“ দ্বীখন্ডিত স্বদেশভুমি
” কিন্তু কেনো ? এর কারণ
বিশ্লেষণ সহ একটি ব্যক্তিগত
মূল্যায়ন ৷
( এই লেখাটির
পরিধি প্রায় বিগত ৬৫ বছরের ও অধিক কাল ৷ তাই ক্ষুদ্র
পরিসরে বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন
ঘটনার বর্নণা
করা সম্ভব হয় নি , অন্যদিকে
ইতিহাসের নায়কদেরকেও সঠিকভাবে
মূল্যায়ন করে তাদেরকে
তাদের প্রাপ্য সম্মান
পদর্শন করা ও হয় নি লেখাটাকে সীমিত রাখতে
৷ এটা
একটা ব্যক্তিগত মূল্যায়ন , প্রকাশিত সংবাদের
ভিতরের সংবাদের তথ্যের
উপর নির্ভর করে এ লেখার সূত্রপাত ৷ তাই অনিচ্ছাকৃত
ত্রুটির জন্যে দুঃখিত
এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ৷ )
এই লেখাটির ভূমিকা হিসাবে অধ্যাপক মুনতাসীর মানুনের একটি লেখার প্রথম অংশ যুক্ত করা হলো পাঠকদের ব্যাপারটি বুঝতে সহজ করার উদ্দেশ্যে ৷ (সৌজনে ১৪ ফ্রেবু ? ১৫ প্রকাশিত জনকণ্ঠের একটি লেখা )
১৯৭০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সবেচেয়ে শক্তিশালী দল ছিল এমন বলা যাবে না। কারণ, বামধারা তখনও প্রবল এবং মেধাবী, সৎ তরুণদের সমাবেশ ছিল বামধারায়। সংগঠনের দিক থেকে তাদের তুলনা ছিল তারাই। তবে, আওয়ামী লীগও সারা বাংলাদেশে সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল। এদিক থেকে অন্যান্য দলের তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ ঐ ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল একটি কারণে, সেটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কারণে। তিনি তাঁর চারপাশে এমন সব ব্যক্তিদের জড়ো করতে পেরেছিলনে যাঁরা ছিলেন সৎ, শিক্ষিত এবং আদর্শে অনুপ্রাণিত।
১৯৬৮-৬৯ সালে আওয়ামী লীগের ব্যাপ্তি বাড়তে লাগল এবং ১৯৭০ সালের মধ্যে পূর্ববঙ্গে প্রধান দলে পরিণত হলো আওয়ামী লীগ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বঙ্গবন্ধু তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন এবং ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি মিথ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট পড়েছিল প্রায় ২০ ভাগ। আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও মোট নিরঙ্কুশভাবে ভোট পায়নি। ছয় দফার ম্যান্ডেট চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ম্যান্ডেট পেয়েছিল। কিন্তু ২০-২৫ ভাগ মানুষ তা সমর্থন করেনি।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকে একক জাতীয় নেতায় পরিণত করে। ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে তিনি ছাড়া বাঙালীর কোন নেতা ছিলেন না। যাঁরা তাঁকে ম্যান্ডেট দেননি, তাঁরাও আপাতত তাঁকে মেনে নিয়েছিলেন।
১৯৭২ সাল থেকেই পুরনো ম্যান্ডেট না দেয়া মানুষজন এবং নতুন অসন্তুষ্ট মানুষজন একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা শুরু করে। ১৯৭২-৭৫ সালে অপপ্রচার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আচরণে দেশব্যাপী প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনকি যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক তাঁরাও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় তিন দশক ঐ অসন্তুষ্টরা (১৯৭০, ১৯৭২-৭৫) ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা যে কৌশলটি নিয়েছিলেন তাতে সফল হয়েছিলেন। প্রথম, ঐসব অসন্তুষ্ট ও সুবিধাবাদী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নতুন একটি শ্রেণী তৈরি করা হয়েছিল। যারা সব সময় মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগকে একত্রে প্রতিপক্ষ ভাববে। দ্বিতীয়, একই সঙ্গে মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করা। তাদের কৌশল ছিল, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার না করে বিতর্কিত করে তোলা, পাকিস্তান মানসসম্পন্ন দল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলকে একই পাল্লায় ওজন করা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম সৃষ্টি ও তাতে ধীরে ধীরে এ কথা বিস্তার যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে আদৌ যদি কোন জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করতে হয় তা হলে বাঙালী নয় মুসলিম জাতীয়তাবাদই হবে সঠিক, যার ভিত্তি ১৯৪৭। ১৯৪৭ সালকে তারা ইতিহাসের মূলধারা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছিল।
এ ধারার মূল দল বিএনপি, পুরনো মুসলিম লীগ ও অন্যান্য অসন্তুষ্ট গ্রুপ ভায়োলেন্সের মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি ও বিকাশ। দ্বিতীয় দল জামায়াতে ইসলামী। এই নিষিদ্ধ দলটিকে পাকিস্তানের (অর্থাৎ নিজেদের) স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত করা হয়। প্রথমে দু’টি দল আলাদা মনে হলেও দেখা গেছে, মৌলিক প্রশ্নে তাদের দ্বিমত নেই এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বিএনপি থেকে জামায়াত বিস্তৃত হতে পেরেছে এ কারণে যে, তারা প্রায় ১০০টি জঙ্গী গ্রুপ সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের (যারা মুক্তিযুদ্ধের) বিরোধী ছিল, অর্থসাহায্যে বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পেরেছে। হতাশাগ্রস্ত, হাত-পা ভাঙ্গা কিছু লেফটিস্ট ও রাজনৈতিক টোকাই এবং বিভিন্ন চরের পীর ও কিছু হোন্ডা পার্টিও এদের সঙ্গে থাকে।
বিপরীতে আওয়ামী লীগ, যাদের রেকর্ড আছে সেক্যুলার দল হিসেবে শুরু থেকে বাঙালীদের কথা বলার এবং বাঙালীদের রাষ্ট্র গড়ায় নেতৃত্ব শুধু নয়, স্বল্পতম সময়ে বিশ্বের সেরা একটি সংবিধানও দিয়েছে। তাদের সমর্থক– বিভিন্ন মৃদু বামপন্থীও চাইলেও বিএনপি সাপোর্ট করতে পারে না, আওয়ামী লীগ অপছন্দ হলেও বিকল্প নেইÑ এ মনোভাবের দল, গ্রুপ ও ব্যক্তি। যাদের একত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ দলেও সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রচুর। বিশেষ করে যখন ক্ষমতায় থাকে। কিন্তু, বুদ্ধিজীবী মহল, শিল্প সংস্কৃতি মহলে তাদের সমর্থক একচেটিয়া।
এই দুটি ধারার দল ক্ষমতায় গেছে কয়েকবার। কিন্তু হিসাব কষে (হিসাবে ভুল থাকবে না এমন কথা আমি বলি না) দেখেছি, এ দেশে বিএনপি-জামায়াত মানসের লোকের সংখ্যা বেশি। আগে থেকেই ছিল। ১৯৭১ সালের পর থাকার কথা ছিল না। কিন্তু এখন ধরে নেয়া যেতে পারে তাদের সম্মিলিত সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ ভাগ। এদের আমি হেজাবি মনোভাবাপন্ন মনে করি (বিএনপি+জামায়াত+হেফাজতে ইসলাম)। এদের মনের কোনায় কোনায় যেন এক টুকরো হেজাবি লুকিয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রবল সমর্থক, কিন্তু কিছু টাকা হলে বা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর প্রথম একটি মাদ্রাসা বা মসজিদ স্থাপনে আত্মনিয়োগ করেন। (অসমপ্ত লেখা )
এই লেখাটির ভূমিকা হিসাবে অধ্যাপক মুনতাসীর মানুনের একটি লেখার প্রথম অংশ যুক্ত করা হলো পাঠকদের ব্যাপারটি বুঝতে সহজ করার উদ্দেশ্যে ৷ (সৌজনে ১৪ ফ্রেবু ? ১৫ প্রকাশিত জনকণ্ঠের একটি লেখা )
- মুনতাসীর মামুন
১৯৭০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সবেচেয়ে শক্তিশালী দল ছিল এমন বলা যাবে না। কারণ, বামধারা তখনও প্রবল এবং মেধাবী, সৎ তরুণদের সমাবেশ ছিল বামধারায়। সংগঠনের দিক থেকে তাদের তুলনা ছিল তারাই। তবে, আওয়ামী লীগও সারা বাংলাদেশে সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল। এদিক থেকে অন্যান্য দলের তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ ঐ ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল একটি কারণে, সেটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কারণে। তিনি তাঁর চারপাশে এমন সব ব্যক্তিদের জড়ো করতে পেরেছিলনে যাঁরা ছিলেন সৎ, শিক্ষিত এবং আদর্শে অনুপ্রাণিত।
১৯৬৮-৬৯ সালে আওয়ামী লীগের ব্যাপ্তি বাড়তে লাগল এবং ১৯৭০ সালের মধ্যে পূর্ববঙ্গে প্রধান দলে পরিণত হলো আওয়ামী লীগ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বঙ্গবন্ধু তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন এবং ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি মিথ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট পড়েছিল প্রায় ২০ ভাগ। আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও মোট নিরঙ্কুশভাবে ভোট পায়নি। ছয় দফার ম্যান্ডেট চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ম্যান্ডেট পেয়েছিল। কিন্তু ২০-২৫ ভাগ মানুষ তা সমর্থন করেনি।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুকে একক জাতীয় নেতায় পরিণত করে। ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে তিনি ছাড়া বাঙালীর কোন নেতা ছিলেন না। যাঁরা তাঁকে ম্যান্ডেট দেননি, তাঁরাও আপাতত তাঁকে মেনে নিয়েছিলেন।
১৯৭২ সাল থেকেই পুরনো ম্যান্ডেট না দেয়া মানুষজন এবং নতুন অসন্তুষ্ট মানুষজন একত্রিত হয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা শুরু করে। ১৯৭২-৭৫ সালে অপপ্রচার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আচরণে দেশব্যাপী প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনকি যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থক তাঁরাও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় তিন দশক ঐ অসন্তুষ্টরা (১৯৭০, ১৯৭২-৭৫) ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা যে কৌশলটি নিয়েছিলেন তাতে সফল হয়েছিলেন। প্রথম, ঐসব অসন্তুষ্ট ও সুবিধাবাদী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নতুন একটি শ্রেণী তৈরি করা হয়েছিল। যারা সব সময় মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগকে একত্রে প্রতিপক্ষ ভাববে। দ্বিতীয়, একই সঙ্গে মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করা। তাদের কৌশল ছিল, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার না করে বিতর্কিত করে তোলা, পাকিস্তান মানসসম্পন্ন দল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলকে একই পাল্লায় ওজন করা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম সৃষ্টি ও তাতে ধীরে ধীরে এ কথা বিস্তার যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে আদৌ যদি কোন জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করতে হয় তা হলে বাঙালী নয় মুসলিম জাতীয়তাবাদই হবে সঠিক, যার ভিত্তি ১৯৪৭। ১৯৪৭ সালকে তারা ইতিহাসের মূলধারা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছিল।
এ ধারার মূল দল বিএনপি, পুরনো মুসলিম লীগ ও অন্যান্য অসন্তুষ্ট গ্রুপ ভায়োলেন্সের মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি ও বিকাশ। দ্বিতীয় দল জামায়াতে ইসলামী। এই নিষিদ্ধ দলটিকে পাকিস্তানের (অর্থাৎ নিজেদের) স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত করা হয়। প্রথমে দু’টি দল আলাদা মনে হলেও দেখা গেছে, মৌলিক প্রশ্নে তাদের দ্বিমত নেই এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বিএনপি থেকে জামায়াত বিস্তৃত হতে পেরেছে এ কারণে যে, তারা প্রায় ১০০টি জঙ্গী গ্রুপ সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের (যারা মুক্তিযুদ্ধের) বিরোধী ছিল, অর্থসাহায্যে বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পেরেছে। হতাশাগ্রস্ত, হাত-পা ভাঙ্গা কিছু লেফটিস্ট ও রাজনৈতিক টোকাই এবং বিভিন্ন চরের পীর ও কিছু হোন্ডা পার্টিও এদের সঙ্গে থাকে।
বিপরীতে আওয়ামী লীগ, যাদের রেকর্ড আছে সেক্যুলার দল হিসেবে শুরু থেকে বাঙালীদের কথা বলার এবং বাঙালীদের রাষ্ট্র গড়ায় নেতৃত্ব শুধু নয়, স্বল্পতম সময়ে বিশ্বের সেরা একটি সংবিধানও দিয়েছে। তাদের সমর্থক– বিভিন্ন মৃদু বামপন্থীও চাইলেও বিএনপি সাপোর্ট করতে পারে না, আওয়ামী লীগ অপছন্দ হলেও বিকল্প নেইÑ এ মনোভাবের দল, গ্রুপ ও ব্যক্তি। যাদের একত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ দলেও সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রচুর। বিশেষ করে যখন ক্ষমতায় থাকে। কিন্তু, বুদ্ধিজীবী মহল, শিল্প সংস্কৃতি মহলে তাদের সমর্থক একচেটিয়া।
এই দুটি ধারার দল ক্ষমতায় গেছে কয়েকবার। কিন্তু হিসাব কষে (হিসাবে ভুল থাকবে না এমন কথা আমি বলি না) দেখেছি, এ দেশে বিএনপি-জামায়াত মানসের লোকের সংখ্যা বেশি। আগে থেকেই ছিল। ১৯৭১ সালের পর থাকার কথা ছিল না। কিন্তু এখন ধরে নেয়া যেতে পারে তাদের সম্মিলিত সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ ভাগ। এদের আমি হেজাবি মনোভাবাপন্ন মনে করি (বিএনপি+জামায়াত+হেফাজতে ইসলাম)। এদের মনের কোনায় কোনায় যেন এক টুকরো হেজাবি লুকিয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রবল সমর্থক, কিন্তু কিছু টাকা হলে বা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর প্রথম একটি মাদ্রাসা বা মসজিদ স্থাপনে আত্মনিয়োগ করেন। (অসমপ্ত লেখা )
(
প্রথম
পর্ব )
৪৭ -এর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের
একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ছিল ৷ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয়রা কিন্তু
ব্রিটিশদের পরাজিত করে বিতাড়িত করতে পারেনি ৷ বরং ব্রিটিশরা যখন দেখলো ভারত শাসনে তাদের লাভ ও ক্ষতির পাল্লা
প্রায় সমান সমান হয়ে যাচ্ছে
, তখন তারা ভারতীয়দের
মধ্যে ব্রিটিশদের স্বার্থ
রক্ষাকারী একটি গোষ্ঠী
ধীরে ধীরে তৈরি করে প্রথমে ৷ পরে জণসাধারণের মধ্যে ও একটি ধর্মীয় বিভাজনের
ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সক্ষম হয় ৷ এরই পেক্ষাপটে ১৯০৫ - কংগ্রেস ভেঙ্গে মুসলিম
লীগের সৃষ্টি করা হয় এব হিন্দু ও মুসলিম সাধারণের
মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি
করা সম্পূর্ণ হওয়ার পরই ব্রিটিশরা
ক্ষমতা হস্তান্তরের কার্যক্রম
গ্রহন করেছে ৷ আর এরই পরিণামে
দেশে একটা মারাত্মক
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত
হয় এবং প্রায় ১০
লক্ষের ও অধিক মানুষকে হত্যা করা ছাড়াও কয়েক লক্ষ্য
লোককে তাদের জন্মভূমি ত্যাগ করে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুসারি
দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয় ৷ আর এই পর্যায়ে ব্রিটিশরা
তাদের সৃষ্ট যোগ্যতম
উত্তরাধীকারের কাছে দ্বীখন্ডিত
ভারতের দুই অংশের কাছে রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা হস্তান্তর করে ইন্ডিয়া কূইট করে ৷
একটি দেশের শাসকরা সব সময়ই তাদের দেশ শাসনের
সুবিধার্থে সমাজে তাদের অনূগত একটা শ্রেণীর সৃষ্টি
করে থাকে ৷ মোঘলরা যেমন করেছিল , ব্রিটিশদের শাসনের
ক্ষেত্রে ও এর ব্যতিক্রম হয় নি ৷ এই অনূগত শ্রেণীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সুযোগ সুবিধা ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা
সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় উপাধিতে
ভূষিত ও করে থাকে ৷ তাই একটি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে সব সময় একটি রাষ্ট্রীয় উপকারভোগী
শ্রেণী তৈরি হয়ে যায় ৷ আর কোনো কারণে দেশের শাসন ব্যবস্থায়
পরিবর্তন ঘটলে , সঙ্গে সঙ্গে ঐ উপকারভোগী
শ্রেণী ও নতুন শাসন ব্যবস্থার
সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে বা একোমেডেট করে নিতে তেমন অসুবিধা সম্মুখীন হতে হয় না ৷ তবে একটা দেশ যখন যুদ্ধের
বা কোনো বিপ্লবের
মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা
অর্জন করতে সক্ষম হয় বা দেশের শাসকদের
পরিবর্তন হয় , তখন এর ব্যত্ব্যয় ঘটে ৷ আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে
যদি কোনো দেশ , যেমন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে ,
তখন পুরাতন
শাসন ব্যবস্থার কোনো সহযোগিতাকারী এবং উপকারভোগীশ্রেণী ঠিকে থাকার কথা নয় , নতুন স্বাধীনতা প্রাপ্ত একটি
দেশে ৷ কিন্তু
বাংলাদেশের বেলায় এর ব্যতিক্রম হয়েছে ৷ অবশ্য এর দায় তখনকার স্বাধীনতার
পক্ষের নেতারাও কোনোভাবেই
সম্পূর্ণ এড়াঁতে পারবেন
না ! কারণ এখানে শ্রেণী
স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারটা
ও জড়িত ছিল ৷ মুক্তিযুদ্ধটাতো মুধ্যবিত্ত শ্রেণীর নেতা ও তাদের সমর্থন
কারিদের দ্বারা সংগঠিত
হয়েছিল ৷
৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা
অর্জন করলেও , চীন বা ভিয়েতনামের
মতো দেশের সকল মানুষ এই স্বাধীনতা অর্জনের
সঙ্গে একত্বতা প্রকাশ
করতে ব্যর্থ হয়েছিল
৷ এর কিছু ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক এবং অন্যান্য কিছু কারণ সহ এর একটা বিরাট
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বিদ্যমান
ছিল ৷ দ্বী-জাতীতত্ত্বের ভূল দর্শনের উপর নির্ভর করে ব্রিটিশরা ভারতকে ভাগ করে দিয়েছিল ৷ যা ৪৭ -এ বাঙ্গালীদের মনোজগতের
একটা বিরাট অংশ দখল করতে সক্ষম হয়েছিল সে ভূল দর্শন ৷ তাই দেশ ভাগের পর অনেকে মন্তব্য করেছিলেন , ভারতীয়রা নিজেদের উন্নয়নের জন্যে বা নিজেদের স্বাধীনতার জন্যে ও স্বাধীনতা অর্জন করে নি শুধু ধর্মীয় বিভাজনের জন্যেই দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে ৷ আর এর যন্ত্রনা পাক-ভারতবাসী আজীবন বয়ে চলতে হবে ৷ কথাটি মিথ্যা ছিল না ৷ তাই বোধহয় বাঙ্গালীরা চিরকাল এর রেশ বহন করে চলেছে ৷ আর বর্তমানে
ইহা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে ৷
যে শিক্ষা ব্যবস্থা এর পরির্তনে ভূমিকা রাখতে পারতো তা প্রতিষ্ঠা করতে একটি শ্রেণী সযত্নে সব সময়ই বাঁধাগ্রস্থ করে চলেছে ৷ অবশ্য এর চেষ্টা ও দু-এক বারের বেশি করা ও হয় নি ৷ বাঙ্গালীদের মনোজগতে বর্তমানে যেন একটা মিনি-পাকিস্তানের ৪৭-এর পূর্বের আদর্শ নতুন ভাবে স্থান করে নিচ্ছে ৷ এর সঙ্গে ধর্মীয় আবেগ তো আছেই ৷ জামাতের আর্থিক সহায়তায় তার প্রসার দিন দিন আরো বেড়েই চলেছে ৷ আজকাল সমাজে শিক্ষিত ও সুশীলশ্রেণী নামে যারা পরিচিত তারাই যেন জামাতের পক্ষে কাজ করে দেশকে একটা সাম্প্রদায়ীক মৌলবাদী রাষ্ট্র হিশেবে দেশকে পরিণত করতে চাচ্ছেন ৷ কিছু মিডিয়া সহ এই শ্রেণীর গোষ্ঠীভূক্ত একটি অংশ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরিতে নিয়ে যেতে অগ্রগামী ভূমিকা নিয়েছেন বলে সাধারণের কাছে আজকাল প্রতিয়মান হচ্ছে ৷
যে শিক্ষা ব্যবস্থা এর পরির্তনে ভূমিকা রাখতে পারতো তা প্রতিষ্ঠা করতে একটি শ্রেণী সযত্নে সব সময়ই বাঁধাগ্রস্থ করে চলেছে ৷ অবশ্য এর চেষ্টা ও দু-এক বারের বেশি করা ও হয় নি ৷ বাঙ্গালীদের মনোজগতে বর্তমানে যেন একটা মিনি-পাকিস্তানের ৪৭-এর পূর্বের আদর্শ নতুন ভাবে স্থান করে নিচ্ছে ৷ এর সঙ্গে ধর্মীয় আবেগ তো আছেই ৷ জামাতের আর্থিক সহায়তায় তার প্রসার দিন দিন আরো বেড়েই চলেছে ৷ আজকাল সমাজে শিক্ষিত ও সুশীলশ্রেণী নামে যারা পরিচিত তারাই যেন জামাতের পক্ষে কাজ করে দেশকে একটা সাম্প্রদায়ীক মৌলবাদী রাষ্ট্র হিশেবে দেশকে পরিণত করতে চাচ্ছেন ৷ কিছু মিডিয়া সহ এই শ্রেণীর গোষ্ঠীভূক্ত একটি অংশ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরিতে নিয়ে যেতে অগ্রগামী ভূমিকা নিয়েছেন বলে সাধারণের কাছে আজকাল প্রতিয়মান হচ্ছে ৷
৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির
পর্যায়ে শিক্ষিত এবং সাংস্কৃতিক ভাবে অগ্রগামী
ও উন্নত চিন্তা চেতনার অধিকারী
বুদ্ধিজীবী সহ রাজনীতিকেরা
ভারতের অংশে পড়ে যান ৷ এবং অন্য অংশ থেকে ও শিক্ষিত ও মার্জিতরা ভারতে ব্যাপকভাবে মাইগ্রেট
করেন ৷ তাই অন্য অংশ , অর্থাৎ
পূর্ববাংলা ও পশ্চিম
পাকিস্তানের অংশে কম শিক্ষিত
, কম অগ্রসর , গরীব ও দুর্বল সংস্কৃতির
ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পূর্ণ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবিন্দু এবং ব্রিটিশ আমলের উপকারভোগী সম্প্রদায়ের
হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার
দায়িত্ব পড়ে যায় ৷ এবং ক্ষেত্র বিশেষে পরবর্তিতে অনেকে এই সুযোগে রাষ্ট্র ক্ষমতাও দখল করতে সক্ষম হয় ৷ আর যারা ক্ষমতার
বাইরে থাকতে বাধ্য হয়ে ছিলেন তাদের
মধ্যে ও রাষ্ট্র
ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা
আরম্ভ হয়ে যায় ৷ এর ফলশ্রুতিতে প্রাসাদ
ষড়যন্ত্র আরম্ভ হয় ৷
পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত পাঞ্জাবীরা এ কাজে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে ৷ তাই ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেই তখন জাতির জনক উপাধীপ্রাপ্ত মুহাম্মদ আলী জিন্নাকে কৌশলে সরিয়ে দেয়া হয় ( অনেকের মতে বিশেষ ব্যবস্থায় হত্যা করে ) পরবর্তীতে তখনকার প্রধানমন্ত্রীকেও সরাসরি হত্যা করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত করা হয় ৷ আর দেশের পূর্ব অংশকে পশ্চিম অংশের উপনিবেশ করার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় অতি সূক্ষভাবে ৷ এর জন্যে বাংলায় একটি সুবিধা ভোগী শ্রেণীর সৃষ্টি করা হয় যারা এই পদক্ষেপকে মেনে নিতে দ্বিধা করবে না ৷ আর এর অংশ হিসেবে বাঙালীদের যোগ্য রাজনৈতিক নেতা যারা তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সফলভাবে এং ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহন করে স্বাধীনতা অর্জনে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন এবং মুসলিমলীগের ও সদস্য ছিলেন আর বাংলার তথা পূর্ববাংলার জণসাধারণের কাছে ও গ্রহনযোগ্য নেতা ছিলেন , তাদেরকে বাদ দিয়ে পূর্ব বাংলায় বসবাসরত অবাঙালীদের ক্ষমতায় বসানো ছাড়া ও বাঙালীদের মাতৃভাষাকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দূকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষিত হয় ৷ আর ৫২-তে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম বাঙালীদের শহীদ হওয়ার ঘটনা ঘটে ৷ তবে আন্দোলনর মাধ্যমে বাঙালীরা অবশ্যই বাঙলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষার অন্তর্ভূক্ত করতে সফল হয় ৷ পরবর্তীতে প্রগতিশীল রাজনীতিক নেতারা পূর্ব বাংলার অর্ধ-শিক্ষিত আলীগড়ী চোস্ত-পায়জামা পরিহিত মুসলিমলীগ নেতাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন ৷ তখন অনেক জেল জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করে এক পর্যায়ে তাঁরা আঞ্চলিক প্রাদেশিক সরকারে ক্ষমতার অংশীদার হয়েও ক্ষমতা গ্রহন করতে সমর্থ হলেও পাকিস্তানিদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যই ক্ষমতাচ্যূত করা হয় তাদেরকে ৷
পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত পাঞ্জাবীরা এ কাজে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে ৷ তাই ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেই তখন জাতির জনক উপাধীপ্রাপ্ত মুহাম্মদ আলী জিন্নাকে কৌশলে সরিয়ে দেয়া হয় ( অনেকের মতে বিশেষ ব্যবস্থায় হত্যা করে ) পরবর্তীতে তখনকার প্রধানমন্ত্রীকেও সরাসরি হত্যা করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত করা হয় ৷ আর দেশের পূর্ব অংশকে পশ্চিম অংশের উপনিবেশ করার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় অতি সূক্ষভাবে ৷ এর জন্যে বাংলায় একটি সুবিধা ভোগী শ্রেণীর সৃষ্টি করা হয় যারা এই পদক্ষেপকে মেনে নিতে দ্বিধা করবে না ৷ আর এর অংশ হিসেবে বাঙালীদের যোগ্য রাজনৈতিক নেতা যারা তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সফলভাবে এং ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহন করে স্বাধীনতা অর্জনে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন এবং মুসলিমলীগের ও সদস্য ছিলেন আর বাংলার তথা পূর্ববাংলার জণসাধারণের কাছে ও গ্রহনযোগ্য নেতা ছিলেন , তাদেরকে বাদ দিয়ে পূর্ব বাংলায় বসবাসরত অবাঙালীদের ক্ষমতায় বসানো ছাড়া ও বাঙালীদের মাতৃভাষাকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দূকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষিত হয় ৷ আর ৫২-তে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম বাঙালীদের শহীদ হওয়ার ঘটনা ঘটে ৷ তবে আন্দোলনর মাধ্যমে বাঙালীরা অবশ্যই বাঙলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষার অন্তর্ভূক্ত করতে সফল হয় ৷ পরবর্তীতে প্রগতিশীল রাজনীতিক নেতারা পূর্ব বাংলার অর্ধ-শিক্ষিত আলীগড়ী চোস্ত-পায়জামা পরিহিত মুসলিমলীগ নেতাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন ৷ তখন অনেক জেল জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করে এক পর্যায়ে তাঁরা আঞ্চলিক প্রাদেশিক সরকারে ক্ষমতার অংশীদার হয়েও ক্ষমতা গ্রহন করতে সমর্থ হলেও পাকিস্তানিদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যই ক্ষমতাচ্যূত করা হয় তাদেরকে ৷
অন্যদিকে পাকিস্তানের
অখন্ডতার নামে এক- ইউনিট
গঠনের নামে পূর্ববাংলার
নাম পরিবর্তন করে পূর্বপাকিস্তানে রূপান্তরিত
করা হয় ৷ আর এর পরবর্তী পর্যায়ে
সামরিক শক্তি সমস্ত দেশে সামরিক
আইন জারী করে দেশের শাসন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ
করে সর্বময় রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এবং প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় ঠিকে থাকে ৷ আর এই দশ বছরের শাসনকালে তারা পূর্ব
পাকিস্তানে ও ঔপনিবেশিক
শাসকদের মত একটা সুবিধাভোগী সাম্প্রদায়িক শ্রেণীর
সৃষ্টি করে এবং কিছু অবাঙ্গালী বিহারী
রিফিউজিদের পূর্ব বাংলায় পূনর্বাসিত
করে বাঙ্গালীদের একটি প্রতিপক্ষ সৃষ্টি
করে ৷ আর সমাজের
প্রত্যেকটা ফ্রণ্টেই বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের মধ্যে তাদের পক্ষের
একটা ফ্রন্ট ও খুলতে
সক্ষম হয় ৷ যার ফল এখন মুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী
দেশবাসী হাঁড়ে হাঁড়ে অনুভব করছে !
এই সময়ে
প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ
রাজনৈতিক দলে ও বিদেশনীতির প্রশ্নে
ও একটা বিভক্তির সৃষ্টি
হয়েছিল ৷ আমেরিকান
পন্থিদের ছেড়ে অপেক্ষাকৃত
বেশী প্রগতিশীলরা সমাজতন্ত্রীক
রাশিয়া পন্থি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক
দল গঠন করেন ৷ ঐ সময়ে পাকিস্তানি
শাসকরা ও চীন পন্থি একটি ছাত্র ও রাজনৈতিক
ফ্রন্টের সৃষ্টি করেছিল তাদের
নিজের স্বার্থে ৷ যারা বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন না করে পরোক্ষ ভাবে পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে ৷ আর স্বাধীন বাংলাদেশে
বর্তমানে এদের অস্থিত্ব এবং
উপস্থিতি দিন দিন বেড়েই চলেছে , তবে চীনাদের
স্বার্থে নয় পকিস্তান এবং ধর্মীয় মৌলবাদীদের
স্বার্থে ৷ বিশেষ করে জামাত ও শিবির তাদের নিজেদের
আর্থিক সুযোগ সুবিধা
প্রসরিত করার জন্যে কোনো আর্দশিক কারণ ছাড়াই তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপরিতে
কাজ করে যাচ্ছে ৷
তখনকার পাকিস্তানের
কালাকানুন ও সামরিক
শাসনের অবসান হয় সামরিক আইন জারী করে ১০ বছর দেশ শাসনের পর ৷ আর তা সম্ভব হয়েছিল সমস্ত পাকিস্তানে সংঘটিত এক গণ-
আন্দোলনের ফলে ৷ তবে তখন আর একটি সামরিক শাসনের
সূত্রপাত হয় ৷ এই সময়ে বঙ্গবুন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান যিনি
তখন ছয় দফা আন্দোলনের প্রবক্তা
এবং আওয়ামি লীগের প্রধান এবং বাঙালীদের নেতা ছিলেন তাকে গনআন্দোলনের চাপে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা
রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা থেকে মুক্তি
দিতে হয় ৷ দেশে একটি নির্বাচন দিতে ও নতুন সামরিক সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করা হয় ৷ পূর্বপাকিস্তানে শেখ মুজিব ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ্য আসন পেয়ে জয়ী হন ৷ কিন্তু জনগণ তাদের রাজনৈতিক
অধিকার ফিরে পায়নি
৷ কারণ পাকিস্তানের
অখন্ডতা রক্ষা করার শর্তে এ নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হয়ে ছিল সরাসরি
সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা পকিস্তান আই এস আই এর তত্ত্বাবধানে ৷ ঐ সময়ে গোয়েন্দা রিপোর্টে
পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামি
লীগের নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা নেই বলে সামরিক
জেনারেলদের জানিয়েছিল গোয়েন্দারা ৷ তাই সামরিক
শাসকরা সাহস করে সমগ্র পাকিস্তানে
একটা সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা
করেছিল ৷ কিন্তু নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ্য আসন লাভ করলে পশ্চিম
পাকিস্তানের সংখ্যালগিষ্ঠের নেতা পূর্ব পকিস্তানে
এসে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগদান
করতে অস্বীকার করেন ৷ তখন এইঅজুহাতে সামরিক শাসকগণ দেশে
আবার জরুরী আইন জারী করেন ৷ পূর্ব পাকিস্তানে তখন বাপক গণআন্দোলনের
সৃষ্টি হয় ৷ আবার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার
পর পাকিস্থানের সামরিক
বাহিনী পূর্ব পাকিস্থানে
সামরিক আইন জারী করে গণহত্যা
আরম্ভ করে ৷ এরই প্রেক্ষাপটে এবং বিভিন্ন আলোচনা ও আপসমূলক কার্যক্রম ব্যর্থ করে পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা পূর্বপাকিস্তানে ব্যাপক গণহত্যা আরম্ভ করে ৷ তখন দেশের
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭১-এর ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের
জণগনকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার
ঘোষণা করেন ৷ এবং তখন থেকে বংলাদেশে এক মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় ৷ বঙ্গবুন্ধু তাঁর দলের অন্যসব নেতাদের
পালানোর সুযোগ করে দেন এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয়
নির্দেশ প্রদান করেন ৷ পরে নেতারা যাতে নিরাপদে ঢাকার বাইরে চলে যেতে সমর্থ হন তার জন্যে নিজে পাকিস্তানের
হনাদার বাহিনীর কাছে ধরা দেন ৷ প্রথম পর্যায়ে
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতারা আত্মগোপন করেন ৷ পরে প্রতিবেশী দেশ সহ নিরাপদ
অবস্থানে গমন করে ১৭-এপ্রিল
৭১ -এ একটি স্বাধীন ও প্রবাসী সরকার গঠন করেন ৷ এই অনুষ্ঠানটি কুষ্ঠিয়া জেলার এক আম্রকাননে অনেক বিদেশী সংবাদিকদের উপস্থিতিতে অনুষ্টিত হয় ৷ আর ভারতের সহায়তায় এক সামগ্রিক মুক্তিযুদ্ধ
অত্যন্ত সফল ভাবে পরিচালনা করে ৯-মাসের রক্তক্ষয়ী
যুদ্ধে পাকিস্তানি আক্রমনকারী
হানাদার বাহিনী এবং তাদের বাংলাদেশী
সহযোগীদের পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করা হয় ৷ ফলে পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয়বাহিনী
ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে ৷ আর পূর্ব পাকিস্তানের
বিলুপ্তি ঘটে ৭১-
এর ১৬-ডিসেম্বরে ৷ এরই প্রেক্ষিতে স্বাধীন এবং সার্বোভৌম বাঙলাদেশের
জন্ম হয় ৷ যে স্বাধীনতার
ঘোষণা ৭১-এর ২৬-এ মার্চের রাত্রে দেয়া হয়েছিলো তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ হয় সার্বোভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ৷
কিন্তু পাকিস্তানের
এদেশীয় সহযোগীরা বিশেষ করে রাজাকার
, আলবদর , আলসামস্ সহ অন্যান্যরা তখন আত্মগোপনে
চলে যায় ৷ আর তাদের নেতারা
দেশ ত্যাগ করে পাকিস্তান , মধ্যপ্রাচ্যে এবং গ্রেট-ব্রিটেনে রাজনৈতিক
আশ্রয় লাভ করে ৷ তারা সুকৌশলে
দেশের বাইরে গিয়ে এবং
গোপনে দেশের ভিতরে থেকে ও সদ্য
স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশের
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা প্রচারণা আরম্ভ করে ৷ আর এ কাজে
নতুন ভাবে পাকিস্তানি গোয়েন্দাবাহিনী তাদেরকে
সহযোগীতা আরম্ভ করে ৷ পাকিস্তানিরা তাদেরকে আর্থিক সহায়তা ছাড়াও অন্যান্য
লজিষ্টিক সহায়তা প্রদান করতে থাকে ৷ বর্তমানে
তা আরো বৃদ্ধি
করা হয়েছে ৷ প্রথমে বাংলাদেশের
ধর্মনিরপেক্ষতাকে টার্গেট সরকারের
বিরুদ্ধে প্রচার আরম্ভ করে দেশের ধর্মপ্রান
মুসলমানদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা
করে ৷ দেশের বিভিন্ন স্থানের কম উন্নত এবং কম শিক্ষিত
অঞ্চলকে বেঁচে নিয়ে কৌওমী মাদ্রাসা নাম দিয়ে শুধু আরবী ও ধর্মীয় শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান তৈরি করা আরম্ভ করে ৷ পরবর্তিতে
সমাজতন্ত্রের বিপক্ষেও প্রচার
আরম্ভ করে শিক্ষিত ও
সরল ধর্মপ্রান মুসলমানদের
দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ৷ আর কাজে পাকিস্তান
সহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের
আর্থিক সহযোগীতা গ্রহন করা হয় ৷ সৌদীবলয়ের
কয়েকটি দেশ ওহাবী ধারার সুন্নি
ইসলামী গোষ্ঠী এসব মিথ্যা প্রপগান্ডার প্রচার ও প্রসারের জন্যে আর্থিক সাহায্যের
পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি করে চলেছে ৷ তাদের এই কার্যক্রম গ্রহনের
মাত্র ৩- বছরেই তারা প্রথম সফলতা অর্জন করে ফেলে ৷ কিছু পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী সামরিকবাহিনীর সদস্য এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের ব্যবহার করে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান সহ তাঁর পরিবারের
দেশে অবস্থানরত সবাইকে
হত্যা করে ৷ আর সঙ্গে
তার নিকট আত্মিয়দেরকেও
হত্যা করা হয় ৷
আর এর তিন মাসের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের
প্রধান চার নেতাকে
জেলে ঢুকে , যাদেরকে
আগেই জেলে রাখা হয়েছিল
, তাদেরকে হত্যা করে প্রতি বিপ্লবের
কার্যক্রম যা ৭২- এর
প্রথম থেকেই গ্রহন করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ করা হয় ৷
এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে সামরিক শাসনের আওতায় দেশে স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করা হয় ৷ এর অন্যতম হলো মক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে যারা মারাত্মক অপরাধে জড়িত ছিল এবং যাদের বিচার আরম্ভ হয়েছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয় ৷ আর বিচারে যাদের শাস্তি ও হয়েছিল তাদেরকে ও জেল থেকে বের করা আনা হয় এবং যে সব অপরাধীরা আত্মগোপনে ছিল তাদেরকে আত্মগোপন করা অবস্থা থেকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার সুযোগ করে দেয়া হয় ৷ যাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়ে ছিল তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয় ৷ আবার তাদেরকে ধর্মভিত্তিক এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে সুযোগ করে দেয়া হয় ৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সুষ্টি করে দেয়া হয় ৷ আর এর নেপথ্যে অবশ্যই পরাজিত পাকিস্তানের আর্থিক সহযোগীতা সহ সব ধরনের সহযোগীতা প্রত্যক্ষ এবং ক্ষেত্র বিশেষে পরোক্ষ্য ভাবে ছিল ৷ বর্তমানে এর পরিধি বেড়েই চলছে ৷ এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে শতগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বিভিন্ন এনজিওদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কার্যক্রমের ৷ বর্তমানে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইসলামি ব্যাংক সহ বিভিন্ন ইসলামিক এন জি ও আর সৌদী বলয়ের কিছু দেশের আর্থিক সহায়তা ৷ আর তাদের প্রচারের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের একাংশ সহ বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক , মেধাবী ছাত্র , সংবাদিক , সাহিত্যিক সহ কম বেশি সকল পেশার এবং সর্বস্তরের কিছু মানুষকে ৷ এর এদের বেশিরভাগকে স্থায়ীভাবে মাসিক আর্থিক অনুদান ও নাকি দেয়া হচ্ছে ? এই অনুদানের পরিমান যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি চাকুরির বেতনের টাকা থেকে অনেক ক্ষেত্রে নাকি বেশি !
এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে সামরিক শাসনের আওতায় দেশে স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করা হয় ৷ এর অন্যতম হলো মক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে যারা মারাত্মক অপরাধে জড়িত ছিল এবং যাদের বিচার আরম্ভ হয়েছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয় ৷ আর বিচারে যাদের শাস্তি ও হয়েছিল তাদেরকে ও জেল থেকে বের করা আনা হয় এবং যে সব অপরাধীরা আত্মগোপনে ছিল তাদেরকে আত্মগোপন করা অবস্থা থেকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার সুযোগ করে দেয়া হয় ৷ যাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়ে ছিল তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয় ৷ আবার তাদেরকে ধর্মভিত্তিক এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে সুযোগ করে দেয়া হয় ৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সুষ্টি করে দেয়া হয় ৷ আর এর নেপথ্যে অবশ্যই পরাজিত পাকিস্তানের আর্থিক সহযোগীতা সহ সব ধরনের সহযোগীতা প্রত্যক্ষ এবং ক্ষেত্র বিশেষে পরোক্ষ্য ভাবে ছিল ৷ বর্তমানে এর পরিধি বেড়েই চলছে ৷ এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে শতগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বিভিন্ন এনজিওদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কার্যক্রমের ৷ বর্তমানে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইসলামি ব্যাংক সহ বিভিন্ন ইসলামিক এন জি ও আর সৌদী বলয়ের কিছু দেশের আর্থিক সহায়তা ৷ আর তাদের প্রচারের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের একাংশ সহ বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক , মেধাবী ছাত্র , সংবাদিক , সাহিত্যিক সহ কম বেশি সকল পেশার এবং সর্বস্তরের কিছু মানুষকে ৷ এর এদের বেশিরভাগকে স্থায়ীভাবে মাসিক আর্থিক অনুদান ও নাকি দেয়া হচ্ছে ? এই অনুদানের পরিমান যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি চাকুরির বেতনের টাকা থেকে অনেক ক্ষেত্রে নাকি বেশি !
৭৫-এর পরবর্তিকালে
দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হত্যাকারিরা
এবং এর বেনিফিসিয়ারিরা ক্ষমতায়
বসেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী
শক্তির পক্ষে কাজ আরম্ভ করে ৷ তখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ
সব পদে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীদের বসানো হয় ৷ তাদেরকে সমাজের সর্বস্তরে
ভালভাবেই পুনঃ প্রতিষ্ঠার
সুযোগ সৃষ্টির কাজ সম্পূর্ণ করা হয় ৷ দেশের সাধারণ
জনগণের বিশ্বাস অর্জনের
জন্য চীনা বামপন্থি
কিছু নেতা সহ দলছুট কিছু রজনীতিক ব্যক্তিদের
তাদের দলের অন্তর্ভূক্ত
করা হয় ৷ অন্যদিকে
কিছু বুদ্ধিজীবীকে ও উপদেষ্টা করে মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা
করা হয় ৷ আর এ কাজে সেনা শাসক জেনারল
জিয়া ও তার অনুগতরা অনেকটাই
সফল হয়েছিলেন ৷ এই ভাবে প্রায় চার বছর চলার পর মুক্তিযুদ্ধের
বিরোধীরা সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই
পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভে সক্ষম হয়ে যায় ৷ এই পর্যায়ে সেনাবাহিনীতে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী
সেনাদের মধ্যে কিছু বিদ্রোহী ভাব দেখা দিতে থাকে
৷
কয়েকবার নাকি জেনারেল
জিয়াকে হত্যা চেষ্টাও
করা হয়েছিল ৷ এই পরিস্থিতির
মোকাবেলা করতে জিয়া কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের চিন্তা করেন ৷ প্রথম পর্যায়ে
মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য যারা তাকে সহজভাবে গ্রহন করতে পারেনি অন্তর থেকে তাদের
এক তালিকা প্রস্থুত
করে তাদেরকে বিভিন্ন
অজুহাতে হত্যা করেন , নাম মাত্র সামরিক
বাহিনীর প্রহসন মূলক বিচারের
নামে ৷ যেমন কর্ণেল
তাহেরকে হত্যা করা হয়েছিল এক অবৈধ ও প্রহসনমূলক বিচারে
৷
কিন্ত এতে করেও যখন তেমন সুফল আসলো না
তখন অবশিষ্ট মুক্তযোদ্ধা
সেনাসদস্য সহ মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের অরাজনৈতিক কিছু লোকের সমর্থন আদায়ের
লক্ষ্যে পরের পর্যায়ে পাকিস্তানপন্থি প্রধানমন্ত্রী শাহ্ আজিজ সহ ভাইস-প্রেসিডেন্ট জাষ্টিস
সাত্তার , রাজাকার মন্ত্রী
আব্দুল আলিম সহ কিছু মন্ত্রীসভার
সদস্যকে বাদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের
সঙ্গে পরামর্শ করে একটা নতুন মন্ত্রীসভা গঠনের পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রী বদরুদদ্দোজা চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে চট্রগ্রাম যান এবং রাত্রে
চট্রগ্রাম সার্কিটহাউসে রাত্রি
যাপন করতে ছিলেন ৷ তখন একদল সেনাসদস্য
গভীর রাতে তাকে হত্যা করে ৷ আর যাদেরকে মন্ত্রীসভা
থেকে বাদ দেয়া হচ্ছিল তারা এবং
তাদের পক্ষের উপকারভোগীরা নাকি তাদের পূর্ব নির্ধারিত সিন্ধান্তকে
একটু আগেই বাস্তবায়িত
করতে হয়েছিল ৷ কারণ পরবর্তি পর্যায়ে নাকি তারা জেনারল জিয়াকে তাদের পরিকল্পিত কাজ শেষ হওয়া মাত্রই জিয়াকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল ৷ তবে পরিস্থিতির কারণে এ কাজটি তাদের কিছু আগেই করতে হয়েছে ৷ আর একাজে তারা বিদেশী শক্তি সহ পাকিস্তান আই এস আই এর সহযোগীতাও গ্রহন করতে হয়ে ছিল নিখুঁত পরিকল্পনার তৈরি করে কাজটি সহজেই শেষ করতে ৷ আর জেনারেল এরশাদের
সহযোগীতায় এই কাজটি করে অন্য পক্ষকে ফাসাতে
ও বেগ পেতে হয় নাই ৷ আর এঅজুহাতে তখন পর্যন্ত সামরিকবাহিনীতে বেঁচে থাকা সকল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রগতিশীল সামরিক কর্মকর্তাবিন্দকে প্রহসণমূলক বিচারের নামে হত্যা করা হয় ৷
পরবর্তিকলে বিভিন্ন
মাধ্যম থেকে জানা যায় যে উচ্চ-বিলাসী
জেনারেল জিয়াকে যারা ক্ষমতায় বসানোর
নেপথ্যে ছিলেন তাদের একটা নির্দিষ্ট
এজেন্ডা ছিলো ৷ জেনারেল
জিয়া তাদের প্রথম কাজগুলো সুষ্টভাবে
সম্পূর্ণ করে তাদেরকে
সমাজে ও রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠার কাজ সফলভাবে
সমাপ্ত করার পর তাদের
দ্বিতীয়
কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নির্মূল
করে মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা ধ্বংস করে ধর্মভিত্তিক একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র
গঠনের পদক্ষেপ গ্রহন করা ৷ কিন্তু
তারা যখন দেখলো উচ্চাবিলাসী জিয়া তার নিজের ক্ষমতায়
ঠিকে থাকার স্বার্থে
তাদের অলরেডি অর্জিত
প্রথম কাজগুলোতে ও হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছেন , তখন তারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে
দিতে বাধ্য হন ৷ কারণ এরই মধ্যে তাদের স্বার্থরক্ষাকারী আরেক উচ্চাবিলাসী জেনারেল
এরশাদের সন্ধান পেয়ে যান তারা ৷ জেনারেল
হুসেইন মো : এরশাদ যিনি
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে
ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে
অংশ নিয়েছিলেন ৷ তার আর এক পরিচয় দিয়েছিলেন
এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর যাকে
সেনাবাহিনী থেকে এরশাদ অবসর দিয়ে ব্রিটেনের হাইকমিশন
অপিসে চাকুরি দিয়েছিলেন ৷ তিনি পাক-ভারত ও মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখেছেন ৷ ঐ বইতে তিনি এরশাদকে
ভারতের স্পাই হিসেবে
অবিহিত করে লিখেছেন
যে এরশাদ আবার টাকার বিনিময়ে
ভারতের তথ্য ও নাকি পাকিস্তানিদের
সরবরাহ করতেন ৷ ঐ সময়ে আমেরিকায় বসবাসরত
এক বাঙ্গালী জেনারেল বাচ্চু করিম এই বই এ বর্ণিত তথ্যকে
সত্য বলে এক সাক্ষাতকারে অভিমত দিয়েছিলেন বলে জানা যায় ৷ ৭২ -এ এরশাদ পাকিস্তান
থেকে দেশে ফিরলে বঙ্গবন্ধু তাকে সেনাবাহিনী থেকে অপসারন করতে চেয়েছিলেন ৷ এরশাদ তখন মুক্তিযোদ্ধা
এবং ৭৫-এর পটপরিবর্তের এক পর্যায়ে
নিহত খালেদ মোশারফের
সহায়তায় সেনাবাহিনীতে টিকতে সক্ষম হন ৷ তবে বঙ্গবন্ধুসরকার তাকে সামরিক ট্রেনিং
এর নামে তাকে ভারতে পাঠিয়ে
দিয়েছিলেন ৷ ৭৫ -এর
পটপরিবর্তনরে সঙ্গে সঙ্গে এরশাদ জেনারেল
জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ
করে দেশে ফিরলে তাকে প্রথমে
সেনাবাহিনীতে ডেপুটি -চীপ এবং পরে চট্রগ্রাম
অঞ্চলের জিওসি এবং জিয়া প্রেসিডেন্ট
হওয়ার পর এরশাদকে
সেনাপ্রধান করা হয় ৷ জেনারেল এরশাদ পশ্চিম বঙ্গ থেকে পূর্ব বঙ্গে মাইগ্রেট
করেছিলন যেমন শাহ্ আজিজ এবং জাষ্টিস সাত্তার
সহ আরো অনেকেই
এসেছিলেন ৷ সেই সুবাদে তাদের মধ্যে একটা যোগসূত্র ছিল ৷
জেনারেল জিয়ার মত জেনারেল এরশাদ ও উচ্চবিলাসী
হয়ে উঠেছিলেন ৷ ৮১-এর ৩০ -মে
জেনারেল জিয়া বি এন পি'র এক অাভ্যন্তরিণ ঝগড়ার মিমাংসা করতে চট্রগ্রাম গমন করেন ৷
তখন
চট্রগ্রামে মুসলিম লীগ থেকে বিএনপি
তে আগত বারিষ্টার সুলতান
গ্রুপ ও রাজনীতির
বাহির থেকে আগত জামাল উদ্দিন
গ্রুপের মধ্যে একটি ঝগড়ার সুষ্টি
হয়ে ছিল ৷ ঐ দিন জিয়ার সঙ্গে মন্ত্রী বদরুদদ্দোজা চৌধুরী ও আর এক মন্ত্রী ছিলেন ৷ এর পূর্বে
মুক্তিযোদ্ধা ও চট্রগ্রাম
অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল মুন্জুরের
উৎসাহে চট্রগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের লোকেরা দেশের মন্ত্রীসভা থেকে রাজাকার ও আলবদরদের বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের নেতাদের দিয়ে এক সরকার গঠনের দাবীতে
এক সফল হরতাল করে ছিলেন ৷ তাই উচ্চবিলাসী
জিয়া বুঝতে সক্ষম হন যে তার জনপ্রিয়তায়
দস নামতে আরম্ভ হয়েছে ৷ তাই তিনি
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের
সমর্থন আদায়ে তাদের কিছু দাবী দাবা মেনে
নেয়ার এক সিন্ধান্ত নিয়ে ছিলেন অত্যান্ত
গোপনে এবং চট্রগ্রাম
থেকে মন্ত্রীসভা পরিবর্তনের
ঘোষণা করার গোপন সিন্ধান্ত নাকি ছিল জেনারেল জিয়ার ৷ এরশাদ
নাকি তার গোয়েন্দা সূত্রে
তা জানতে পেরেই ঢ়াকায় অবস্থান
রত প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ ও ভাইস প্রেসিডেন্ট
সাত্তার কে অবগত করেন ৷ তখন তাদের মধ্যে কি পরামর্শ হয়েছিল
জানা যায়নি ৷ তবে ঐ রাত্রেই শাহ আজিজ ভারত গমনের উদ্দেশ্যে
কুষ্ঠিয়ায় গমন করে ছিলেন এবং ভাইস প্রেসিডেণ্ট
সাত্তার হলিফেমেলি হসপিটেল
ভর্তি হয়ে ছিলেন ৷ এ দিকে ঐ দিন ভোররাতে
চট্রগ্রাম সার্কিটহাউসে প্রেসিডেণ্ট
জিয়াকে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যরা হত্যা করে লাশ ফেলে যায় কোনো তেমন প্রতিরোধ ছাড়াই ৷ পরে জিওসি মেজর জেনারল মন্জু জিয়া হত্যাকে
ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের লোকদেরকে সংঘঠিত
করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটা সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ
চেষ্টা করেছিলেন ৷ কিন্তু সেনাপ্রধান
এরশাদের কুট কৌশলের
কাছে পরাজিত হন তিনি এবং এরশাদের
নিযুক্তকরা এক সেনা সদস্য চট্রগ্রাম
সেনাসদর দপ্তরের রাস্তায়
, সেনাদপ্তরে প্রবেশ করার পূর্বেই তাকে একটা পিকআপ গাড়ির মধ্যেই গুলি করে হত্যা করা হয় ৷ তখনও অবশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধা যাদের কিছু তখন ও সেনা বাহিনীতে
কার্যরত ছিল , তাদেরকে
নির্মূল করার রাস্তা আবিষ্কার হয়ে যায় ৷ পরে এরশাদ সামরিক বিচারের
মাধ্যমে দোষী ও নির্দুষ সবাইকে
এক পাল্লায় করে বিচারের নামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
সকল সেনা সদস্যকে
হত্যা সহ বিভিন্ন
মেয়াদে শাস্থির ব্যবস্থা
করেন ৷ জেনারেল এরশাদ মুক্তিযুদ্ধা ক্লিনজিং অপারেশন
সমাপ্ত করে সুখে এবং শান্তিতে
দশ বছর দেশ শাসন করেন ৷ তখন তিনি পাকিস্তান
পন্থিদের পূর্ণ মাত্রায়
সমাজের সকল স্তরে পুর্নবাসনের কাজ সমাধা করেন যা
জেনরেল জিয়া সমাপ্ত
করে যেতে পারেন নি আগে ৷
এরশাদের স্বৈরশাসনের দশ বছরের পর গণঅভ্যূথ্থান না হলে হয়তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণার
পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে
ইসলামিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষণার
কাজ ও সমাপ্ত
করে দেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাম্প্রদায়িক
রাষ্ট্র পরিণত করতে সক্ষম ও হতেন ৷ কিন্তু
তিনি সে সুযোগ পান নি ৷ গণ-আন্দোলনের
ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে
সেনাবাহিনী ও তার নির্দেশ পালনে অশ্বীকার করলে তিনি ক্ষমতা
ছাড়তে বাধ্য হন ৷
( প্রথম পর্ব এখানেই সমাপ্ত
করা হলো )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন