William
Shakespeare
বিশ্ব বিখ্যাত ইংলিশ কবি ও নাট্যকার এবং সফল অভিনেতা উইলিয়াম শেক্সপিয়র এর জানা কাহিনী ;
ইংলিশ কবি , নাট্যকার ও অভিনেতা উইলিয়াম শেক্সপিয়র ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল ( কারো মতে ২৬ এপ্রিল ) ইংলেন্ডের ওয়ারউইক শেয়ারের ষ্ট্রেট ফোর্ড- আপন - এভন (Straitford – upon – Avon ) এ জন্মগ্রহন করেন ৷ তাঁর পিতার নাম- জন শেক্সপিয়র এবং মাতার নাম ছিলো মেরী শেক্সপিয়র ৷ তারা ছিলেন , কৃষি - ভূস্বামী পরিবারের সদস্য এবং বাপিস্ট খৃস্টান সম্প্রদায়ের ৷
শেক্সপিয়র মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার থেকে বয়সে বড় ২৬ বছর বয়সি এক অন্তসত্ত্বা মহিলা এনি- হাথাওয়া (Anne Hathaway ) কে বিয়ে করেন ৷ তাদের তিন সন্তান ( সুসান হাল , হামনেট শেক্সপিয়র এবং জুডিথ কুইনী ) ছিলো ৷ তাকে ইংলেন্ডের জাতিয় কবির মার্যাদা দিয়ে ও তাকে “ Bird of Avon” নিক নামে উপাধী দিয়ে ও ভূষিত করা হয়েছিল ৷
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে ৩৮ টা (সহযোগী সহ ) ড্রামা , ১৫৪ টা সনেট , ২ টা কাব্য ( Narreted poem ) ২ টা ইপিটস সহ আরো অনেক কবিতা ৷ তাঁর রচনা কাল ছিলো ১৫৮৫ সাল থেকে ১৬১৩ সাল , অর্থাৎ তাঁর মৃত্যুর তিন বছর আগ পর্যন্ত ৷ তাঁর কলজয়ী এবং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে - হেমলেট , ম্যাকবেথ , ওথেলো , কিং লিয়ার অন্যতম হিশেবে গণ্য করা হয়ে থাকে ৷
তিনি লেখক ,অভিনেতা ছাড়াও একটি নাট্যশালার আংশিক মালিকও ছিলেন ৷ তার নাট্যশালার নাম ছিলো - CHAMBERLAIN;S MEN, পরবর্তিতে ইহা KING’S MEN নামে পরিচিতি লাভ করেছিলো ৷
শেক্সপিয়র
এর কালজয়ী ড্রামা
ম্যাকবেথের গল্পাকারে বর্ণনা :
বৃদ্ধ ডানকান তখন স্কটল্যান্ডের দয়ালু রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠত ছিলেন ৷ তাঁর কয়েকজন বিশ্বস্থ
সেনাপতির মাধ্যমে রাজ্যের
বিভিন্ন অঞ্চলের শাসনকার্য তিনি পরিচালনা
করতেন ৷ হঠাং করে রাজ্যের
কিছু অংশের বিদ্রোহের
সুযোগ নিয়ে নরওয়ের
এক সৈন্যবাহিনী স্কটল্যান্ড
আক্রমন করে বসে ৷ এই সময়ে রাজা ডানকানের অধীনস্থ
কডোর অঞ্চলের অধিপতি রাজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আক্রমনকারী নরওয়ের
সৈন্যবাহিনীর দিকে তাঁর সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন ৷ এই সংবাদ , রাজা ডানকানের কাছে পৌছালে রাজা তখন তাঁর দুই অতি বিশ্বস্থ সেনাপতি
ম্যাকবেথ আর ব্যাঙ্কোকে
যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠান পরিস্থিতি সামাল দিতে ৷ এই দুই সেনাপতি আক্রমণকারী
সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধকরে তাদেরকে পরাস্ত
করতে সমর্থ হন এবং কডোরের
বিদ্রোহী অধিপতিকে ও দমন করেন ৷ সেনাপতি ম্যাকবেথের
অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বে সমস্ত বিপত্তি দুর হয়েছে বলে রাজাকে জানানো হয় ৷ আর কডোরের বিদ্রোহ
দমনের সঙ্গে সঙ্গে নরওয়ের আক্রমণকারী
সৈন্যবাহিনী ও পিছু হটে পালিয়ে
যেতে বাধ্য হয় ৷
এই
যুদ্ধ জয়ের সংবাদ রাজা ডানকানের
কাছে পৌছালে রাজা দুঃশ্চিন্তামুক্ত হন এবং যুদ্ধ জয়ী সেনাপতি
ম্যাকবেথ ও ব্যাঙ্কো
কে যথাযথ সম্মান
জানাইয়া তাদেরকে পুরষ্কৃত
করতে সিন্ধান্ত নিয়ে প্রসাদে তাদের ফেরার অপেক্ষায়
থাকেন ৷
অন্যদিকে বিদ্রোহ
দমন করে ও যুদ্ধে
জয়ের
পর ম্যাকবেথ ও ব্যাঙ্কো রাজপ্রসাদে
ফেরার সময় পথে এক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে যান ৷ রাস্তায় ঘনকালো
মেঘে আর অন্ধকারের
মধ্যে একটু খোলা স্থানে এসে যেই মাত্র তারা দাঁড়ালেন তখন হঠাৎ করে তাদের নজরে পড়লো তিনটি অদ্ভূত নারী মুর্তি
; যাদের গালে আবার পুরুষের মত দাড়ি রয়েছে ৷ ব্যাঙ্কো তাদের কাছে জানতে চান , তারা জীবন্ত প্রাণী
না কোনো প্রেতাত্মা ? আসলে তারা ছিল তিনজন ডাইনি ৷ তারা তার কথায় কোনো জবাব না দিয়ে সেনাপতি ম্যাকবেথের
দিকে তাকিয়ে প্রথম ডাইনি বললো -হে গ্ল্যামিসের অধিপতি
, তোমায় অভিনন্দন জানাই ৷ দ্বিতীয়
ডাইনি বললো -হে কডোরের অধিপতি
ম্যাকবেথ , তোমাকে
স্বাগত জানাই ৷ তৃতীয় জন বললো , হে স্কটল্যান্ডের ভাবী রাজা ম্যাকবেথ
, তোমায় স্বাগত
জানাই ৷
ম্যাকবেথ ডাইনিদের
কথায় চমকে ওঠেন প্রথমে এবং পরে চিন্তা
করে দেখেন যে , গ্ল্যামিসের
অধিপতি তিনি হতেই পারেন ৷ কিন্তু কডোরের
অধিপতি কেমন করে হবেন তিনি যেখানে
কডোরের অধিপতি এখনো বিদ্যমান আছেন ৷ আর স্কটল্যান্ডের রাজা
, সে তো শুধু স্বপ্ন ৷ এই সব চিন্তা করে ম্যাকবেথ যখন বিচলিত বোধ করছেন , ইহা লক্ষ্য করে ব্যঙ্কো তখন ডাইনিদের কাছে জানতে চাইলেন তার নিজের ব্যাপারে ডাইনিদের কোনো মন্তব্য
আছে কী না ? তখন প্রথম ডাইনি বললো একদিক থেকে তুমি ম্যাকবেথ
থেকে ছোট কিন্তু আবার অন্য দিক থেকে বড় ৷ দ্বিতীয় ডাইনি বললো একদিক থেকে তুমি ম্যাকবেথের
মত অত সুখী নও তবে আবার অন্য দিক থেকে তাঁর চেয়ে তুমি বেশি সুখী ৷ তৃতীয় ডাইনি জানালো তুমি নিজে স্কল্যান্ডের রাজা হবে না ৷ কিন্তু তোমার বংশের অনেকেই রাজা হবে ৷ দুই সেনাপতিকে দু'রকম কথা বলার পর তিন ডাইনি যেন হঠাৎ বাতাসের
সঙ্গে মিশে গেল ৷
ঠিক
এই সময়েই তাদের দু-জনের বিস্ময়ের
ঘোর কাটতে না কাটতেই
রাজার দুই দূত এসে
জানালো যে , নরওয়ের বাহিনীকে সহায়তা দেয়ার জন্যে কডোরের
অধিপতির প্রাণদণ্ড হয়েছে এবং রাজার একই আদেশে সেই সম্মান
ম্যাকবেথকে দেয়া হয়েছে
, ম্যাকবেথের বীরত্বের
পুরষ্কার হিসেবে ৷ ডাইনিদের দুটো কথা মিলে যাচ্ছে দেখে ম্যাকবেথের হৃদয়ে লুকিয়ে
থাকা গোপন আকাঙ্ক্ষাটি
মাথা চাড়া দিয়ে উঠল ৷ ফলে তিনি বিচলিত হয়ে উঠেন ৷ তাঁর বিচলিত হওয়া ভাব দেখে ব্যাঙ্কো
তাকে বলেন যে , অন্ধকারের অদ্ভূত
জীবদের কিছু কথা ফলে গেলেও পরে তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে ৷ কিন্তু ম্যাকবেথের
মাথায় তখন অন্য সাত-পাঁচ চিন্তা ঘোরপাক খাচ্ছে ৷ তিনি তখন ভাবতে আরম্ভ করছেন যে তার মাথায় রাজমুকুটের স্থান পাওয়া মানেতো
বর্তমান রাজাকে হত্যা করা ! সে কি সম্ভব ?
