ধর্ম প্রন্থের আলোকে জীবের বা প্রাণের উৎপত্তি বিষয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা :

  
  Neanderthal

 ( photo credit;- Nature journal )

   ধর্ম  গ্রন্থের  আলোকে   প্রাণের (জীবের)সৃষ্টির জীববিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা

             ধারণ‍া করা হচ্ছে প্রায় সমপ্রজাতির চার প্রকার আদিম মানুষেরা একই সময়ে পৃথিবীতে এসেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছে অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সিস। তার‍া লুসি নামেও পরিচিত। ধারণা করা হয়, এরাই আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ ছিলেন। পৃথিবীতে এদের বসবাস ছিলো এখন থেকে ২৯ লাখ বা ৩৮ লাখ বছর আগে।  (সূত্র্র- ইনটারনেট )
    
    প্রাণের (জীবের)সৃষ্টির  জীববিজ্ঞানীদের  ব্যাখ্যা  এবং পবিত্র কোরানে এ ব্যাপারে নাজিলকৃত দুইটি আয়াত প্রসঙ্গে কিছু কথা

       পবিত্র কোরানশরিফের  মদীনায় অবতীর্ণ ২৪ নং সুরা নুর এর ৪৫ নং আয়াত;- 
আল্লাহ্ পানি  হতে সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন ওদের কিছু বুকে ভর দিয়ে চলে , কিছু দুই পায়ে ও কিছু চার পায়ে ৷ আল্লাহ্ তো সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান

      আয়াত- ৪৬;-আমি অবশ্যই সুষ্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করেছি আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন ৷     

   ২৫ নং সুরা ফুরকান ;         আয়াত-৫৪;- আর   তিনিই মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন ; তারপর তিনি মানবজাতির মধ্যে রক্তগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন তোমার প্রতিপালক তো সর্বশক্তিমান  
     ৩০ নং সুরা-রুম; (মক্কায় অবতীর্ণ)
                                      আয়াত -৩০;-তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজকে ধর্মে প্রতিষ্ঠিত রাখো তুমি আল্লাহ্ র প্রকৃতির অনুসরণ করো , যে -প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ্ র প্রকৃতির কোনো  পরিবর্তন নেই এ-ই সরল ধর্ম ; কিন্তু  অধিকাংশ মানুষ তা জানে না ৷ 

   ২৭ নং সুরা বনি-ইসরাইল (মক্কায় অবতীর্ণ)  

                  আয়াত-৮৯;- আমি মানুষের জন্যে এ-কোরান বিভিন্ন উপমা দিয়ে  আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি , কিন্তু অধিকাংশ মানুষই অমান্য না করে ক্ষান্ত হয় না ৷
     ১৫ -নং সুরা হিজর (মক্কায় অবতীর্ণ)
                  আয়াত-২৬;-আমি তো ছাঁচে-ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছি     (সূত্র;-কোরান শরিফ--সরল বঙ্গানুবাদ, লেখক;-মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান  )


    সুরা আল-ইমরান এর ৭ নং আয়াতে কোরানের আয়াতগুলোকে স্পষ্ট আয়াত এবং অস্পষ্ট বা রূপক আয়াতে ভাগ করার বর্ণনা করা হয়েছে  আবার বনি-ইসরাইল এর ৮৯ নং আয়াতে (উপরে উল্লেখিত আছে) বিভিন্ন আয়াতে উপমার ব্যবহারের বর্ণনা করা হয়েছে আবার ৩০ নং সুরা রুমের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহর একটা প্রকৃতির নিয়ম আছে, যার কোনো পরিবর্তন নাই বলা হয়েছে তাই সুরা হিজরের ২৬ নং আয়াতের বর্ণনাকে উপমা বা রূপক আয়াত হিসাবে বিবেচনা করা কী অমূলক হবে ? এটা মানতে পারলে পানি থেকে জীব বা প্রাণের সৃষ্টির একটা সহজ মিমাংসায় পৌছা যায়, যা বর্তমান জীববিজ্ঞানের ব্যাখ্যার সঙ্গেও অনেকটা সঙ্গতিপূর্ণ বলেও ধরে নেয়া যাবে  

    জীববিজ্ঞানীগণের ধারণা ;-  


            জীববিজ্ঞানীগণ বলেন  , পৃথিবীতে জীবের আবির্ভাব হয়েছে প্রায় দেড়শত কোটি বছর আগে আর মানুষ বর্তমান মানুষের রূপ পেয়েছে মাত্র ত্রিশ হাজার বছর আগে । (সূত্র;-বিজ্ঞান ও বিশ্বজগত-লেখক; প্রিয়দায়রঞ্জন রায়) 
               বিজ্ঞানীগণ বলেন  , মানুষ, পশু, পাখি ইত্যাদি জীব ও বৃক্ষ, লতা, তৃণাদি উদ্ভিদ- ইহারা সকলেই এককালে ছিল সাগরের জলের বাসিন্দা উহাদের আকৃতি, প্রকৃতি, খাদ্য ও বাসস্থানের যত বৈচিত্র, তাহা ঘটেছে ক্রমবিবর্তনের ফলে  ৷

           জীবজগতের বিবর্তন ;

   পরিবর্তন জগতের রীতি পৃথিবীতে আজ আমরা যে আম, জাম, শাল, সেগুন ইত্যাদি বৃক্ষরাজি ও অসংখ্য রকম লতাগুল্ম   দেখতেছি , ইহারা চিরকাল এরূপ ছিল না আদিতে ইহারা  ছিল শেওলা জাতীয় এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ ৷  তাই  হাতি , ঘোড়া , শিয়াল , কুকুর ও অন্যান্য যাবতীয় জীব , এমনকি মানুষও তাহার বর্তমান রূপে ছিল না গোড়ার দিকে উহারা সকলেই ছিল এক জাতীয় জলজ পোকা    

          প্রকৃতির অমোঘ বিধানে জীব জগতে যে রূপান্তর ঘটেছে     বৈজ্ঞানিকরা  তাহাকে বিবর্তন বা Evolutionবলেন । 
          বিবর্তন দুই রকম- যথা-১ . মানুষের ইচ্ছা বা বুদ্ধির দ্বারা জন্তু বা উদ্ভিদের মধ্যে মিলন ঘটানোর ফলে যে   ঈপ্সিত স্বতন্ত্র জাতির উৎপত্তি হয়- তাকে কৃত্রিম নির্বাচন (Artificial selection ) বলা হয়  

  ২.   ক্ষেত  বিশেষে  ইচ্ছা বা বিচারবুদ্ধির বালাই ছাড়া স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন প্রাণীর সংঘটন এবং নব নব জাতির বিকাশও হয়ে থাকে ৷  যাকে প্রাকূতির নির্বাচন (Natural Selection)বলা হয় প্রধানত কৃত্রিম নির্বাচন সময়সাপেক্ষ নয় ৷  কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনে কোনো প্রাণীর এতটুকু রূপান্তর ঘটতে  হলে  প্রয়োজন  হয়   লক্ষ লক্ষ বৎসর সময়ের   

            বিজ্ঞানীগণ বলেন পৃথিবীর   জন্মের সময় পৃথিবীর তাপ সূর্যের বহিরাবরণের তাপের প্রায় সমান ছিল ধীরে ধীরে তাহা বিকীর্ণ হয়ে জীবসৃষ্টির অনুকূল তাপের সৃষ্টি হতে সময় লেগেছে প্রায় ২০০ কোটি বছর আর ইহার পর প্রায় ১৫০ কোটি বছর পর পৃথিবীতে জীবনের আবির্ভাব ঘটেছে ৷  আর চোখের দেখায় চিনতে পারার মতো জীবের সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৫০ কোটি বছরের মধ্যে বিজ্ঞানীগণ যে লিপির সাহায্যে অতীতকালের জীবেতিহাস জেনেছেন  তারা  এর নাম  দিয়েছেন  জীবাশ্ম বা ফসিল (Fossil  )  ৷

       ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান  হতে জানা যায়  যে  পৃথিবীর সমতল ভূমি ও সমুদ্রতল স্তরে স্তরে সজ্জিত অবস্থায়  আছে    পর্বতাদি হতে বৃষ্টি ও নদীর জল পলিমাটি  এনে প্রতি বছর সমতলভূমি বা সমুদ্রতলে ইহা বিছিয়ে দেয়ার ফলে ঐ সব স্তরের সূষ্টি হয়েছে   ৷   যা  ক্রমশ ঐ সব স্তরকে  উঁচু করেছে  ৷  আর এর  নিম্নাঞ্চলের মাটিকে কঠিন হয়ে পাথরের আকৃতি ধারণে সাহায্য করেছে  । তাই ভূবিজ্ঞানীগণ মাটির  বিভিন্ন স্তরের প্রকূতি ও গুণাগুণ পরীক্ষা করে বলতে পারেন ,  কোন্ স্তরের মাটির বয়স কত ৷  গাছের গুঁড়ি বহুকাল মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকলে যেরূপে  ইহা পাথরি কয়লায় রূপান্তরিত হয়  এরূপ কোনো জন্তুর দেহ বহুকাল মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকলে ইহার কঙ্কালসমূহও  পাথরের আকার ধারণ করে বৈজ্ঞানিকগণ ইহাকে জীবাশ্ম বা ফসিল বলেন । 
                 ভূগর্ভস্ত যে স্তর যত নিম্নে থাকে সেই স্তর তত পুরাতন এবং যে স্তর যত উপরে থাকে সেই স্তর তত আধুনিক বা  পরের স্তর  হিসেবে  গণ্য  হয় ভূগর্ভস্থ কোনো বিশেষ স্তরে প্রাপ্ত ফসিল পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীগণ বলতে পারেন  ঐ  জন্তুটি কোন যুগে বা কত বছর পূর্বে বর্তমান ছিল এবং ইহার আকৃতি, প্রকৃতি, চাল-চলন এমনকি আহার-বিহার কি রকম ছিল তাও  বৈজ্ঞানিকেরা  নির্ধারণ  করতে  সক্ষম হয়ে গেছেন  এখন  ৷
         যুগ বিভাগ;-
                     প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ভূগর্ভের স্তরগুলিকে কালক্রম অনুসারে কতগুলো ভাগে বিভক্ত করেছেন ইহার এক একটি ভাগকে বলা হয় এক একটি যুগ ( অবশ্য ইহা হিন্দুশাস্ত্রের চার যুগ নয় ) জীববিজ্ঞানীগন যে সময় হতে ফসিল বা শিলালিপির সাহায্যে জীবজগতের ইতিহাস  জানিতে পারেন   সেই সময়টিকে তাঁরা বলেন ঐতিহাসিক যুগ
   
ঐ যুগ গুলো নিম্নরূপ ;-


           ১. প্রাক-ক্যামব্রিয়ান বা আর্কেও জোইক মহাযুগ (Archaeo Zoic ) ;-এই যুগে যে সমস্ত প্রাণী বর্তমান ছিল  তাদের শুধু অস্তিত্বের সন্ধানটুকু পাওয়া যায় মাত্র  ৷  তাদের তুলতুলে দেহের কোনো ফসিল ভূগর্ভে পওয়া যায় না পৃথিবীর সৃষ্টি হতে শুরু করে পুরাজীবীয় যুগ বা ক্যামব্রিয়ান উপযুগের পূর্ব পর্যন্ত  অস্থিত্য  ছিল  এই যুগটির  ইহার ব্যাপ্তি প্রায় ৩০০ কোটি বছরেরও অধিক ছিল  বলে  বৈজ্ঞানিকরা   মনে  করে  থাকেন        এখন হইতে প্রায় পঞ্চাশ কোটি বছর আগ পর্যন্ত এই যুগের ব্যাপ্তি ছিল ক্যামব্রিয়ান যুগ আরম্ভের পর থেকে চিংড়ি কাঁকড়া ইত্যাদির মত প্রাণীদেহ কঠিন খোলস বা বর্মে আবৃত হয়ে  যায়   ৷  ফলে   শিলালিপি বা ফসিল ও ঐ সময় থেকে প্রাপ্তি আরম্ভ হয় । 
            এই ঐতিহাসিক যুগকে আবার তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে  

         পুরাজীবীয় যুগ;- ইহা আদিম প্রণীদের যুগ   ৷   ইহার ব্যাপ্তিকাল  ছিল প্রায় ৩১ কোটি বছর ।   ইহা ৫০ কোটি বছর আগে আরম্ভ হয়ে শেষ হয়েছে   ১৯ কোটি বছর আগে

এই যুগটির ৬ টা উপযুগ আছে ;-


         (১)    ক্যামব্রিয়ান উপযুগ ; - ইহার আরম্ভ হয়েছে  ৫০ কোটি বছর আগে এবং ব্যাপ্তিকাল ছিল ১১ কোটি বছর

          (২)    অর্ডোভিসিয়ন উপযুগ ;   -  ইহার আরম্ভ  হয়েছে  ৩৯ বছর আগে এবং ব্যাপ্তিকাল  ছিল ৫ কোটি বছর
            (৩)   সেলুরিয়ান উপযুগ  ;-  ইহার আরম্ভ  হয়েছে  ৩৪ কোটি বছর আগে এবং এর  বাপ্তিকাল ছিল  ২ কোটি বছর
           (৪)   ডেভোনিয়ান উপযুগ   ;-   আরম্ভ   হয়েছে  ৩২ বছর আগে আর  এর  ব্যাপ্তি কাল  ছিল ৪ কোটি বছর

            (৫)    কার্বনিফেরাস উপযুগ  ;-   আরম্ভ হয় ২৮ কোটি বছর আগে  আর  এর  ব্যাপ্ত ছিল  কাল ৬ কোটি বছর

            (৬)    পারমিয়ান উপযুগ ;-  আরম্ভ হয়েছে  ২২ বছর আগে আর এর ব্যাপ্তিকাল ছিল  ৩ কোটি বছর



         ২ .    পুরাজীবীয় যুগ ;-

                    এই যুগের প্রথমে ভূপৃষ্ঠে যে স্তরের সৃষ্টি হয়েছিল  তার স্থলভাগে কোনো জীবের অস্তিত্ব  পাওয়া যায় নাই ৷  সমুদ্রে জলজ উদ্ভিদ ও ট্রাইলোবাইট নামক আলপিনের মাথার মত ক্ষুদ্র এক জাতীয় পোকা পাওয়া যায় সম্ভবত কাঁকড়া  আর গলদা চিংড়ি উহাদের বংশধর ইহাদের একদল ইউরীপটেরিডস্  নদী বা হ্রদের আশ্রয়ে  এসে  শুকাইয়া মারা যায় এবং কিছু সমুদ্রে চলে  যায় আবার কিছু শুকনায়ও পর  ও  বেঁচে থাকে   ৷  যার পরবর্তিত রূপ হচ্ছে  বৃশ্চিক , মাকড়সা ও পতঙ্গ  জাতীয়  জিব ৷  যা কয়েক কোটি বছরের মধ্যেদিয়ে  ইহাদের দেহ খোলস বা চর্মে আবৃত হয়েছে আর আত্মরক্ষার তাগিদে চর্মধারী জীবের দেহে তৈরি হয় মেরুদণ্ড  । প্রায় ৩৫ কোটি বছর আগে অর্ডোভিসিয়ান উপযুগের শেষের দিকে প্রথম মেরুদণ্ডবিশিষ্ট যে সকল জীবের জন্ম হয়  তাদের এক দলকে বলা হয় মাছ যে সকল মাছ সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি বাস করত এবং ঢেউয়ের আঘাতে বা জোয়ারের জলের সাথে অনেক সময়  কিছু ডাঙ্গায় উঠে পড়ত ।  তখন  কিছু মারা পড়লেও কিছু পরবর্তী জোয়ারের জল আসা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারত ৷   এভাবে কিছু মাছ জল ও ডাঙ্গায় বেঁচে থাকার শক্তি অর্জন করতে  সক্ষম  হয়েছিল ৷   যারা হচ্ছে বর্তমানের উভয়চর প্রাণী ৷  যেমন  বর্তমান কুমির  , ব্যাঙ ইত্যাদি উভচর কিছুদের আবার ডাঙ্গার জীবন পছন্দ না হওয়ায় জলে বাস করতে আরম্ভ করেছে  ৷  যার বংশধর  হচ্ছে বর্তমানের  তিমি  , শুশুক ইত্যাদি  


       উভচরদের যারা স্থলে বাস করা আরম্ভ করেছে  পরবর্তীকালে  পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের শরীরের  চ্যাপ্টা লেজ আর চ্যাপ্টা থাকলো না   ৷  জন্ম  হল পশমের  এবং পাখনা রূপান্তরিত হল তাদের  পা  রূপে   এই ভাবে ২৮ কোটি বছর পূর্বে উভচর মৎস্যদের যে দলটি স্থায়ীভাবে ডাঙ্গাবাসী হয়েছিল তারাই হলো বর্তমান সরীসৃপ জাতীয় জীব ৷ বর্তমানে যাহা অতি বৃহৎ ও ভয়ানক রূপে  রূপান্তরিত  হয়েছে   

         পুরাজীবীর যুগের শেষ ভাগে ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদের সাতিশয় সমৃদ্ধি হয়েছিল যাহা এক পর্যায়ে এসে  মাটির নিচে চাপা পড়ে অত্যাধিক চাপ ও তাপের প্রভাবে কয়লায় রূপান্তরিত হয়েছে এই কারণে এই যুগটির নাম হয়েছে কার্বনিফেরাস যুগ  ৷  যা ২৮ কোটি বছরের আগেকার  বৃক্ষসমূহের দেহের ধ্বংসাবশেষ বা ফসিল ৷ 

     ৩ . মধ্যজীবীয় যুগ (Meso Zoic)
        ইহা ছিল  সরীসৃপদের যুগ ৷  ইহার ৩ টি উপযুগ সহ ইহার 
ব্যাপ্তি  ছিল ১২ কোটি বছর উপযুগগুলো হচ্ছে;- (১)  ট্রিয়াসিক যুগের আরম্ভ হয়েছিল ১৯ কোটি বছর আগে 
এবং ব্যাপ্তিকাল ছিল  ৫ কোটি বছর


      (২)    জুরাসিক যুগের আরম্ভ হয়েছিল ১৪ কোটি আগে এবং এর ব্যাপ্তি কাল ছিল  ৩ কোটি বছর

        (৩) ক্রেটাশিয়াস যুগের আরম্ভ  হয়ে ছিল ১১ কোটি বছর আগে আর এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ৪ কোটি বছর


      মধ্যজীবীয় যুগের গাছপালা , জীবজন্তু সবই ছিল অতিকায় এই যুগটি ১৯ কোটি বছর আরম্ভ হয়ে শেষ হয়েছে ৭ কোটি বছর আগে এই যুগে যে শ্রেণীর সরীসৃপেরা প্রধান্য লাভ করেছিল এখন  তাদেরকে ডাইনোসর বলা হয় অনেক প্রকার ডাইনোসরের মধ্যে ব্রণ্টোসরাসের দৈর্ঘ ছিল অন্তত ২৫ গজ   এবং উহার ওজন ছিল প্রায় ৫০ টন  ৷  অন্য প্রকার আর একটি ট্রাইরোনোসরাসের ওজন ছিল প্রায় ১০ টন এবং লম্বায় ছিল ৫০ ফিটেরও বেশি ইহারা প্রকারবেধে সকলেই পিছনের বিরাট পা ও লেজের উপর ভর দিয়ে ছুটতো  ৷  সামনের ক্ষুদে থাবা দুটু ব্যবহার করতো খাবার ও লড়াইয়ের জন্য এবং সকলেই মাংসাশী ছিল একদল সরীসৃপ আকাশে উড়তে শুরু করেছিল এখন  ইহাদেরকে  টেরোডাকটিল বলা হয় যাদের গায়ে পালক বা পশম ছিল না   ছিল শুধু চামড়ার ডানা ও ধারালো দাঁতওয়ালা মূখ ৷ ( অনেকটা বাদুড়ের ন্যায়)  ৷  এই উড়ন্ত সরীসৃপরাই ছিল আধুনিক পাখির পূর্বপুরুষ


       আধুনিক সাপ, কুমির , গিরগিটি ইত্যাদির মতো সেই যুগের সরীসৃপরা ছিল ড়িম্বপ্রসু জীব কিন্তু প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে একদল ক্ষুদে জীব ডিম্ব প্রসব না করে গর্ভধারণ ও বাচ্চা প্রসব করতো ৷  সেই সময় হতেই স্তন্যপায়ী জীবের আবির্ভাব হয় বিশেষত সরীসৃপদের রক্ত ছিল ঠাণ্ডা  কিন্তু স্তন্যপায়ীদের রক্ত ছিল  গরম ৷ 

       মধ্যজীবীয় যুগের শেষের দিকে ক্রেটাশিয়াস উপযুগে ব্রন্টোসরাসাদি নামের কোনো জাতের ডাইনোসরের ফসিল বা চিহ্ন পাওয়া যায় না এই জাতীয়  ডাইনোসরসমূহ  সবংশে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার  পূর্ব  পর্যন্ত  ভূপৃষ্ঠে প্রায় ১০ কোটি বছর একাধিপত্য বা  রাজত্ব  করেছে  বলে  ধারণা  করা  হয়  ।   প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে ডাইনোসরের লুপ্ত হওয়ার বিভিন্ন মতবাদ বা কারণ থাকলেও , বর্তমানে যে তথ্যের প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তা হচ্ছে  ;  ক্রেটাশিয়াস উপযুগের শেষের দিকে এবং এয়োসেন উপযুগের পূর্বে কোনো এক পর্যায়ে একটা বা একাদিক গ্রহ বা উপগ্রহ  কোনো কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে  ৷  ফলে   পৃথিবীর  বায়ুমণ্ডলের  বাতাসের সঙ্গে   এদের সংঘর্ষ  হয়   ফলে  অত্যাধিক তাপ ও অগুনের সৃষ্টি হয় ফলে ভূপৃষ্ঠে প্রায় ২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং অত্যাধিক  তাপ সৃষ্টি হয়ে   ভূপৃষ্ঠকে  ধ্বংস করে ফেলে আর শুধু ডাইনোসরই নয় সব ধরণের  উদ্ভিব ও জীব সহ গাছপালা এবং ঘাস , লতা তৃণাদি উদ্ভিদ ইত্যাদি সব কিছুই ধ্বংস হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় শুধু বেঁচে থাকে ঘাসও তৃণাদি জাতিয় কিছু  উদ্ভিদ ৷  যাদের কান্ডমূলের একটি বীজ জাতীয় কিছুর অস্থিত্ব থেকে যায় মাটির অতি  গভীরে পরবর্তী কোন এক পর্যায়ে ঐ ঘাস বিকাশিত হয়ে  বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে আবার নতুন ভাবে প্রাণের সূষ্টি হয়েছে বলে বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে ৷ (সূত্র;-Discovery tv channel এ প্রচারিত একটি তথ্য মূলক ধারাবাহিক অনুষ্টান থেকে সংগ্রিহীত )
  
     ৪ . নবজীবীয় যুগ (Caino Zoic )  ;- ইহা  ছিল স্তন্যপায়ীদের যুগ   এই যুগটির বর্তমান বয়স প্রায় ৭ কোটি বছর  ৷ 
        এই যুগটির ৫ টি উপযুগ আছে
          (১)  এয়োসেন  উপযুগ, এই যুগটির আরম্ভ হয়েছ ৭ কোটি বছর আগে আর এর ব্যাপ্তিকাল  ছিল ৩ কোটি বছর

      (২)  অলিগোসেন  উপযুগ;  এই যুগের  আরম্ভ হয়েছিল  ৪ কোটি বছর আগে আর  এর ব্যাপ্তিকাল  ছিল  ১ কোটি বছর ৷

        (৩) মাউওসেন উপযুগ,এই যুগের আরম্ভ  হয়েছে ৩ কোটি বছর আগে আর এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ১ কোটি ৫০ লক্ষ বছর
        (৪) মিওসেন উপযুগ, এই  যুগের আরম্ভ হয়েছে দেড় কোটি বছর আগে  আর  এর  ব্যাপ্তিকাল ছিল ১ কোটি বছর

        (৫) প্লিসটোসেন উপযুগ-  এই  যুগের আরম্ভ হয়ছে ৫০ লক্ষ বছর আগে এবং  এর  ব্যাপ্তিকাল ৫০ লক্ষ বছর ছিল      
        নবজীবীয় যুগে স্তন্যপায়ী  জীবগণ বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে অধিকাংশ ভূভাগ জুড়ে বসবাস করতেছে বর্তমান যুগের হাতি, ঘোড়া, শূকর, গণ্ডার ইত্যাদি প্রাণীদের আদিপুরুষ ছিল একটি স্তন্যপায়ী জীব, উহার নাম ফেনাডোকাস আকারে ইহা শিয়ালের চেয়ে বড় ছিল না


      হিংস্র ও মাংসাশী একদল ক্রিয়োডোণ্ট নামক স্তন্যপায়ী জীব কালক্রমে দুই দলে ভাগ হয়ে   যায় ।  এক দলের চেহারা ছিল কুকুরের মতো, যাহা ক্রমবিবর্তনে কুকুর, নেকড়ে বাঘ, ভালুক ইত্যাদি এবং আর এক দলের চেহারা ছিল বিড়ালের মতো, ইহাদের ক্রমবিবর্তনে জন্মিয়েছে বিড়াল, বাঘ ,সিংহ ইত্যাদি ৷ অন্যান্য স্তন্যপায়ীরা ছিল এক প্রকার ক্ষুদে জীব, যারা গাছে গাছে চড়ে ,ডালে ডালে লাফালাফি করতে পারত


       যে সকল জীব মাটিতে, বনে-জঙ্গলে চলাফেরা করেছে  , তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিল কম তাদের ঘ্রাণশক্তির তুলনায় কারণ বনে জঙ্গলে আক্রমন ও আত্মরক্ষা উভয়ের জন্যেই ঘ্রাণশক্তি প্রখর হওয়া দরকার ছিল কিন্তু বৃক্ষারোহী জীবদের ঘ্রাণশক্তির চেয়ে প্রখর দৃষ্টিশক্তির প্রয়োজন হয় বেশী বন-জঙ্গলের প্রাণীরা দুই চক্ষুতে একটি বস্তুর দুইটি ছবি দেখে থাকে ৷  কিন্তু বৃক্ষ-রাহীদের চক্ষুর অবস্থান পরিবর্তিত হয়ে এরূপ হয়ে  যায় ৷  এর  ফলে  উহারা দেখে একটি , তাই  এদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা কমে  যায় 


       চতুস্পদ জন্তুর চারটি পা-ই  ব্যবহার করতে হয় হাঁটার জন্য কিন্তু বৃক্ষারোহীদের শাখা হতে শখান্তরে লাফালাফি করতে সামনের পা দুটি ব্যবহার করতে হয় ধরার জন্য এইরূপে উহাদের সামনের পা দুটি রূপান্তরিত  হলো থাবায় ইহা ছাড়া ডালে ডালে লাফালাফির করতে মস্তিষ্কের চালনা করতে করতে মস্তিষ্ক ও বড় হয়ে  যায়  অভিজ্ঞতা  বৃদ্ধির সাথে সাথে পিছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটায় ও অভ্যস্ত হয়ে  যায়  তারা ৷ ফলে থাবা দুটি ব্যবহার করতে আরম্ভ করলো আক্রমণ ও আত্মরক্ষার    জন্য দ্বিতীয়ত মুখের সাহায্যে খাদ্য আহরণের চেয়ে থাবার সাহায্যে খাদ্যদ্রব্য তুলিয়া মুখে দেয়া ও সহজ হয়ে  যায়  তাদের  জন্যে  এইভাবে নানাবিধ সুবিধা গ্রহন করে একদল বৃক্ষারোহী জীব পুরামাত্রায় দ্বিপদী  জীবে রূপান্তরিত  হয়ে উঠল ৷  পর্যায়ক্রমে  ইহাদের থবা দুটি পরিণত হলো এক সময় হাতে  


          থাবা ব্যবহার করেনা কিন্তু   মুখের সাহায্যেই খাবার তুলে লয়-এইরূপ চতুষ্পদ জন্তুদের প্রায় সকলেরই মুখমণ্ডল হয় লম্বাটে যেমন-গরু, ঘোড়া , শিয়াল, কুকুর ইত্যাদি আর যারা থাবা ব্যবহার করে    এইরূপ জন্তুদের প্রায়ই মুখমণ্ডল হয় গোল যেমন- বাঘ, বিড়াল, সিংহ ইত্যাদি দ্বিপদ জন্তুরা খাবার তুলে মুখে দেয়া ও মশা-মাছি তাড়াবার কাজে হাত ব্যবহার করতে আরম্ভ করে  ফলে  তাদের মুখমণ্ডল হতে থাকে গোল এবং মশা মাছি তাড়ানো ও ধুলাবালি  ঝাড়া ইত্যাদি কোনো কাজে লেজের ব্যবহার না থাকায় লেজটি হতে থাকে ছোট কালক্রমে উহাদের মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে সামান্য একটু নমুনা ছাড়া লেজের আর কোনো চিহ্নই থাকলো না  বর্তমানে ইহাদের  বলা হয় প্যারাপিথেকাস


       উক্তরূপে একটি অভিনব জন্তুর উদ্ভব হয়  যা  কালক্রমে  আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে যার মধ্যে একটার লেজ নেই আর  মুখমণ্ডল হয় ঈষৎ গোল  ইহারা সোজা হয়ে হাঁটতে পারে এবং যাবতীয় কাজে হাত ব্যবহার করে এই জন্তুটা বানর নয় , শিম্পাঞ্জি , গরিলা বা ওরাংওটাং নয় এবং পুরাপুরি মানুষও নয়   ইংরেজি তে ইহাকে আনথ্রোপয়েড এপ বা মানুষসদৃশ বানর ইহারাই মানুষের পূর্বপুরুষ প্যারাপিথেকাসের অপর শাখার জন্তুদের সাথে আনথ্রোপয়েড এপ-এর চালচলন ও আকৃতিগত পার্থক্য সামান্য হলেও তারাই বনমানুষের পূর্বপুরুষ । (সূত্র;-পৃথিবীর ঠিকানা, অমল দাসগুপ্ত, পৃ, ২১৮-২২৪ , সৃষ্টি রহস্য, আরজ আলী মাতুব্বর ) 


        
         কিন্তু   ক্রমবিবর্তন অল্প সময়ে হয় না  ।   ক্ষুদ্র একবিন্দু প্রোটোপ্ল্যাজম হতে চোখের দেখায় চিনতে পারার মতো জীবের সৃষ্টি হয়ে   এবং তুলতুলে শরীরের মধ্যে বর্মসাজ মেরুদণ্ড জন্মিতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০০ কোটি বছর  ৷  এবং জলচর হতে উভচর, স্থলচর , সরীসৃপ পশু (বানর) রূপ ধারণ করে তার লেজ খসতে সময় লেগেছিল  প্রায়  আরো প্রায় ৫০ কোটি বছর 

 
      উপরের আলোচনার স্বপক্ষে কিছু আদিম মানবের দৃষ্টান্ত  নিচে উল্লেখ করা হলো  

            জীববিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন সময়ে যে সকল বিক্ষিপ্ত হাড়গোড় এবং আস্ত কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছেন  ,  তাহা সুসংবদ্ধভাবে সাজাইয়ে মানুষের বিবর্তনের একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আবিষ্কার করেছেন ৷ উহাতে দেখা যায় যে, বর্তমান আমল হতে যতই অতীতের দিকে যাওয়া যায় , মানুষের চেহারা ততই বুনো হয়ে দাঁড়ায় এবং যতই বর্তমানের দিকে আসা যায় , ততই বুনো মানুষ  রূপান্তরিত হয় আধুনিক মানুষে :  যেমন :


       (১) অস্ট্রালোপিথেকাস মানুষ ;- ১৯২৪ সালে আফ্রিকার দক্ষিন-পশ্চিম ট্রান্সভাল অঞ্চলে একটা  মাটির ঢিবির মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় ছয় বছরের একটি ছেলের মাথার খুলি উহার গড়ন ছিল বানর ও মানুষের মাঝামাঝি খুলিটির বয়স ছিল এক লক্ষ বছরের কিছু বেশি ইহাই ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস মানুষ ১৯৩৬ সালে জোহানেসবার্গ -এর কাছে মাটি খুঁড়ে আর একটি মাথার খুলি ও কিছু হারগোড় পাওয়া গিয়েছিল, যা একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের এটাও মানুষ ও বানরের মাঝামাঝি গোছের , এবং অস্ট্রালোপিথেকাসের সমবয়সী ও সমগোত্রীয় ছিল  



   (২) জাভা ও পিকিং মানুষ;- হল্যাণ্ডবাসী ইউজেন দুবোয়া নমের এক ডাক্তাল ১৮৯০-৯২ সালে জাভা দ্বীপের পূর্বার্ধে মাটি খুঁড়ে বিক্ষিপ্তভাবে পেয়েছিলেন মানুষের একটা দাঁত সহ নিচের চোয়ালের একটা হাড় , উপরের চোয়ালের একটা পেষণ দাঁত , মাথার খুলি ও উরুর একটা হাড় জীববিজ্ঞানীরা  ইহা পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, ইহা আধা বানর ও আধা মনুষের মত এবং ঐ কঙ্কালের বয়স এক লক্ষ হতে তিন লক্ষ বছরের মধ্যে পিকিং শহরের আরো কয়েকটি কঙ্কালের পর্যবেক্ষণেও  একই ফল , আর্থাৎ মানুষ ও বানরের মাঝমাঝি অবস্থায় পাওয়া গেছে  



     নেয়ানডার্থাল মানুষ;-১৮৫৬ সালে জার্মানীর নেয়ানডার্থাল নামক স্থানে মাটির নিচে একটি মাথার খুলি পাওয়া যায়, জীববিজ্ঞানীদের মতে খুলিটি মানুষের পূর্বপুরুষের মাটির যে স্তরে এটি পাওয়া যায় , তাহা প্রচীনত্বের হিসাবে ঐ খুলিটার বয়স ৭৫ হাজার বছর ১৯০৮ সালে ফ্রান্সের এক গ্রামের এক গুহা হতে পাওয়া আস্ত কঙ্কাল হতে মানুষের এক নিখুঁত ছবি পাওয়া গিয়াছে মানুষটার মুণ্ড প্রকাণ্ড ধর ছোট ,লম্বায় পাঁচ ফুটের কিছু বেশি ,দুই পায়ে ভর দিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারেকিন্তু শরীর ও মাথা সামনের দিকে নুইয়া পড়ে, হাঁটু বাঁকিয়ে যায় শরীরের তুলনায় মুখ বড় ,মাথাল খুলি চ্যাটালো মানুষ নয় , পুরাপুরি বানরও নয় , তবে মানুষের আদলটাই বেশি


    ক্রো-মাঞঁ মানুষ- ১৮৬৮ সালে ফ্রান্সের দোর্দোঞন অঞ্চলে ৫ টি পূর্ণাবয়ব কঙ্কাল পাওয়া যায় ইহা ক্রো-মাঞঁ (Cro-Magnon)মানুষ লম্বায় ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি হতে ৬ফিট ১ ইঞ্চির মধ্যে ইহাদের লম্বাটে মাথা, থ্যাবড়া মুখ, পেশীবহুল প্রত্যঙ্গ ,উঁচু চেয়াল চেহারার দিক দিয়ে ইহা পুরাপুরি আধুনিক মানুষ ৷ কঙ্কালগুলোর বয়স মাত্র ৩০ হাজার বছর ৷ (সূত্র;-বিজ্ঞান ও বিশ্বজগত; লেখক-প্রিয়দারঞ্জন রায়)

          ‘প্রথম মানুষের’  চিহ্ন  ( নতুন  গবেষণার  একটি  প্রতিবেন , সৌজন্য , প্রথম  আলো )




              চোয়ালের নিচের অংশের এক টুকরো হাড়। তাতে যুক্ত রয়েছে পাঁচটি দাঁত। ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের লেডি–গেরারু এলাকার মাটি খুঁড়ে জীবাশ্মটি (ফসিল) উদ্ধার করা হয়েছে। এটিই হোমো গণভুক্ত প্রাণীর সবচেয়ে পুরোনো ফসিল বলে একদল গবেষক গত বুধবার দাবি করেছেন। মানুষও (বৈজ্ঞানিক নাম: হোমো স্যাপিয়েন্স) একই গণ–এর অন্তর্ভুক্ত।


              গবেষণা প্রতিবেদনটি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এই আবিষ্কারের ফলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মানুষের পূর্বসূরিরা লেডি–গেরারুর উন্মুক্ত তৃণভূমি, হ্রদ, নদী ও সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি প্রায় ২৮ লাখ বছর আগে বসবাস করত। সময়টা বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়েও চার লাখ বছর আগের।


             ওই গবেষক দলের প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্রায়ান ভিলমোয়ার বলেন, এটা হচ্ছে মানুষের পূর্বসূরি শাখাভুক্ত প্রজাতির প্রথম ফসিল। চোয়ালের ওই হাড়টির নাম দেওয়া হয়েছে এলডি থ্রিফিফটি–ওয়ান। ইথিওপিয়ার ওই গবেষণাস্থল থেকে ২০১৩ সালে এটি উদ্ধার করা হয়। ফসিলটি কোন প্রজাতির, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।


               ফসিলটি আধুনিক মানুষ প্রজাতির আদি কোনো প্রতিনিধির চিহ্ন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি সরাসরি হোমো স্যাপিয়েন্স–এর পূর্বসূরি প্রজাতির নয়। কিন্তু তাঁরা ধাঁধায় পড়েছেন এ জন্য যে, ফসিলটি এমন এক সময়ের, যখন মানুষের পূর্বসূরি হোমিনিড প্রজাতিগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল। ভিলমোয়ার বলেন, পূর্ব আফ্রিকা এলাকায় ২০ থেকে ৩০ লাখ বছর আগে যেসব ফসিল পাওয়া যায়, সেগুলো খুবই পাতলা। এমন ফসিল খুব কমই আছে যেগুলো হোমো গণভুক্ত প্রাণীর উৎস সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। তবে সময়টা ছিল মানুষের ক্রমবিকাশের কয়েকটি পর্যায়ের মধ্যে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি।


               এ পর্যন্ত হোমো গণভুক্ত সবচেয়ে প্রাচীন ফসিলটির বয়স প্রায় ২৩ লাখ থেকে ৩২ লাখ বছর। ইথিওপিয়ায় নতুন ফসিলটি দেখে গবেষকেরা মনে করছেন, প্রাণীটি তুলনামূলক দ্রুত রূপান্তরিত হয়েছে। ভিলমোয়ার আরও বলেন, ফসিলের নমুনাটি অবশ্যই উত্তরের চেয়ে বেশি প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। অধিকতর গবেষণার মাধ্যমে এসব প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে।


               যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক কায় রিড বলেন, নতুন ফসিলটি যে সময়ের, তখন গাছপালার সংখ্যা কম ছিল। জলবায়ু ছিল সম্ভবত তুলনামূলক উষ্ণ ও শুষ্ক। সেখানে টিকে থাকার জন্য প্রাণীটিকে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল।
বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স–এর উপসম্পাদক অ্যান্ড্রু সাগডেন বলেন, নতুন আবিষ্কারটি আফ্রিকায় মানুষের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এতে করে শুধু যে মানুষের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়েছে, তা নয়। পূর্বসূরিদের বিচরণকালের পরিবেশ সম্পর্কেও নতুন নতুন বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।


             নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা কম্পিউটার টোমোগ্রাফি (সিটি) ও ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোয়ালের হাড়ের জীবাশ্মটি বিশ্লেষণ করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় হাড়টির বিভিন্ন অংশের ডিজিটাল প্রতিরূপ কম্পিউটারের পর্দায় পুনরায় সংযোজন করা হয়। এতে দেখা যায়, চোয়ালের নিচের অংশটি সরু এবং অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেনসিস–এর মতো তুলনামূলক পুরোনো প্রজাতির সঙ্গে অনেকটা মেলে। ২১ লাখ থেকে ১৬ লাখ বছর আগে বসবাসকারী হোমো গণভুক্ত আদি তিনটি প্রজাতির চোয়ালের গঠনে বিস্তর পার্থক্য ছিল।


              যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত জাদুঘর ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিংগার বলেন, নতুন এসব গবেষণায় আদি মানুষ সম্পর্কে আরও জটিল একটি চিত্র উঠে এসেছে। এতে মানুষের সংজ্ঞা আসলে কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও নতুন করে ভাবার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ছোট ছোট দাঁত ও চোয়াল, বড় আকারের মস্তিষ্ক, দীর্ঘ পা, যন্ত্রপাতি তৈরির দক্ষতা অথবা এসবের সমন্বয়ে মানুষকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
সূত্র: এএফপি ও বিবিসি


   মানুষ ও পশুতে সাদৃশ্য অনেক  ,  যদিও ধর্ম মতে আকৃতি-প্রকৃতি ও জ্ঞানে-গুনে মানুষের সমতুল্য কোনো জীবই নেই।   কিন্তু বিজ্ঞানীগণ বলেন যে,   জীবজগতে মানুষের তেমন কোনো বৈশিষ্ট    নেই ,   যা আছে তা শুধু ক্রমবিবর্তনের ফল যাবতীয় জীবদেহের মৌলিক উপাদান একই মানুষের রক্তের প্রধান উপাদান শ্বেত কণিকা , লোহিত কণিকা , জল ও লবন জাতীয় পদার্থ এবং দেহ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় লৌহ , কার্বন , ফসফরাস ও গন্ধকাদি কতিপয় মৌলিক পদার্থ , যা অন্যান্য প্রাণীর দেহের উপাদানের সমান গরু, ঘোড়া, হাতি, বাঘ , শিয়াল , বিড়াল ইত্যাদি পশুরা পঞ্চ-ইন্দ্রিয়-বিশিষ্ট জীব, মানুষও তাহাই ঐসকল পশুর এবং মানুষের রক্ত , মাংস, মেদ, মজ্জা, অস্থি ইত্যাদিতে কোনো পার্থক্য তো নেই-ই, ইহাদের অভ্যন্তরীণ দেহযন্ত্র যথা-হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস,প্লীহা, যকৃত, মূত্রযন্ত্র, পাকস্থালী ইত্যাদির গঠন, ক্রিয়া, সংযোজন ও অবস্থতির ও বিশেষ পার্থক্য লক্ষিত হয় না বিশেষত শিম্পাঞ্জি ,গরিলা ও বানরের সঙ্গে মানুষের আকৃতি ও প্রকৃতির সাদৃশ্য যথেষ্ট ৷


      জীববিজ্ঞানীগণ স্তন্যপায়ী শ্রেণীর জীবসমূহকে কতগুলি দল বা বর্গ-এ বিভক্ত করেছেন ৷  ইহার বিশেষ একটা বর্গের সমস্ত প্রাণীকে একত্রে বলা হয় প্রাইমেট(Primate ।  যারা হাত দিয়ে জড়ায়ে ধরে গাছে উঠতে পারে , যাদের হাতে পাঁচটা আঙ্গুল আছে , আঙ্গুলে নখ থাকে , যাদের অক্ষিগোলক চতুর্দিকে অস্থি দ্বারা পরিবৃত , যাদের স্তনগ্ল্যাণ্ড বক্ষদেশে নিবদ্ধ এবং যাদের পাকস্থলী সাধারণভাবে গঠিত - তাহারাই  প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত আর মানুষের মধ্যেও এইসব প্রত্যেকটা চিহ্নই   বিদ্যমান তাই মানুষ ও ঐ প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত , অর্থাৎ মানুষ যে প্রইমেট, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই

       কিন্তু অনান্য জীবদের সঙ্গে মানুষের শত রকম সামঞ্জস্য থাকা সত্বেও মানুষ মানুষই ,       পশু নয় জীবজগতে মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট তিনটিযথা-হাত , মগজ  ও ভাষা 


         বিবর্তনের নিয়ম-কানুনে বিজ্ঞানীদের কোনো কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও , সকল বিজ্ঞানীই একমত যে ,মানুষের পূর্বপুরুষেরা এককালে পুরাপুরি বৃক্ষচারী জীব ছিলকালক্রমে যখন গাছের বাসা ছেড়ে মাটিতে নেমে আসলো , তখন অন্যান্য অনেক জানোয়ারের চেয়ে ছিল খুবই অসহায় জীবন সংগ্রামের জন্য তাদের সম্বল ছিল অন্যদের তুলনায় ভালো মস্তিষ্ক, আর ছিল চলাফেরার কাজ থেকে মুক্তি পাওয়া দু-টু হাত, যার সাহায্যে মানুষ বাঁচার চেষ্টা করেছে ফলে উন্নত হয়েছে মানুষের মস্তষ্ক এবং হাত দুইই 


অধিকন্তু মানুষ মস্তিষ্ক এবং হাত, এই দুইয়ের উপর নির্ভর করে মানুষ কথা বলতে শিখেছে, ভাষা পেয়েছে, যা পুরো সমাজের সম্পত্তি তাই ভাষাভাষী হিসাবে মানুষ একান্তই সামাজিব জীব উন্নত মস্তিষ্ক, কর্মক্ষম হাত এবং সুসমঞ্জস ভাষা সহায়ক হলো একই রকম জীবের আর তাদের নামই হলো বর্তমান মানুষ


        বিবর্তনের কয়েকটা ধাপ ,-উপরে উল্লেখিত হয়েছে শুধু বিবর্তনের প্রধান প্রধান ধাপ গুলো, যাতে প্রাথমিক পর্যায়ের বর্ণানা করা হয়েছে অতি সংক্ষেপে, বর্তমানে এ ব্যাপারে অনেক বই পাওয়া যায় বাজারে, অধিক জানার আগ্রহীরা তা সংগ্রহ করতে পারেন

    এক জাতীয় জীবের আর এক জাতীয় জীবে রূপান্তরিত হতে কোটি কোটি বছর সময় এর প্রয়োজন হয়েছে, অনেকে আবার পরিবেশের সঙ্গে নিজকে খাপ খাওয়াতে না পেরে ধ্বংস হয়ে গেছে কিছু অনুন্নত অবস্থায় বেঁচে আছে ,মংস্য ও সরীসৃপের মাঝামাঝি অবস্থায়(আফ্রিকার কোয়েলাকান্থ ও ফুসফুসয়ালা মাছ ) গরিলা; পশু ও মানুষের মাঝামাঝি জীব আর্কিওপটেরিকস- পাখি ও সরীসৃপের মাঝামাঝি জীব ৷ নিম্নে প্রধান ধাপগুলোর আবার সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো ;-


   (১) আমিবা ;-ইহারা এককোষী জীব, ইহার বিবর্তনে অর্থাৎ কোষ সমবায়ে গঠিত হয়েছে বহুকোষী জীব

    (২) বহুকোষী জীব;- ইহারা দু-দলে বিভক্ত হয়ে একদল হতে উদ্ভিদ এবং অপর দল হতে জন্মেছে সচল জীব

    (৩) ;- সচল জীব;- ইহাদের এক শ্রেণীর জীবের নাম ট্রাইলোবাইট

    (৪) ট্রাইলোবাইট;- ইহারা পোকা জাতীয় জলজীব , কালক্রমে এদের এক শ্রেণীর দেহে মেরুদণ্ড জন্মে, যাদের মাছ বলে আমরা জানি

    (৫);- মাছ;- ইহাদের বংশ থেকে জলচর, উভচর বিহঙ্গম ও স্থলচর জন্মেছে 
    (৬)- সরীসৃপ;- ইহাদের এক শাখা হতে জন্মেছে উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট স্তন্যপায়ী জীব

    (৭);- স্তন্যপায়ী জীব;- ইহাদের এক শাখা হয় বৃক্ষচারী জীব, যাদেরকে বলা হয় প্রাইমেট

    (৮) -প্রাইমেট;- ইহাদের মধ্যে জন্মে দ্বিপদ জীব, যাদের প্যারাপিথেকাস বলা হয়

    (৯) ;-প্যারাপিথেকাস;- ইহাদের মধ্য হতে একদল জন্মে পুরাপুরি সমতলভূমিবাসী দ্বিপদ জীবযরা এনথ্রোপয়েড এপ বা বনমানুষ হিসাবে পরিচিত হয়েছে

    (১০);- বনমানুষ ;- ইহাদের ক্রমোন্নতির ফলে জন্মিয়েছে- অসভ্য ও আধুনিক সভ্য মানুষ


       বিজ্ঞানীগণ বলেন যে প্রাণীজগতের বিবর্তনের শুরুতে যে রকম করেই ভিন্ন ভিন্ন উৎপত্তি হয়ে থাক না কেন ,বর্তমানে উহারা জাতীয়তা রক্ষার কারক সেলের অভ্যন্তরস্থ ক্রোমোসোম এই ক্রোমোসোমই জীবের জাতিভেদের জন্য দায়ী মানুষের সেলে ৪৬ টা ক্রোমোসোম আছে এক জাতীয় জীবের মধ্যে ক্রোমোসোমের সংখ্যার কখনও ব্যতিক্রম হয় না তবে জাতি ভেদে সংখ্যার তারতম্য হয় (সূত্র;-প্রাণতত্ত্ব , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পৃ১০৭, ১০৮ এবং সৃষ্টি রহস্য, লেখক, আরজ আলী মাতুব্বর )

  ( জনকণ্ঠের  একটি  প্রতিবেদন  এই  লেখার  সঙ্গে  প্রাসঙ্গিক  হওয়ায়  যুক্ত  করা  হলো  ৷ )

   রহস্য উন্মোচন
নিয়ানডারথাল মানুষের সঙ্গে আধুনিক মানুষের সংমিশ্রণ ঘটে আজ থেকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার বছর আগে। এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা। সেই সময়কার সাইবেরিয়ার একজন মানুষের হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। নেন্ডারথাল মানুষেরা এখন আর পৃথিবীতে নেই। এরা ছিল আধুনিক মানুষের খুব কাছাকাছি গোত্রের। ইউরোপ আর এশিয়াতেই ছিল এদের অবাধ বিচরণ। আজ থেকে চল্লিশ হাজার বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে যায় এরা। গবেষকদের বিশেষ করে নৃতত্ত্ববিদদের এদের প্রতি রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। বিস্তর গবেষণাও হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায় যে যখন থেকে আফ্রিকার বাহিরে যে সব আধুনিক মানুষের বিস্তার ঘটেছিল তাদের এক দশমিক পাঁচ থেকে দুই দশমিক এক শতাংশ ডিএনএ’র উৎস নিয়ানডারথাল মানব গোষ্ঠী।
গবেষকদের কাছে আধুনিক মানুষ এবং নিয়ানডারথাল সংমিশ্রণ কখন ঘটেছে, তা ছিল এক রহস্যেঘেরা। এত দিন ধারণা করা হতো সাঁইত্রিশ হাজার বছর আগ থেকে ছিয়াশি হাজার বছর আগ পর্যন্ত যে কোন একটা সময়কালে এদের সংমিশ্রণ ঘটে। কিন্তু প্রকৃত সময়টা বের করা যাচ্ছিল না। র্দীঘ গবেষণার পর উন্মোচিত হলো সেই রহস্যে। হাতির দাঁত সংগ্রাহক নিকোলাই পেরিস্টোভ পশ্চিম সাইবেরিয়ার আর্টিশ নদীর তীরে ২০০৮ সালে একটি হাড় খুঁজে পেয়েছিল। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গবেষকরা দেখল হাড়টি পঁয়তাল্লিশ হাজার বছর আগে কার। এই হাড়টিই প্রমাণ করে সেই সময়টাতে সাইবেরিয়াতে আধুনিক মানুষের বাস ছিল। কিন্তু আগে বিজ্ঞানীরা বলত আধূনিক মানুষের আবাস ছিল শুধু এশিয়াতেই। এবং সেই সময়টাতেই নিয়ানডারথাল এবং আধুনিক মানুষের সংমিশ্রণ ঘটে।
হাড়ের কার্বন ও নাইট্রোজেন আইসোটপ বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন সেই সময়টাতে মানুষ রসুন,, বেগুন, শিম, নাশপাতি, গম ইত্যাদি খেত যা শীত প্রধান দেশকেই নির্দেশ করে। হাড়ের বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মানুষটি জলজ উদ্ভিদ এবং স্বাদু পানির মাছ খেত যা সেই সময়কার ইউরোপের মানুষের খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
হাড়ের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,এটি আজকের যুগের এশিয়ান এবং শুরুর দিককার ইউরোপীয়ানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সর্ম্পকযুক্ত। হাড়টির ডিএনএ একই সঙ্গে নিয়ানডারথাল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করছে আবার একই সময়ে বর্তমান যুগের ইউরো এশিয়ানদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করছে। হাড়টি বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন এই ব্যক্তির মধ্যে প্রায় সাত হাজার থেকে তের হাজার বছর আগের নিয়ানডারথাল পূর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্য প্রবাহিত হয়েছে।
হাড়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়েই গবেষকরা আধুনিক মানুষের সঙ্গে নিন্ডারথালের সংমিশ্রণের সময়কাল সর্ম্পকে ধারণা লাভ করতে সমর্থ হয়েছেন। তারা তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন দ্য জার্নাল নেচারের অক্টোবরের ইস্যুতে। নেন্ডারথালদের ডিএনএ বহন কারী আধুনিক মানুষ কিভাবে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়েছেন তা নিয়ে এখন গবেষকরা গবেষণা করছেন। খুব শীঘ্রই হয়তো তা জানা যাবে।
লাইভ সায়েন্স অবলম্বনে
মোঃ আরিফুর রহমান






(ইহা একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক লিখা ,কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে  আঘাত করার
    জন্যে ইহা লিখা হয় নাই , এই লিখাটি  অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশ 
  করা যাবে না লেখকের অনুমতি ছাড়া  , লেখাটা শুধু আগ্রহী পাঠকদের 
     জন্যে । 

মন্তব্যসমূহ