়াকে   প্রতিষ্ঠা   করা  হয়  ৷ তবে  নির্বাচনে জিতে বিএনপি   সকল   সাম্প্রদায়িক  ও   ধর্মীয় রাজনৈতিক   দলের   সমন্নয়ে   রাজনৈতিক   জোট   গঠন   করে ৷  এবং পাকিস্তানের  রাজনৈতিক   ধারাকে   পূনঃর্জীবিত   করে  সেই   ধারায়   দেশকে  পরিচালিত   করেন ৷  তবে  তা   জণগণের   কাছে   গ্রহনযোগ্য   হয়নি  ৷ 
     তাই ৯৬-এ   আওয়ামী   লীগ   ৭৫-এর  পর   আবার    ক্ষমতায়   আসতে   পেরেছে   জনগণের   ভোটে   নির্বাচিত   হয়ে   ৷   কিন্তু   তারা   এত   অল্পসময়ে   মুক্তিযুদ্ধের   চেতনার   ধারায়   দেশকে   সম্পূর্ণ   ফিরিয়ে   আনতে   পারেনি  ৷  তারা  একটি  দুর্বল  সরকার  প্রতিষ্ঠা  করেছিল  মাত্র  সংসদে  তাদের  আসন  কম  থাকার  জন্যে  ৷


     আর  ২০০১- এ   আবার   বিএনপি   জোট   সুকৌশলে   ক্ষমতায়   ফিরে  আসে  এবং   যুদ্ধাপরাধীদের   ক্ষমতার   অংশীদার   করে  এবং  মন্ত্রীত্বে   ও   অসীন   করে৷  তাই  তারা  আর   পরের  টার্মে   ক্ষমতায়   আসতে পারে  নাই ৷  বিভিন্ন   পদক্ষেপ   গ্রহন   করে   ও তারা  ক্ষমতায়  আসতে  ব্যর্থ  হয়  ৷



   ২০০৮ সালে আওয়ামী   লীগ   যুদ্ধাপরাধীদের   বিচারের   প্রতিশ্রুতি   দিয়ে   ক্ষমতায়   এসে   তাদের   বিচার   আরম্ভ   করলে   তাদের   জনপ্রিয়তা   বৃদ্ধি   পায় ৷  তাই  তারা  শাসনতন্ত্রে  পরিবর্তন   এনে   তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের  অধিনে   নির্বাচন   বন্ধ  করে   দেয় ৷  এর  প্রতিবাদে   বিএনপি   জোট   নির্বাচনে   অংশ   গ্রহনে   বিরত  থাকে  ৷  এবং নির্বাচনে  প্রধান   বিরোধী   জোট   ছাড়াই   প্রায়   একতরফা   নির্বাচন  করে      আওয়ামী   লীগ  আবার ক্ষমতায়   এসেছে ৷      কিন্তু   যুদ্ধাপরাধীদের   বিচারের   বিরুদ্ধে   জামায়াতের   সঙ্গে   বিএনপি    একাত্বতা   প্রকাশ  করে     তত্ত্বাবধায়ক   সরকার   প্রতিষ্ঠার   আন্দোলনে  মাঠে  নামে ৷ কিন্তু  বিএনপি  ও  জামায়াত  জোটের   আন্দোলনে সাধরণ  জনগণ   মাঠে   নামে   নি   ব্যাপকভাবে  ৷  তবে   বর্তমানে   মুক্তিযুদ্ধের   চেতনার    পক্ষে   এবং   এর   বিপক্ষে   এখন   জণগণের   মধ্যে  একটা   বিভক্তি  ষ্পষ্ট   হয়ে   উঠেছে   ৷  আর   বাংলাদেশের   রাজনীতিতে   ৭১  সালের   মত   একটি   বড়  ধরনের   পরিবর্তনের   সূচনা   হয়েছে   বলে   অনেকে    মনে    করছেন   ৷ 

    
     এখন   বিএনপি    ও   আওয়ামী   লীগ   জোটের   রাজনীতির   আদর্শিক   একটি   পার্থক্য   স্পষ্টতর   হয়ে   উঠেছে   জনগণের   কাছে    ৷  একটি  ধর্মনিরপেক্ষ  রাজনীতি  এবং  একটি  সাম্প্রদায়িক  ও  ধর্মভিত্তিক  রাজনীতি  ৷


                 তাই    আওয়ামী   লীগ   যদি  এখন  জণগণের   চাহিদা   পূর্ণকরে   মুক্তিযুদ্ধের   চেতনা    বাস্তবায়িত  করতে   পদক্ষেপ   নেয়   এবং   শাহবাগের   জণজাগরন   মঞ্চের  গড়ে   ওঠা   আন্দোলনের   পক্ষে   থেকে   আর  দেশের    নতুন   প্রজন্মের   তরুণদের   কাজে   লাগাতে   পারে   এবং   তাদের   দলীয়   ক্যাডারদের    কার্যক্রম   বন্ধ   করতে  পারে তবে    জণগণের   আস্থা   অর্জনে  সক্ষম  হতে  পারবে  ৷     আর   সমাজের   এই   বিভক্তি   ও   বিভাজন   আওয়ামী  লীগের   পক্ষেই   থাকবে  ৷  আওয়ামী  লীগ  জনগণের  আস্থা  ধরে  রাখতে  ব্যর্থ  হলে বাংলাদেশে  ধর্মনিরপেক্ষ  রাজনীতি  ও  ব্যর্থ  হয়ে  যাবে  চিরতরে  ৷

             তবে  আল-কায়েদা   প্রধানের    এই  জিহাদী   ডাক   মুক্তিযুদ্ধের   চেতনার   পক্ষে     আরো   জনমত   বাড়তে   সহায়ক  হবে   নিশ্চয়  ৷  আর  বিএনপি   ,  জামায়াত    ও   হেফাজতের    বিপক্ষেই   যাবে   এবং   জণগণের   কাছে   একটি   ভূল   বার্তা   পৌঁছাবে  বলে   সংশ্লিষ্টরা    ধারণা   করছেন  ৷  তবে  এর  সুফল পাওয়া  নির্ভর্  করছে  ক্ষমতাসীন  দলের  সঠিক  পদক্ষেপের  ওপর  ৷


ব্যক্তিগত  ও  পারিবারিক  জীবনে  কোনো  ধর্মীয়  নেতা  ধর্মকে  এবং  ধর্মশিক্ষাকে  কতটুকু  গরুত্ব  দেন  তা  সহজেই  বুঝা  যাবে  দৈনিক  জনকণ্ঠে  প্রকাশিত  জামাতী  ইসলামের  কিছু  নেতার  ছেলেমেয়েদেকে  কোন  শিক্ষায়  শিক্ষিত করেছেন  তার  বিস্তারিত  নিম্নের  তথ্য  থেকে ৷  জনগণ  যতদিন  তাদের  এই  ভন্ডামি  জানতে  না  পারবে এবং  এর  বিরুদ্ধে  স্পষ্ট  অবস্থান  না  নিবে  ততদিন  তারা  তাদের  এই  মোনাফেকি  রাজনীতি  টাকাপয়সা  খরছ  করে  চলিয়ে  যাবে  ৷ 


         জামায়াতের মুনাফেকি শুধু রাজনীতিতে নয়, ব্যক্তি জীবনেও

জনকণ্ঠ রিপোর্টার ॥ 

জামায়াতের সাবেক আমীর ঘাতককুল শিরোমনি গোলাম আযম তার ‘শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী রূপরেখা’ বইয়ে লিখেছেন, ইংরেজ প্রবর্তিত আধুনিক শিক্ষাই যদি আদর্শ শিক্ষা বলে প্রচারিত হয় তাহলে এ শিক্ষার ফল দেখে কোনো ইসলামপন্থী লোকই সন্তুষ্টচিত্তে এ ধরনের শিক্ষাকে সমর্থন করতে পারে না। পাশ্চাত্য মতাদর্শে বিশ্বাসীরা মানুষকে অন্যান্য পশুর ন্যায় গড়ে তুলবার উপযোগী শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন করেছেন। এ শিক্ষা দ্বারা মনুষ্যত্বের বিকাশ অসম্ভব। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের গোটা পরিবেশ একেবারেই ইসলামবিরোধী। ‘আধুনিক শিক্ষাকে এভাবে গাল দিয়েই গোলাম আযম মাদ্রাসা শিক্ষায় জীবন গড়তে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তিনি নিজে তার সন্তানদের মাদ্রাসার ধারে কাছেও আনেননি। এই লোকই আবার আরেক বইয়ে বলেছেন, ‘আমি আমার ছেলেদের মাদ্রাসায় দেইনি এজন্য যে, আমি তাদের যোগ্য বানাতে চাই’।
কেবল গোলাম আযমই নয়, পবিত্র ধর্মের মুখোশ পরে এভাবেই প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্বিঘেœ রাজনৈতিক ফায়দা লুটে যাচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদী গোষ্ঠী জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরে গিয়ে নিজেদের সন্তানদের যেমন তৈরি করেছেন সেই পাশ্চাত্য শিক্ষাতেই অন্যদিকে পরিবারের কেউই নেই ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গেও। অথচ সাধারণ নেতাকর্মীদের মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলাম রক্ষার কথা বলে প্রয়োজনে জীবন দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে নিজেরা ফায়দা লুটে চলেছেন যুগের পর যুগ। ধর্মের মুখোশের আড়ালে জামায়াতের আসল চরিত্রের কথা তুলে ধরেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমরাও। সাধারণ মুসল্লিদের ব্যবহার করে জামায়াতের এ ধরনের অপকর্মকে ইসলাম বিরোধী কর্মকা- হিসাবে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন ইসলামীপন্থী নেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামা মাশায়েকরা। যেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সব আলেমদের প্রায় প্রত্যেকেই জামায়াতকে অভিহিত করেছেন ইসলামের অপব্যখ্যাকারী বিভ্রান্তকারী গোষ্ঠী হিসাবে। ইসলামের দুর্নামের জন্য দায়ী করে অনেকেই জামায়াতকে ইসলামের শত্রু হিসবে অভিহিত করেছেন।
প্রতিষ্ঠা থেকেই ধর্মকে ব্যবহার করে অপকর্ম, দেশদ্রোহিতা : উগ্র মৌলবাদী এই দলটির ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট ভারতের হায়দারাবাদে প্রতিষ্ঠা হয় আজকের এই জামায়াতে ইসলামী। মাওলানা আবু আলা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত এই দলের নাম ছিল ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’। বৃটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা যখন প্রায় নিশ্চিত ঠিক সেই সময়ও এই মওদুদী বলেছিলেন, ভারতের স্বাধীনতার চেয়ে এই মুহূর্তে বেশি জরুরী হলো এখানে হুকুমতের আইন প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীনতার কয়েকদিন আগে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে পাটনায় জামায়াতের সম্মেলন করেন মওদুদী। আগস্টে স্বাধীনতার পর মওদুদী পাকিস্তানের লাহোরে একটি বস্তিকে ‘দারুল ইসলাম’ ঘোষণা করে সেখানে অবস্থান নিতে থাকেন। এখান থেকেই দল পরিচালনা করে উগ্রবাদী সব বইপুস্তক প্রকাশ করেন। ’৬২ সাল পর্যন্ত অন্তত ১০০ প্রবন্ধে মওদুদী বলেন, ‘পার্লমেন্টে মহিলা সদস্য আসন নাজায়েজ। অথচ ওই বছরেই ফাতেমা জিন্নার পক্ষে নির্বাচনে তার সঙ্গে কাজ করেন জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াত শাখার আহ্বায়ক করা হয় খুররম জাহ মুরাদকে। মাওলানা আব্দুর রহীম, ব্যারিস্টার কোরবান আলী ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক। আব্দুর রহীম কারমাইকেল কলেজ থেকে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসেন গোলাম আযমকে। পরবর্তীতে পূর্ণঙ্গ কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করে দলটি। আইযুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতের কর্মকা-ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে ওই বছরেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার।
৬৬ তে আওয়ামী লীগের ছয় দফার তীব্র বিারোধিতা করে জামায়াত। ’৭০-এর নির্বাচনে জামায়াত পশ্চিম পাকিস্তানে ৪টি আসনে জয়লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিককে গবর্নর করে যে প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়েছিল তাতে শিক্ষামন্ত্রী হয়ে আসেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে জামায়াত চালায় গণহত্যা। ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষার ঘোষণা দিয়ে গঠন করা হয় ‘শান্তি কমিটি’। মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হয়। আত্মগোপন করে গণহত্যার নায়ক জামায়াত নেতারা। ’৭৫-এ জাতির পিতার হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আশীর্বাদে ফিরে আসে যুদ্ধাপরাধীদের দল।
১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে তাদের রাজনীতি উন্মুক্ত করে দেয়। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের (আইডিএল) হয়ে কাজ চালায় জামায়াত। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে কয়েকটি পদে জয়লাভ করে আইডিএল। এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন আব্দুর রহিম, সিদ্দিকুর আহমেদসহ অন্যরা। ওই বছরই জিয়াউর রহমানের বদৌলতে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে আইডিএল ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশে গঠিত হয় ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।’ যার ভারপ্রাপ্ত আমীর হন একাত্তরের ঘাতক আব্বাস আলী খান। দলে আসেন একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী সকল জামায়াত নেতাই। এদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তারাই এখন জামায়াতের শীর্ষ নেতা। সাংবিধানিকভাবে বৈধ হওয়ার আশায় দুই বছর আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন জামায়াতে ইমলামী বাংলাদেশ নাম পাল্টে ধারণ করে ‘ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’।
মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলামী আন্দোলনে নেই জামায়াতীদের পরিবারের কেউ ॥ বাংলাদেশ ও বিদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘নাস্তিকদের শিক্ষা’ হিসেবে প্রচার করে থাকে জামায়াত। আধুনিক শিক্ষার বিপরীতে দলটি মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে জোর দাবি জানিয়ে আসছে বহুকাল থেকে। কিন্তু এ দলের শীর্ষ নেতাদের সন্তানরা কেউ মাদ্রাসায় পড়ে না। অথচ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের পরিচালিত মাদ্রাসার দিকে ঠেলে দেয় জামায়াত। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলটি এ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এক সময় টেনে নেয় দলে। গরিব ঘরের এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরই পরে হরতাল, পিকেটিংয়ের সময় পুলিশের গুলির সামনে ঠেলে দেয়া হয়। জামায়াতের মূল নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের সন্তানরা পড়াশোনা করে প্রচলিত, আধুনিক ও তাঁদের ভাষায় ‘নাস্তিক ও ইসলাম বিরোধীদের’ শিক্ষাঙ্গনে। সাধারণ নেতাকর্মীদের মাদ্রাসা শিক্ষা ও ইসলাম রক্ষার কথা বলে প্রয়োজনে জীবন দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেও শীর্ষ জামায়াত নেতাদের পরিবারে ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ের ভূরি ভূরি অভিযোগ আছে। খোদ জামায়াত-শিবিরের মাঠ পর্যায়ের একটি বৃহৎ অংশ গেল বছর এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন জামায়াত নেতাদের। ফাঁস করে দিয়েছিলেন জামায়াত নেতা ও তাদের স্ত্রী, সন্তানদের ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ের তথ্য প্রমাণ। এ নিয়ে এখনো অসন্তোষ আছে জামায়াত-শিবিরের সাধারণ নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঝে। জামায়াতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলছে দেশের অন্যান্য ইসলামী দলগুলোও। সাধারণ মুসল্লিদের ব্যবহার করে জামায়াতের এ ধরনের অপকর্মকে ইসলাম বিরোধী কর্মকা- হিসাবে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন ইসলামপন্থী নেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামা মাশায়েকরা। জানা গেছে, শীর্ষ জামায়াত নেতাদের পরিবারে মাদ্রাসা শিক্ষার বিপরীতে পাশ্চাত্যের কর্মকা- চলা নিয়ে অসন্তোষ আছে সাধারণ কর্মীদের। শিবিরের একটি বৃহত অংশ ২০১২ সালে এসব অভিযোগ তুলে শোরগোল পাকিয়ে ফেলেছিল। সাধারণ কর্মীরা বলছেন, সাধারণ মুসল্লি ও কর্মীদের ইসলামের পথে চলা আর সৎ মানুষ হওয়ার কথা বললেও জামায়াত নেতাদের পরিবার চলে ইসলামের বিরুদ্ধে। এই মুহূর্তে নেতাদের জীবন রক্ষায় সারাদেশের হাজার হাজার কর্মী জীবন দিয়ে লড়ছেন, কিন্তু কোথাও শীর্ষ নেতা ও তাদের সন্তানরা নেই। তারা হয় বিদেশী শিক্ষা গ্রহণে নয়তো দেশে আরাম-আয়েশ করে বেড়াচ্ছেন। কর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখানো এমনকি জীবন দেয়ার কথা বললেও জামায়াতের আমীর নিজামী থেকে শুরু করে কোন নেতাই নিজেদের পরিবারে সেই স্বপ্ন দেখেন না।
২০১২ সালে ‘সেভ শিবির’-এর ব্যানারে শিবিরের মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ এনে বলেছিলেন, ‘জামায়াত এবং শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের ইসলামের কথা বলেন, ভাল মানুষ হিসাবে চলতে বলেন। এতে আমরা উজ্জীবিত হই, ইসলামের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করতে উজ্জীবিত হই, কিন্তু আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা হলো, এই জামায়াত নেতাদের পরিবারে তাদের সন্তানরা কেউ ইসলামের পথে নেই। কেউ শিবির করে এই পথে আছেন তার খবর নেই। জামায়াত সব সময়ই দাবি করে তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কিরূপ হওয়া উচিত সেই বিষয়ে কথা বলেন নেতারা। সাধারণ কর্মীদের তারা বলেন, এ দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি যেটি তাদের ভাষায় আধুনিক শিক্ষা, এই আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির বিরুদ্ধেই তাদের অবস্থান।
জামায়াতের সাবেক আমীর ঘাতককুল শিরোমনি গোলাম আযম তার ‘শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী রূপরেখা’ বইয়ের ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘ইংরেজ প্রবর্তিত আধুনিক শিক্ষাই যদি আদর্শ শিক্ষা বলে প্রচারিত হয় তাহলে এ শিক্ষার ফল দেখে কোনো ইসলামপন্থী লোকই সন্তুষ্টচিত্তে এ ধরনের শিক্ষাকে সমর্থন করতে পারে না।’ বলেছেন, ‘পাশ্চাত্য মতাদর্শে বিশ্বাসীরা মানুষকে অন্যান্য পশুর ন্যায় গড়ে তুলবার উপযোগী শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন করেছেন। এ শিক্ষা দ্বারা মনুষ্যত্বের বিকাশ অসম্ভব।’ ২১ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের গোটা পরিবেশ একেবারেই ইসলামবিরোধী।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো- তিনি তার সন্তানদের মাদ্রাসার কাছেও আনেননি কোনদিন।
গোলাম আযমের ছয় ছেলে। একজন আব্দুল্লাহহিল মামুন আল আযমী খিলগাঁও গবর্নমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার থেকে অর্থনীতিতে এমএ করেছেন। আব্দুল্লাহ হিল আমিন আল আযমী খিলগাঁও গবর্নমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দেশত্যাগ করেন এবং লন্ডনে নিটিং ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেন। আব্দুল্লাহ হিল মোমেন আল আযমী সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে এসএসসি, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে এইচএসসি ও একই কলেজ থেকে বিকম পাস করেছেন
। আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী- ১৯৭৫ সালে সিলেট সরকারি অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি, ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে এইচএসসি পাস। এরপর ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন (সবার জন্য নির্ধারিত তারিখের একমাস পর তিনি মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া একজন অতি সাধারণ ছাত্র জিয়ার সময় সেনাবাহিনীতে কিভাবে কমিশন পেলেন সে প্রশ্ন আছে। ২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় বরখাস্ত হয়। আব্দুল্লাহ হিল নোমান আল আযমী- ঢাকা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। সবশেষে আব্দুল্লাহ হিল সালমান আল আযমী- মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীতে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। এরপর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন।
জামায়েতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের কথা তুলে ধরে শিবিরের একটি বিক্ষুব্ধ অংশ একবার বলেছিল, নিজামীর পরিবার দেখেই বোঝা যাবে তারা নিজেরা কতোটা ইসলামের পথে হাঁটেন? বলা হয়েছে, নিজামীর স্ত্রী সামসুন্নাহার নিজামী এককভাবে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা এবং মহিলা জামায়াতকে নিয়ন্ত্রণ করেন, যা স¤পূর্ণ ইসলাম ও গঠনতন্ত্র বিারোধী কাজ। ‘সেভ শিবির’-এর ব্যানারে শিবির কর্মীরা বলছে, এই মহিলা (নিজামীর স্ত্রী) মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। সেখানে অনেক টাকার হিসেব দিতে পারেননি। তার পরেও স্বামীর দাপটে কিছুদিন পদে টিকে থাকালেও এক সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে নিজেই একটা স্কুল খুলেছেন। কিন্তু স্কুল করার সব টাকা নেয়া হয়েছে জামায়াতের কর্মীদের কষ্ট করে জমানো ফান্ড থেকে। যা চরম অপরাধ। নিজামীর বড় ছেলে তারেকের কর্মকা- তুলে ধরে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় নাইট ক্লাব, বার থেকে শুরু করে সব আজেবাজে জায়গাই ছিল তার মূল কাজ। বাংলাদেশে এসে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসাবে যখন কাজ করেছিলেন তখনো তার বিরুদ্ধে ওঠে ছাত্রীদের সঙ্গে অসামাজিক কাজ করার অভিযোগ। নিজামী অন্যদের বললেও এই ছেলেকে কখনই ছাত্র শিবিরের কোন কাজেই আসতে দেখা যায়নি। নিজামীর অন্য সব ছেলে-মেয়েরাও কেউ ইসলামী আন্দোলনে নেই। নেই মাদ্রাসা শিক্ষায়ও।
সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহশান মুহাম্মদ মুজাহিদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। কর্মীদের ইসলামের পথে চলে সৎ মানুষ হওয়ার কথা বললেও এই জামায়াত নেতার পরিবার চলছে তাদের বলা ইসলামবিরোধী পথেই। মুজাহিদের বড় ছেলে তাজদিদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মুজাহিদের পরামর্শে সেই শিবিরকে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল। তাকে মানুষরূপী শয়তান অভিহিত করে শিবিরের একটি অংশ একবার বলেছিল, অনেক মেয়ের সঙ্গে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ আছে জামায়াত নেতাদের কাছেও। জামায়াত শিবিরের সাধারণ নেতাকর্মী সুযোগ না পেলেও মুজাহিদ তার এই ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করতে পাঠিয়েছেন জামায়াতের টাকায়। তাহ্কিক মুজাহিদের দ্বিতীয় ছেলে। মেয়েদের সঙ্গে যার রয়েছে অসামাজিক কাজের নানা অভিয়োগ। এক মেয়েকে নিয়ে মগবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় তার অবৈধ জীবনযাপনের ঘটনা জানেন জামায়াত-শিবিরের অকেকেই। ছোট ছেলে মাবরুরই মুজাহিদের সব অপকর্মের হোতা। অভিযোগ আছে, জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া কাদের মোল্লার এক ছেলে মাবরুরের বন্ধু। এই দুজন গাঁজা, মদসহ নানা নেশায় জড়িয়ে স্কুল জীবন থেকে। মুজাহিদের মেয়ে তামরিনা ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি, আল মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে অনার্স করেছেন।
কাদের মোল্লার স্ত্রীর তথ্য তুলে ধরে শিবিরের এক অভিযোগনামায় একবার বলা হয়েছিল, তার স্ত্রী বেগম সানওয়ার জাহান জামায়াতের রোকন হলেও আমিরের স্ত্রী সামসুন্নাহান নিজামীর সকল অপকর্মের সহযোগী। নিয়মের কথা বললেও মহিলা জামায়াত এবং ইসলামী ছাত্রী সংস্থাকে এরা দুজন ক্ষমতার জোরে অসাংবিধানিকভাবে পরিচালনা করছে। মোল্লার বড় ছেলের নাম জামিল। মগবাজারের হোটেলগুলোতে অনৈসলামিক সব অপকর্মের নায়ক এই জামিল। স্কুল জীবন থেকেই সে করছে এই অপকর্ম। আবুজর গিফারী কলেজে পড়ার সময় এই ঘটনা ছাড়াও গাঁজা খাওয়ার সময় কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক হলেছিল। শিবিরের কর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন দেয়ার আহ্বান জানালেও মোল্লার এই সন্তানকে এই স্বপ্ন দেখান না। ছোট ছেলের নাম মওদুদ। মালয়েশিয়ায় ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। কিন্তু বিয়ে না করেই তার এক বান্ধবীর সঙ্গে লিভ টুগেদার করছে দিনের পর দিন এমন অভিযোগ উঠেছে জামায়াতের ভেতর থেকেই। তাদের অপকর্মের ছবিও বহুবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা এ যুদ্ধাপরাধীর পাঁচ ছেলে এক মেয়ে। প্রথম ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল ও কলেজ থেকে। ইসলামী ইউনিভার্সিটি থেকে মিডিয়া এ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশনে অনার্স ও মাাস্টার্স করেছেন। এই ছেলে সামহোয়ারইনের ব্লগার। হাসান ইকরাম ওয়ালী এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল ও কলেজ থেকে। হাসান জামান সাফি এসএসসি ও এইচএসসি ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল থেকে, অনার্স পাস করেছে মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে। হাসান ইমাম ওয়াফী এসএসসি ও এইচএসসি ন্যাশনাল ব্যাংক স্কুল থেকে পাস করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছে। আহম্মদ হাসান জামান ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা দিয়েছে একাডেমিয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে। মেয়ে আতিয়া নুর মিরপুর লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়ে।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক আরেক নেতা মির কাসেম আলীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। এক ছেলে মোহাম্মদ বিন কাসেম (সালমান) আল মানারাত ইংরেজী মিডিয়াম থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল করেছে। এরপর পাকিস্তান ডেন্টাল কলেজে পড়েছে। আরেক ছেলে মির আহমেদ বিন কাসেম (আরমান) আল মানারাত থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল করেছে। এরপর লন্ডনে বার এ্যাট ল সম্পন্ন করেছে। মেয়ে হাসিনা তাইয়্যেবা অনার্স এবং মাস্টার্স করেছে হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে। সুমাইয়া রাবেয়া আল মানারাতে স্কুল ও কলেজ থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করার পর আল মানারাত ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ করেছে । আরেক মেয়ে তাহেরা হাসনিন আল মানারাতে এ লেভেলে পড়েছে। এই হচ্ছে জামায়াত নেতাদের পরিবারে মাদ্রাসা ও ইসলামী শিক্ষা চর্চার চিত্র। অথচ এরাই হাজার হাজার কর্মী ও সাধারণ মুসল্লির কাছে নিজেদের ইসলামের আসল লোক বলে জাহির করছে বছরের পর বছর।
২০১২ সালে যখন শিবিরে ব্যাপক বিদ্রোহ তখন শিবিরের বিদেশে থাকা একটি পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে জামায়াত নেতাদের পরিবারে ইসলামের ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে জামায়াত নেতাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল ‘আপনাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, নিজের পরিবারে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিতে পারলেই কেবল অন্যদের সেই শিক্ষা দেয়ার কথা বলা যায়। নিজের পরিবার ইসলামী আন্দোলনে থাকলেই কেবল অন্যদের এই আন্দোলনে ডাকা যায়, আনা যায়।’
জামায়াত-শিবির, মওদুদী সম্পর্কে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমরা ॥ ধর্মের মুখোশ পড়া জামায়াতের আসল চরিত্রের কথা দিনের পর দিন তুলে ধরেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমগণ। আলেমদের প্রায় প্রত্যেকেই জামায়াতকে অভিহিত করেছেন ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী, বিভ্রান্তকারী গোষ্ঠী, ইসলামের শত্রু হিসেবে।
মুফতীয়ে আজম মাওলানা ফয়জুল্লাহ (রহ.) এক লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন, মওদুদী ফাসেকি চিন্তাধারা ও ফাসেকি আকিদাসম্পন্ন এক ব্যক্তি। তার লেখনী ও বক্তৃতার মধ্যে শুধু সলফে সালেহীন, সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, আওলিয়ায়ে কিরামদের সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে কথা আছে। এ কারণে তাদের থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা ফাসেক। আর ফাসেকের পেছনে নামাজ আদায় করা মাকরুহে তাহরিমী। এই মন্তব্যে স্বাক্ষর করেছিলেন মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, মাওলানা শামসুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা আব্দুল জলিলসহ আলেম সমাজের অনেকেই।
বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বহুবার বলেছেন, মওদুদী জামায়াতের মতাদর্শগত ভ্রষ্টতা, নিছক রাজনৈতিক নয় বরং ইসলামের মৌল আকিদাগত। তাদের অতীত ইতিহাস সাক্ষী দেয় এরাই উগ্র জঙ্গীবাদের স্রষ্টা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের লালনকারী; তাই মওদুদীপন্থী জামায়াত-শিবির ইসলামী দল নয়, ওরা ভ-। তিনি ’৭১ সালে জামায়াতে ইসলামের ভূমিকা টেনে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত আলবদর, আলশামস নামে সংগঠনের মাধ্যমে কিছু কুলাঙ্গারকে নিয়ে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ এবং জ্বালাও পোড়াওয়ের মতো যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিল। তিনি এ সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সকলকে বিচারের দাবি জানান। ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী শুধু যুদ্ধপরাধীই নয়, তারা ইসলামের শত্রু।
আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী (রহ.) দীর্ঘদিন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। হাজার হাজার লোক তার দেখাদেখি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছিলেন। অতঃপর জামায়াত-শিবিরের প্রকৃত রূপ তার সামনে উন্মোচিত হয়। তিনি জাতিকে মওদুদী ফিতনার ভয়াবহতা থেকে সতর্ক করার জন্য অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘ভুল সংশোধন’ রচনা করেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়াত তাদের স্বীয় অপকর্ম স্বীকার না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মুসলমানের জামায়াতে যোগদান করা জায়েজ হবে না।
বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের প্রাক্তন খতিব মাওলানা মুফতি আব্দুল মুয়ীজ (রহ.) তার বহু লেখায় বলেছেন, মওদুদী প্রকৃতপক্ষে কোন আলেম নন। কোরান ও হাদিস সম্পর্কে কোন সঠিক জ্ঞান তার নেই। দীনের অপব্যাখ্যা করে মুসলিম সমাজকে গোমরাহ করাই তার মূল লক্ষ্য। তার প্রবর্তিত ফিতনা থেকে দূরে থাকা সকল মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।
আজকের হেফাজতের আমির ২০০৩ সালের ৯ অক্টোবর বলেছিলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আমাদের বিরোধ কোন রাজনৈতিক বিরোধ নয়, এই বিরোধ আকিদাগত। এতে বিশ্বের সকল হক্কানি আলেম একমত।
চট্টগ্রাম জিরি মাদ্রাসার আল্লামা নূরুল হক ‘মওদুদীর তাফসির ও চিন্তাধারা’ বইয়ে বলেছেন, মওদুদীবাদ ভ্রান্ত হওয়ার দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য একটি ফেরকা। ইসলামের মুখোশ পড়ার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের দলে চলে যাচ্ছে। আল্লামা হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) মওদুদী মতবাদ এবং জামায়াত-শিবির সম্পর্কে ‘সতর্ক বাণী’ শিরোনামে একটি বই লেখেন। তাতে তিনি মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদ ও জামায়াতে ইসলামীকে মুসলমানদের ঈমান ও ধর্মবিশ্বাস ধ্বংসকারী ফিতনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি মুসলমানদের ইসলামের মুখোশধারী এই দল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। হাফেজ্জী হুজুরের (রহ.) এই পুস্তকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চার শতাধিক আলেম অভিন্ন মত প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেছিলেন।




মন্তব্যসমূহ