এসব ভাবতে ভাবতে তাঁরা উভয়ে রাজা ডানকানের
ফোরেসের রাজপ্রসাদে এসে পোঁছে যান ৷ তখন রাজা দরবারে কডোরের
অধিপতির বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কথা বলছিলেন
৷ তাদেরকে দেখে রাজা প্রথমে
ম্যাকবেথকে ভাই সম্বোধন
করে তাদের কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করেন ৷ এবং রাজা তখন ব্যাঙ্কো
কে ও বলেন যে , তাঁর
বড় ছেলে ম্যালকমকে
কম্বারল্যান্ডের যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করা হবে ৷ আর ম্যাকবেথের
সঙ্গে বন্ধন আরো নিবিড় করতে ফোরেসের প্রসাদ
থেকে ফেরার পথে ইনভার্নেসে ম্যাকবেথের
প্রসাদে রাজা ডানকান
এক রাতের অতিথি হতে ম্যাকবেতের অনুমতি চাইলেন ৷
এই সংবাদ শুনেই ম্যাকবেথ অত্যান্ত আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করে রাজার আতিথিয়েতার ব্যবস্থা করতে ইনভার্নেসে রওনা হয়ে গেলেন ৷ পথে যেতে যেতে মনে মনে বিভিন্ন চিন্তার মধ্যে ম্যালকমের যুবরাজ হওয়াকে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে বাধা হতে পারে মনে করে ম্যাকবেথ তাকে উপড়ে ফেলার ব্যাপারেও দৃড়প্রতিজ্ঞ হন ৷ এর আগেই ম্যাকবেথ ডাইনিদের অভিজ্ঞতার কথা তাঁর স্ত্রীকে চিঠিতে জানিয়েও দিয়েছেন ৷ এবং চিঠিতে এও লিখেছেন যে ডাইনিদের তৃতীয় কথাটি সত্য হলে লেডী ম্যাকবেথ হবেন রাজমহিষী ৷ এই চিঠি পড়ার মূহর্তেই রাজদূত এসে লেডী ম্যাকবেথকে সংবাদ দেয় যে , আজ রাতেই রাজা ডানকান তাদের অতিথি হবেন ৷ আর লেডী ম্যাকবেথ তখনই সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে , এই সুযোগ আর হাত ছাড়া হতে দেয়া যাবে না ৷ এই সময়ে ম্যাকবেথও প্রসাদে ফিরে আসেন ৷ লেডী ম্যাকবেথ তাকে দেখে বলে ওঠেন , হে গ্ল্যামিসের ও কডোরের মহান অধিপতি তুমি রজসম্মানে ভূষিত হতে চলেছ ৷ তোমার চিঠিই আমাকে ভবিষ্যতের আমার মনের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে ও আকাঙ্খাকে জাগিয়ে দিয়েছে ৷ তখন লেডী ম্যাকবেথ তাঁর স্বামীর কাছ থেকে রাজার উপস্থিতির সময় জেনে নিলেন এবং তার মতামত প্রকাশ করে বললেন , আজ রাতের মধ্যেই আমাদের কাজ শেষ করে আমাদের সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জন করতে হবে ৷ তবে এ ব্যাপারে যদিও ম্যাকবেথের মনে তখনোও অনেক দ্বিধা ও বিভক্তি ছিলো ৷
এই সংবাদ শুনেই ম্যাকবেথ অত্যান্ত আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করে রাজার আতিথিয়েতার ব্যবস্থা করতে ইনভার্নেসে রওনা হয়ে গেলেন ৷ পথে যেতে যেতে মনে মনে বিভিন্ন চিন্তার মধ্যে ম্যালকমের যুবরাজ হওয়াকে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে বাধা হতে পারে মনে করে ম্যাকবেথ তাকে উপড়ে ফেলার ব্যাপারেও দৃড়প্রতিজ্ঞ হন ৷ এর আগেই ম্যাকবেথ ডাইনিদের অভিজ্ঞতার কথা তাঁর স্ত্রীকে চিঠিতে জানিয়েও দিয়েছেন ৷ এবং চিঠিতে এও লিখেছেন যে ডাইনিদের তৃতীয় কথাটি সত্য হলে লেডী ম্যাকবেথ হবেন রাজমহিষী ৷ এই চিঠি পড়ার মূহর্তেই রাজদূত এসে লেডী ম্যাকবেথকে সংবাদ দেয় যে , আজ রাতেই রাজা ডানকান তাদের অতিথি হবেন ৷ আর লেডী ম্যাকবেথ তখনই সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে , এই সুযোগ আর হাত ছাড়া হতে দেয়া যাবে না ৷ এই সময়ে ম্যাকবেথও প্রসাদে ফিরে আসেন ৷ লেডী ম্যাকবেথ তাকে দেখে বলে ওঠেন , হে গ্ল্যামিসের ও কডোরের মহান অধিপতি তুমি রজসম্মানে ভূষিত হতে চলেছ ৷ তোমার চিঠিই আমাকে ভবিষ্যতের আমার মনের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে ও আকাঙ্খাকে জাগিয়ে দিয়েছে ৷ তখন লেডী ম্যাকবেথ তাঁর স্বামীর কাছ থেকে রাজার উপস্থিতির সময় জেনে নিলেন এবং তার মতামত প্রকাশ করে বললেন , আজ রাতের মধ্যেই আমাদের কাজ শেষ করে আমাদের সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জন করতে হবে ৷ তবে এ ব্যাপারে যদিও ম্যাকবেথের মনে তখনোও অনেক দ্বিধা ও বিভক্তি ছিলো ৷
অন্যদিকে ম্যাকবেথ
এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের
কি প্রতিক্রিয়া হবে
! তার প্রতি রাজার গভীর
বিশ্বাস , আবার তার সঙ্গে রাজার আত্মীয়তার সম্পর্ক
, আর অতিথিকে রক্ষার দায়িত্ব
তো গৃহ কর্তারই
কাজ , তাকে হত্যাকরা নয় , ইত্যাদি বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে তাঁর মাথায় তখন অসংখ্য চিন্তা ঘোরপাঁক খাচ্ছিল ৷ ঠিক সেই সময়ই লেডীম্যাকবেথ ঘরে ঢোকে তাকে জানান যে
, রাজা রাতের খাবার শেষ করেছেন
৷ ম্যাকবেথ স্ত্রীকে তখন অন্য কিছু বলতে না দিয়ে বললেন
, এবার আমরা রাজাকে কিছু করবো না ৷ কারণ তিনি আমাদের গৃহের অতিথি
, তা
ছাড়াও তিনি সম্প্রতি
আমাকে সম্মানিতও করেছেন ৷ এর ফলে মানুষের
কাছে আমরা প্রচুর
শ্রদ্ধাও ও সম্মান
পেয়েছি ৷ তাই আমি এ রকম একটা কাজ করে আমাদের সব সম্মান ও খ্যাতি হারাতে চাই না ৷
লেডী
ম্যাকবেথ এ কথা শুনে স্বামীকে
তীব্র ভাবে আক্রমন করে প্রশ্ন তুলেন এবং বলেন আমার মনে তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্ম দিয়ে এখন তুমি পিছু হটতে পারো না ৷ তোমার এই সততার জন্যে সারা জীবন আমাদেরকে এই কাপুরুষতাকে বয়ে বেড়াতে হবে ৷ আর এমন সুযোগ জীবনে আর কখনো আসবে না ৷ ইত্যাদি নানা কথা বলে লেডি ম্যাকবেথ তার স্বামী ম্যাকবেথকে
উত্তেজিত করে তোলার চেষ্টা করেন ৷ ম্যাকবেথ তার এ সব কথার
প্রতি
উত্তরে বলেন তবুও আমার একাজে যথেষ্ট
সংশয় রয়েছে ৷ কারণ এতে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে প্রচুর ৷
লেডী
ম্যাকবেথ এতে ভিন্ন মত পোষণ করেন এবং তাঁর নিখূত পরিকল্পনার কথা ম্যাকবেথকে জানান ৷ তিনি বলেন রাজা পথের ভ্রমনের
ক্লান্তিতে গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়বেন তখন তিনি তাঁর দু’জন দেহরক্ষীকে এমনভাবে অতিরিক্ত
মদ্যপান করাবেন যেন তারা শিঘ্রই
ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ৷ আর এই
সুযোগে আমাদের পরিকল্পিত এবং
আসল কাজ সমাধা করতে হবে এবং পরবর্তীতে এর দায়ভার দেহরক্ষীদের
ওপর চাপিয়ে দিতে হবে ৷ স্ত্রীর
এই পরিকল্পনা শুনে ম্যাকবেথ তাঁর বুদ্ধির প্রশংসা
করে স্ত্রীকে খুশি হয়ে বললেন তোমার মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষোচিত
গুণই বেশি ৷ তখন ম্যাকবেথ নিজেও স্ত্রীর সাহস ও পরিকল্পনা
দেখে দৃঢ় সংকল্প
হয়ে তাঁর মনোভাবের পরিবর্তন
করেন ৷ আর লেডী ম্যাকবেথকে
অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্যে তাকে ওপরে পাঠিয়ে দেন ৷ এর পর তিনি নিজে
ব্যাঙ্কো ও তার ছেলে ফ্লিসান্সের
শুবার ঘরের দিকে রওয়ানা দেন তাদেরকে
পর্যবেক্ষণের জন্যে ৷
তখন
প্রায় মাঝরাত , দুর্গের মধ্যে ব্যাঙ্কো ও তার ছেলে ফ্লিয়ান্স
শুয়ে আছেন , কিন্তু
এক অস্বস্তিকর চিন্তায়
ব্যাঙ্কো ঘুমাতে পারছেন
না ৷ এই সময়ে তাদের ঘরে ম্যাকবেথ
আসেন ৷ তাকে দেখে ব্যাঙ্কো
চমকে ওঠে বলেন যে তুমি কি এখনও ঘুমাও নি ? আমাদের রাজা কিন্তু গভীর ঘুমে মগ্ন ৷ এই সময়ে ম্যাকবেথের
হাতে একটি হীরের খণ্ড দিয়ে ব্যাঙ্কো বলেন যে , রাজা
তোমার স্ত্রীর আতিথেয়তায়
মুগ্ধ হয়ে এটা তাকে উপহার দিয়েছেন ৷ তাদের কথার মধ্যে এই সময় আবার ডাইনির প্রসঙ্গ
আসে যায় ৷ ম্যাকবেথ ব্যাঙ্কোকে
ইঙ্গিত করে বলেন যদি ব্যাষ্কো তার কথামত চলেন তবে তাকে সম্মানিত করা হবে ৷ তাঁর একথা শুনে ব্যাঙ্কো
সঙ্গে সঙ্গে এর উত্তর দিয়ে তাকে জানান যে
, তিনিও সম্মান
চান তবে রাজা ডানকানের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে ৷
ম্যাকবেথের মনের গভীরে তখনও দুর্বলতা আর বিবেকের দংশনে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তার মন ৷ তবু সঙ্গের ভৃত্যুটিকে
বললেন গৃহিণীকে গিয়ে বলতে যে
, পানীয়
তৈরি হলে ঘণ্টা বাজিয়ে তাকে জানিয়ে দিতে ৷ আসলে সেই ঘণ্টাই
হবে হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতিপর্ব
সমাধানের ইঙ্গিত ৷ হঠাৎ ঘণ্টা বাজলে ম্যাকবেথ
ধীরে ধীরে রাজার ঘরের দিকে এগিয়ে যান ৷ লেডী ম্যাকবেথ
রাজার ঘর থেকে বেরিয়ে
এসে তাকে দেখেই বললেন তিনি রাজার দেহরক্ষীদের প্রচুর
মদ্যপান করিয়ে নিস্তেজ
করেছেন এবং নিজকে উদ্দীপ্ত রাখতে নিজে মদ্যপান
করেছেন ৷ তবে তিনি ছোরা হাতে রাজার ঘরে গিয়েও রাজাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে ৷ কারণ রাজার মুখের সঙ্গে তাঁর বাবার মুখের মিল দেখতে পেয়েছেন
তিনি ৷ তাই তিনি রাজাকে হত্যা করতে পারেন নি ৷
লেডী ম্যাকবেথের কথা শুনেই ম্যাকবেথই এ কাজে অগ্রসর হয়ে রাজাকে হত্যা করে রক্তমাখা ছোরা হাতে রাজার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্ত্রীকে জানালেন , তিনি তার কাজ শেষ করেছেন ৷ তবে হত্যার মুহূর্তে এক দেহরক্ষী ‘ খুন’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেছিল , আর অন্যজন ঘুমের মধ্যেও হেসে উঠেছিল আর হত্যার পর দু’জনই কিছুটা জেগে ওঠে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে তারা প্রর্থনা শুরু করেও আবার ঘুমিয়ে পড়ে ৷ তবে রক্ষীদের একজন ছোরা হাতে ম্যাকবেথকে দেখে বলেছে ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন ! এ সব কথা তিনি স্ত্রীকে জানাতে ভূললেন না ৷
লেডী ম্যাকবেথের কথা শুনেই ম্যাকবেথই এ কাজে অগ্রসর হয়ে রাজাকে হত্যা করে রক্তমাখা ছোরা হাতে রাজার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্ত্রীকে জানালেন , তিনি তার কাজ শেষ করেছেন ৷ তবে হত্যার মুহূর্তে এক দেহরক্ষী ‘ খুন’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেছিল , আর অন্যজন ঘুমের মধ্যেও হেসে উঠেছিল আর হত্যার পর দু’জনই কিছুটা জেগে ওঠে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে তারা প্রর্থনা শুরু করেও আবার ঘুমিয়ে পড়ে ৷ তবে রক্ষীদের একজন ছোরা হাতে ম্যাকবেথকে দেখে বলেছে ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন ! এ সব কথা তিনি স্ত্রীকে জানাতে ভূললেন না ৷
সব
শুনে লেডী ম্যাকবেথ
স্বামীকে দুর্বল না হয়ে
আবার
ছোরা দু’টো ডানকানের ঘরে রেখে ঘুমন্ত
রক্ষীদের শরীরে রক্ত মাখিয়ে দিয়ে দিয়ে আসতে বলেন ৷ এবং এই কাজ শেষ হলে পরে যেন ম্যাকবেথ তার নিজের হাত
ভালভাবে ধুয়ে ঘরে ফেরে আসেন , একথাটি ও ম্যাকবেথকে বলে দেন লেডিম্যাকবেথ ৷ তবে ম্যাকবেথ তার মনের অশান্তির জন্যে রাজার ঘরে আর যেতে রাজি হন নাই ৷ তখন লেডী ম্যাকবেথ
নিজেই রাজার ঘরে গিয়ে এই কাজটুকু সেরে ফেলেন ৷ এর পর লেডিম্যাবেথ ঘরে ফিরে আসতে রওয়া দেন ৷ তখন দেখেন তাঁর
হাত ও রাজার রক্তে রক্তাক্ত হয়ে আছে ৷ আর তাঁর হাত পানি দিয়ে ধওয়ার পরও রক্ত তাঁর হতে রয়েই যাচ্ছে ৷ কিন্তু তাঁর হৃদয় ম্যাকবেথের
মতো দুর্বল ছিল না ৷ তখন ঘরের দরজার কড়া নাড়ার শব্দ শুনে তাঁরা নিজেদের ঘরের দিকে চলে যান ৷
এদিকে
ম্যাকবেথের প্রাসাদের কড়া নাড়া চলতে থাকলে
, একজন
দ্বাররক্ষী এসে দরজা খুলে দেখতে পায় রাজার ভ্রমনসঙ্গি ম্যাকডাফ
ও লেনক্স তাদের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন ৷ তারা জানালেন যে , রাজার
ভোরেই দুর্গ ছেড়ে চলে যাওয়ার
কথা তাই রাজাকে ঘুম থেকে জাগাতে
তারা এসেছেন ৷ এই সময় ম্যাকবেথ সদ্য ঘুম ভাঙ্গা
ভঙ্গিতে তাদের সামনে এসে জানান যে ,
রাজা তখনও ঘুম থেকে ওঠেন নি ৷ তখন ম্যাকডাফ
রাজার ঘুম ভাঙ্গাতে
তাঁর ঘরের দিকে এগিয়ে ঘরে ঢোকার মুহূর্তেই
বিলাপ করতে করতে বাইরে ছুটে চলে আসেন ৷ এসেই বলেন যে ভয়ঙ্ক্ষর এক হত্যাকাণ্ডের মধ্যমে রাজার মৃত্যু
হয়েছে ৷ তখন ম্যাকবেথ বিস্ময়
প্রকাশ করে বলেন তুমি কী বলছো ম্যাকডাফ ? তখন ম্যাকডাফ
তাকে লেনক্সকে সঙ্গে নিয়ে কি ঘটেছে নিজে দেখে আসতে বলেন ৷ ম্যাকবেথ
লেনক্সকে নিয়ে রাজার ঘরের দিকে
যান আর এদিকে ম্যাকডাফ তখন চিৎকার করে রাজাকে হত্যা করে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঘটেছে বলে পাগলাঘণ্টি
বাজাতে বলেন ৷ আর তখন তিনি ব্যাঙ্কো কেও ডাকতে থাকেন ৷ পাগলা ঘণ্টা বেজে ওঠলে ,
লেডী ম্যাকবেথ ব্যস্ত
হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলতে থাকেন
, কি , কি হয়েছে , এত ঘণ্টার
আওয়াজ কেন ? এই কথার কোনো জবাব দেয়ার আগেই সেখানে ব্যাঙ্কো
এসে পড়েন ৷ ম্যকডাফ তাঁকে দুঃসংবাদটা জানান ৷ লেডী ম্যাকবেথ ইহা শুনে হায় হায় করে উঠে বললেন আমাদের বাড়িতেই
এই কাণ্ড ঘটে গেল ! এই বলে তিনি হাঁহাঁকার করে ওঠেন ৷ তখন ম্যাকবেথ উপস্থিত অন্যান্যদের নিয়ে পরবর্তি কার্য্যক্রম
নির্ধারণ করতে পাশের হল ঘরে চলে যান ৷ আগের স্থানে তখন রাজার দুই ছেলে ম্যালকম
ও ডোনালবেন ছাড়াও ম্যাকডাফ থেকে যান ৷ এর মধ্যে রাজার
ছেলেরা তাদের মধ্যে শলা পরামর্শ করে সেখান থেকে তাদের প্রাণ বাঁচাতে
ম্যালকম ইংল্যাণ্ডে এবং ডোনালবেন আয়ারল্যান্ডে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
নেন ৷ কারণ যেহেতু রক্তের
সূত্রের আত্মীয়য়ের মাধ্যমেই
এই হত্যা কার্য ঘটেছে বলে তাঁরা মনে করছেন তাই তারাও এখানে আর নিরাপদ
বোধ করতে পারছেন না ৷ অর্থাৎ
তারা ম্যাকবেথের
প্রতিই তাদের সন্দেহ প্রকাশ
করেছন ৷ তাই এই মূহুর্তে নিজেরা
একে অন্য থেকে আলাদা থাকতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে দূর্গের বাহিরে
চলে যান ৷ এবং পরে তাদের পরবর্তি
গন্তব্য স্থানে যাওয়ার
উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন ৷
অন্যদিকে রাজা ডানকানের সঙ্গী রস তার মনের দুঃখ দূর করতে দুর্গের বাইরে গিয়ে এক বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে এই রকম হত্যাকাণ্ড এর আগে কেউ দেখেনি বা কখনো
শোনেও নি ৷ এই সময়ে তাদের উভয়ের কথার মধ্যেই ম্যাকডাফ এসে জানান যে , ওই
হত্যাকাণ্ডের জন্যে রাজার দুই দেহরক্ষীকে
সন্দেহ করা হচ্ছে ৷ আবার রাজার দুই ছেলেকেও সন্দেহ
করা হচ্ছে যেহেতু
তাঁরা রাজার হত্যার
পরে পরেই রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গেছে ৷ ম্যাকডাফের
কথায় আরো জানা গেল যে ইতিমধ্যে ম্যাকবেথ
রাজা উপাধি গ্রহন করেছেন আর অভিষেকের জন্যে তৈরি হচ্ছেন
৷ আর রাজা ডানকানের মরদেহকে
নিয়ে য়াওয়া হয়েছে তাঁর পূর্বপুরুষের
সমাধিস্থলে ৷
( রাজা ডানকানের মৃত্যুর
পরবর্তি পর্ব )
ব্যাঙ্কো ও তার ছেলে ফ্লিয়ান্স ফোরেসে
ম্যাকবেথের রাজ প্রাসাদে
এসেছেন ৷ ম্যাকবেথ
তখনও ভেতরে আছেন ৷ ব্যাঙ্কো
বসে বসে চিন্তা করা আরম্ভ করেন যে , ম্যাকবেথের জীবনে তো ডাইনিদের
সব কথাই সত্যি হয়েছে
, তাহলে
আমার সম্পর্কে ডাইনিরা
যা বলেছে তাই-ই বা সত্য হবে না কেন
? তারা
তো বলেছে ব্যাঙ্কোর
বংশধররা রাজা হবেন ৷
এমন
সময়ে ম্যাকবেথ ও লেডী ম্যাকবেথ
সহ অন্যান্য অভিজাতরা
ভিতর থেকে বাহিরে
এলেন এবং ব্যাঙ্কো
কে সেখানে উপস্থিত দেখে ম্যাকবেথ তাঁকেও সেদিনের
রাতের ভোজসভায় উপস্থিত
থাকতে অনুরোধ করেন ৷ ব্যাঙ্কো তখন ম্যাকবেথকে বলেন যে , রাতে
তাঁর অন্যত্র যাওয়ার
কথা আছে , তবুও তিনি ম্যাকবেথের রাজা হওয়ার সুবাদে
দেওয়া ভোজসভায় যোগ দিবেন
অবশ্যই ৷ তখন তিনি ম্যাকবেথকে জানান যে , নিহত ডানকানের
দুই ছেলে ইংল্যণ্ড
ও আয়ারল্যাণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে ৷ এবং তারা নিজেদের অপরাধ তো স্বীকার
করেই নি , উল্টে লোকের কাছে মিথ্যা
ও মনগড়া কথা বলে বেড়াচ্ছে
৷ ম্যাকবেথের এই কথার পর ব্যাঙ্কো তার ছেলে ফ্লিয়ান্সকে
সঙ্গে নিয়ে প্রাসাদ
ছেড়ে অন্যত্র যাত্রা
করেন ৷ এদিকে ব্যাঙ্কো কে নিয়ে ম্যাকবেথের
অনেক ভয় তখনও তার মনে রয়ে গেছে ৷ কারণ তার সাহস ও বুদ্ধি
দুটোই আছে ৷ অন্যদিকে ডাইনিদের
কথা অনুযায়ী ম্যাকবেথ
নন , ব্যাঙ্কোই
হবেন এক রাজবংশের
প্রতিষ্ঠাতা ৷ তখন তাঁর মনে একটি প্রশ্নের ও উদয় হয় যে , তিনি কি ব্যাঙ্কোর
সন্তানদের জন্য মহান ও দয়ালু রাজাকে হত্যা করেছেন ? তাই তিনি সেই মূহূর্তেই
তাঁর পরবর্তি পদক্ষেপ
স্থির করে ফেলেন ৷ আর সঙ্গে সঙ্গে দুই ঘাতককে ডেকে ব্যাঙ্কো ও তার ছেলে ফ্লিয়ান্সকে রাতে প্রাসাদে ফেরার সময়ে পথের মধ্যেই হত্যা করার নির্দেশ
দেন ৷ এবং আরো নিশ্চয়তার জন্যে তৃতীয় আরো এক ঘাতককেও নির্দেশ দেন যে , সে যেন এই হত্যা যে কোনো প্রকারে নিশ্চিত
করে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে জানাতে ও নির্দেশ প্রদান করেন ৷
এদিকে লেডী
ম্যাকবেথ স্বামীর এই অস্থিরতা
ও ভীতিকে অনুভব করেন এবং ম্যাকবেথকে
অতীতের কোনো বিষয় নিয়ে
আর মনে
কষ্ট না পেতে অনুরোধ করেন ৷ সে
দিনের ভোজসভায় তাঁকে হাসিখুশি ভাব বজায় রেখে চলতে
ও পরামর্শ ও দেন ৷ স্ত্রীর এই কথার জবাবে ম্যাকবেথ
স্ত্রীকে জানান যে ‘ তাঁর মনের মাঝে অজস্র কাঁকড়াবিছে দংশন করছে কারণ
এখনও ব্যাঙ্কো ও তাঁর ছেলে ফ্লিয়ান্স বেঁচে আছে" ৷ ম্যাকবেথ তখন স্ত্রীকে তাঁর আর এক ভয়ঙ্কক কাজের আভাস দিলেন যা ঐ রাতেই সংঘটিত হতে তিনি ব্যবস্থা করেছেন বলেও তাঁকে জানালেন ৷ এই সংবাদ শুনে লেডী ম্যাকবেথ
অনেকটা বিচলিত হয়ে গেছেন দেখে ম্যাকবেথ রানিকে
দুর্বলতা ত্যাগ করতে বলেন এবং আরও বলেন তিনি যেন মানুষিক
ভাবে রাতের ভোজসভার ব্যাপারে
প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন যাতে তার কোনো দুর্বলতা পার্টিতে প্রকাশ না পায় ৷
রাতে
প্রাসাদে ম্যাকবেথের দেয়া জমজমাট ভোজসভা
চলছে , তাঁরা অর্থাৎ ম্যাকবেথ
দম্পতি আগত অতিথিদেরকে আপ্যায়নে
ব্যস্ত আছেন , এই সময়ে একজন ঘাতক ম্যাকবেথকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে জানালো
যে শুধু ব্যাঙ্গো কে
তারা হত্যা করতে পেরছে ৷ কারণ
আহত ব্যাঙ্কো তাঁর ছেলেকে পেছন থেকে পালিয়ে
গিয়ে হত্যার প্রতিশোধ
নিতে চিৎকার করে বলার পরই তার মৃত্যু
হয়েছে ৷ তাই পিছনে থাকা ফ্লিয়ান্স
পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে ৷
এই সংবাদ শুনে ম্যাকবেথের মনে অশান্তি আরম্ভ হয় ৷ তবুও তিনি ভোজসভার মাঝখানে
এসে সকলের দৃষ্টি
আকর্ষণ করে বলেন যদি এই ভোজসভায় ব্যাঙ্কো
উপস্থিত থাকতেন তবে তা আরো মার্যাদাপূর্ণ
হয়ে উঠতো ৷ এই কথা শেষ হতে না হতেই ম্যাকবেথের
চোখে পড়লো তাঁর জন্য রাখা বিশেষ চেয়ারে বসে আছে ব্যাঙ্কো-র
প্রেতাত্মা ! যা অন্য কারো চোখে পড়ছে না ৷ তাই তিনি হঠাৎ
পাগলের মত বলে ওঠেন ব্যাঙ্কো-কে
, হত্যা করেছে কে ? আমি করিনি
! আমন্ত্রিতদের উদ্দেশ্য
করে তিনি তখন বলে ওঠেন আপনারা এ কথা বলতে পারেন না যে আমি এ কাজ করেছি ! আপনারা আমাকে রক্তচক্ষু দেখাবেন
না ৷
লেডী
ম্যাকবেথ ঘটনা আঁচ করতে পেরে এবং এই অবস্থা
সামাল দিতে অতিথিদের
জানান যে , ম্যাকবেথের শরীর সুস্থ নেই ৷ তাঁর একটা পুরাতন রোগ আছে যা আজকের মতো মাঝে মধ্যে দেখা দেয় ৷ এই
বলে তিনি আবার ম্যাকবেথকে আসরে নিয়ে আসেন ৷ আর ম্যাকবেথও
আবার আসরে এসে সবাইকে
উদ্দেশ্য করে বলেন আপনারা কিছু মনে করবেন না ৷ ইহা আমার একটা পুরাতন অসুখ ৷ তিনি যখন ইত্যাদি বিভিন্ন
কথা অতিথিদের সম্মানে বলতে ছিলেন সে মূহূর্তেই
আবার ব্যাঙ্কো-র প্রেতাত্মা
তাঁর চোখের সামনে এসে পড়ে ৷ তখন তিনি আবার সকলের সামনে চিৎকার
করে বলে ওঠেন এই প্রেতাত্মা !
যাও আমার চোখের সামনে থেকে সরে পাতলে গিয়ে অন্ধকারে
লুকিয়ে থাকো ! এই সময় ম্যাকবেথ আবার অনেক কথা বলতে আরম্ভ করেন ৷ তখন লেডী
ম্যাকবেথ অতিথিদের কাছে ক্ষমা প্রর্থনা
করে ম্যাকবেথের এই অসুস্থতাকে সহজভাবে
মেনে নিতে অনুরোধ
করেন ৷ অন্যদিকে
ম্যাকবেথ আরো উত্তেজিত
হয়ে প্রেতাত্মাকে আরো কিছু বলতে আরম্ভ করেন ৷ তখন লেডী ম্যাকবেথ
আমন্ত্রিতদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের সবাইকে বিদায় জানাতে বাধ্য হন ৷ এ দিকে ম্যাকবেথের
মনে অশান্তি আরো বেড়েই চলেছে তখন ৷ যেহেতু ম্যাকডাফ ও তাঁর আমন্ত্রণ
প্রত্যাখান করেছে ৷ তাই তাঁর মনে আবার রক্তপাতের
আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ৷ তাই ম্যাকবেথ ঠিক করেন আবার তিনি ডাইনিদের
কাছে যাবেন তাঁর নিজের ভাগ্যকে আবার জানতে ৷ তখন লেডী ম্যাকবেথ
তাকে এসব চিন্তা
মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে
যেতে আমন্ত্রণ জানান ৷ তখন ম্যাকবেথ তাতে সায় দিয়ে ঘুমাতে চলে যান ৷
এই ভাবে কিছুদিন চলার পর ম্যাকবেথের অপশাসনে
ও তাঁর অত্যাচারী
ভূমিকায় স্কটল্যাণ্ডের সাধারণ
মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন ৷ তারা আশা প্রকাশ করে বলতে আরম্ভ করেন যে তাদের এই দূরঅবস্থার অবসানে নিশ্চয় মৃত রাজার ছেলেরা দেশের মানুয়কে
এই বিপদ থেকে উদ্দার করতে এগিয়ে আসবেন ৷
এ দিকে ম্যাকডাফ ও ইংল্যাণ্ডে
চলে গিয়ে ডানকানের এক ছেলে ম্যলকমের
সাথে মিলে যুদ্ধের
প্রস্তুতি শুরু করে দেন ৷ অন্যদিকে ডানকানের
বিশ্বস্থ সভাসদ লেনক্সে জণসম্মূখে ব্যঙ্গ-মিশ্রিত কথাবার্তা বলতে থাকেন ৷ ফলে ডানকান ও ব্যাঙ্কো-র অস্বাভাবিক
মৃত্যু , ডানকানের দুই ছেলের পলায়ন
, রাজার দুই দেহরক্ষীর
হত্যা , ম্যাকডাফের প্রতি ম্যাকবেথের মনোভাব - ইত্যাদি একের পর এক ঘটনায় স্কটল্যাণ্ডের
মানুষ এখন আর ম্যাকবেথকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না ৷ তাই ম্যাকবেথকে
ঘিরে দিনে দিনে জমে ওঠেছে সন্দেহের কালো মেঘ ৷
এবার
ম্যাকবেথ নিজের ভাগ্যকে
আবার যাঁচাই করতে ডাইনিদের আড্ডায়
গেয়ে তাদের এক গুরু প্রেতাত্মার
স্মরণাপর্ণ হন ৷ সে তখন অন্য প্রেতাত্মাকেও ডেকে আনে ম্যাকবেথের সামনে ৷ তখন ম্যাকবেথকে ম্যাকডাফ
থেকে সাবধানে থাকতে বলে
প্রথম
প্রেতাত্মা চলে যায় ৷ এরপর এক রক্তাক্ত শিশুর বেশে দ্বিতীয়
প্রেতের আবির্ভাব ঘটে , সে ম্যাকবেথকে
তাঁর নিজের সংকল্প
পূর্ণ করতে আবার ও রক্তপাত করতে যেন কোনো কণ্ঠাবোধ না করেন এই কথা বলে এবং তাকে আরও জানায় যে , কোনো নারীর গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়া কোনো মানুষ তার ক্ষতি করতে পারবে না ৷ এই কথা বলে সে ও অদৃষ্ট হয়ে যায় ৷
ম্যাকবেথ এতে প্রচণ্ড ভরসা পান এবং ম্যাকডাফকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে সংকল্প করেন নতুন ভাবে আবার ৷ এবার তৃতীয় প্রেতাত্মা এক মুকুট পরিহিত অবস্থায় একটা গাছ হাতে নিয়ে এসে ম্যাকবেথকে বলে যে , তিনি যেন সিংহের মতো সাহসী হয়ে ওঠেন ৷ কারণ যতক্ষণ না বিশাল বর্নাম বন ম্যাকবেথের ডানসিনার পাহাড়ের ওপর উঠে না আসছে , ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারবে না , বলেই প্রেতাত্মা চলে যায় ৷ এই ঘটনার পর তাঁর মনে নিজের প্রতি আবার গভীর আস্থা ফিরে আসে ৷ ম্যাকবেথ এবার ডাইনিদের চাপাচাপি আরম্ভ করেন ব্যাঙ্কো-র ছেলে রাজা হবে কি না , তাঁকে তা জানাতে ৷ তখন ডাইনিরা তাঁকে একটি দৃশ্য দেখায় ৷ তাতে ম্যাকবেথ দেখেন যে আটটা ছায়ামূর্তি তাঁর দিকে আসছে , যার শেষের জন ব্যাঙ্কো একটি গ্লাস হাতে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ এর পর তিনি দেখেন বাকি সাতজনের হাতে রাজদণ্ড আর পেছনে রক্তমাখা শরীরে ব্যাঙ্কো তার দিকে তাকিয়ে হাসছে ৷ আর অন্য মূর্তিগুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে কি যেন দেখাচ্ছে তাকে ! এর পর ওই মূর্তিগুলো ও ডাইনিরা ম্যকবেথের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় ৷ এমন সময়ে তাঁর
ম্যাকবেথ এতে প্রচণ্ড ভরসা পান এবং ম্যাকডাফকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে সংকল্প করেন নতুন ভাবে আবার ৷ এবার তৃতীয় প্রেতাত্মা এক মুকুট পরিহিত অবস্থায় একটা গাছ হাতে নিয়ে এসে ম্যাকবেথকে বলে যে , তিনি যেন সিংহের মতো সাহসী হয়ে ওঠেন ৷ কারণ যতক্ষণ না বিশাল বর্নাম বন ম্যাকবেথের ডানসিনার পাহাড়ের ওপর উঠে না আসছে , ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারবে না , বলেই প্রেতাত্মা চলে যায় ৷ এই ঘটনার পর তাঁর মনে নিজের প্রতি আবার গভীর আস্থা ফিরে আসে ৷ ম্যাকবেথ এবার ডাইনিদের চাপাচাপি আরম্ভ করেন ব্যাঙ্কো-র ছেলে রাজা হবে কি না , তাঁকে তা জানাতে ৷ তখন ডাইনিরা তাঁকে একটি দৃশ্য দেখায় ৷ তাতে ম্যাকবেথ দেখেন যে আটটা ছায়ামূর্তি তাঁর দিকে আসছে , যার শেষের জন ব্যাঙ্কো একটি গ্লাস হাতে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ এর পর তিনি দেখেন বাকি সাতজনের হাতে রাজদণ্ড আর পেছনে রক্তমাখা শরীরে ব্যাঙ্কো তার দিকে তাকিয়ে হাসছে ৷ আর অন্য মূর্তিগুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে কি যেন দেখাচ্ছে তাকে ! এর পর ওই মূর্তিগুলো ও ডাইনিরা ম্যকবেথের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় ৷ এমন সময়ে তাঁর
কাছে খবর আসে ম্যাকডাফ
ইংল্যাণ্ডে পালিয়ে গেছেন ৷ এই সংবাদ পেয়েই ম্যাকবেথ সিদ্ধান্ত
নেন যে ম্যাকডাফের
প্রাসাদ আক্রমন করে তিনি তাঁর স্ত্রী ,
পুত্র সহ অন্যান্য
বংশধরদেরকে হত্যা করবেন ৷
অপর
দিকে ইংল্যাণ্ডে রাজা এডোয়ার্ডের প্রাসাদের
সামনে নিহত রাজা ডানকানের পালিয়ে
থাকা এক পুত্র ম্যালকম এর সঙ্গে সদ্য পালিয়ে য়াওয়া ম্যাকডাফের সঙ্গে শলা
পরামর্শ চলতে থাকে ৷ তখন ম্যাকডাফের কাছে স্কটল্যাণ্ডের সর্বশেষ
অবস্থা জানতে চান ম্যালকম
৷ তিনি স্কটল্যাণ্ডের সব অবস্থা
জ্ঞাত হয়ে ম্যাকডাফকে
চর হিশেবে ম্যাকবেথের
পক্ষথেকে পাঠানো হয়েছে কি না তা
ভালভাবে বিভিন্ন
উপায়ে পরীক্ষা করেন ৷ সে
কোনো চর নয় তা বুঝতে পেরে ম্যালকম তাঁর পরবর্তি পদক্ষেপের
ব্যাপারে তাকে অবগত করেন এবং ম্যকডাফের সততায়ও তিনি বিশ্বাস স্থাপন করেন ৷ তিনি তার স্ত্রী-পুত্রকে প্রাসাদে
বিপদে ফেলে ইংল্যাণ্ডে
তাঁর কাছে চলে আসার জন্যে তাকে দুষারূপ
করেন এবং বলেন যে , তিনি শীঘ্রই
দশহাজার কুশলী ও দক্ষ সৈন্য নিয়ে ম্যাকবেথকে
শাস্তি দিতে স্কটল্যাণ্ডে
তাঁর দুর্গের দিকে যাত্রার
পরিকল্পনা করেছেন
৷ এমন সময়ে নিহত রাজা ডানকানের এক পুরাতন সভাসদ রস
ও সেখানে এসে পৌছান ৷ তার কাছ থেকে তারা তখন স্কটল্যাণ্ডের জণসাধারণের
মনোভাবের সংবাদ সংগ্রহ
করেন ৷ তাদের আলোচনার
এক পর্যায়ে জানতে পারেন ম্যাকবেথ ম্যাকডাফের
স্ত্রী-পুত্র সহ প্রাসাদের
সবাইকে ম্যাকবেথ
হত্যা করেছেন ৷ সে সংবাদটি তাদরকে রস বলে দেন ৷ আর রস এও জানিয়ে দেন যে তাঁরা যদি ম্যাকবেথের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ করেন তবে
স্কটল্যাণ্ডের মানুষ এখন স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাদের হয়ে যুদ্ধে যোগদান করতে ও প্রস্তুত
হয়ে আছে ৷
ম্যাকডাফ তাঁর পরিবার ও পরিজনের মর্মান্তিক
পরিণতির সংবাদে প্রথমে
মহ্যমান হয়ে পড়লেও পরে নিজকে সামলে নেন ৷ তখন ম্যালকমও ম্যাকডাফকে
শোকের আঘাত সহ্য করতে পরামর্শ
দিয়ে তাঁর তরবারিকে
আরো ভালো করে শানিত
করেন ৷ এবং ম্যাকডাফের অন্তরকে
ক্রোধে আরো উত্তেজিত
করে তুলতে পরামর্শ
দেন ৷ তখন ম্যাকডাফ
ঈশ্বরের কাছে প্রর্থনা
করে বলেন যে স্কটল্যাণ্ডের এই শয়তানকে উপযুক্ত
শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা
যেন ঈশ্বর তারে দান করেন ৷ তখন ম্যালকম তার সাহসের প্রশংসা
করে জানালেন যে সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত
হয়ে গেছে এখন য়াওয়ার
অপেক্ষায় শুধু ৷ এবার নিশ্চয়
তাদের দুঃখের দিন শেষ হয়ে ভোর হতে আর দেরি নেই ৷
এদিকে লেডী
ম্যাকবেথ অসুস্হ হয়ে ম্যাকবেথের ডানসিনান
পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত
প্রাসাদে তাঁর এক পরিচারিকা
ও
এক ডক্তারের অধিনে চিকিৎসাধিন আছেন ৷
এই সময়ে
লেডী ম্যাকবেথ ঘুমের ঘোরে বলা কথার মধ্যে দিয়ে তাঁর ও ম্যাকবেথের
সব অপরাধের কাহিনি
প্রকাশ করে দেন ডাক্তারের কাছে ৷ ইহা শুনে চিকিৎসক
মন্তব্য করেন যে
, পাপগ্রস্ত মন এমনি ভাবেই তার মনের গোপন কথা প্রকাশ করে ফেলে ৷ কোনো ডাক্তার
ই এখন আর কিছু করতে পারবে না ৷ এখন শুধে দরকার ঈশ্বরের কৃপা ৷ এই কথা বলে চিকিৎসক প্রসাদ ছেড়ে চলে যান ৷ তবে তাঁর পরিচারিকার ও ডাক্তারের কথা থেকে প্রকাশ
পায় যে লেডী ম্যাকবেথ ঘুমের মধ্যে বিছানায়
উঠে বসে কাগজে চিঠি লেখেন ,
কথা বলেন , ঘুমের মধ্যেই
একটা বাতি ধরে সামনে এগিয়ে যান , তখন
তাঁর চোখ খোলা থাকে , কিন্তু তাতে তার চেতনার কোনো লক্ষণ থাকে না ৷ আর তিনি সব সময় তাঁর হাত দ’টো ঘষে ঘষে বলেন যে
তাঁর হাতের কলঙ্কিত
দাগ কি কখনো উঠবে না
? ঘুমের ঘোরেই তিনি তাঁর স্বামীর ভয় ভাঙ্গাতে সচেষ্ট
হয়ে বলেন তুমি ভয় পেয়ে গিয়ে সব পণ্ড করে দিবে দেখছি
! তিনি ম্যাকডাফের
স্ত্রী-পুত্রের হত্যার উল্লেখ
করে বলেন তাঁর হাত কি কখনো পরিষ্কার হবে না ? তাঁর
হাতের
রক্তের গন্ধ কি আরবের সব আতর ঢেলে দিলেও সে দুর্গন্ধ দুর হবে না ৷ তিনি আরো বলেন যে , ব্যাঙ্কো-কে তো কবর দেওয়া হয়েছে সে আর
সেখান থেকে ওঠে আসতে পারবে না ইত্যাদি বিভিন্ন পুরাতন
কথা ৷ যা থেকে তাদের অপরাধের
সব তথ্য প্রকাশ
হয়ে পড়ে ৷
অপরদিকে ডানসিনান
পাহাড়ের কাছাকাছি অঞ্চলে
ম্যাকডাফের নেতৃত্বে আগত ইংরেজ বাহিনীর
সঙ্গে ম্যাকবেথের সৈন্যবাহিনীর
অনেক সৈন্য দল ত্যাগ করে স্কচ-
আভিজাত ব্যক্তির নেতৃত্বে
একত্রে মিলিত হয়েছে ৷ যারা এতদিন ম্যাকবেথের
ভয়ে তাঁর প্রতি আনুগত্য ছিলো ,
তারা সবাই এই দলে যোগ দিয়েছে ৷ তাই ম্যাকবেথ
প্রাণপণে তাঁর দূর্গকে
রক্ষার চেষ্টা করছেন নিজেই
৷
ডানসিনান পাহাড়ে
তাঁর একমাত্র ভরসা প্রেতাত্মার দেওয়া
কথা ৷ কারণ তারা তখন তাকে বলেছিলো বার্নাম বন ডানসিনানর পাহাড়ে
না ওঠা পর্যন্ত
তাঁর কোনো ভয় নেই ৷ তাকে প্রেতাত্মা আরো বলেছিলো
যে , নারীর গর্ভজাত কোনো মানুষ তাঁকে পরাজিত করতে পারবে না ৷ তবু ম্যাকবেথ অস্থির
হয়ে উঠেছেন ৷ কেনো যেন তাঁর বিশ্বাস
টুকরা টুকরা হয়ে ভেঙ্গে
গেছে ৷ তিনি উপলব্ধি
করছেন যেন শুকনো পাতার
মতো তাঁর জীবন যেন ঝরে যেতে বসেছে ৷
এই
মূহূর্তে তাই ম্যাকবেথ
তাঁর বিগত জীবনের
হিসেব নিকেষ মিলাতে গিয়ে
এ-ও উপলব্ধি
করেন যে তিনি মানুষের শ্রদ্ধা
, ভালবাসা , আনুগত্য , এবং বন্ধু - বান্ধব কিছুই পান নি ৷ শুধু পেয়েছেন
মানুষের নিরুচ্চার আর সুগভীর অভিশাপ
৷ তবুও তিনি বীর ও যোদ্ধা ৷ তাই তিনি শেষ লড়াইটা চালিয়ে
যেতে দৃড়প্রতিজ্ঞ হন ৷ তখন প্রয়োজন
না থাকলেও যুদ্ধের
পোশাক পরে নিয়ে লেডী ম্যাকবেথের
অবস্থা ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলেন
৷ চিকিৎসক তাঁকে জানালেন লেডী
ম্যাকবেথের রোগ শরীরের
নয় তাঁর অসুখ মনের ৷ এইজন্যে
তাঁর দরকার মনের বিশ্রামের আর ঈশ্বরের কৃপার ৷ ইহাতে ম্যাকবেথ চিকিৎসকের উপর
রাগ করেন এবং বলেন তিনি যেন তখন থেকে মানুষের পরিবর্তে
কুকুরের চিকিৎসা আরম্ভ করেন ৷ আর তাকে
চলে যেতে নির্দেশ
দেন ৷
অন্যদিকে বার্নামের
বনে আশ্রয় নিয়েছে
ইংরেজ ও স্কচ সামন্তদের যৌথ বাহিনী
৷ প্রবীণ
ইংরেজ সেনাপতির নির্দেশে
বন থেকে একটা করে গাছের ডাল ভেঙে মথার উপর ধরতে বললেন সকল সৈন্যকে ,
যাতে শক্রুরা তাঁদের
প্রকৃত সংখ্যা বুঝতে না পারে ৷
এর পর সকলে ডানসিনানের
দূর্গের দিকে এগোতে আরম্ভ করে ৷ তখন দূর্গের
বাইরে বাধা দেওয়ার
কেউ উপস্থিত ছিলো না ৷ ম্যাকবেথের তখনো বিশ্বাস ছিল ম্যালকমের
ইংরেজ বাহিনী দূর্গে
প্রবেশ করতে পারবেনা
৷ আর যদি তারা দূর্গ অবরোধ করে রাখেও তবে তারা ওই প্রচিরের
বাইরে না খেয়ে কিংবা অসুখে তিলে তিলে মরতে থাকবে ৷ এই
সময়ে অন্দর থেকে লেডী ম্যাকবেথের
মৃত্যুর সংবাদ আসে ৷ তখন ম্যাকবেথ মন্তব্য করে বলেন দুঃসংবাদটা আর দু’দিন
পরে পেলে ভাল হতো ৷
এই পর্যায়ে
ম্যাকবেথ মনে এমন এক উপলব্ধির জন্ম হয় , যা তিনি মন্তব্য
আকারে প্রকাশ করে বলেন যে , মহাকাল মানুষকে
মৃত্যুর দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় ; এই পৃথিবীর
রঙ্গমঞ্চে মানুষ অভিনেতার
মতো কিছু পদচারণা
ও আস্ফালনের পর চুপচাপ পর্দার
আড়ালে চলে যায় ৷ এই জীবনের কোনো অর্থ নেই
, উদ্দেশ্য নেই
, সেটা মিথ্যে
হাঁকডাক আর অসাড় প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়
৷
এই
সময়ে দুর্গের দ্বাররক্ষী
এসে জানায় যে তার মনে হয়েছে বার্নামের
জঙ্গলটা ধীরে ধীরে তাদের পাহাড়ের
দিকে এগিয়ে আসছে ৷ ইহা শুনে ম্যাকবেথ
বুঝতে পারেন যে ডাইনিদের কথার মধ্যে ছলনা রয়েছে ৷ তাদের
সেই কথার আড়ালে নিহিত ছিলো অন্য একটা অর্থ যা তখন তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় নি ৷ তবুও ম্যাকবেথ
শেষ লড়াই চালিয়ে
বীরের মতো মরতে সিদ্ধান্ত নেন ৷
এদিকে
ম্যালকমের সৈন্যবাহিনী ডানসিনান
দূর্গের সামনে পৌছিলে , ম্যালকম তাদের মুখের সামনের
গাছের ডাল সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ
দেন ৷ চার দিক থেকে অবরুদ্ধ ম্যাকবেথের
তখন একমাত্র ভরসা প্রেতাত্মার কথা ৷ যুদ্ধের
এই পর্যায়ে সিউয়ার্ডের
ছেলে মারা যায় ৷ তখন ম্যাকবেথ তাকে বলেন তুমি নিশ্চয় নারীর গর্ভজাত সন্তান
, যাদের দেখলে হাসি পায় আমার ৷ এই
কথাও মরার আগে তাকে জানাতে ভূলেন নাই ম্যাকবেথ
৷
এবার
রণক্ষেত্রে ম্যাকডাফ আসেন ৷ তাঁর
স্ত্রী-পুত্রের হত্যার প্রতিশোধ
নিতে তিনি তখন দৃঢ়সংকল্প
৷ ম্যালকম ও বৃদ্ধ সিউডাফ ও যুদ্ধে যোগদান করেন ৷ সিউয়ার্ড
জানান দূর্গরক্ষক আত্মসমর্পন
করেছে তাই এখন দূর্গে
প্রবেশে কোনো বাধা নেই ৷ যুদ্ধক্ষেত্রের আর এক অংশে ম্যাকবেথ ও ম্যাকডাফ সামনা সামনি হয়ে পড়েন ৷ এবং উভয়ের মধ্যে কঠোর বাক্য-বিনিময়ের পর ম্যাকবেথ বলেন যে , যত সহজে তিনি ভেতরে এসেছেন
তত সহজে তাঁকে মারা যাবে না ৷ কারণ তাঁর শরীর মায়াবলে
সুরক্ষিত আছে ৷ কোনো নারীর গর্ভজাত
কেউ তাকে হত্যা করতে পারবে না
৷
এবার ম্যাডাফ জানালেন
তিনি মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হননি ৷ সঠিক সময়ের আগে মাতৃজঠরের থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৷
এই কথা শুনে ম্যাকবেথের শেষ ভরসা টুকু ও চলে গেলে তিনি যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে চাইলেও ম্যাকডাফের
তীব্য শ্লেষে আবার এগিয়ে গেলেন তাঁর শেষ লড়াই লড়তে এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে ৷
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ম্যালকম , সিউয়ার্ড , রস ও লেনক্স প্রভৃতি
সবাই এক জায়গায়
জড়ো হয়ে পড়েন ৷ এই সময়ে ম্যাকবেথের ছিন্নমুণ্ড
নিয়ে ম্যাকডাফ এলেন ৷ এই সময় উপস্থিত
সবাই ম্যালকমকে রাজা বলে অভিহিত
করে তাঁকে সবাই অভিনন্দন জানালো
৷ স্কটল্যাণ্ডের দুঃখের
দিনের পরিসমাপ্তি ঘটলো ৷
(সূত্র;- বাংলা বাজার , রহমান বুকস থেকে প্রকাশিত ,
শেক্সপিয়র রচনাসমগ্রেের ম্যাকবেথের অনুকরণে তৈরি এই লেখাটি )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন