ধর্মীয় নৈতিকতা ও
বিশ্বাসের সন্ধানে দার্শনিকদের বিজ্ঞান
দর্শন সব সময়ই মানুষের জ্ঞান চর্চার মূল কেন্দ্র ছিল , আর প্রাকৃতিকবিজ্ঞানছিলো তার সহচরী । কিন্তু বর্তমানে বিশ্বতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব এমনকি আধিবিদ্যার জগতেও
প্রাকৃতিকবিজ্ঞান বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা প্রথাগত দর্শনকে প্রায় স্থানচ্যুত করে
দিয়েছে ।
এখন পদার্থবিদ্যা অধিবিদ্যার অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে । মহাবিশ্বের উৎপত্তি আর পরিণতি নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীগণ প্রথাগত দার্শনিক , ধর্মীয় পণ্ডিত এমনকি অধিবিদ্যার গবেষকের চেয়ে শুদ্ধভাবে বক্তব্য প্রদানে এখন সক্ষম ।
এখন পদার্থবিদ্যা অধিবিদ্যার অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে । মহাবিশ্বের উৎপত্তি আর পরিণতি নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীগণ প্রথাগত দার্শনিক , ধর্মীয় পণ্ডিত এমনকি অধিবিদ্যার গবেষকের চেয়ে শুদ্ধভাবে বক্তব্য প্রদানে এখন সক্ষম ।
বিশ্বাস এবং ধর্ম সবসময়ই একে অন্যের পরিপূরক , বহু খ্যাতনামা দার্শনিকগণ বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন । এখানে ধর্মীয় নৈতিকতা ও বিশ্বাসকে ‘বিজ্ঞানের
চোখ’
দিয়ে দেখার
চেষ্টা করা হবে , আধুনিক বিশ্ব সমাজের মাপকাঠিতে ।
বাংলাদেশের
লৌকিক দর্শনের বই ‘সত্যের
সন্ধান’, এই বই এর লেখক আরজ আলী মাতুব্বর, তিনি তার সত্যের সন্ধান বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে জ্ঞান মাত্রই বিশ্বাস, যা বিশ্বে
প্রচলিত ‘ Knowledge is Virtue’ কথার
প্রায় অনুরূপ । তার মতে যে কোনো বিশ্বাসই জ্ঞান নয় । প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর যে বিশ্বাস
প্রতিষ্ঠিত তাকেই জ্ঞান বলা হয় , আর তাহাই খাঁটি বিশ্বাস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত
হয়ে থাকে । আর যে বিশ্বাস কল্পনা , অনুভূতি ,ভাবানুষঙ্গ বা কামনার উপর প্রতিষ্ঠিত তা
জ্ঞান নয়, তাকে অভিমত বা opinion বলা হয়ে থাকে, সহজ কথায় যাকে অন্ধ বিশ্বাস বলা হয় ।
কিন্তু খাঁটি বিশ্বাস সকল সকল সময়ই বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ( Lesson Experience ) প্রসূত প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত । মানুষ যাহা কিছু প্রত্যক্ষ করে , যা তার চোখ , কর্ণ ,নাক ,জিহ্বা , ত্বক ইতাদি ইন্দ্রয়ের সাহায্যে তাহা সর্বদাই বিশ্বাস্য । বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই বিজ্ঞানের কথা সবাই বিশ্বাস করে সবাই । কিন্তু অধিকাংশ ধর্ম এবং ধর্মের অধিকাংশ তথ্য অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত ।
ধর্মের মূল ভিত্তি বিশ্বাস । ধর্ম এই বিশ্বাসকেই আঁকড়াইয়া আছে , কিন্তু এই বিশ্বাস কি বা ইহার উৎপত্তির কারণ কি , ধর্ম তাহা অনুসন্ধান করে না । কারণ অধিকাংশ ধর্মীয় বিধি- বিধান প্রত্যক্ষ বা অনুমানসিদ্ধ নয়, এই জন্য অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের কিছু বিশ্বাস অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে ।
আরজ আলী মাতুব্বর প্রায় ৭০ বছর আগে বিভিন্ন প্রাপ্ত তথ্যের উপর এই সত্যের সন্ধান বইটি লিখেছিলেন, বর্তমানে বিজ্ঞান আরো অনেক অগ্রসর হয়ে এ ব্যাপারে নিত্য নতুন ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে । পরবর্তীতে আমরা সে দিকেই অগ্রসর হবো ।
