হুমায়ুন আজাদের প্রার্থনালয় কবিতাটির উল্লেখ করা হলো...আগ্রহীদের জন্যে ,


      তারা বলে পৃথিবী ভরে গেছে পাপে, আসমান থেকে জমিন ছেয়ে গেছে গুনাহ্য়
            তাই আমাদের একমাত্র কাজ এখন শুধু প্রার্থনা”  


              
        উনিশ শতকের বিখ্যাত ইংরেজ কবি, ইলিঅট তার বিখ্যাত কবিতা ,


                       “ THE ROCK” কবিতায় লিখেছিলেন; I journeyed to London ……where I was told ; we have too many Churches, and too few Chop Houses, কবি তার কবিতায় উপাসনালয়ের একটা স্থান নির্দ্ধারণ করে লিখেছিলেন

…….                “ The country (side)  now is only fit for Picnics,……and in Town only for important Wedding ;”  উপাসনালয়ের দরকার যেখানে তারা রোববর কাটায়;    
        
            

eliots 'the rock' 

ইংরেজ কবি এলিঅট এর THE ROCK কবিতার কিছু অংশ ,অনুবাদ করেছেন মরহুম হুমায়ুন আজাদ,
...............

আমি গেলাম লন্ডনে,সময়  নিয়ন্ত্রিত নগরে ,
যেখানে বয়ে চলে নদী ,বিদেশী নৌবহর
সেখানে আমাকে বলা হলো ,আমাদের বড়ো বেশি আছে উপাসনালয় ,
এবং খুব কম আছে খাবার দোকান সেখানে আমাকে বলা হলো:
অবসর দাও পুরোহিতদের মানুষের কর্ম স্থলে কোন দরকার নেই উপাসনালয়ের ,
উপাসনালয় দরকার যেখানে তারা রো
ববার কাটয়
নগরে ,আমাদের দরকার নেই ঘন্টাধ্বনির :
ঘন্টাধ্বনি জাগাক শহরতলিকে
আমি গেলাম শহরতলিতে , এবং সেখানে আমাকে বলা হলো :
ছ - দিন আমরা খাটাখাটি করি ,সপ্তম দিনে আমাদের যেতেই হয়
হাইন্ডহেড ,বা মেইডেনহেডে
যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে আমরা ঘরে ব'সে পড়ি খবরের কাগজ
শিলপ্ - এলাকায় আমাকে বলা হলো

আর্থিক আইনের কথা
মনোরম পল্লীঅঞ্চলে গিয়ে মনে হলো ,পল্লী এখন উপযুক্ত শুধু বনভোজনের
উপাসনালয়ের কোনো দরকার নেই পল্লীতে ,বা শহরতলিতে;
আর শহরে দরকার শুধু গুরুত্বপূর্ন বিবাহঅনুস্টানের জন্য

ধর্ম  যা  মানবজাতিকে বিভক্ত করে তা (যদি) মানবতার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতোঃ

     বহু বছর আগে কবি ওমর খৈয়াম যে কথাগুলো তার এই কবিতায় বলেছিলেন, এ দেশের জন্য তা আজও কি নিদারুণ সত্য ! কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই দেশে , ফতোয়াবাজদের এই দেশে , মৌলবাদীদের দ্বারা অত্যাচারিত এই দেশে, এরকম এক জন কবির বড়ো দরকার কবিতাটি ……

      যদি মাতালের শিক্ষাকেন্দ্র মাদ্রাসাগুলো 
এপিকিউরাস , প্লেটো , আরিস্টলের দর্শন-শিক্ষালয় হতো ,
      যদি পীর দরবেশের আস্তানা ও মাজারগুলো
               গবেষণা  প্রতিষ্ঠান  হতো ,
             যদি মানুষ ধর্মান্ধতার পরিবর্তে
                 নীতিজ্ঞানের  চর্চা  করত ,
          যদি উপাসনালয়গুলো সর্ববিদ্যাচর্চা-কেন্দ্র
                   হিসাবে  গড়ে  উঠত ,
     ধর্মতত্ত্বের চর্চার পরিবর্তে যদি গণিত বীজ-গণিতের
                    উন্নতি  সাধন  করত , 
           ধর্ম যা মানবজাতিকে বিভক্ত করে  তা
             মানবতার দ্বারা প্রতিস্থাপিত  হতো ,
            পৃথিবী তাহলে বেহেস্ত  পরিণত  হতো ,
                পরপারের বেহেস্ত  বিদায়  নিত , 
    প্রেম-প্রীতি মুক্তি-আনন্দে জগৎ পরিপূর্ণ হতো নিঃসন্দেহে 

 

            বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে যে ভাবে ধর্ম ও মৌলোবাদের প্রসার ঘটেছে, আজ থেকে প্রায় ১৫ বৎসর পূর্বেই দুরদৃষ্টি  সম্পূর্ণ      ও  প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ উপরের লাইনগুলো  তার যে কবিতায় লেখেছিলেন, তাহা  নিম্নে  আগ্রহী পাঠকদের জন্য  প্রকাশ করা হলো                      

 

     

                                       প্রার্থনালয় 

                  
               ছেলেবেলায় আমি যেখানে খেলতাম 
       তিরিশ বছর পর দেখি সেখানে একটি মসজিদ উঠেছে
        আমি জানতে চাই ছেলেরা এখন খেলে কোথায় ?
          তারা বলে ছেলেরা এখন খেলে না, মসজিদে পাঁচবেলা নামাজ পড়ে
           বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বুড়িগঙ্গার ধারে বেড়াতে গিয়ে
           যেখানে একঘন্টা পরস্পরের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে ছিলাম আমি আর মরিয়ম,
            গিয়ে দেখি সৌদি সাহায্যে সেখানে একটা লাল ইটের মসজিদ উঠেছে
            কোথাও নিস্পলক দৃষ্টি নেই চারদিকে জোব্বা আর আলখাল্লা       
  

                            
             
          পঁচিশ বছর আগে বোম্বাই সমুদ্র পারে এক সেমিনারে গিয়ে
          যেখানে আমরা সারা রাত নেচেছিলাম  আর পান করেছিলাম আর নেচেছিলাম,
          ১৯৯৫- এ গিয়ে দেখি সেখানে এক মস্ত মন্দির উঠেছে
          দিকে দিকে নগ্ন সন্ন্যাসী, রাম আর সীতা, সংখ্যাহীন হনুমান ;
          নাচ আর পান সম্পূর্ণ নাষিদ্ধ
            ফার্থ অফ ফোর্থের তীরের বনভূমিতে যেখানে সজ্যান আমাকে
            জড়িয়ে ধরে বাড়িয়ে দিয়েছিলো লাল ঠোঁট,
             সেখানে গিয়ে দেখি মাথা তুলেছে এক গগনভেদি গির্জা
              বনভূমি ঢেকে আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত ঝুলেছে এক ক্রুদ্ধ ক্রুশকাঠ
           আমি জিজ্ঞেস করি কেনো দিকে দিকে এতো প্রার্থনালয়  ?
                           কেন খেলার মাঠ নেই গ্রামে ?
            কেন নদীর ধারে নিস্পলক পরস্পরের দিকে তাকিয়ে   থাকার স্থান নেই
               কেন জায়গা নেই পরস্পরকে জড়িয়ে   রে চুম্বনের ?
                            কেন জায়গা নেই নাচ গানের
           তারা বলে পৃথিবী ভরে গেছে পাপে,আসমান থেকে জমিন ছেয়ে গেছে গুনাহ্য়
                        তাই আমাদের একমাত্র কাজ এখন শুধু প্রর্থনা
              
             চারদকে তকিয়ে আমি অজস্র শক্তীশালী মুখমন্ডল দেখতে পাই,
                         তখন আর একথা অস্বীকার করতে পারি না          


মন্তব্যসমূহ