নব-বর্ষে সমকালীন চিন্তা -ভাবনা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের দায়িত্ব ও কর্তব্য :

   নব বর্ষে সমকালীন  কিছু  চিন্তা  ভাবনা  

              অনেক  সময়  একটা  খারাপ  সরকারকে  ও  দেশের  জণগনকে  সহ্য  করতে  হয় , যদি  দেখা  যায়  সে  সরকার  দেশের  মূল  মন্ত্রের  অস্থিত্য    এবং  মূল  ধারা  রক্ষা  করতে  সতেষ্ট  এবং  দেশকে  মধ্যযুগীয়  ধর্মীয়  ও  তালেবানী  শাসনের  পদযাত্রা  থেকে  দেশকে  রক্ষা  করতে  চাচ্ছে  ৷

          বাঙালী  জাতীর  মধ্যে  জেনেটিক্যালি  কোনো  গন্ডোগোল  আছে  কী  ? অন্ততঃ  সুশীল  সমাজের  বুদ্ধিজীবীদের  আলোচনা  এবং  বক্তব্য  শুনলে  তাই  মনে   হওয়া  স্বাভাবিক  নয়  কী  ?  এই  সুশীল  সমাজ বর্তমানে   দেশে  মোটামুটি     অবাধ  ও  স্বাধীন  মতামত  প্রকাশের  সুযোগে  পেয়ে  দেশ  ও  জাতীর  চিন্তা ও  চেতণাকে  দ্বিখন্ডিত  করে  ফেলেছেন  , তবে   অবশ্যই  তাদের  নিজেদের  স্বার্থে  !

          তবে  সব  সময়  সব  দেশেই  , এমনকি  সব  সমাজেই  বোধহয়  কিছু  সুশীল  সমাজ  নামধারী  ব্যক্তিবর্গ  থাকেন  , যারা সমাজের  ক্রান্তিলগ্নে   নানা  তাত্ত্বিক  বুলি  আওড়িয়ে  দেশ  ও  জাতিকে  বিভক্ত  করে  জাতীয়তাবাদী  ও  ধর্মীয়  ফ্যাসিবাদের  দিকে  দেশকে  ঠেলে  দিতে  দ্বিধাবোধ  করেন না।  পূর্বে  গণতন্ত্র  ও  সমাজতন্ত্র  এবং  জাতীয়তার  নামে  বিভিন্ন  দেশে  ফ্যাসিবাদের  প্রতিষ্ঠা  হতে  দেখা  গেছে  , বর্তমানে  ধর্মীয়  সাম্প্রদায়িকতা  ও  মৌলবাদী   মতবাদ  ও  এর  সঙ্গে  যুক্ত  হয়েছে  ৷

          এক  সময়  ইউরোপে  একদল  শীর্ষ  বুদ্ধিজীবী  নিজেদের  শ্রেনী  এবং  আত্মস্বার্থে  এবং  ক্ষেত্রবিশেষে  সমাজে তাদের  আত্মম্ভরিতা প্রকাশ বর্বর  ফ্যাসিবাদের  উথ্থানের  পথ  সহজ  করে  দিয়েছিলো  ৷  গত  শতকের  প্রথম  দিকে  জার্মানী ও ইটালিতে  গণতান্ত্রিক  নির্বাচনের  মাধ্যমে জণগণের  ভোটের  রায়েই  ফ্যাসিষ্ট  হিটলার  ও মুসেলিনির  রাষ্ট্র  ক্ষমতা  দখল  করতে  সক্ষম  হয়েছিলো  ৷  এর  পরের  ইতিহাস  সবার  জানা  আছে  । এর  পরিনিতিতে  যা  হয়েছিল  তার  জন্যে  এখনও  অনেক  দেশ  ও  জাতি তার  ফল ভোগ করে  চলতে  হচ্ছে ৷ 

         তবে  বাংলাদেশের  বর্তমান  প্রেক্ষাপট  একটু  আলাদা  ৷  সদ্য  স্বাধীনতা  অর্জনকারী  একটা  ধর্মনিরপেক্ষ  দেশকে  একটা  প্রতিক্রিয়াশীল  শক্তি এবং  দেশের  স্বাধীনতা  বিরোধী  পক্ষ  অতি  সহজেই  প্রতিবিপ্লবের  মাধ্যমে  দেশের  ভবিষ্যত  প্রজন্মকে  বিপথগামী  করতে  সক্ষম  হয়ে  যায়  ৷  সে  ধারাকে  গত  ১৩ / ১৪  বছরে  কিছুটা  হলে ও স্বাধীনতা পক্ষের  একটা  শক্তির  উথ্থানে  বা  রাষ্ট্রক্ষমতায়  অধিষ্টিত হওয়ায় এর  কিছু  পরিবর্তনের  ধারা  পূনরায়  সূচিত   হয়েছিল  ৷  সে  ধারাকে  আবার  বিপথগামী  করতে  অতি  সূক্ষ্মভাবে  সুশীল  সমাজের  বুদ্ধিজীবী  নামধারী  একটি  অংশ  অত্যন্ত  সতর্কভাবে  , স্বাধীন  মতামত  প্রকাশের  সুযোগকে  কাজে  লাগিয়ে  , দেশে  গণতন্ত্রের  ধারা  বিপন্নের   কথা  বলে  দেশের  জণগণ  ও  নতুন  প্রজন্মকে আবার  পুরাতন  ধারায়  ফিরিয়ে  নিতে  তাদের  সর্বশক্তি  নিয়োগ  করেছেন  ৷  আর  যুদ্ধাপরাধী  ও  মৌলবাদী   ধর্মীয়  গোষ্টীকে  তাদের  প্রধান  সহায়ক  শক্তি  হিসবে  ব্যবহার  করে ,  দেশের  বর্তমান  নির্বাচনী  সংকটকে  কাজে  লাগিয়ে  তাদের  উদ্দেশ্য  সফল  করতে , তাদের চেষ্টার  কোনো  ত্রুটি  দেখা  যাচ্ছে  না  ৷  
      অন্যদিকে    দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো ১৯৯৬ সালে  এবং  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে নতুন আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল সরকার হিসেবে তা যে খুব শক্তিশালী ছিল তা নয়, বরং শেখ হাসিনাকে জোড়াতালি দিয়েই সে সময় সরকার গঠন করতে হয়েছিল। তখনও শেখ হাসিনার সরকারকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল নানামুখী বিরোধ ও ষড়যন্ত্রের। কিন্তু দেখা গেলো, দলের ভেতর তখন একে একে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কিছু চিহ্নিত ও বিতর্কিত ব্যক্তি; যারা কেবল নিজের স্বার্থটাই বোঝে, দল বোঝে না, সমষ্টি বোঝে না, জাতি এবং দেশ তো দূরের কথা। নিজেদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে তারা দলের আশ্রয় নেয় কেবল, কিন্তু দলকে ব্যবহার করাটাই হয় তাদের মূল কাজ ৷
                   
           যে  সেক্যুলার  ও  সমাজতান্ত্রিক  রাষ্ট্র  গঠনের  লক্ষ্য  নিয়ে  স্বাধীন  বাংলাদেশের  জন্ম  হয়েছিল ,  সেই  লক্ষ্যটি  এখন সম্পূর্ণরূপে  হারিয়ে  গেছে  ৷  যদিও  দেশটির  নামের  সঙ্গে  এখনও  গণপ্রজাতন্ত্র  কথাটি  যুক্ত  আছে  ৷
         
         বর্তমানে  দেশটিতে  প্রতিষ্ঠিত  হয়েছে  চরিত্রহীন  পেটিবুর্জোতন্ত্র ;  আর সন্ত্রাস  ও  দূর্নীতিতন্ত্র  এখন  বাংলাদেশের  মূলভিত্তি এবং  মূলনীতি ৷  বাংলাদেশের  স্বাধীনতার  শ্রেণী  চরিত্র  এখন  নব্য  ধনী  শ্রেণীর  কর্তৃত্বপরায়ণ  চরিত্র  ৷  উন্নত  বিশ্বের  বুর্জোয়া  রাষ্ট্রে  যে  আইনের  শাসন  থাকে  তা  কিন্তু  বাংলাদেশে  প্রায়  অনুপস্থিত  অথবা  অস্বীকৃত  ৷  এমন  কি  একাত্তরের  যুদ্ধাপরাধীদের  বিচার  ও  দণ্ডদান  ও  তাই  বার  বার  বাধাগ্রস্ত  হচ্ছে  ৷  দেশে  এখন  আইনকেও  বিভিন্ন  শ্রেণীর  স্বার্থে  তার  যথাযথ  পথে  চলতে ও বাধাগ্রস্থ  করা  হয়  বা  বাধা  দেয়া  হয়  ৷

         তাই  এ  ব্যাপারে  সংশ্লিষ্টরা  অতিরিক্ত  সতর্কতা  অবলম্বন  না  করতে  পারলে  বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  এবং  ধর্মনিরপেক্ষতা  সহ  সকল  বিজ্ঞান  ভিত্তিক  মুক্ত  চিন্তার কবর  রচিত  হবে  ৷  দেশ  আবার  মধ্যযুগীয়  ধারার ফিরে  গিয়ে  দেশের  বর্তমান  সব  অর্জন  ব্যর্থ  করে  দিবে  ৷  তাই  নতুন  প্রজন্মকে  এর  হাল  অবশ্যই এবং  এখনই  ধরতে  হবে , নিজেদের  মধ্যের  সকল  বিভেদ এবং  মতপার্থক্য   ভূলে ৷ 







মন্তব্যসমূহ