কিন্তু খাঁটি বিশ্বাস সকল সকল সময়ই বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ( Lesson Experience ) প্রসূত প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত । মানুষ যাহা কিছু প্রত্যক্ষ করে , যা তার চোখ , কর্ণ ,নাক ,জিহ্বা , ত্বক ইতাদি ইন্দ্রয়ের সাহায্যে তাহা সর্বদাই বিশ্বাস্য । বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই বিজ্ঞানের কথা সবাই বিশ্বাস করে সবাই । কিন্তু অধিকাংশ ধর্ম এবং ধর্মের অধিকাংশ তথ্য অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত ।
ধর্মের মূল ভিত্তি বিশ্বাস । ধর্ম এই বিশ্বাসকেই আঁকড়াইয়া আছে , কিন্তু এই বিশ্বাস কি বা ইহার উৎপত্তির কারণ কি , ধর্ম তাহা অনুসন্ধান করে না । কারণ অধিকাংশ ধর্মীয় বিধি- বিধান প্রত্যক্ষ বা অনুমানসিদ্ধ নয়, এই জন্য অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের কিছু বিশ্বাস অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে ।
আরজ আলী মাতুব্বর প্রায় ৭০ বছর আগে বিভিন্ন প্রাপ্ত তথ্যের উপর এই সত্যের সন্ধান বইটি লিখেছিলেন, বর্তমানে বিজ্ঞান আরো অনেক অগ্রসর হয়ে এ ব্যাপারে নিত্য নতুন ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে । পরবর্তীতে আমরা সে দিকেই অগ্রসর হবো ।
বাংলাদেশের প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ তার লেখা আমার অবিশ্বাস বইয়ের বিশ্বাসের জগত প্রবন্ধে লিখেছেন-মানুষ জন্ম নিয়েই দেখেছে
তার জন্য প্রাণপণে প্রস্তুত হয়ে আছে পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন বিশ্বাসের জগত । নিজের জন্যে কোনো বিশ্বাস তার খুঁজে বের করতে
হয় না । পরিবার ও সমাজ , কখনো কখনো রাষ্ট্র , তার জন্যে বিশ্বাস তৈরি রেখেছে, এবং তাকে পোষন করতে হবে ওই বিশ্বাস । মানুষ জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠে এই পূর্বপ্রস্তুত
বিশ্বাসের মধ্যে । তার জন্যে বিশ্বাসের জামাকাপড় শেলাই করা আছে, তার দায়িত্ব ওই জামাকাপড়ের মধ্যে ঢুকে প’ড়ে
শান্তি পাওয়া ।
প্রথাগতভাবে ভালো মানুষ, সৎ মানুষ, মহান মানুষ বলতেই বোঝায় বিশ্বাসী মানুষ । পৃথিবী জুড়ে মানুষ গ’ড়ে তুলেছে বিচিত্র বিশ্বাসের জগত , বিশ্বাস দিয়ে ভাগ ক’রা হয়ে গেছে সমস্ত বিশ্বকে । এখানে সংশয় প্রকাশ বা কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ সীমিত। আর এই অন্ধ বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধ’রে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে ; পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস । এই বিশ্বাসের ব্যবহার করে দেশে দেশে ,জাতীতে জাতীতে , বিভিন্ন ধর্মে, এমনকি একই ধর্মের বিভিন্ন অংশের মধ্যে মারামারী, কাটাকাটি, এবং কাতল বা হত্যা করার সংষ্কৃতি বর্তমানে সারা বিশ্বেই পুরোধমে চালু হয়ে গেছে ।
প্রথাগতভাবে ভালো মানুষ, সৎ মানুষ, মহান মানুষ বলতেই বোঝায় বিশ্বাসী মানুষ । পৃথিবী জুড়ে মানুষ গ’ড়ে তুলেছে বিচিত্র বিশ্বাসের জগত , বিশ্বাস দিয়ে ভাগ ক’রা হয়ে গেছে সমস্ত বিশ্বকে । এখানে সংশয় প্রকাশ বা কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ সীমিত। আর এই অন্ধ বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধ’রে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে ; পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস । এই বিশ্বাসের ব্যবহার করে দেশে দেশে ,জাতীতে জাতীতে , বিভিন্ন ধর্মে, এমনকি একই ধর্মের বিভিন্ন অংশের মধ্যে মারামারী, কাটাকাটি, এবং কাতল বা হত্যা করার সংষ্কৃতি বর্তমানে সারা বিশ্বেই পুরোধমে চালু হয়ে গেছে ।
বিশ্বাসের এই মহামারী থেকে বের হয়ে আসার
ব্যাপারে দার্শনিক ও চিন্তাশীল মুনিষীরা বিভিন্ন সময়ে চিন্তা ও গবেষণা করে কিছু
বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারার জন্যেই আজ বিশ্বে মানুষ সভ্য হয়ে বসবাস করতে পারছে ।
বৌদ্ধ ধর্ম অন্যান্য ধর্ম, বিশেষকরে সিমেটিক তিন ধর্মের থেকে কিছু আলাদা
নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । তাই বৌদ্ধরা বলেন যে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কেহ নাই , জগত অনন্তকাল থেকে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে
ইত্যাদি কথা । আর এই ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ তাই বোধহয় মানুষকে যুক্তিবাদী
হওয়ার একটি উপদেশ দিয়ে ছিলেন, আর তা হচ্ছে-
‘ Doubt everything, and find your own light’ ; যা আধুনিক যুক্তিবাদীদের সংশয়ী দৃষ্টিভঙ্গিরই এক সংগঠিত রূপ । সংশয়বাদীর এখন যেটা বলেন যে,
‘ Doubt everything, and find your own light’ ; যা আধুনিক যুক্তিবাদীদের সংশয়ী দৃষ্টিভঙ্গিরই এক সংগঠিত রূপ । সংশয়বাদীর এখন যেটা বলেন যে,
‘কোন কিছুই
বিনা প্রশ্নে মেনে নিও না’
তারই অনুরূপ ব্যক্তব্য প্রদান করে
ছিলেন গৌতম বুদ্ধ আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে, অনেকটা উপদেশের আকারে ।
সংশয় কেন ? এর উত্তরে দার্শনিক ও অধ্যাপক সাইদুর রহমান
বলেছেন-‘সংশয়ই হচ্ছে
সকল জ্ঞানের উৎস । মানুষ চোখ, কান বন্ধ করে যে যা বলেছে তা বিশ্বাস না করে সংশয় প্রকাশ করেছে বলেই বিশ্ব
সমাজ আজ এতদুর এগিয়েছে’ ।
আধুনিক বাঙালী
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তার কবিতায় সংশয়বাদী ভাবনার প্রকাশ করেছেন
এইভাবে -
" বরং দ্বিমত হও , আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায় ।
বরং বিক্ষত হও প্রশ্নের পাথরে ।
বরং বুদ্ধির নকে শান দাও, প্রতিবাদ করো ।
অন্তত আর যাই করো, সমস্ত কথায়
অনায়াসে সম্মতি দিও না ।
কেননা, সমস্ত কথা যারা আনায়াসে মেনে নেয় ,
তারা আর কিছুই করে না ,
তারা আত্মবিনাশের পথ পরিষ্কার করে । "
ইতিহাসের দিকে তাকালে সংশয় প্রকাশের কিছু
বাস্তব সুফল দেখা যায়:
যেমন দার্শনিক টলেমির ‘ পৃথিবী-কেন্দ্রিক’ মতবাদে বিখ্যাত দার্শনিক কোপার্নিকাশ এবং বৈজ্ঞানিক গ্যালেলিওরা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বলেই টলেমির মতবাদ এক সময় ভূল প্রমাণিত হয়েছে ।
পদার্থবিজ্ঞানীরা এক সময় ‘ইথার’ নামক কাল্পনিক মাধ্যমটির অস্তত্বে সন্দেহ করায় পরবর্তীতে হাইগেনের তরঙ্গ-তত্ত্ব আর ম্যাক ওয়েলের তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণিত করে আলোর প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে পদার্থবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে , প্লাঙ্ক , আইনস্টাইন আর ব্রগলীর তত্ত্বগুলো । একই ভাবে হাটন আর লায়েলরা বাইবেলে উল্লেখিত পৃথিবীর বয়স ৬০০০ বছরের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করায়, বর্তমানে পৃথিবীর আসল বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে । আর এ ভাবেই সভ্যতা সামনের দিকে এগোয় । বিজ্ঞানীরা সংশয় প্রকাশ না করলে এবং শাস্থিভোগ পর্যন্ত না করলে আজও বোধকরি সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতো আর আমরা বর্তমান সভ্য বিশ্বে আবির্ভূত হতে আরো কতকাল পেরিয়ে যেত তা সহজেই অনুমান করা যায় । তাই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে - মানব সভ্যতার অনিবার্য গতি আসলে বিশ্বাসের বিপরিতে এবং যুক্তির অভিমূখে ,যুক্তির পক্ষে ।
যেমন দার্শনিক টলেমির ‘ পৃথিবী-কেন্দ্রিক’ মতবাদে বিখ্যাত দার্শনিক কোপার্নিকাশ এবং বৈজ্ঞানিক গ্যালেলিওরা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বলেই টলেমির মতবাদ এক সময় ভূল প্রমাণিত হয়েছে ।
পদার্থবিজ্ঞানীরা এক সময় ‘ইথার’ নামক কাল্পনিক মাধ্যমটির অস্তত্বে সন্দেহ করায় পরবর্তীতে হাইগেনের তরঙ্গ-তত্ত্ব আর ম্যাক ওয়েলের তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণিত করে আলোর প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে পদার্থবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে , প্লাঙ্ক , আইনস্টাইন আর ব্রগলীর তত্ত্বগুলো । একই ভাবে হাটন আর লায়েলরা বাইবেলে উল্লেখিত পৃথিবীর বয়স ৬০০০ বছরের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করায়, বর্তমানে পৃথিবীর আসল বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে । আর এ ভাবেই সভ্যতা সামনের দিকে এগোয় । বিজ্ঞানীরা সংশয় প্রকাশ না করলে এবং শাস্থিভোগ পর্যন্ত না করলে আজও বোধকরি সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতো আর আমরা বর্তমান সভ্য বিশ্বে আবির্ভূত হতে আরো কতকাল পেরিয়ে যেত তা সহজেই অনুমান করা যায় । তাই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে - মানব সভ্যতার অনিবার্য গতি আসলে বিশ্বাসের বিপরিতে এবং যুক্তির অভিমূখে ,যুক্তির পক্ষে ।
ক্যারেন আর্মস্ট্রং একজন গবেষক, তিনি ধর্ম নিয়ে গবেষণা করে অনেকগুলো বই লিখেছেন । তার লিখিত বই ‘ The
Battle For God’ এ
বলেছেন, মানুষের চিন্তাধারা অনাদিকাল থেকেই বিকশিত
হয়েছে পরিষ্কার দুটি ধারায় । এর একটি হচ্ছে ‘ মিথোস’ , যা প্রকাশ করে রহস্যময়তা , দুর্জ্ঞেয়তা এবং অতীন্দ্রিয়তাকে । ক্যারেন আর্মস্ট্রং-এর চোখে মিথ হচ্ছে কতকগুলো রীতি-নীতি , আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কার-যেগুলোর কোন যুক্তিগ্রাহ্য প্রমান কখনও
পাওয়া যায় না । এগুলো মানব মনে জায়গা করে নিয়েছে স্রেফ কতকগুলো বিশ্বাসের কাঁধে ভর করে । আর আর্মস্ট্রং গ্রিক শব্দ ‘লোগোস’ কে বর্ণনা করেছেন ‘ যুক্তি গ্রাহ্য’, ‘ প্রমানসাপেক্ষ’, ‘ বিজ্ঞানভিত্তিক’ শব্দ ক’টির সাহায্যে । তার মতে , আধুনিক বিশ্বে
বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, প্রগতি আর উন্নয়নের মূলে রয়েছে ‘ লোগোস ’ -যা জ্ঞান ও যুক্তির মাপকাঠিতে প্রকৃত
বাস্তবতার পরিচায়ক । তাই বোধহয় বাংলা দেশের এই প্রবাদটির জন্ম হয়েছে
যে ‘ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু , তর্কে বহুদুর’ যা
যুক্তিহীনভাবেই অন্ধ-বিশ্বাসের পক্ষে সাফাই গাওয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা নয় কী ?
ধর্মীয় নৈতিকতা প্রসঙ্গে বিখ্যাত দার্শনিক এডগার এলান পো বলেছেন-
ধর্মীয় নৈতিকতা প্রসঙ্গে বিখ্যাত দার্শনিক এডগার এলান পো বলেছেন-
‘ মানবজাতির অন্য যে-কোনো গোত্রের লোকের চেয়ে
ধর্মের প্রবর্তক ও প্রচারকেরাই ছিলেন ইতিহাসে যাবতীয় দুর্গতি ও যুদ্ধবিগ্রহের
প্রকৃত কারণ’ ।
আর এক দার্শনিক প্যাসকেল মন্তব্য করেছেন
দীর্ঘদিন এ নিয়ে গবেষণার পর-
‘ অনিষ্টকর কর্ম মানুষ কখনওই অতোটা
অন্তপ্রাণভাবে ও সানন্দে
করে না , যতোটা সে করে ধর্মীয় বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে
করার সময়’ ।
স্যাম হ্যারিস তার লিখিত বই -The End of Faith: Religion , Terror,
and Future of Reason, ( প্রকাশ-২০০৫ সাল ) এ দেখিয়েছেন অতিমাত্রায় মধ্যযুগীয় বিশ্বাস
নির্ভরতার কারণেই সন্ত্রাস আর জিহাদ এখনো করাল গ্রাসের মতো থাবা
বসিয়ে আছে আমাদের সমাজে । তার মতে বর্তমান আধুনিক সভ্যতার আলোকে ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের স্বার্থেই
এখন সমাজের সকল স্তর থেকেই মধ্যযুগীয় এই বিশ্বাস নির্ভর অচল অবস্থা
থেকে বের হয়ে আসতে হবে সকলের ।
বর্তমান বাস্তবতার আলোকে ধর্মীয় নৈতিকতা ;
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনের
একমাত্র অবলম্বন ছিল ঈশ্বরের প্রতি অগাধ অনুগত্য এবং ধর্ম বিশ্বাস । এর কারণ হিসাবে বলা হয় পশ্চাত্যের গোড়া খ্রিস্টধর্মের
অনুসারীরা এ বিশ্বাস জণসাধারণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে , ধর্মগ্রন্থগুলো আর তাদের ঈশ্বরই নৈতিকতা
বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার একমাত্র কর্তৃপক্ষ, অন্য কেউ নয় ।ধর্মগ্রন্থগুলোতে যে ভাবে নির্দেশ প্রদান করা
হয়েছে সে গুলোকে অন্ধভাবে অনুসরণ করাই হলো নৈতিকতা বা নৈতিকতার মাপকাঠি ।
কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে
সচেতন ও সংশয়বাদী মানুষ জানতে পারছে যে ধর্ম ও নৈতিকতার বিশ্বাস আসলে বাস্তবসম্মত
নয় , এখন আর । মানুষ এক সময় অজ্ঞানবসত তা গ্রহন করেছিল , যা মানুষের অবিকশিত চিন্তার ফল ও অজ্ঞানতা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না ।
কাজেই অজ্ঞানতাকে পুঁজি করে মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনের কাহিনী প্রচারের দিন সীমিত হয়ে আসছে এখন । মানুষ এখন ‘মরালিটি’ বা নৈতিকতাকে বাস্তবসম্মত ভাবে দেখবার পক্ষপাতি । তাই এ সব বিশ্বাস থেকে মানুষকে মুক্ত করতে আগ্রহীরা এখন যুক্তিবাদী সমিতি , মানবতাবাদী সমিতি গঠন ক’রে সভ্য মানুষকে আলোর পথে আলোকিত করার চেষ্টায় ব্যস্ত আছেন ।
কাজেই অজ্ঞানতাকে পুঁজি করে মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনের কাহিনী প্রচারের দিন সীমিত হয়ে আসছে এখন । মানুষ এখন ‘মরালিটি’ বা নৈতিকতাকে বাস্তবসম্মত ভাবে দেখবার পক্ষপাতি । তাই এ সব বিশ্বাস থেকে মানুষকে মুক্ত করতে আগ্রহীরা এখন যুক্তিবাদী সমিতি , মানবতাবাদী সমিতি গঠন ক’রে সভ্য মানুষকে আলোর পথে আলোকিত করার চেষ্টায় ব্যস্ত আছেন ।
দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল তার বহুল আলোচিত গ্রন্থ ‘ হোয়াই আই এম নট এ খ্রিস্টান’ গ্রন্থের
এক স্থানে বলেছেন :
‘ধর্মের উপদেশ গুলো এমন সময় থেকে উঠে এসেছিল যখন মানুষ বর্তমান যুগের থেকেও অনেক নিষ্ঠুর ছিল । ফলে দেখা যাচ্ছে এই উপদেশগুলি অমানবিকতাকে চিরন্তণ করবার জন্যেই তৈরি । যদি এই চিরন্তর ব্যাপারটি গ্রহনে মানুষকে বাধ্য না করা হতো, তবে মানুষের নৈতিক বিবেকবোধ বর্তমানে আরো অনেক উন্নত হতো’ ।
‘ধর্মের উপদেশ গুলো এমন সময় থেকে উঠে এসেছিল যখন মানুষ বর্তমান যুগের থেকেও অনেক নিষ্ঠুর ছিল । ফলে দেখা যাচ্ছে এই উপদেশগুলি অমানবিকতাকে চিরন্তণ করবার জন্যেই তৈরি । যদি এই চিরন্তর ব্যাপারটি গ্রহনে মানুষকে বাধ্য না করা হতো, তবে মানুষের নৈতিক বিবেকবোধ বর্তমানে আরো অনেক উন্নত হতো’ ।
তবে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই বেশ কিছু ভাল ভাল
কথা আছে, যাকে ধার্মিকেরা নৈতিকতার চাবিকাঠি বলে মনে
করেন ।যেমন পবিত্র কোরানের ৬ নং সুরা আনআম এর ১০৮ নং আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে যে :
‘ আর তারা আল্লাহ্ কে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তাদেরকে তোমরা গাল দেবে না , তা হলে তারা ( সীমালঙ্ঘন কারে) অজ্ঞানতাবশত আল্লাহ্ কেও গাল দেবে । এভাবে প্রত্যেক জাতির চোখে তাদের কার্যকলাপ শোভন করেছি। তারপর তাদের প্রতিপালকের কাছে তারা ফিরে যাবে । তখন তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকার্য সম্বন্ধে জানিয়ে দেবেন’
কিন্তু বাস্তবে এই আয়াতের প্রতিফলন সমাজে কতটুকু দেখতে পাওয়া যায় ?ধর্মবিষয়ক গবেষক ও দার্শনিক ও সংশয়বাদীদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটি বিবেচনা করলে দেখা যাবে-ভালবালা প্রেম এবং সহিষ্ণুতার বিভিন্ন উদাহরণ যে ধর্মগ্রন্থ গূলোতে পাওয়া যায় , সেগুলোর অনেকটাই ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের কোনো মৌলিক আবিষ্কার নয় । প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করা হয় যে , খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ বছর আগেই দার্শনিক লেভিটিকাস (১৯: ১৮ ) তে বলে গেছেন, ‘ নিজকে যেমন ভালবাস , তেমনি ভালবাসবে তোমার প্রতিবেশীদের’ । কনফুসিয়াস বলেছিলেন-‘ অন্যের প্রতি সেরকম ব্যবহার কোর না , যা তুমি নিজে পেতে চাও না’ ।
‘ আর তারা আল্লাহ্ কে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তাদেরকে তোমরা গাল দেবে না , তা হলে তারা ( সীমালঙ্ঘন কারে) অজ্ঞানতাবশত আল্লাহ্ কেও গাল দেবে । এভাবে প্রত্যেক জাতির চোখে তাদের কার্যকলাপ শোভন করেছি। তারপর তাদের প্রতিপালকের কাছে তারা ফিরে যাবে । তখন তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকার্য সম্বন্ধে জানিয়ে দেবেন’
কিন্তু বাস্তবে এই আয়াতের প্রতিফলন সমাজে কতটুকু দেখতে পাওয়া যায় ?ধর্মবিষয়ক গবেষক ও দার্শনিক ও সংশয়বাদীদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটি বিবেচনা করলে দেখা যাবে-ভালবালা প্রেম এবং সহিষ্ণুতার বিভিন্ন উদাহরণ যে ধর্মগ্রন্থ গূলোতে পাওয়া যায় , সেগুলোর অনেকটাই ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থের কোনো মৌলিক আবিষ্কার নয় । প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করা হয় যে , খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ বছর আগেই দার্শনিক লেভিটিকাস (১৯: ১৮ ) তে বলে গেছেন, ‘ নিজকে যেমন ভালবাস , তেমনি ভালবাসবে তোমার প্রতিবেশীদের’ । কনফুসিয়াস বলেছিলেন-‘ অন্যের প্রতি সেরকম ব্যবহার কোর না , যা তুমি নিজে পেতে চাও না’ ।
আইসোক্রেটস যুশুর জন্মের ৩৭৫ বছর আগে বলে গিয়েছিলেন,
‘ অন্যের যে কাজে তুমি রাগান্বিত বোধ কর , তেমন কিছু তুমি অন্যদের প্রতি কর না’ ।
তাওইজমে বা গৌতম বুদ্ধের বাণীতে ও এমন অনেক কথা বা উপদেশ দেখতে পাওয়া যায়, যা সিমেটিক দুই ধর্ম প্রচারিত হওয়ার আগে থেকেই । তাই এ গুলোর মৌলিকত্ত্বে সন্দেহ পোষণ করা কী অমূলক ?
‘ অন্যের যে কাজে তুমি রাগান্বিত বোধ কর , তেমন কিছু তুমি অন্যদের প্রতি কর না’ ।
তাওইজমে বা গৌতম বুদ্ধের বাণীতে ও এমন অনেক কথা বা উপদেশ দেখতে পাওয়া যায়, যা সিমেটিক দুই ধর্ম প্রচারিত হওয়ার আগে থেকেই । তাই এ গুলোর মৌলিকত্ত্বে সন্দেহ পোষণ করা কী অমূলক ?
কাজেই দেখা যায় যে নৈতিকতার উপকরণগুলো
ধর্মপ্রচারের অনেক আগ থেকেই সমাজে প্রবাহমান ছিল এবং এর কোনটাই আসলে শুধু ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ভূত হয় নাই । বরং বিকশিত হয়েছে সমাজবিবর্তনের
অবশ্যাম্ভাবী ফল হিসাবে , সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই । সৃষ্টির প্রথম থেকে মানুষ কিছু কিছু
বৈশিষ্ট্যকে ‘ নৈতিক গুণাবলী’ হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল
সমাজব্যবস্থাকে অচিরেই ধ্বসে পড়া থেকে রক্ষা করতে নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে, কোন ধর্মীয় নৈতিকতার বা কেউর নির্দশে নয়, তাদের নিজেদের প্রয়োজন অনুসারেই ।
তাই এখন প্রাচীনকালের ধর্মগ্রন্থগুলোর আলোকে
মানুষের নৈতিকতাকে বিশ্লেষণ না করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে অনুসন্ধান ও বিচার
বিশ্লেষণ করা আধুনিক সমাজ গঠনের স্বার্থই জরুরী ।
মনোবিদ, বিজ্ঞানের দার্শনিক এবং স্কেপটিক ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা ড . মাইকেল শারমা তার লেখা বিখ্যত গ্রন্থ The Science of Good & Evil এ বলেছেন যে মানুষ সমাজ বিকাশের প্রয়োজনেই সমাজিক মৃল্যবোধ এবং নৈতিকতার নীতিকে প্রথম থেকে ‘ গোল্ডেন রুল’ হিসাবে গ্রহন করেছিল । যা হচ্ছে-‘ Do unto others, as you would have them do unto you’ ( অন্যদের প্রতি সেরকম ব্যবহারই করো যা তুমি তাদের থেকে পেতে চাও )
এখন বিজ্ঞানীরা বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
কীভাবে পরার্থতা কিংবা সহযোগিতার মতো ব্যাপারগুলো প্রাণীজগতে উদ্ভূত হয়েছে তার
বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হয়েছেন ।
আধুনিক বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং চিন্তাবিদেরা বহুভাবে দেখিয়েছেন যে ডারউইনীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিকভাবেই পরার্থপরায়নাতা, সহযোগিতা, নৈতিকতা আরমূল্যবোধের মতো অভিব্যক্তিগুলো কি ভাবে উদ্ভূত হয়ে পরে বিবর্তনের পথ ধরে মানব সমাজে এসে আরো বিবর্ধিত আর বিকশিত হয়েছে ।
আধুনিক বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং চিন্তাবিদেরা বহুভাবে দেখিয়েছেন যে ডারউইনীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিকভাবেই পরার্থপরায়নাতা, সহযোগিতা, নৈতিকতা আরমূল্যবোধের মতো অভিব্যক্তিগুলো কি ভাবে উদ্ভূত হয়ে পরে বিবর্তনের পথ ধরে মানব সমাজে এসে আরো বিবর্ধিত আর বিকশিত হয়েছে ।
তাই সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন ধর্মকেন্দ্রিক
নৈতিকতার পরিবর্তে আগামীতে ধর্মমূক্ত
মানুষেরাই ভবিষ্যত পরিবর্তিত বিশ্বে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের এক নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ
করবে , আগামী প্রজন্মের অগ্রগতীর জন্যে ।
মানুষেরাই ভবিষ্যত পরিবর্তিত বিশ্বে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের এক নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ
করবে , আগামী প্রজন্মের অগ্রগতীর জন্যে ।
সূত্র;-অভিজিৎ রায় ও
রাহান আবীর লিখিত; অবিশ্বাসের দর্শন (মূল সূত্র)
আরজ আলী মাতুব্বর; সত্যের সন্ধান ,
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান;-কোরানশরিফ-সরল বঙ্গানুবাদ
( এই লিখাটি কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার জন্যে নয় , ইহা শুধু বৈজ্ঞানিক
দৃষ্টিকোন কোন থেকে, শুধু আগ্রহীদের জন্যে একটা লিখা ,যা কথাও প্রকাশ করা
যাবে না ,লেখকের অনুমতি ছাড়া , ধন্যবাদ ।)
দৃষ্টিকোন কোন থেকে, শুধু আগ্রহীদের জন্যে একটা লিখা ,যা কথাও প্রকাশ করা
যাবে না ,লেখকের অনুমতি ছাড়া , ধন্যবাদ ।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন