এই লেখাটির ভূমিকা হিসেবে জনকণ্ঠে প্রকাশিত অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের একটি বিশ্লেষণামূলক লেখার কিছু অংশ যুক্ত করা হলো মূল লেখাটিকে পাঠকের বুঝা সহজ করতে ৷
- মুনতাসীর মামুন
আওয়ামী মুসলিম লীগ
থেকে যেদিন আওয়ামী লীগ হলো সেদিন থেকে বাঙালী মসুলমানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি
দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। তখন, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সেক্যুলারিজম বা
অসাম্প্রদায়িকতা শব্দগুলো বুদ্ধিজীবীদের মুখেও চলতি শব্দে পরিণত হয়নি। সেই সময় যাঁরা এই উদ্যোগটি নিয়েছিলেন তাঁরা যে
দুঃসাহসী ছিলেন তা বলাই বাহুল্য।
১৯৭০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সবেচেয়ে শক্তিশালী দল ছিল এমন বলা যাবে না। কারণ, বামধারা তখনও প্রবল এবং মেধাবী, সৎ তরুণদের সমাবেশ ছিল বামধারায়। সংগঠনের দিক থেকে তাদের তুলনা ছিল তারাই। তবে, আওয়ামী লীগও সারা বাংলাদেশে সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল। এদিক থেকে অন্যান্য দলের তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ ঐ ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল একটি কারণে, সেটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কারণে। তিনি তাঁর চারপাশে এমন সব ব্যক্তিদের জড়ো করতে পেরেছিলনে যাঁরা ছিলেন সৎ, শিক্ষিত এবং আদর্শে অনুপ্রাণিত।
১৯৬৮-৬৯ সালে আওয়ামী লীগের ব্যাপ্তি বাড়তে লাগল এবং ১৯৭০ সালের মধ্যে পূর্ববঙ্গে প্রধান দলে পরিণত হলো আওয়ামী লীগ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বঙ্গবন্ধু তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন এবং ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি মিথ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট পড়েছিল প্রায় ২০ ভাগ। আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও মোট নিরঙ্কুশভাবে ভোট পায়নি। ছয় দফার ম্যান্ডেট চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ম্যান্ডেট পেয়েছিল। কিন্তু ২০-২৫ ভাগ মানুষ তা সমর্থন করেনি।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকে একক জাতীয় নেতায় পরিণত করে। ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে তিনি ছাড়া বাঙালীর কোন নেতা ছিলেন না। যাঁরা তাঁকে ম্যান্ডেট দেননি, তাঁরাও আপাতত তাঁকে মেনে নিয়েছিলেন।
১৯৭২ সাল থেকেই পুরনো ম্যান্ডেট না দেয়া মানুষজন এবং নতুন অসন্তুষ্ট মানুষজন একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা শুরু করে। ১৯৭২-৭৫ সালে অপপ্রচার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আচরণে দেশব্যাপী প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনকি যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক তাঁরাও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় তিন দশক ঐ অসন্তুষ্টরা (১৯৭০, ১৯৭২-৭৫) ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা যে কৌশলটি নিয়েছিলেন তাতে সফল হয়েছিলেন। প্রথম, ঐসব অসন্তুষ্ট ও সুবিধাবাদী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নতুন একটি শ্রেণী তৈরি করা হয়েছিল। যারা সব সময় মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগকে একত্রে প্রতিপক্ষ ভাববে। দ্বিতীয়, একই সঙ্গে মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করা। তাদের কৌশল ছিল, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার না করে বিতর্কিত করে তোলা, পাকিস্তান মানসসম্পন্ন দল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলকে একই পাল্লায় ওজন করা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম সৃষ্টি ও তাতে ধীরে ধীরে এ কথা বিস্তার যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে আদৌ যদি কোন জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করতে হয় তা হলে বাঙালী নয় মুসলিম জাতীয়তাবাদই হবে সঠিক, যার ভিত্তি ১৯৪৭। ১৯৪৭ সালকে তারা ইতিহাসের মূলধারা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছিল।
এ ধারার মূল দল বিএনপি, পুরনো মুসলিম লীগ ও অন্যান্য অসন্তুষ্ট গ্রুপ ভায়োলেন্সের মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি ও বিকাশ। দ্বিতীয় দল জামায়াতে ইসলামী। এই নিষিদ্ধ দলটিকে পাকিস্তানের (অর্থাৎ নিজেদের) স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত করা হয়। প্রথমে দু’টি দল আলাদা মনে হলেও দেখা গেছে, মৌলিক প্রশ্নে তাদের দ্বিমত নেই এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বিএনপি থেকে জামায়াত বিস্তৃত হতে পেরেছে এ কারণে যে, তারা প্রায় ১০০টি জঙ্গী গ্রুপ সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের (যারা মুক্তিযুদ্ধের) বিরোধী ছিল, অর্থসাহায্যে বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পেরেছে। হতাশাগ্রস্ত, হাত-পা ভাঙ্গা কিছু লেফটিস্ট ও রাজনৈতিক টোকাই এবং বিভিন্ন চরের পীর ও কিছু হোন্ডা পার্টিও এদের সঙ্গে থাকে।
বিপরীতে আওয়ামী লীগ, যাদের রেকর্ড আছে সেক্যুলার দল হিসেবে শুরু থেকে বাঙালীদের কথা বলার এবং বাঙালীদের রাষ্ট্র গড়ায় নেতৃত্ব শুধু নয়, স্বল্পতম সময়ে বিশ্বের সেরা একটি সংবিধানও দিয়েছে। তাদের সমর্থক– বিভিন্ন মৃদু বামপন্থীও চাইলেও বিএনপি সাপোর্ট করতে পারে না, আওয়ামী লীগ অপছন্দ হলেও বিকল্প নেইÑ এ মনোভাবের দল, গ্রুপ ও ব্যক্তি। যাদের একত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ দলেও সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রচুর। বিশেষ করে যখন ক্ষমতায় থাকে। কিন্তু, বুদ্ধিজীবী মহল, শিল্প সংস্কৃতি মহলে তাদের সমর্থক একচেটিয়া।
এই দুটি ধারার দল ক্ষমতায় গেছে কয়েকবার। কিন্তু হিসাব কষে (হিসাবে ভুল থাকবে না এমন কথা আমি বলি না) দেখেছি, এ দেশে বিএনপি-জামায়াত মানসের লোকের সংখ্যা বেশি। আগে থেকেই ছিল। ১৯৭১ সালের পর থাকার কথা ছিল না। কিন্তু এখন ধরে নেয়া যেতে পারে তাদের সম্মিলিত সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ ভাগ। এদের আমি হেজাবি মনোভাবাপন্ন মনে করি (বিএনপি+জামায়াত+হেফাজতে ইসলাম)। এদের মনের কোনায় কোনায় যেন এক টুকরো হেজাবি লুকিয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রবল সমর্থক, কিন্তু কিছু টাকা হলে বা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর প্রথম একটি মাদ্রাসা বা মসজিদ স্থাপনে আত্মনিয়োগ করেন।
(চলবে)
১৯৭০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সবেচেয়ে শক্তিশালী দল ছিল এমন বলা যাবে না। কারণ, বামধারা তখনও প্রবল এবং মেধাবী, সৎ তরুণদের সমাবেশ ছিল বামধারায়। সংগঠনের দিক থেকে তাদের তুলনা ছিল তারাই। তবে, আওয়ামী লীগও সারা বাংলাদেশে সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল। এদিক থেকে অন্যান্য দলের তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ ঐ ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল একটি কারণে, সেটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কারণে। তিনি তাঁর চারপাশে এমন সব ব্যক্তিদের জড়ো করতে পেরেছিলনে যাঁরা ছিলেন সৎ, শিক্ষিত এবং আদর্শে অনুপ্রাণিত।
১৯৬৮-৬৯ সালে আওয়ামী লীগের ব্যাপ্তি বাড়তে লাগল এবং ১৯৭০ সালের মধ্যে পূর্ববঙ্গে প্রধান দলে পরিণত হলো আওয়ামী লীগ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বঙ্গবন্ধু তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন এবং ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি মিথ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট পড়েছিল প্রায় ২০ ভাগ। আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও মোট নিরঙ্কুশভাবে ভোট পায়নি। ছয় দফার ম্যান্ডেট চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ম্যান্ডেট পেয়েছিল। কিন্তু ২০-২৫ ভাগ মানুষ তা সমর্থন করেনি।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকে একক জাতীয় নেতায় পরিণত করে। ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে তিনি ছাড়া বাঙালীর কোন নেতা ছিলেন না। যাঁরা তাঁকে ম্যান্ডেট দেননি, তাঁরাও আপাতত তাঁকে মেনে নিয়েছিলেন।
১৯৭২ সাল থেকেই পুরনো ম্যান্ডেট না দেয়া মানুষজন এবং নতুন অসন্তুষ্ট মানুষজন একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা শুরু করে। ১৯৭২-৭৫ সালে অপপ্রচার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আচরণে দেশব্যাপী প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনকি যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক তাঁরাও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় তিন দশক ঐ অসন্তুষ্টরা (১৯৭০, ১৯৭২-৭৫) ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা যে কৌশলটি নিয়েছিলেন তাতে সফল হয়েছিলেন। প্রথম, ঐসব অসন্তুষ্ট ও সুবিধাবাদী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নতুন একটি শ্রেণী তৈরি করা হয়েছিল। যারা সব সময় মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগকে একত্রে প্রতিপক্ষ ভাববে। দ্বিতীয়, একই সঙ্গে মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করা। তাদের কৌশল ছিল, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার না করে বিতর্কিত করে তোলা, পাকিস্তান মানসসম্পন্ন দল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলকে একই পাল্লায় ওজন করা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম সৃষ্টি ও তাতে ধীরে ধীরে এ কথা বিস্তার যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে আদৌ যদি কোন জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করতে হয় তা হলে বাঙালী নয় মুসলিম জাতীয়তাবাদই হবে সঠিক, যার ভিত্তি ১৯৪৭। ১৯৪৭ সালকে তারা ইতিহাসের মূলধারা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছিল।
এ ধারার মূল দল বিএনপি, পুরনো মুসলিম লীগ ও অন্যান্য অসন্তুষ্ট গ্রুপ ভায়োলেন্সের মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি ও বিকাশ। দ্বিতীয় দল জামায়াতে ইসলামী। এই নিষিদ্ধ দলটিকে পাকিস্তানের (অর্থাৎ নিজেদের) স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত করা হয়। প্রথমে দু’টি দল আলাদা মনে হলেও দেখা গেছে, মৌলিক প্রশ্নে তাদের দ্বিমত নেই এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বিএনপি থেকে জামায়াত বিস্তৃত হতে পেরেছে এ কারণে যে, তারা প্রায় ১০০টি জঙ্গী গ্রুপ সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের (যারা মুক্তিযুদ্ধের) বিরোধী ছিল, অর্থসাহায্যে বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পেরেছে। হতাশাগ্রস্ত, হাত-পা ভাঙ্গা কিছু লেফটিস্ট ও রাজনৈতিক টোকাই এবং বিভিন্ন চরের পীর ও কিছু হোন্ডা পার্টিও এদের সঙ্গে থাকে।
বিপরীতে আওয়ামী লীগ, যাদের রেকর্ড আছে সেক্যুলার দল হিসেবে শুরু থেকে বাঙালীদের কথা বলার এবং বাঙালীদের রাষ্ট্র গড়ায় নেতৃত্ব শুধু নয়, স্বল্পতম সময়ে বিশ্বের সেরা একটি সংবিধানও দিয়েছে। তাদের সমর্থক– বিভিন্ন মৃদু বামপন্থীও চাইলেও বিএনপি সাপোর্ট করতে পারে না, আওয়ামী লীগ অপছন্দ হলেও বিকল্প নেইÑ এ মনোভাবের দল, গ্রুপ ও ব্যক্তি। যাদের একত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ দলেও সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রচুর। বিশেষ করে যখন ক্ষমতায় থাকে। কিন্তু, বুদ্ধিজীবী মহল, শিল্প সংস্কৃতি মহলে তাদের সমর্থক একচেটিয়া।
এই দুটি ধারার দল ক্ষমতায় গেছে কয়েকবার। কিন্তু হিসাব কষে (হিসাবে ভুল থাকবে না এমন কথা আমি বলি না) দেখেছি, এ দেশে বিএনপি-জামায়াত মানসের লোকের সংখ্যা বেশি। আগে থেকেই ছিল। ১৯৭১ সালের পর থাকার কথা ছিল না। কিন্তু এখন ধরে নেয়া যেতে পারে তাদের সম্মিলিত সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ ভাগ। এদের আমি হেজাবি মনোভাবাপন্ন মনে করি (বিএনপি+জামায়াত+হেফাজতে ইসলাম)। এদের মনের কোনায় কোনায় যেন এক টুকরো হেজাবি লুকিয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রবল সমর্থক, কিন্তু কিছু টাকা হলে বা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর প্রথম একটি মাদ্রাসা বা মসজিদ স্থাপনে আত্মনিয়োগ করেন।
(চলবে)
“ দ্বীখন্ডিত স্বদেশভুমি
” কিন্তু কেনো ? এর কারণ
বিশ্লেষণ সহ একটি ব্যক্তিগত
মূল্যায়ন ৷
( এই লেখাটির
পরিধি প্রায় বিগত ৬৫ বছরের ও অধিক কাল ৷ তাই ক্ষুদ্র
পরিসরে বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন
ঘটনার বর্নণা করা সম্ভব হয় নি , অন্যদিকে ইতিহাসের
নায়কদেরকেও সঠিকভাবে মূল্যায়ন
করে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মান
পদর্শন করা ও হয় নি লেখাটাকে সীমিত রাখতে
৷ এটা
একটা ব্যক্তিগত মূল্যায়ন , প্রকাশিত সংবাদের
ভিতরের সংবাদের তথ্যের
উপর নির্ভর করে এ লেখার সূত্রপাত ৷ তাই অনিচ্ছাকৃত
ত্রুটির জন্যে দুঃখিত
এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থি ৷ )
( ২য় পর্ব )
আজকালের বহুল প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের “ চেতনা
” শব্দটার একটা ঐতিহাসিক
প্রেক্ষাপট আছে ৷ লেখাটার মূল অংশে প্রবেশের
পূর্বে নিম্নে এর একটা
প্রাথমিক বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করা হলো ৷
৪৭- এ
পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তখনকার
পূর্ব বঙ্গের বাঙালীদের
মন থেকে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের
মোহ-মুক্তি ঘটতে শুরু হয়ে যায় ৷ ঢাকার রাস্তায় তখন ভূখা
- মিছিলে জনগণের অংশ গ্রহন বাড়তে থাকে ৷ এই স্বাধীনতা
ঝুঁটা হায় , লাখও মানুষ ভূখা হায় , এই
ধরনের শ্লোগানে ঢাকার রাস্তাঘাট
মূখরিত হয়ে উঠে তখন
৷ আর তখন থেকেই শিক্ষিত
বাঙালী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা নতুন চিন্তা ও চেতনার উদ্ভব ঘটা শুরু হয়ে
যায় ,এবং
এর বিকাশ লাভ করতে
ও বেশি
সময়ের প্রয়োজন হয় নি ৷
পাকিস্তানি দ্বীজাতিতত্তে
বিশ্বাসী কিছু মুসলিম
লীগ ঘরণার লোক ও জামাতী
ও মুসলীম ব্রাদারহুডের
অনুসারী ( সামগ্রিক অর্থে
) কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই তখন ভিন্ন
মত পোষণ করে দ্বীজাতি তত্তের
বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা করেছিলো ৷ আর ইহা প্রচুর জনপ্রিয়তা
লাভ করতে আরম্ভ করলে কিছু গোপন রাজনৈতিক
দল সহ অন্যান্য
রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই আন্দোলনের ব্যাপার উৎসাহের সঞ্চার
হয় ৷ ফলে এই ঘরণার রাজনৈতিক দলগুলোও
এই আন্দোলনে সক্রিয়
ভূমিকা পালন করতে শুরু করে ৷ গ্রাম-বাংলায়
পূর্ব থেকেই একটা অসাম্প্রদায়িক ধারা চালু হয়েছিলো
৷ গ্রাম গঞ্জের
বিভিন্ন মেলা , বারনি , ঘোড়দৌঁড়
, ঘেঁটুনাচ , যাত্রানুষ্টান এবং পালাগান ইত্যাদিতে
অসাম্প্রদায়িক ভাবে হিন্দু
ও মুসলমানদের অংশ গ্রহন ছিলো অবাধে ৷
এই দুই সম্প্রদায়ের
মধ্যে বিয়েশাদী সহ অন্যান্য পূজা পর্বণ ও অন্যান্য
ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও একে অন্যকে নিমন্ত্রন
করতে দেখা গেছে ৷ মুসলিম
লীগ ও কংগ্রেস
এবং ব্রিটিশদের সৃষ্ট
৪৬-এর এতবড় সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গার পরও এবং অনেক
প্রাণহরণ সহ অসংখ্য
মানুষের নিজ মাতৃভূমি
ত্যাগের পর ও দেশ বাঙলায়
এ সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতি
বজায় থেকে গিয়েছিলো
৷ আর এরই ধারাবাহিকতায় ষাটের দশকে বাঙালী
জনগণের একটা অংশ সহ প্রগতিশীল
, শিক্ষিত এবং বুদ্ধিজীবীদের বড়অংশ ,
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের
বিরুদ্ধে একটা ব্যাপক
আন্দোলনের সূচনা করতে পেরেছিলো আর সে আন্দোলনের
সূত্রপাত হয়েছিলো রাষ্ট্রভাষা
বাংলার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৷ পরবর্তীতে বাঙালীর
স্বাধীকার অর্জনের আন্দোলন
সঙ্গে সামাজিক প্রগতিশীলতার
আন্দোলনের ধারা যুক্ত হয়ে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি
পেয়েছিলো এবং মুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে একটি স্বাধীন
সার্বভৌম বাঙলা দেশ অর্জনের মাধ্যমে
এই আন্দোলনর প্রথম পর্যায়ের সমাপ্তি
ঘটেছিলো ৷
আর এই আন্দোলনের ফল স্বরূপ বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক চিন্তার
ক্ষেত্রে এক বড় ধরণের পরিবর্তনের
সূত্রপাত ঘটে ৷ সমাজের
ঐ চিন্তা ও চেতনার প্রভাবে
রাজনৈতিকদের চিন্তার মধ্যে এক পরিবর্তন
আসে ৷ আর ঐ পরিবর্তনের ধারা , বাঙলাদেশের
জনগণের জীবন যাপন সহ দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের
ক্ষেত্রে বড়ো রকমের এক সহায়ক ভূমিকা
পালন করেছিলো ৷ তাই পর্যায়ক্রমে
জনগণের ও শিক্ষিত
বুদ্ধিজীবীদের এই প্রগতিশীল
চিন্তা ও চেতনা , রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগর মধ্যে একটা বিরাট প্রভাব
বিস্তারে সক্ষম হয়েছিলো
৷ তাই আওয়ামী
লীগের প্রগতিশীল অংশ জনগণের এই চিন্তা চেতনাকে
আরো এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা
পালনে সমর্থ হয়েছিলো
৷ তাই এক পর্যায়ে পুরাতন
মূল আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের
নেতৃত্বে নতুন ছয়দফা ভিত্তিক নতুন এক আওয়ামী
লীগের জন্ম , হয়েছিলো
পূর্ব- বাংলার জনগণের আশা আকাঙ্কার প্রতীক
হিসেবে ৷
তাই
৭১- এ মুক্তিযুদ্ধের পূর্বেই
বাঙালীদের মনে যে চিন্তা ও চেতনার সৃষ্টি
হয়েছিলো , সে চিন্তা
চেতনাই ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের
মূল সূত্র অর্থাৎ
মূল ধারার ধারাবাহিকতা
মাত্র ৷ আর সেই চিন্তা
চেতনার মূল উদ্দেশ্য
ছিলো , বাঙলাদেশে এমন এক মুক্ত ও স্বাধীন মানুষ্য জাতির জন্ম দেয়া ,
যেখানে মানুষ তার চাহিদা অনুসারে
শুধু তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস , যেমন খাদ্য
, বস্ত্র , বাসস্থান , চিকিৎসা
ও শিক্ষার মত শুধু মৌলিক চাহিদার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না ৷ তাদের মনোজগতে
আরোছিলো যে , এই মুক্তিযুদ্ধ তাদেরকে
অর্থাৎ বাঙালীদেরকে সব ধরনের পশ্চাৎপদতা
, রক্ষণশীলতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্ত করে এক সুন্দর
এক সুস্থ ও কুসংস্কারমুক্ত অসাম্প্রদায়িক
সংস্কৃতিক জগতে প্রবেশ
করতে সহায়তা করবে
, আর বৈসম্যহীন
এক মুক্ত সমাজের
সৃষ্টি করে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের
জন্যে এক নতুন আধুনিক রাষ্ট্র
রেখে যেতে পারবে ৷
কিন্তু এই সব অধিকার অর্জন করতে হলে ধর্মকে রাজনীতি থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ
গ্রহন করা ছিলো এক অনিবার্য এবং
আবশ্যিক সর্ত ,
এবং
এর সঙ্গে এক উদার ও
গণতন্ত্রিক এবং এক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র
গঠনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
গ্রহন করাও ছিলো জরুরী
৷
তাই জণগনের
মধ্যে তখন যে প্রত্যাশার জন্ম হয়েছিলো তা ছিল এমন এক
বাঙলাদেশের জন্ম দিতে হবে যেখানে মুসলিম
- হিন্দু - বৌদ্ধ -খ্রীস্টান সহ ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র নানা জাতিগোষ্ঠি
ও নৃ-সম্প্রদায়ের মানুষ , প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম ,
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
বজায় রেখে চলতে সমর্থ হবে আর দেশে এমন এক সামাজিক বন্ধন ও
সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত
হবে ৷ আর স্বাধীন
দেশটি একটি সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক
সাম্যের ভিত্তিতে পরিচালিত
হবে ৷ আর ভবিষ্যতে
কেউ এ সম্পর্ককে , বিশেষ করে যে কেউ রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা দখল করে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা
প্রযোগ করে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে এই সামাজিক ঐক্য বিনষ্ট করতে পারবে না ৷
আর এসব লক্ষ্য
পূরণ করতে হলে , একটা স্বাধীন
সার্বোভৌম রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার
প্রয়োজনীতা একান্ত জরুরী হয়ে দেখা দিয়ে ছিলো ৷
তাই ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধকে
শুধু বাঙলাদেশের স্বাধীনতা
যুদ্ধ না বলে সে
যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ বলা হয় ৷
কিন্তু ৭১- এর পর বাঙলাদেশের জনগণের
সে আকাঙ্কা আজো পূরণ হয় নাই ৷ অবশ্য তার অনেক কারণ আছে ৷
স্বাধীন বাংলাদেশের
প্রথম যে সরকার ছিলো তা ছিলো পাকিস্তানের
কাঠামোর ভেতরের মধ্যেকার
গঠিত সরকারেরই অংশ ৷ আর এই অংশের নির্বাচিত
সংসদ সদস্যদের নেতৃত্যের
দ্বারা পরিচালিত প্রবাসী
সরকারের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করতে হয়ে ছিলো এবং তাদের মাধ্যমেই
স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিলো
৷ আর এ কারণে এই যুদ্ধে দেশী বিদেশী ও আন্তর্জাতিক সমর্থন
পাওয়া গিয়েছিলো সহজে বলেই দেশের স্বাধীনতা
এত অল্প সময়ে অর্জিত হয়েছিলো
৷
তাই সামগ্রীক অর্থে স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা
ও চেতনা ধারণকারী
সরকার ছিলো না , অনেক
অংশে , বলা অসত্য হবে না ৷ আর আওয়ামী লীগের সদস্যরা ও মাল্টি-ক্লাস সোসাইটির
অন্তর্ভূক্ত ছিলো ৷ তাই প্রথমেই
স্বাধীন দেশের উপযোগী
একটা শাসনতন্ত্র রচনা করতে হয়েছিলো
তাদেরকেই ৷ আর এ কাজে দলমত নির্বিশেষে
একদল যৌগ্য লোকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে , স্বাধীনতা যুদ্ধে
অংশগ্রহনকারী সবার কাছে একটা গ্রহনযোগ্য শাসনতন্ত্র রচিত হয়ে , এরই ধারাবাহিকতায়
৭৩-এর মার্চে দেশের
প্রথম সংসদীয় নির্বাচন
অনুষ্টিত হয় ৷ বিপুল সংখ্যা
গরিষ্ঠতা পেয়ে মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহনকারী অন্য দলগুলোকে
পিছনে ফেলে আবার আওয়ামী লীগ জয়ি হয়ে সরকার গঠন করতে সমর্থ হয় ৷ পূর্বেই উল্লেখকরা
হয়েছে , আওয়ামী লীগ মাল্টিক্লাস মানুষের
দল , তাই সরকার প্রধান সহ স্বাধীনতা যুদ্ধের
মূল রূপকারদের ও অংশ গ্রহনকারীদের মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত
হয় যে তখনকার
প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা ও সরকারের মাধ্যমে
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত , মুক্তিযুদ্ধের
চিন্তা ও চেতনার ,
বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না ৷ তাই জাতির পিতা ও বঙ্গব্ন্ধু এবং তখনকার প্রধানমন্ত্রী
শেখ মুজিবুর রহমানকে
এ ব্যাপারে একটা সঠিক পদক্ষেপ
গ্রহনের দায়িত্ব দেয়া হয় ৷ প্রথম পদক্ষেপ
হিসেবে শাসনতন্ত্র সংশোধন
করে প্রধানমন্ত্রীর পদকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদে পরিবর্তন করে , প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত ক্ষমতা সহ আরো কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রদান
করা হয় ৷ বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাষ্ট্রপতি
বা দেশের প্রেসিডেন্টের
পদ গ্রহন করেন
৷
আর এতে পরবর্তিকালে
সামরিক শাসকদের দেশের শাসনভার সহ রাষ্ট্রীয়ক্ষমতা দখলের পথ সূগম হয়েছিলো ৷
সে যাই হউক , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
, আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দেশের রাষ্ট্রপতি
হিসেবে , দেশের জণগনের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তি
চাহিদা বিবেচনা করে কিছু কার্যক্রম
গ্রহন করেছিলেন ৷ যাতে
দেশ গঠনে আওয়ামী
লীগের সদস্য ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
লোকজন ও একটা কার্যকর ভূমিকা
রাখতে পারেন ৷ এরই অংশ হিসেবে
, প্রথমে
পার্টি আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত ঘোষিত হয় ৷
আর বাঙলাদেশ কৃষক , শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা সংক্ষেপে
বাকশাল নামের এক নতুন রাজনৈতিক
পার্টির সৃষ্টি করা হয় ৷ আর নবগঠিত
বাকশালে আওয়ামী লীগার ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
যে কোনো কাউকে যোগদানের সুযোগ রাখা হয় ৷ সরকারী
চাকুরিজীবী সহ সামরিক
বাহিনীর সদস্যদেরকে এ সুযোগ দেয়া হয় ৷ তাই মক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহনকারী অনেক উচ্চ পদে
অসীন অনেক আমলা সহ বিভিন্ন
পেশার অনেকেই বাকশালে
যোগ দিয়েছিলেন ৷
পরবর্তি
রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া ও বাকশালের
সদস্য পদ গ্রহন করে ছিলেন ৷ বাকশালের
প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো দেশ পূর্ণগঠনে
আমলাতন্ত্রে ও যৌগ্য পাবলিক প্রতিনিধির
অংশ গ্রহন নিশ্চিত
করা , যাতে পাকিস্তানের
মত একটা সুবিধাভোগী
আমলাতন্ত্রের হাতে দেশের শাসনভার চলে গিয়ে
, দেশের
উন্নতিতে বিঘ্নতা সৃষ্টি না
হয় ৷ আর মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার বিপক্ষে দেশ পরিচালিত না হতে পারে ৷
সে লক্ষ্যে বর্তমান
জেলা প্রশাসকের পদকে
জেলা গভর্ণার পদে পৃর্ণরবিন্যাশ করে জননেতাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
কিছু তখনকার জেলাপ্রশাসকদেরকে ও জেলা গভর্ণার
নিযুক্ত করা হয়েছিলো
৷ কিন্তু বাকশাল
গঠনের কার্যক্রম চালু হওয়ার পূর্বই
রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবঙ্গু
শেখ মুজিবুর রহমানকে
শপরিবারে হত্যা করলে ,
এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি
ঘোষিত হয় ৷ এবং স্বাধীনতার
বিরোধী , বিশেষকরে
মুক্তিযদ্ধের বিরোধী প্রতিকৃয়াশীলদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা চলে যায় সেনাবাহিনীর
সহায়তায় ৷ আর মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা
ও চেতনার প্রথমিক
সমাধি রচিত হয়েছিল
সেই সময়েই , যা আজ ও অব্যাহিত আছে ৷
বাকশালকে গনতন্ত্র বিরোধী
পদক্ষেপ ছিলো বলে এখন মনে করা হলে এর সৃষ্টির
কারণ ও উদ্দেশ্য
তখন সমাজে ব্যাপকভাবে
প্রচারিত হওয়ার পূর্বেই
এর সমাধি রচিত হয়ে গিয়েছিলো
৷
তাই এর প্রযোগ না হওয়ায় এর ভাল মন্দ দিকগুলার বিচার ও বিশ্লেষণ
করা সম্ভব হয় নাই ৷ সর্ব্বপরি ৭৫-এর পট পরিবর্তনের
পর একতরফাভাবে এর বিরোধ্যে দেশে বিদেশে যে প্রচারণা আরম্ভ করা হয়েছিলো
তা এখনও অব্যাহত
আছে ৷ পরবর্তিতে
ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক
রাজনীতিকে দেশে বহুদলীয় গনতন্ত্রিক ধারার রাজনীতি হিসেবে
প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে এই ক্ষণস্থায়ী রাজনৈতিক
ধারণাকে ( বাকশালীয়
ধারাকে ) চিরদিনের জন্যে কবর দেয়ার ব্যবস্থা
রাষ্ট্রীয় ভাবে গ্রহন করা হয় ৷
আর
এ কাজে সমাজের
সুবিধাভোগী শ্রেণীকে ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী
শক্তিকে কাজে লাগিয়ে
মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা চেতনাকে নতুন
করে বিকাশের পথ রুদ্ব করে রাখা সম্ভব হয়েছিলো ৭৫- থেকে
৯৬ সাল পর্যন্ত
, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহণকারী দল আওয়ামী
লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়
আসার পূর্ব পর্যন্ত
৷
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়
অসার পর মুক্তিযুদ্ধের
বিকৃতিকরা ইতিহাস পূনঃউদ্ধার
আরম্ভ হলে তরুণ প্রজন্মের
মধ্যে বিপুল সাড়া পড়ে যায় ৷ যার ফলে বর্তমানে
দেশে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা
ও চেতনা ধারণকারী
একটা নতুন প্রজন্মের
আবির্ভাব হতে দেখা যাচ্ছে
৷ কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বিচারের
এক রায়ের বিরোধ্যে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা
রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ
আরম্ভ করলে যুদ্ধাপরাধী
জামাতের সঙ্গে বিএনপি
ও এদের বিরোধ্যে
অবস্থান নেয় ৷ এর ফলে এটা আবার নতুন ভাবে প্রমাণিত হয় যে বি এন পি আসলে পাকিস্তানের
তথাকথিত দ্বীজাতিতত্তের আদর্শে
বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক
দল , যাদের চিন্তা ও চেতনা মুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে অর্জিত বাঙলাদেশের
চেতনার পরিপন্থি ৷ তাই তারা শুধু ৭৫-এর পট-পরিবর্তনের পরের উপকারভোগী ও সেনানিবাসে তৈরি রাজনৈতিক দলই নয় ৷ তারা পাকিস্তান
মুসলিম লীগের উত্তরাধিকারী
রাজনৈতিক একটি পার্টি
ও ৷ আর এর পরিণতিতেই
বোধহয় বর্তমানে এই দলটির রাজনীতি জামাতিদের
ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক
রাজনীতির সঙ্গে একত্রিভূত
হয়ে গিয়েছে ? এখন পরিষ্কার
হচ্ছে এই দলটি কেন ৯১-থেকে
৯৬- পর্যন্ত তাদের শাসন আমলে মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহনকারীদের বিরোধ্যে রাষ্ট্রীয়
ভাবে বিপরিত অবস্থান
নিয়ে ছিলো ৷ আর বি
এন
পি পরে টার্মে
(২০০২ -৬ ) ক্ষমতায় এসেই পূর্বের অসমাপ্ত
কাজ সমাপ্ত করতে গিয়ে শুধু জামাতকে ক্ষমতার
অংশীদার করেনি , পাকিস্তানের সামরিক
গোয়েন্দা সংস্থা আই আর এস কে অলিখিত
ভাবে দেশ পরিচালনায়
উপদেষ্টার দায়িত্বে নাকি বসিয়ে ছিলো
!! পরিনামে বিএনপি
কে প্রতিযোগী মুক্ত করতে ২১-শে আগষ্ট এ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বকে হত্যার
পরিকল্পনা করেছিলো দলকে নেতৃত্ব শূন্য করে, আওয়ামী
লীগকে ধ্বংস করে ৭১-এর পরাজয়ের
প্রতিশোধ নিতে ৷ আর এ কাজটি করা সম্ভব হয়েছিলো
পাকিস্তান আইএসআই ও বিএনপি র
বাঙলাদেশ বিরোধী পাকিস্তানিদের
ধারর রাজনৈতিক অংশের সাহায্যে
ও বিশেষ সহায়তার
ফলে ৷
অবশ্য তারা একাজে সফল হলে হয়ত এতদিনে মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার কবর দেয়া সম্পূর্ণ
হয়ে যেত ৷ দশট্রাক অস্ত্র
আটকসহ পরিবর্তী ইতিহাস
সবার জানা ৷ তবে জনগণ নিশ্চয় বিএনপির
এ সব কার্যক্রম
গ্রহন করে নাই ৷
তাই পরবর্তী
নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী
লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে
নিরস্কুশ ক্ষমতার অধিকারী
করে ৷ এরই ফলশ্রুতিতে আওয়ামী
লীগ যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ আরম্ভ করে
, অনেকের অভিযোগ
প্রমানিত হওয়ায় তাদের শাস্তির ব্যবস্থা
ও করতে পেরেছে
৷ তাই মন্দের
ভাল হিসেবে আওয়ামী
লীগ এখনও মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার পক্ষের জনগণের
একমাত্র ভরসা হিসেবে
গণ্য হচ্ছে ৷ অতএব এ দলকে আগামীতেও
দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতে বা ঠিকে থাকতে সহায়তা
করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বিশ্বসীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে ৷
তাই
৭৫-এর পরে এবং ৯১-
সাল পর্যন্ত বহুদলীয়
রাজনৈতিক দলের নামে যে সব রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছিলো
, সে সব দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বিশ্বাসী ছিলো না ৷ তাই তারা সু-পরিকল্পিত
ভাবে সমাজে বিভাজন
সৃষ্টি করে , দেশে এমন
এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী
মানুষ সৃষ্টির প্রয়াস
নিয়েছিলো, যাদের কোনো দেশাত্ববোধ
থাকবে না , যাদের কোনো আদর্শ থাকবে না , তারা নিজেদের
এবং তাদের শ্রেশীর
স্বার্থের বাইরে গিয়ে ,
দেশের এবং সমাজের
উপকারী কোনো কাজে অংশ গ্রহন থেকে বিরত থাকবে ৷ আর এ কাজে তারা শতভাগ সাফল্য
অর্জন করেছে ৷
টিভি টক শো সহ বিভিন্ন
সভা ও সেমিনারে
এর প্রমাণ সব সময়েই প্রকাশ
পাচ্ছে ৷ অন্যদিকে
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যক্রম
পর্যালোচনা করলে এর
ব্যতিক্রম খুব বেশি চোখে পড়ে না ৷ তাদের
এখন বেশির ভাগকেই
যার যার ধান্দায়
ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় ৷ কোনো আদর্শ বা চেতনাকে
ধারণ করে রাজনীতি
করতে তাদের অনেককেই
দেখা যায় না ৷ এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে ও একটা সুবিধাভোগী
গ্রুপের জন্ম হয়েছে ৷
তাই বোধহয় দলের মূল নেতৃত্ব
,মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
কিছু নেতাকে অন্য মুক্তযুদ্ধের পক্ষের
দল থেকে , ভদ্র ভাষায় যাকে
বলে সংগ্রহ করে এনে এবং মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের
সহায়তা নিয়ে দেশের শাসন কার্য পরিচালনায়
সথেষ্ট হয়েছেন দলের বর্তমান নেতৃত্ব
? তাই প্রায় মন্ত্রনালয়ে মন্ত্রীর
পরেও কিছু উপদেষ্টার
ভূমকা দেখা যায় ৷
এর
পর এখন ও দেশের জণগনের একমাত্র
ভরসা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
নতুন প্রজন্ম ও আওয়ামী লীগের সরকার ৷ তাই যারা মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা
চেতনায় বিশ্বাসী , তাদের সবার উচিত , যার যার অবস্থান
থেকে এই প্রজন্মকে
এবং আওয়ামী লীগের সরকারকে সর্বাত্বক
সাহায্য ও সহায়তা
প্রদান করা ৷
আর নিশ্চয়
উপরের দুই পর্বের
আলোচনায় এটা অনেকটা
ষ্পষ্ট হয়েছে যে , কেনো আমাদের স্বদেশ
ভূমি প্রিয় বাঙলাদেশের
মানুষের মনোজগতে একটি বিভক্তির সৃষ্টি
হয়েছে ? কেনো আমাদের এই মাতৃভূমি আজ দ্বী-খন্ডিত ?
( ২য়
পর্ব সমাপ্ত )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন