তাবলীগ জামাতের এদিক
ও ওদিক
তাবলীগ জামাত
একটি ইসলামিক এবং
মুসলমানদের ধর্মীয় আন্দোলন
হলেও এই আন্দোলনের
মূল জন্মস্থান , ইসলাম
ধর্মের জন্মস্থান আরব
, তথা মুক্কা
বা মদীনাতে নয় ৷ এর উৎপত্তি হয়েছে
ব্রিটিশ ভারতের উত্তর
প্রদেশের মেওয়া নামক
স্থানে ১৯২৬ সালে,
ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের
প্রায় সাড়ে ১৩ শত বছর পরে ৷
মোহাম্মদ ইলিয়াস
একজন আলেম এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন
মেওয়া অঞ্চলে ৷ তখন অবিভক্ত
ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা
হিন্দুদের তুলনায় খুবই
কম ছিলো ৷ তার ধারণা
হয়েছিলো মুসলমানদের নতুন
কোনো ধর্মীয়
আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত
করতে না পারলে
ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠ্য
হিন্দু ধর্মের বসবাসকারী
দেশে পর্যায় ক্রমে
মুসলমানদের অবস্থান অন্য
ভাবধারায় রূপান্তরিত হয়ে এক সময়ে
তা বিলীন হওয়ার
উপক্রম হয়ে পড়তে
পারে ৷ তাই এর একটা
বিহীত করার প্রয়োজনীয়তা
অনুভব করে , তিনি তার সমচিন্তা ধারার
কিছু আলেম উলামাদের
সহায়তায় তাদের একটা
নতুন আইডিয়ার প্রতিষ্ঠাকল্পে পবিত্র
কোরানের দুইটি সুরার
দুইটি আয়াতের দিকে
তাদের দৃষ্টি আকর্ষিত
হয় ।তারা
এই দুইটি আয়াতের
মধ্যে তাদের ভবিষ্যৎ
কার্যক্রমের সাফল্য দেখতে
পান ৷ তাই প্রাথমিক পর্যায়ে
এ দুইটি আয়াতের
সফম প্রয়োগে সমর্থ
হয়ে পরে তাদের
কার্যক্রমের পরিধির বিস্তিতি
ঘটান ৷
পবিত্র
কোরান শরিফের ৩ নং সুরা
আল-ই-ইমরান এর ১০৪ নং আয়াতের
বাংলা অনুবাদ হচ্ছে
--“ তোমাদের মধ্যে
এমন একটি দল থাকা উচিত যারা ( লোকদের )
ভালোর দিকে ডাকবে
ও সৎকর্মের নির্দেশ
দেবে এবং অসৎ কর্মের ব্যাপারে
নিষেধ করবে ৷ আর এসব লোকই হবে সফলকাম ” ৷
পবিত্র কোরানের
৪১- নং সুরা হা- মিম - সিজদার ৩৩ নং আয়াতের
বাংলা অনুবাদ হচ্ছে
-
“ যে ব্যক্তি
আল্লাহ্ র দিকে মানুষকে
ডাক দেয় , সৎকাজ করে আর বলে , ‘ আমি তো মুসলমান ’ ( আত্মসমর্পণকারী
) তার
চেয়ে উত্তম কথা আর কার ”
৷
( অনুবাদ
- মোহাম্মদ হাবিবুর
রহমান )
পরে অবশ্য
আরো অনেক ব্যাখ্যা
ও বক্তব্য যোগ হয়ছে
, বর্তমান তাবলীগ
জামাতে ৷
তাবলীগ জামাতের
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিলো যে তাবলীগ জামাতে
নারীর অংশ গ্রহনের
সুযোগ রাখা হয়েছিল
এর প্রথম দিকে ব্যাপক ভাবে ,
এবং পুরুষদের সঙ্গে
যৌথ ভাবে নারীরা
ও সব কার্যক্রমে
অংশ নিতে পারতো ৷ তবে বর্তমানে পরিস্থিতি
বিবেচনা করে এটা অনেকটা
সীমিত হয়ে গেছে ৷
তাবলীগ জামাতের আরেকটা
নীতি হলো , এই আন্দোলনটা
সম্পূর্ণ রাজনীতিক কার্যক্রম
মুক্ত একটি ইসলামী
অরাজনৈতিক ধর্মীয় আন্দোলন ৷
ইসলাম ধর্মের
মৌলিক নীতির সঙ্গে
সামণ্জ্যস্য রেখে তাবলীগ জামাতের
৬ টা নীতি
নির্ধারণ করে দলের
সবাইকে এটা পালন
করতে আদেশ দেয়া
হয়েছে ৷ আর ছয়টা নীতি
বা আদর্শ মুসলমানদের
মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতেই
তাদের দাওয়াতী কার্যক্রম
পরিচালিত হয়ে থাকে !
!
তবলীগ জামাতের
মূল কার্যক্রম যে ছয়টা নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত
আছে , আর
তা হচ্ছে
, সংক্ষেপে -
১) কালেমা
বা ঈমান , অর্থাৎ আল্লাহ্
এক এবং হযরত
মোহাম্মদ আল্লাহ্ র প্রেরিত
নবী বা রসুল ৷
২ ) সালাত আদায় করা , যা ইসলামের
প্রধান মূল পাঁচটি
স্তম্ভের অন্যতম একটি ৷
৩ ) ইলম্ এবং জিকির , আল্লাহ্
কে ডাকার এবং স্মরণ করার
এক বিশেষ পদ্ধতি
, যা তাবলীগ
জামাতের সদস্যরা পালন করতে সদা সচেষ্ট থাকেন ৷
৪ )
ইকরাম - ই -মুসলিম বা মুসলমানরা
একে অন্যকে সম্মানের
চোখে দেখা ইত্যাদি
৷
৫ ) তাবলীগের
সদস্যদের সবার মধ্যে
একটা নিদৃষ্ট উদ্দেশ্য
থাকতে হবে , আর তা হচ্ছে
পবিত্র নিয়তের মাধ্যমে
বরকত অর্জন করা ৷
৬ ) দাওয়াতি
কার্যক্রম পালন করা ৷ মুসলমানদের
একজনের দরজা থেকে আর একজনের দরজায় দরজায় গিয়ে ইসলামী দাওয়াত
দিয়ে তাদের মধ্যে
তাবলীগের মূল নীতির
ব্যাখ্যা করে লোকদের
(মুসলমানদের ) ইসলামের
পথে নিয়ে আসার
চেষ্টা চালিয়ে য়াওয়া ইত্যাদি ৷
তাবলীগের একটি
বার্ষিক অনুষ্ঠান পালন
করতে হয় যা অবশ্য কর্তব্যের
পর্যায়ে ও পড়ে ৷ আর এর নাম হচ্ছে
ইস্তেমা , যেখানে তাদের
সদস্য ছাড়াও আগ্রহীদের
অংশ গ্রহনের ব্যবস্থা
করে সবার মধ্যে
তাবলীগের ভালো মন্দ ইত্যাদি সহ এর উদ্দেশ্য
প্রচার করা হয়, বিশেষ বয়ানের
মাধ্যমে এবং এর সমাপ্তি ঘটে আখেরী মোনাজাতের
মাধ্যমে ৷
বর্তমানে বিশ্বের
প্রায় ২০০ টি দেশের মধ্যে
এর কার্যক্রমের বিস্তৃতি
লাভ করেছে আর সদস্য সংখ্যা
ও প্রায় দশ মিলিয়নের অধিক , যা হয়তো এর জন্মদাতা কল্পনাও
করেন নি ৷ তবে এর বিস্তার সমস্ত
বিশ্বব্যাপি হলেও বাংলাদেশে
এর কার্যক্রম অধিক পরিমানে লক্ষ্য
করা যাচ্ছে আজকাল
৷ তাই বাংলা
দেশে তাবলীগ জামাতের
যে বার্ষিক ইস্তেমা
পালন করা হয়
, তাকে বিশ্ব
ইস্তেমা বলা হয় , কারণ বিশ্বের
৪০ / ৫০ টির ও অধিক দেশের
সদস্য ও আগ্রহীরা
এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এ দেশে আসেন
৷ আর বাংলা
দেশের অগণিত মানুষ
এতে অংশ নেন
, বিশেষ করে বিভিন্ন বয়ান
শেষে যখন আখেরী
মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় , তখন সে মোনাজাতে ৷ গত ৪৫ বছরে লোক সমাবেশের সংকূলান
করতে তিন চার বার স্থান
পরিবর্তের পর এখন এই বার্ষিক
অনুষ্ঠান দুই পর্বে
করতে হচ্ছে ৷
এই সমাবেশে
এত লোকের উপস্থিতির
কারণ বিশ্লেষণে দেখা
যায় যে , এর অন্যতম
করণ হচ্ছে ইহা
একটা অরাজনৈতিক ধর্মীয়
সংঘঠন, এই সংঘঠনটি
সব সময়ই ধর্মকে
রাজনীতি এবং রাষ্ট্রিয়
ক্ষমতার সঙ্গে জড়ানোর
চেষ্টা থেকে বিরত
ছিলো এবং আছে ৷ আমাদের
দেশের রাজনীতিবিদগণ সহ এই উপ-মহাদেশের
রাজনীতিবিদ , যারা
ধর্মীকে ব্যবহার করে
রাজনীতি করেন তারা
তবলীগ জামাতের আন্দোলন
থেকে শিক্ষা নিতে
পারেন ৷
এ অঞ্চলের মানুষ
ধর্মীয় আন্দোলনে জড়িতদের
রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে
পছন্দ করেন না ৷ তাই বোধহয় পাকিস্থান , বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনীতিতে
জামাতী ইসলামর রাজনীতির
প্রসার বাড়ছে না সাধারণ জনগণের
মাঝে , তাই তারা স্কুল
ও কলেজের ছাত্র ও শিক্ষক
সহ সমাজের শিক্ষিত ও
সুবিধাভোগী অংশকে
অর্থের বা বিভিন্ন
স্বার্থের বিনিময়ে ক্রয়
করে তাদের পার্টির
কার্যক্রম পরিচালনা করতে
হচ্ছে আজকাল ৷
বাংলাদেশে তাবলীগ
জামাতের জনপ্রিয়তার আরও একটি কারণ
আছে বলে অনেকে
মনে করেন ৷ এ দেশের
মানুষের কাছে পীর , দরবেশ , মাজার ও পূজার প্রবণতা
গড়ে উঠেছিল ইসলাম
ধর্মের আবির্ভারের সময় থেকেই ৷ কারন আধ্যাতিক
ঘরাণার আলেম ও উলামাদের মাধ্যমে
এ- অঞ্চলে ইসলাম
ধর্মের প্রচার ও বিস্তার লাভ করেছিলো ৷ তাই মাজার , দরগা
ও আধ্যাতিক স্থানে
গমন করে কামেল
পীর, ফকীর ও দরবেশ এবং
আউলিয়ার উছিলায় তাদের
মনোকামনা পূর্ণের প্রচেষ্টার একটি
প্রবনতা গড়ে উঠেছিলো
প্রথম থেকেই ৷ গত কয়েক
দশকের জামাত এবং সৌদিবলয়ের ওহাবি
ধারা পন্থি
কিছু লোকের মাজার
বিরোধী প্রচারনার ফলে , কিছু লোক দরগা ও মাজারের মামে সিন্নি মানত
করে মাজারে গিয়ে
আল্লাহ্ র কাছে কিছু
চাওয়া থেকে সরে এসে এখন হজের অনুষ্ঠানের
মত তবলীগের বিশ্ব
ইস্তেমাতে শশরীরে হাজির
হয়ে আল্লাহ্ র কাছে কিছু চাইলে তা সহজে পাওয়া
যাবে এই বিশ্বাস
থেকে ও অনেক
লোক তাবলীগের বিশ্ব
ইস্তেমাতে অংশ গ্রহন
করে থাকে ৷ আর এই আন্দোলনের অরাজনৈতিক
চরিত্রের কারণে ও দল মত নির্বিশেষে এতে অনেকে যোগ দিয়ে থাকে ৷
৮০-এর দশকে যুদ্ধাপরাধী মৌলানা দিলওয়ার
হোসেন সাইদির ওয়াজ মাহফিলে হাজার
হাজার মানুষের উপস্থিতি
লক্ষ্য করা গেছে ৷
কিন্তু
এক পর্যায়ে মানুষের
কাছে তার জামাতি
ইসলাম নামক রাজনৈতিক
পার্টির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা আছে ,
প্রকাশিত হয়ে পড়লে , লোকজন তার মাহফিলে য়াওয়া
কমিয়ে দেয় এবং কোনো স্থানে
তার ওয়াজ মাহফিল
অনুষ্ঠানে বাঁধা ও দেয়া হয়েছে
৷ এই সব ঘটনা থেকে
রাজনীতিবিদদের যারা ধর্মকে
ব্যবহার করে রাজনীতি
করে রাষ্ট্র ক্ষমতায়
যেতে চান , তারা শিক্ষা
গ্রহন করতে পারেন
৷ কিছুদিন পূর্বে
হেফাজতে ইসলামীদের অনেক
জণসমর্থন দেখা গিয়েছিলো
৷ কিন্তু পরবর্তি
এক পর্যায়ে তারা
যখন রাজনৈতিক ছত্রছায়ার
আশ্রয়ে গিয়ে আন্দোলন
শুরু করেন তখন তাদের জণসমর্থন
কমতে দেখা গেছে
৷
বাঙালীদের তাবলীগ
জামাত প্রীতির আরো একটি মনোস্তাত্তিক
কারণ আছে ৷ তারা পরিশ্রম
ছাড়া তাবিজ কবজ ও দোয়া
দুরুদ পড়ে গায়েব
বা অদৃশ্য কোনো
শক্তির কাছ থেকে
আনুকূল্য পেতে আগ্রহী
৷ বংলাদেশের মানুষেরা
ইদানিং শ্রমবিশ্বে
বিশ্ব কামলার জাত হিসেবে পরিচিতি
লাভ করলেও দেশের
মধ্যে পরিশ্রম করে কিছু পাওয়া
থেকে , প্রার্থনা সহ পাথর ধারণ
এমনকি জ্বালিয়াতি করে হলে বিনা শ্রমে
সম্পদ অর্জনে আগ্রহী
বেশি দেখা যায় ৷ তাই অনেকের বিশ্বাস
ইস্তেমাতে লাখ লাখ অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে
যদি কোনো পূন্যবান
মানুষের প্রার্থনা আল্লাহ্
কবুল করে ফেলেন
তবে অংশগ্রহনকারী সবার
দোয়া ও প্রার্থনা
কবুল হয়ে যাবে
আর এতে ইহকাল
ও পরকালের অশেষ উন্নতি
সাধিত হবে, অংশগ্রহনকারী
সবার ৷ তাই এই মানসিকতা থেকে ও ইস্তেমাতে
আজকাল অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা
বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন ৷ আর রাজনীিতিবিদদের অনেকটা
বাধ্য হয়েই ইস্তেমাতে অংশ গ্রহনের অভিনয়
করতে হচ্ছে জনসমর্থন ধরে রাখতে , আর যাতে
প্রতিপক্ষ ধর্ম বিরোধী
হিসেবে তাদেরকে চিহ্নিত
করতে সুযোগ না পায় সে জন্য ৷
এক
সময় জামাতরা তাবলীগ
জামাতের বিরোধী অবস্থানে
ছিলো , তাদের ভিন্ন আদর্শ
ও বিশ্বাসের কারণে
৷ এখন তাদের
অংশ গ্রহন ও বেড়েছে
, তবে ইহা তাদের
বিশ্বাসের কারণে নয়
, পার্টির স্বার্থে
, কারণ
যদি কখনও তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ইসলামী
বিপ্লবের ডাক দেয় তবে যেন তাবলীগ জামাতকে
তাদের সঙ্গে অংশ গ্রহনে সম্মত
করাতে পারে ৷ তাই এখন জামাতিরা
ও তাবলিগীদের বিশ্বাস
আর ভালবাসা অর্জনে
ব্যস্ত হয়ে গেছে , তবে অনেকটা
সংগোপনে ৷
তবে
নীতিগত ভাবে জামাতিরা
সুন্নি ইসলামের আর এক ধারা
বাহলভী ধারায় বিশ্বাসী,
তাবলীগরা যেখানে দেওবন্দি
ধারায় বিশ্বাসী ৷ কিন্তু বাহলভীপন্থিরা তাবলিগীদের মত অরাজনৈতক ইসলামী
আন্দোলনের সংঘটন নয় ৷ আবার তাবলিগীদের মত ইসলামী আন্দোলনে
সরাসরি নারীদের অংশগ্রহন
করাকেও তারা পছন্দ করেন না ৷ তারা নারীদের
পর পুরুষের সঙ্গে
কাজে দেখতে চান না , তবে পরিস্থিতির
চাপে আজকাল পর্দার
( হিজাবের ) সাথে নারীদের বাইরের কাজে
অংশ গ্রহনে মৌনভাব
অবলম্ভন করতে দেখা যায় ৷
বাহলভী পন্থিরা
যা বিশ্বাস করেন
, যেমন তাদের
অংশ হিসেবে , জামাতিরাও মনে করেন , যে কোনো উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সমাজে
ইসলাম ধর্মকে প্রতিষ্ঠা
করতে হবে ৷ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকরা
ছাড়া তাদের বিশ্বাসের
ইসলাম দেশে প্রতিষ্ঠা
করা সম্ভব হবে না ৷ আর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে
ন্যায় , অন্যায় , নৈতিক
, অনৈতিক যে কোনো পন্থা
অবলম্ভব করা দোষের
কিছু নয় বলে ও
তাদের বিশ্বাস ৷
তাই তারা তাবলিগী
সহ সব মুসলমামদের
ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার
সহ যে কোনো
পদক্ষেপ গ্রহনে আগ্রহী তাদের অভিষ্ট
লক্ষে পৌঁছাতে ৷ এতে ইসলাম
রক্ষা হোক অথবা
না হোক, এতে তাদের কিছু
আসে যায় না ৷ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করাই জামাতিদের
এখন মূল লক্ষ্য ৷ তাই জামাতের রজনীতিতে
বিরাট অর্থের যোগান বৃদ্ধি
পেয়েছে ৷
স্বাধীন
বাঙলাদেশে নতুনভাবে আবার জামাতের আবির্ভাব
হয় ১৯৭৯ সালে সেনা
শাসক ও বিএনপির
প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়ার
হাত ধরে ৷ আর উপমহাদেশে
জামাতের জন্ম হয়েছিলো
১৯৪০ সালে ভারতের
হায়দ্রাবাদে ৷ কিন্তু
জামাতের সদর দফতর হচ্ছে পাকিস্তানে
, জামাতিরা এই সদর দপ্তেরের
আদেশ ও উপদেশ
মেনে পাকিস্তান , ভারত ও বাংলাদেশে
তাদের রাজনীতি পরিচালনা
করে থাকেন ৷ যদিও এখন বাংলাদেশের
ব্যাপারে ভিন্ন পথ ধরেছেন ৷ এই
দলের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী
এক সময় পাকিস্তানের
স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘোরবিরোধী
ছিলেন এবং পাকিস্তানকে
তখন তিনি নাপাকিস্তান
বলতেন ৷ কিন্তু
পাকিস্তানের জন্মের পর পাকিস্তানে হিযরত
করে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় রাজনীতি
শুরু করেন ৷ ব্রিটিশ ভারতে
ব্রিটিশরা ধর্মগত বিভাজন
সৃষ্টি করে দেশ শাসন
আরো দীর্ঘায়িত করতে
কংগ্রেস ভেঙ্গে প্রথমে
মুসলিম লীগের সৃষ্টি
করে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে
বিবেধ সৃষ্টি করেছিলো
৷ ডিভাইড
এন্ড রোল নীতি গ্রহন
করে ভারত শাসন করার উদ্দেশ্যে ৷
পরের পর্যায়ে ব্রিটিশরাই এই একই কারণে মুসলমানদের
বিভক্ত করতে ইসলামের
শিয়া সুন্নি বিভাজন
ছাড়াও সুন্নিদের মধ্যে
দেওবন্দী ধারা এবং বাহলভী ধারার
জন্ম দিয়েছিলো বা এর জন্মের
পৃষ্টপোষকতা করেছিলো বলে প্রমানিত হয়েছে ৷ তাই তাবলীগ
জামাতের আইডিয়া কাদের
মাধ্যমে জন্মলাভ করেছিলো
বা কাদের আগ্রহে
ও অনুপ্রেরণায় এর উৎপত্তি হয়েছিলো
, তাও হয়তো একদিন
আরো সঠিক ভাবে
জানা যাবে ৷
তবে এ লেখার
উদ্দেশ্য তাবলীগ জামাতের
ইতিহাসের বর্ণনা দেয়া নয় , আবার বাহলভী
বা জামাতের সমালোচনা
করা ও নয় ৷ এ লেখার প্রধান
উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু
লোভী এবং স্বার্থান্বেসী মানুষ কিভাবে মানবতার
জন্য ( সাময়িক
হলে ও ) কল্যাণকর একটা
অর্জনকে নিজেদের স্বার্থে
এর অপব্যবহার করে মানুষের অকল্যাণ
সাধিত করতে পিছপা
হয় তার একটি বর্ণনা
দিতে ৷
প্রসঙ্গতঃ
উল্লেখ যোগ্য যে , ইসলামের আবির্ভাবের
পরে মহানবীর মূত্যুর
পরে তাঁর অনুগত
চার খলিফার শাসনকাল পর্যন্ত
সঠিক ইসলামের ধারা অব্যাহত ছিলো
৷ কিন্তু চার খলিফার শাসনের
পরে ঊমাইয়ারা সূকৌশলে
রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে , তাদের শাসনকার্যের
সুবিধার্থে ইসলামের নতুন নতুন ব্যাখ্যা
চালু করে প্রায়
দু-শো বছর ক্ষমতায়
ঠিকে থাকতে পেরেছিলো ৷ পরে আব্বাসীরা যখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে
সমর্থ হয়, তখন আবার তারাও
ধর্মের নুতন ব্যাখ্যা
দিয়ে কিছুদিন মানুষকে
মুক্তচিন্তার সুযোগ দিয়ে
তাদের সমর্থন বৃদ্ধি করেছিলো
৷ কিন্তু পরে নিজেদের
স্বার্থেই ইসলামকে
আবার শৃঙ্খলে আবদ্ধ
করে ফেলে , আর নিত্য নতুন হাদিসের আবির্ভাবে
সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের
নতুন ব্যাখ্যা যোগ আরম্ভ
করতে
হয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে
৷ আর এই ধারা এখন ও মুসলীম
বিশ্বে অব্যাহত আছে ৷ এখন বাংলাদেশকে এর আওতার অন্তর্ভূক্ত
করা সময়ের ব্যাপার মাত্র , যদি মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী
বাঙালীরা সংঘবদ্ধ হয়ে এর প্রতিরোধের
ব্যবস্থা এখনই না করতে পারে ৷
(বি : দ্র
, এটা একটা সামগ্রিক আলোচনার
সূত্রপাত মাত্র , কোনো পিনপয়েন্ট
তথ্যমূলক আলোচনা নয় , তাই যে কেউ ভিন্ন
মত পোষন করতেই
পারেন ৷ ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা ভিত্তিক এই লেখাটি , তবে ইনটারনেটে প্রাপ্ত কিছু তথ্যকে
এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ
করা হয়েছে )
এই
লেখাটি অসমাপ্ত রেখেই শেষ করতে হচ্ছে,
দেশের প্রচলিত আইনের
প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন
করে , তবে কবিরা
অল্পকথায় কবিতার মাধ্যমে
তাদের মনের ভাব সহ অনেক
বক্তব্য সহজে প্রকাশ
করতে পারেন ৷ তাই মৃত কবি রূদ্র
মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ্ র
একটি কালজয়ী কবিতার
উল্লেখ করে এ লেখার সমাপ্তি
টানছি ৷
আফিম তবুও ভাল , ধর্ম সে তো হেমলক বিষ ;
রুদ্র মোহাম্মদ
শহীদুল্লাহ
একদার
অন্ধকারে ধর্ম এনে দিয়েছিল আলো,
আজ তার কংকালের হাড় আর পচা মাংসগুলো
ফেরি করে ফেরে কিছু স্বার্থান্বেষী ফাউল মানুষ-
সৃষ্টির অজানা অংশ পূর্ণ করে গালগল্প দিয়ে।
আফিম তবুও ভালো, ধর্ম সে তো হেমলক বিষ।
ধর্মান্ধের ধর্ম নেই, আছে লোভ, ঘৃণ্য চতুরতা,
মানুষের পৃথিবীকে শত খণ্ডে বিভক্ত করেছে
তারা টিকিয়ে রেখেছে শ্রেণিভেদ ঈশ্বরের নামে।
ঈশ্বরের নামে তারা অনাচার করেছে জায়েজ।
ইহকাল ভুলে যারা পরকালে মত্ত হয়ে আছে
চলে যাক সব পরপারে বেহেস্তে তাদের
আমরা থাকবো এই পৃথিবীর মাটি জলে নীলে,
দ্বন্দ্বময় সভ্যতার গতিশীল স্রোতের ধারায়
আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ।
আজ তার কংকালের হাড় আর পচা মাংসগুলো
ফেরি করে ফেরে কিছু স্বার্থান্বেষী ফাউল মানুষ-
সৃষ্টির অজানা অংশ পূর্ণ করে গালগল্প দিয়ে।
আফিম তবুও ভালো, ধর্ম সে তো হেমলক বিষ।
ধর্মান্ধের ধর্ম নেই, আছে লোভ, ঘৃণ্য চতুরতা,
মানুষের পৃথিবীকে শত খণ্ডে বিভক্ত করেছে
তারা টিকিয়ে রেখেছে শ্রেণিভেদ ঈশ্বরের নামে।
ঈশ্বরের নামে তারা অনাচার করেছে জায়েজ।
ইহকাল ভুলে যারা পরকালে মত্ত হয়ে আছে
চলে যাক সব পরপারে বেহেস্তে তাদের
আমরা থাকবো এই পৃথিবীর মাটি জলে নীলে,
দ্বন্দ্বময় সভ্যতার গতিশীল স্রোতের ধারায়
আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ।
আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন