আত্মার সন্ধানে বিজ্ঞান ;-



মানুষের আত্মার সন্ধানে বিজ্ঞান ;-এবং মহাজগতের  সৃষ্টি  প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি

   প্রসঙ্গে কিছু ধারণা ;-

           
      মানুষের  আত্মার  সন্ধানে  বিজ্ঞান এবং পৌরাণিক ও  ধর্মীয়  বিশ্বাস  প্রসঙ্গ :

    আত্মার ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে যে তথ্য এর মধ্যে বেরিয়ে এসেছে তা হচ্ছে-  বিজ্ঞানীরা মনে করেন মানুষের মস্তিষ্ক তার দেহের এক অতি জটিল অঙ্গ  

        মানুষের মাথার করোটির ভিতরে প্রায় কমবেশি দেড় কিলো ওজনের যে থকথকে ধুসর রংয়ের পদার্থটি আছে , তার মধ্যে গদাগতি করে অবস্থান করেছে প্রায় দশ হাজার   
কোটি নিউরন আর কোটি কোটি সায়ন্যাপসেস   সেই সঙ্গে  সেরিব্রাম , সেরিবেলাম ডাইসেফেলন আর ব্রেইনস্টেমে  বিভক্ত হয়ে তৈরি করেছে জটিলতম সব কাঠামোর

         গবেষকরা বিশেষ করে অভিজিৎ রায় ২০০২ সালে মস্তিষ্কের তেতাল্লিশটি কাঠামো  
 (প্রত্যঙ্গ ) সনাক্ত করে মস্তিষ্কের  একটি  মডেলিং করেছিলেন তার গবেষনার কাজের জন্যে তার পিএইচডির কাজ শুরুর সময়ে ব্রেইনের প্রত্যঙ্গের কিছু বিদঘুটে নামের উল্লেখ করেছেন তিনি, যার মধ্যে- কর্পাস ক্যালোসাম , ফরনিক্স , হিপোক্যাম্পাস ,  হাইপোথ্যাল্মাস , ইনসুলা , গাইরাস , কডেট নিউক্লিয়াস , পুটামেন ,থ্যালমাস , সবাস্ট্যানশিয়া নাইয়াগ্রা , ভেন্ট্রিকুলাস  ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য

          আমাদের চিন্তাভাবনা , কর্মকাণ্ড , চাল চলন এবং প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই মস্তিষ্কের এই সমস্ত বিদঘুটে নামধারী প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্মকাণ্ডের এবং তাদের  কাজের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল মস্তিষ্কের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হলে , কিংবা এর কাজকর্ম বাধাগ্রস্থ হলে নানারকমের অদ্ভূত এবং অতীন্দ্রীয় অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে  

           আমাদের মস্তিষ্ক একটি হলেও এটি মূলত ডান  এবং  বাম  দুই গোলার্ধে বিভক্ত  কর্পাস ক্যালোসাম নামের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোটি মস্তিষ্কের বামদিক  এবং  ডানদিকের কাজের সমন্বয় সাধন  করে  থাকে     মস্তিষ্কের দুই অংশের মধ্যে অবস্থিত কর্পাস ক্যালোসাম নামের প্রত্যঙ্গটি কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হলে মাথার বামদিক এবং ডানদিকের কাজের সঠিক সমন্বয় ব্যহত হয়ে  রোগীর দ্বৈতসত্তার ( Split Brain experience ) উদ্ভব ঘটতে পারে

          আবার বিজ্ঞানীরা তাদের পরীক্ষায় এও দেখেছেন যে হাইপোথ্যালমাস নামক মস্তিষ্কের অন্য আরেকটি প্রত্যঙ্গকে কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক ভাবে উদ্দীপ্ত করে (মৃগীরোগ সারাতে এ প্রক্রিয়াটি ব্যবহৃত হতো ) দেহবিচ্যুত অবস্থার সৃষ্টি করা যায় তখন রোগীরা মানসিকভাবে মনে করে যে সে দেহ বিযুক্ত হয়ে ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে অনেক সময় মস্তিষ্কে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরামাণ বেড়ে গেলে (হাইপারকার্বিয়া ) অথবা কোনো কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমান হ্রাস হলে (হাইপক্সিয়া ) ও এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে  

           আবার কিছু কিছু ড্রাগ যেমন, ক্যাটামিন , এলএসডি ,সিলোকারপিন , মেসকালিন ইত্যাদির প্রভাবেও নানা অপার্থিব অনুভূতির সৃষ্টি হয় , এ রকমের ও প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়,  বিভিন্ন বৈজ্ঞানীক গবেষণায় আর ড্রাগে নাকি দেহ-বিযুক্ত অনুভূতি ছাড়াও আলোর ঝলকানি দেখা ,পূর্বজন্মের স্মৃতি রোমন্থন,  ধর্মীয় অভিজ্ঞতা সহ অনেক কিছুই পাওয়া সম্ভব হয় আবার  কেউ কেউ একটি নিকষ কালো অন্ধকার ট্যানেলের মধ্যে দিয়ে ভেসে চলা, হেঁটে চলা , গায়ে গরম লাগা , ট্যানেলের শেষ প্রান্তে দোজকের আগুন অবলোকন করা সহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাও ব্যক্ত করছেন, ড্রাগ সেবনের প্রতিক্রিয়ায়   তাই    এগুলো থেকে বোঝা যায় , মরণ-প্রান্তিক এবং দেহ-বিযুক্ত অনুভূতিগুলো আসলে কিছুই নয় , আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়বিক উত্তেজনার ফসল ছাড়া অন্য কিছু নয়

              বিজ্ঞানী সুসান ব্লাকমোর ব্রিটেনের ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক , এবং মরণ-প্রান্তিক অভিজ্ঞতা বিষয়ে একজন বিষেশজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী তিনি ডাইং  টু  লিভ 
ইন  সার্চ  অব  দ্য লাইট  এবং মীম  মেশিনসহ বহু গ্রন্থের রচিয়েতা তিনি তার তিন বন্ধুর সঙ্গে মিলে মারিজুয়ানা সেবন করে কিভাবে একদিন তার  আউট  অব  বডি অভিজ্ঞতা হয়েছিল , কিভাবে তিনি ট্যানেলের মধ্যেদিয়ে ভেসে বেড়িয়েছিলেন ,আর অক্সফোর্ডের  বিল্ডং  থেকে বের হয়ে কিভাবে ভাসতে ভাসতে তিনি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে পৌছে গিয়ে , আবার নিজের দেহে ফিরে এসেছিলেন , তার বর্ণনা তিনি তার লিখিত বই- ডাইং  টু  লিভঃ  নিয়ার ডেথ  এক্সপেরিয়েন্স (১৯৯৩ তে প্রথম প্রকাশ) এ লিপিবদ্ধ করেছেন খুব স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে পরবর্তিকালে অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠভাবে এনডিই (near death experience বা N D E ) এবং ওবিই (OUT OF BODY EXPERIENCE বা ODE ) এর বৈজ্ঞানিক কারণ অনুসন্ধান করে এই উপসংহারে পৌছেয়েছেন যে , মরণ প্রান্তিক অভিজ্ঞতাগুলো কোনো পরকালের অস্তিত্বের প্রমান নয় ,বরং এগুলোকে স্নায়ু-রসায়ন , শরীরবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের সাহায্যে খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব  এখন তাই ধর্মীয় দিব্য দর্শনকোনো সার্বজনীন সত্যঘঠনা নয় ,উহা মানুষের আজন্ম লালিত ধর্মানুগত্য আর নিজ নিজ ধর্মীয় ও সংস্কৃতির  রকমফেরে ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হয়ে নানা ভাবে  এর আবির্ভাব হয়ে থাকে, যার উৎস আসলেই তাদের নিজ মস্তিস্কই   

       ১৯৫০ সালে উইল্ডার পেনফিল্ড নামের এক নিউরোসার্জন মস্তিষ্কে অস্ত্রপ্রচার করার সময় ব্রেনের  বিভিন্ন অংশকে বৈদ্যুতিকভাবে উদ্দীপ্ত করে পরীক্ষা করে দেখতে পান যে, কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে যখন মস্তিষ্কের  টেম্পোরাল লোব  এ ইলেক্ট্রোড ঢুকিয়ে উদ্দীপ্ত করা হয়েছে ,তখন তারা অনেকেই নানা ধরনের গায়েবি আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন , যা অনেকটা দিব্য দর্শনের অনুরূপ এর একই ধারাবাহিকতার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ভিলায়ানুর এস রামাচান্দ্রন তার গবেষণায় দেখালেন যে ,টেম্পোরাল লোব এপিলেপ্সি রোগীদের ক্ষেত্রেই ঈশ্বর-দর্শন ,ওহি-প্রাপ্তির মতো ধর্মীয় অভিজ্ঞতার আস্বাদনের সম্ভাবনা বেশি, যা ক্ষেত্র বিশেষে এই অভিজ্ঞতার আগে ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পাওয়া , গায়েবি কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া ,মুচ্ছা যাওয়া , বা কাপুনি দিয়ে জ্বর আসার মত ঘটনা ঘটতে পারে অর্থাৎ মস্তিষ্কের কোনো কোনো অংশকে উত্তেজিত করলে ক্ষেত্র বিশেষে অনেক মানুষের পক্ষে ভূত , প্রেত ,ড্রাকূলা থেকে শুরু করে শয়তান ,ফেরেশতা কিংবা ঈশ্বর দর্শন সব কিছুই সম্ভব   


           আত্মার  উৎস সন্ধানে পৌরাণিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের নানা রকম গল্প !

    গবেষক     Elbert, Jerome W , তার গবেষণা গ্রন্থ;-Are souls Real ? (প্রকাশ-২০০০সাল) এবং  আর এক গবেষক- Kurtz, Paul ,তার গবেষনা গ্রন্থ;- Science and Religion : Are They Compatible ? (প্রকাশ-২০০৩ সাল ) তে উভয়েই একমত হয়ে উল্লেখ করেছেন যে -আত্মার ধারণা অনেক পুরানো প্রাচীন মানুষ যখন থেকে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে অনুসন্ধান আরম্ভ করেছে , নিজের জীবন নিয়ে এবং মৃত্যু নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ,জীবন ও জগতের বিভিন্ন রহস্যে নিয়ে চিন্তা করা আরম্ভ করছে, হয়েছে উদ্বেলিত জীবনের রহস্যে নিয়ে ,আর তার ধারাবাহিক বা ক্রমিক পরিণতিতেই এক সময় মানব মনে আত্মার ধারণার সৃষ্টি হয়েছে অর্থাৎ জীবিত প্রাণ থেকে জড়জগৎকে পৃথক করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহজ সমাধান হিসাবে আত্মার ধারণা মানুষ একটা সময়ে গ্রহন করেছে বলে উক্ত গবেষক ও ঐ সব গ্রন্থের প্রণেতারা মনে করার যথেষ্ট প্রমাণ বা ধারণা পেয়েছেন তাদের পর্যবেক্ষণে  

         জীবন মৃত্যুর যোগসূত্র খুঁজতে গিয়ে আত্মাকেআবিষ্কার এর কাহিনি ঘটেছে বলে আরো অনেক অনুসন্ধানকারীরাও মনে করেন, যার সঙ্গে পরবর্তীতে যোগ হয়েছে নানা ধরণের পৌরাণিক ও ধর্মীয় কাহিনির জন্ম হয়েছে আধ্যাত্মবাদ আর ভাববাদের  তারপর সময়ের সাথে সাথে সেগুলো প্রচলিত সমাজিক সংস্কৃতির সাথে মিশে একসময় একাকার হয়ে যাওয়ায় এখন আত্মা ছাড়া জীবন-মৃত্যুকে সংজ্ঞায়িত করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে

       আত্মা দিয়ে জীবন মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা প্রথম শুরু হয়েছিল সম্ভবত প্রায় আড়াই লক্ষ বছর আগে , নিয়ান্ডার্থাল মানুষের আমলে নিয়ানডার্থাল মানুষের আগে পিথেকানথ্রোপাস আর সিনানথ্রোপাসদের মধ্যে এ ধরনের ধর্মাচরণের কোনো নিদর্শন এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয় নি তবে নিয়ানডার্থাল মানুষের বিশ্বাসগুলো ও প্রচলিত ধর্মমতগুলো  আজকের তুলনায় অনেক সরল ছিল ইরাকের শানিদায় একটি গুহায় নিয়ানডার্থাল মানুষের ফসিলের সঙ্গে পুষ্পরেণু ,খাদ্যদ্রব্য ,অস্ত্র সামগ্রী, শিয়ালের দাঁত , মাদুলী ইত্যাদির ও নিদর্শন পাওয়া গেছে   যা তারা মৃতদেহ কবর দেয়ার সময় সঙ্গে দিত এই জন্য যে ,যাতে পরপারে তাদের আত্মা শান্তিতে থাকতে পারে আর সঙ্গে আনা জিনিসগুলো প্রয়োজনমত ব্যবহার করতে পারে এই ভেবে   আর এই কথা গুলো কোনো সাধারণের কথা বা ধারণা নয় , ইহা দুইজন গবেষকের গবেষণার ফসল গবেষক Bremmer, Jan N. ,তার গবেষণা গ্রন্থ- The Early Greek Concept of the Soul ,(প্রকাশিত ১৯৮৭ সালে ) এবং গবেষক Elbert, Jerome W, তার গবেষণা গ্রন্থ-Are  Souls  Real ? ( প্রকাশিত ২০০০ সালে ) তাদের ঐ দুই গ্রন্থে সামারাইজ্ড করেছেন এই বলে যে -                 মৃতদেহ নিয়ে আদি মানুষের পারলৌকিক  ধর্মাচরণের ফলশ্রুতিতেই মানব সমাজে ধীরে ধীরে আত্মার উদ্ভব ঘটেছে  

               আত্মার ব্যাপারে বিভিন্ন জাতীর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের প্রাগৈতিহাসিক ধারণার সন্ধান পেয়েছেন  গবেষকরা জাপানিদের বিশ্বাস অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী থেকে আলাদা , আবার আদিবাসী আমেরিকানদের বিশ্বাস আফ্রিকার কালো মানুষের অনুরূপ নয় অর্থাৎ আত্মায় বিশ্বাসীরা নিজেরাই আত্মার সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞার ব্যাপারে একমত নয়

       ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে , হিব্রু , পারশিয়ান ,গ্রিক , রোমান, ফোয়েনিকানস আর ব্যবলনীয় দের মধ্যে আত্মা এবং মৃত্যু- পরবর্তী আত্মার কোনো স্বচ্ছ ধারণা গড়ে ওঠার কোনো প্রমান পাওয়া যায় নি   তারা ভাবতেন মানুষের আত্মা এক ধরণের সজ্ঞাবিহীন ছায়ার মত (shadowy entity ) এবং অসম্পূর্ণ সত্তা  

      জবথ্রুস্ট্র ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ বছর আগের এক পারশিয়ান দার্শনিক তার ধারণা ছিল ছিল আধুনিক আধ্যাত্মবাদীদের দেওয়া আত্মার ধারণার অনেকটা কছাকাছি তার মতানুযায়ী, প্রতিটি মানুষ তৈরি হয় দেহ এবং আত্মার সমন্বয়ে, এবং আত্মার কল্যাণেই আমরা যুক্তি , বোধ , সচেতনতা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে পারি জরথ্রুস্ট্রবাদীদের মতে , প্রতিটি মানুষই নিজের ইচ্ছানুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকারী , এবং সে অনুযায়ী , তার ভাল কাজ কিংবা খারাপ কাজের উপর ভিত্তি করে তার আত্মাকে পুরষ্কৃত করা বা শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে  

       জরথ্রুস্ট্রের দেওয়া আত্মার ধারণাকেই পরবর্তীকালে গ্রিক এথেনীয় দার্শনিকেরা এবং আরো পরে খ্রিস্ট  ও ইসলাম সহ সেমেটিক ধর্মে তাদের দর্শনের অঙ্গীভূত করে নেয় তবে তা বাস্তবে এইরূপ নেয় জরথ্রুস্ট্রের মৃত্যুর প্রায় একহাজার বছর পর অত্যন্ত প্রভাবশালী খ্রিস্ট-ধর্মবেত্তা সেণ্ট অগাস্টিনের হাতে , তার মানুষ=দেহ + আত্মা  যুক্তির সূত্রের মাধ্যমে তার এই ধারণাই পরবর্তীতে অস্তিত্বের দৈত্বতা(dulaliy)হিসাবে খ্রিস্ট ধর্মের দার্শনিক ভিত্তি প্রদান করে এর সাথে পরবর্তীতে যোগ হয় পাপ-পূণ্য এবং পরকালে আত্মার স্বর্গবাস বা নরকবাসের হরেক রকমের বক্তব্য আর এগুলোই পরে ডালপালায় সজ্জিত্ব হয়ে খ্রিস্ট পরবর্তী সেমিটিক ধর্মে ও স্থান করে নেয়, ধর্মে বিধান হিসাবে   আর মানুষ বিশ্বাস করা আরম্ভ করে যে ঈশ্বরের নির্দশে আজরাইল বা যমদূত এসে প্রাণহরণ করলেই কেবল একজন মানুষ মারা যায় তখন তার দেহস্থিত আত্মা পাড়ি জমায় পরলোকে মৃত্যু নিয়ে মানুষের এধরণের বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে এই ধারণা যে , আত্ম জন্মহীন . নিত্য , অক্ষয় , শরীরের মৃত্যু হলেও আত্মা অক্ষত থাকবে চিরকাল ৷ 

            কিন্তু বিজ্ঞান আজ প্রমান করেছে জড় থেকেই জীবের উদ্বব ঘটেছিল পৃথিবীর বিশেষ ভৌত অবস্থায় নানারকম রাসায়নিক বিক্রিয়ার জটিল সংশ্লেষের মধ্য দিয়ে আর তারপর বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে জৈববিবর্তনের কঠিন পথ ধরে আর এই প্রক্রিয়ায় কোনো মন বা আত্মার অস্তত্ব ছিল না প্রাণের উদ্ভবের কোটি কোটি বছর পর বর্তমান আধুনিক মানুষ তো মাত্র ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে আবির্ভূত হয়েছে ৷

        বিজ্ঞানের চোখে মন বা আত্মা কোনো  বস্তুনয় , বরং মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের কাজ কর্মের ফল চোখের কাজ যেমন দেখা , কানের কাজ যেমন শোনা ,পাকস্থলীর কাজ যেমন খাদ্য হজম করা , তেমনি মস্তিষ্ক কোষের কাজ হলো চিন্তা করার মত কাজ করা , আর্থাৎ চিন্তা করা তাই মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের মৃত্যু মানেই কিন্তু
মনএর মৃত্যু, সেই সাথে তথাকথিত আত্মার ও মৃত্যু

         অনেক সময় দেখা যায় দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিকমত কর্মক্ষম আছে , কিন্তু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হারিয়ে গেছে রোগীর এই অবস্থাকে কোমা বলা হয় কোমার স্থায়িত্ব সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ থাকে ,ব্যতিক্রম ছাড়া যারা চেতনা ফিরে পান, তা সাধারণত ২/৩ দিনের মধ্যেই পান বাকিদের অনেকেই মারা যান , কিন্তু অনেকে কোমা উঠে আসতে পারলেও থেকে যান অচেতন দশায়, যাকে  নিস্ক্রিয় দশা বা vegetative state’ বলে , তখন অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকে  তখন কৃত্রিমভাবে দেহকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হলেও রোগীর চৈতন্য আর ফেরৎ আসে না আধুনিক বিশ্বে এসব ক্ষেত্রে   ব্রেন ইমেজিং টেকনিক এর মাধ্যমে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় ক্ষেত্র বিশেষে, বা প্রয়োজন হলে

     আসলে মানুষের মতো বহুকোষী উচ্চশ্রেণীর  প্রাণীদের মৃত্যু দুধরনের দেহের মৃত্যু বা Clineal Death  এবং কোষীয় মৃত্যু বা Cellular Death   দেহের মৃত্যুর স্বল্প সময় পরেই কোষের মৃত্যু ঘটে তবে দেহের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে যে কোনো একটির বা সবগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হলে মৃত্যু হতে পারে যেমন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বন্ধ হলে কোমা হয় , হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে সিনকোপ , আর মানুষের অন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফুসফুসের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে আসফিক্সিয়া   তবে মানুষের দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেহের মৃত্যুর পর পরও বেঁচে থাকে কিছুক্ষণ যেমন মস্তিষ্ক ৫ মিনিট , হৃৎপিণ্ড ১৫ মিনিট ,কিডনী ৩০ মিনিট ,কঙ্কাল পেশী -৬ ঘণ্টা আর অঙ্গ বেঁচে থাকার অর্থ হলো তার কোষগুসো বেঁচে থাকা যতক্ষণ কোষে শক্তির যোগান থাকে, কোষ তৎক্ষণই বেঁচে থাকে শক্তি উৎপন্ন হয় কোষের অভ্যন্তরস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া থেকে, তাই এর কার্যকারিতা বন্ধ হলেই কোষেরও মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে
        
     কাজেই মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় ,বরং একটি জটিল প্রক্রিয়া দেহের মৃত্যু দিয়ে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে শরীরের শেষ কোষটির মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে । (এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীর এর লিখিত অবিশ্বাসের  দর্শন বইটি পড়তে পারেন )

       সূত্র; উপরে উল্লেখিত বইটির পঞ্চম অধ্যায় পৃষ্টা ১২৮ থেকে ১৬৩ পর্যন্ত সহ আরো কিছু অংশ





 

 

বিগব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ থেকেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি আর সত্য নয়

 

                  শুধু   বিগব্যাঙ   বা   মহাবিস্ফোরণ   থেকেই   এই  মহাবিশ্বের  সূচনা  বা  উদ্ভূত   হওয়া   এখন   আর   সত্য   নয় !


         বিজ্ঞানের কোনো সিদ্ধান্তই  আজগুবি নয় ,  প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের পেছনে একাধিক প্রমাণ ও যুক্তি থাকে তবে বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই,  আজ যা সত্য বলে গৃহীত হয়েছে ,ভবিষ্যতে তা মিথ্যা প্রমানিত হতে পারে এবং আজ যাকে শেষ বলে মনে হয় ,তারপরও আরো থাকতে পারে ; আর বিজ্ঞান এই সম্ভাবনাটিকে মেনে চলে ৷ 


         বিগব্যাঙতত্ত্বটি বৈজ্ঞানিক সমাজে গৃহীত হওয়ার পর ১৯৫১ সালে pope pius x11 পন্টিফিকাল একাডেমির সভায় ঘোষণা করেছিলেন ,

           যদি সৃষ্টির শুরু থাকে , তবে অবশ্যই এই সৃষ্টির একজন স্রষ্টাও রয়েছে ,
                            আর সেই স্রষ্টাই হলেন  গড  বা  ঈশ্বর


       কিন্তু এই সময় জ্যোতিবিজ্ঞানী এবং ধর্মঘাজক জর্জ হেনরি লেমিত্রি পোপকে সে সময় বিনয়ের সঙ্গে এ ধরণের যুক্তিকে অভ্রান্তহিসাবে প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন  


       যখন কিছু আধুনিক কোরান এর ব্যাখ্যাকারীগণ  পবিত্র কোরানের ২১ নং সুরা আম্বিয়ার  , ৩১ , ও ৩২ নং আয়াতের দ্বারা বিগব্যাঙ এর ধারণা আগ থেকেই কোরানে উল্লেখ আছে বলে তা কোরানের কথা বলে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন , তখন ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসী পদার্থবিজ্ঞানী আব্দুস সালাম জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের বিগব্যাঙ তত্ত্বকে কোরানের আয়াতের সাথে মিশাতে বারণ করে বলেছেন ;-
        

              বিগব্যাঙ  তত্ত্বের  সাম্প্রতিক  ভাষ্যটি  বর্তমান  মহাবিশ্বের  উৎপত্তির 
               সর্বোৎকৃষ্ট  ব্যাখ্যা  প্রদান  করছে   কিন্তু  আগামীকাল  যদি  এর 
               চাইতেও  কোনো  ভাল  ব্যাখ্যা  পাওয়া যায় , তাহলে  কি  নতুন 
               বৈজ্ঞানিক    দৃষ্টিভঙ্গির     সাথে  তাল  মেলাতে    গিয়ে   ধর্মগ্রন্থের             
                  আয়াত  বদলে  ফেলা  হবে  ?

       Pope –x11 যা বুঝতে পারেন নাই., বিজ্ঞানী সালাম তা বুঝতে পেরছিলেন

          কোরানে সুরা আম্বিয়ায় ৩০ থেকে ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে;- 

      ২১: ৩০-অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল ? তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলামতবুও কি ওরা বিশ্বাস করবে না 

       ২১ :৩১- আর আমি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত সৃষ্টি করেছি যাতে পৃথিবী ওদেরকে নিয়ে এদিকে বা ওদিকে ঢলে না যায় ,আর আমি ওর মধ্যে প্রশস্ত পথ করে দিয়েছে যাতে ওরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে  


       ২১ :৩২- আর আমি আকাশকে করেছি এক সুরক্ষিত ছাদ , তবু ওরা তার নিদর্শনসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়
        ২১ :৩৩- আল্লাহ্ ই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে ৷
       (সূত্র;-কোরানশরিফ-সরল বঙ্গানুবাদ, লেখক-মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান )

      আসলে কি এই আয়াতগুলো আমাদের আকাশ পৃথিবীর মধ্যকার সম্পর্কে খুব প্রাচীন আর অস্পষ্ট একটা ধারণার অতিরিক্ত কিছু দেয় ? আর কোথায় এখানে বিগব্যাঙ এর উল্লেখ, যা থেকে ঐ সব আয়াতদ্বারা বিগব্যাঙ ধারণা প্রমানিত হয় এমনকী আয়াতের কোথাও বিস্ফোরণের সামান্য ইঙ্গিতটুকুও নেই  শুধু কতগুলো শব্দমালা- আকাশ ও পৃথিবী একসাথে মিশে ছিল, পরে আমি উভয়কে পৃথক করে দিলামএর থেকে বিগব্যাঙ এর কী কোনো মিল পাওয়া যায় ? পৃথিবীর জন্ম হয়েছে বিগব্যাঙ এর সাড়ে নয়শ কোটি বছর পরে উপরন্ত্ত পদার্থবিজ্ঞানে বিগব্যাঙ স্থান-কাল অদ্বিতীয়ত্বের (space –time singularity) সাথে জড়িত, পদার্থের সাথে নয় , তাই নব্য ব্যাখ্যাকারীদের উল্লেখিত ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক প্রমাণিত হয় না   


          ২০০৪ সালের ২১ জুলাই ডাবলিনে অনুষ্ঠিত  জেনারেল রিলেটিভিটি এন্ড  গ্র্যাভিটেশন - এর ১৭তম সম্মেলনে  মহাবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং  ব্ল্যাক  হোল  সম্পর্কে তার  পূর্বের ধারণা পরিবর্তন করে নুতন বক্তব্য প্রদান করেন আগে বলা হতো যে ব্ল্যাক হোলের সংস্পর্শে এলে বস্তু বা শক্তি যাই হোক না কেন তা চিরতরে লুপ্ত হয়ে যায় হকিং এবার জানালেন যে ব্ল্যাক হোল তথ্য বেরিয়ে আসে , সেটা হারিয়ে যায় না ৷
     (সূত্র;-ছোটদের মহাবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ,লেখক-মো. আব্দুল আজিজ ) 

    
           তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র অনুযায়ী একটি বন্ধ সিস্টেমে মোট শক্তির পরিমান স্থির থাকলেই কেবল শক্তি এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হয় স্টিফেন হকিং এর মতে , মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমান শূন্য *  তিনি ১৯৮৮ সালে তার বিশ্ববিখ্যাত বই , কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস  বা  A Brief History of Time  এ উল্লেখ করেছেন , যদি এমন একটা মহাবিশ্ব ধরে নেওয়া যায় ,যেটা মহাশূন্যে মোটামুটি সমস্বত্ত্ব , তাহলে দেখানো সম্ভব , যে ঋণাত্নক মহাকর্ষীয় শক্তি এবং ধনাত্নক মহাকর্ষীয় শক্তি ঠিক ঠিক কাটাকাটি যায় তাই মহাবিশ্বের মোট শক্তি থাকে শূন্য । * 


          ধনাত্নক ও ঋণাত্নক শক্তির এই ভারসাম্যের কথা নিশ্চিত করে বিগব্যাঙ তত্ত্বের বর্তমান পরিবর্ধিত রূপ  ইনফ্লেশনারি  বিগব্যাঙ  ধারণা    

               
            ইনফ্লেশন বা স্ফীতিতত্ত্বের আবির্ভাবের পর পদার্থবিজ্ঞানীরা আমাদের দেখিয়েছেন মহাবিশ্বে মোট শক্তি শূন্য ; মহাবিশ্বের মোট গতিশক্তি এবং মাধ্যাকর্ষণের ঋণাত্নক শক্তি পরস্পরকে নিস্ক্রিয় করে দেয় তার মানে মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য বাইরে থেকে আলাদা কোনো শক্তি আমদানির প্রয়োজন     হয় নি । 

এ ব্যাপারে এলান গুথ এবং স্টেইনহার্ট নিউ ফিজিক্স জার্নালে (১৯৮৯) দেখিয়েছেন   যে ইনফ্লেশনের জন্য কোন তাপগতীয় কাজের দরকার পড়ে না স্টিফেন হকিং তার সাম্প্রতিক গ্র্যান্ড ডিজাইনবইয়ে সুস্পষ্টভাবে মত প্রকাশ করেছেন যে ,এই মহাবিশ্ব প্রাকৃতিকভাবেই শূন্য থেকে উদ্ভূত হয়েছে ,কোন অলৌকিক কিংবা অপার্থিব সত্তার হস্তক্ষেপ ছাড়াই অর্থাৎ মহাবিশ্বে পদার্থ ও শক্তির উপস্থিতি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়


        জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী ভিকটর যে স্টেংগর একটা গাণিতিক মডেল তৈরি করে সম্পর্ণ  ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন -  আমাদের মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে এবং কোয়ান্টাম টানেলিং নামক প্রক্রিয়ার অপর একটি মহাবিশ্ব থেকে- যেই মহাবিশ্ব অস্তিত্ব ছিল অসীম সময় পর্যন্ত , অন্তত আমাদের সময় পরিমাপের দৃষ্টিকোণ থেকে কোয়ান্টাম টানেলিং একটি প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক ধারণা


 কোনো বস্তুর একটা বাধা  অতিক্রম   করে  বা দেওয়ালের ভেতর গলে বের হয়ে যাওয়াই কোয়ান্টাম টানেলিং   একটি মহাবিশ্বে সময়ের দিক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এনট্রপি বৃদ্ধি বা বিশৃংখলা বৃদ্ধির দিকের সাথে এখন অপর মহাবিশ্বের সময়ের দিক যদি আমাদের মহাবিশ্বের সময়ের দিকের ঠিক উল্টো হয় তাহলে কোয়ান্টাম টানেলিং এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের পথচলা শুরু হতে পারে একবারেকিছু  না  থেকেই তবে এ ব্যাপারে এমনটাই যে হয়েছে তাতে তিনি শতভাগ নিশ্চিত নন বলেও এক মন্তব্য করেছেন  একই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংও তার গ্র্যান্ড ডিজাইনবইয়ে  আর বিজ্ঞান কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং তারপর ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে একসময় পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের  প্রাকৃতিক এবং যৌক্তিক ব্যাখ্যা ইত্যাদির   বিষয়  ,  এখন  পর্যন্ত   আবিস্কৃত   বৈজ্ঞানিক  তথাদিসহ বিভিন্ন   ব্যাখ্যা    সঠিক  ভাবেই    আমাদের দিতে পারছে   বলে সংশ্লিষ্টরা  মনে   করছেন । **
  

     কোয়ান্টাম পদার্থ-বিজ্ঞান থেকে জানা যায়-মহাবিস্ফোরণের  মুহূর্তে প্রকৃতির চারটি বল ,  যাদেরকে   নামকরণ   করা   হয়েছে --   শক্তিশালী নিউক্লিয়  বল , দুর্বল নিউক্লিয় বল , তড়িৎ-চুম্বকীয় বল আর   মাধ্যাকর্ষণ বল  নামে  ,   যা  পূর্ব   থেকেই   একীভূত শক্তি’ (super force) হিসাবে প্রকৃতিতে বিদ্যমান ছিলো 

     জোতিপদার্থবিজ্ঞানী এলেন গুথ এবং আঁদ্রে লিন্ডের গবেষণার ফলাফল অনুসারে মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনর মধ্য দিয়ে স্থান  ও  কালের  শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে , তবে এ পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে , এবং হয়তো বাস্তবে ঘটেছেও মাল্টিভার্স বা  ‘ অনন্ত  মহাবিশ্বের  ধারণা অনুসারে । 




কাজেই, বিজ্ঞানের চোখে বিগব্যাঙই শেষ কথা নয় কারণ, সাম্প্রতিক গবেষণা বলেছে, বিগব্যাঙ মহাবিশ্বের শুরু নয় , বরং মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে ইনফ্লেশনের   মধ্যে  দিয়ে অর্থাৎ বিগব্যাঙ এর পরে এবং  ইনফ্লেশনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব তৈরি ( যা কিছুকাল আগেও সত্য বলে ভাবা হতো ) হয় নি , বরং ইনফ্লেশনের ফলশ্রুতিতেই কিন্তু বিগব্যাঙ হয়েছে , তারপর সৃষ্টি হয়েছে আমাদের বর্তমান এই মহাবিশ্ব আঁদ্রে লিন্ডের  কথায় ;

           ১৫ বছর আগেও আমরা ভাবতাম ইনফ্লেশন হচ্ছে বিগব্যাঙ-এর অংশ এখন দেখা যাচ্ছে বিগব্যাঙ-ই বরং ইনফ্লেশনারি মডেলের অংশবিশেষ


           এই ধারণাটিকে সম্প্রসারিত করে বহু বিজ্ঞানীই আজ মনে করেন এক কারণ বিহীন কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের(Quantum Flactuation) মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে  পারে , যা পরবর্তীতে সৃষ্ট মহাবিশ্বকে স্ফীতির ( Inflation) দিক   দিয়ে  , আর  পরে ইহাই  পদার্থ আর কাঠামো তৈরির পথ সুগম করেছে  
 

      মাল্টিভার্স ধারণা অনুযায়ী ইনফ্লেশনের ফলে শুধু যে একবারই  বিগব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ ঘটেছে তা কিন্তু নয় , এরকম বিগব্যাঙ হাজার বার ঘটতে পারে ; তৈরি হতে পারে অসংখ্য পকেট মহাবিশ্বআমরা সম্ভবত এমনই একটি পকেট-মহাবিশ্বে অবস্থান করছি ,বাকিগুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত না হয়ে ,’   আর  অমনিভার্স’ (Omniverse) এর ক্ষুদ্র একটি অংশ হিসাবে অবস্থানকরে  ৷

               ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ত্ব ছাড়াও আরেকটি তত্ত্ব মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে  যাকে সাইক্লিক মডেল’ হিশেবে   পরিচিতি   দেয়া   হয়েছে  ৷ আর  এর মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন যে ,আমাদের মহাবিশ্বের কোনো   শুরুর   কাহিনী  পল স্টেইনহার্ট এবং নেইন টুরক, তাদের লেখা বই  ‘Endless Univers’ #   এতে  উল্লেখ  করে   মন্তব্য   করা  হয়েছে  যে  বাস্তবে  - একটি চক্রাকার   মহাবিশ্ব নেই ,এবং  এর  ও শেষ নেই । 
এ হচ্ছে  এক চলমান অনন্ত, অফুরন্ত মহাবিশ্ব (Endless Universe) তাদের এ বর্নণাতে  বলা   হয়েছে  -  বিগব্যাঙদিয়ে স্থান-কালের (space- time) শুরু নয় , বিগব্যাঙ-কে তারা কেবল একটি ঘটনা হিসাবে দেখিয়েছেন  মাত্র  ৷   আর   তাদের   মতে   - এর উদ্ভব হয়ছে  -  স্ট্রিংতাত্ত্বিকদের কথিত দুটো ব্রেনের সংঘর্ষের (collision of branes ) ফলে

আর কেবলমাত্র একবারই এই মহাবিস্ফোরণ ঘটবে বা ঘটেছে তাও নয় , বরং এ মহাবিশ্ব প্রাকৃতিক বিবর্তনের চক্রে চির চলমান তারা গাণিতিকভাবে দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বের যত্রাপথের প্রতিটি চক্রে বিগব্যাঙ উদ্ভব ঘটায়  , উত্তপ্ত পদার্থের এবং শক্তির কালের পরিক্রমায় ক্রমশ তা শীতল হয়ে এর থেকে তৈরি হয় গ্যালাক্সি আর তারকারাজি ,       যা  আকাশে আমরা দেখতে পাই । তাই  আজ থেকে ট্রিলিয়ন বছর পরে আবার বিগব্যাঙ ঘটবে এবং তৈরি করবে নতুন চক্রের এ   ধারণা   সংশ্লিষ্টদের  


     এ লেখার শুরুতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই বিজ্ঞান কিন্তু কোনো বিষয় সম্পর্কে পরম বা নিখুঁত জ্ঞান দিতে পারে না আজকে আণবিক স্থানান্তর , নিউক্লিয়ার্সের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মতো ঘটনার কারণ পাওয়া যাচ্ছে না- তবে ভবিষ্যতে পাওয়া যেতেই পারে কেউই সে সম্ভাবনাকে অস্বীকার করছে না ভবিষ্যতে পাওয়া যেতে পারে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদিকারণও ৷ আর কারণটি হতে পারে সম্পূর্ণভাবেই প্রাকৃতিক 


      (সূত্র;- # Endless universe; Beyond the Bing Bang-- - Rewriting Cosmic History, by Paul J.  Steinhardt and Neil , June 2008  , edition,
           **  Stephen W . Hawking , A Brief Histiry of Time : From the Big Bang to Black Holes , page 129 ,
          * মূল সূত্র;  অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীর - -অবিশ্বাসের দর্শন , ফেব্রুয়ারি ২০১১, প্রথম প্রকাশ,)

 (লিখাটি শুধু একটি বিজ্ঞান  বিষয়ের আলোচনা, কারো ধর্ম বিশ্বাসের ওপর আঘাত দেয়ার জন্যে

      লিখা হয় নাই, শুধু আগ্রহীদের জন্যে, অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না ,লেখকের
        অনুমতি ছাড়া , ধন্যবাদ । )

মন্তব্যসমূহ