বাঙালী তরুণদের আবার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
গত ৫ই ফেব্রুয়ারী যুদ্ধাপরাধীদের একজনের বিচারের
ঘোষিত রায়ের প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মের তরুণদের মাধ্যমে যে গণজাগরণের জোয়ার এসেছে
,তা হয়ত সবার কাছে সম্পুর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল না ,কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে এই প্রজন্মের
তরুণদের কাছে বাঙলাদেশের বর্তমানের রাজনৈতিক , সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্বের
বিপক্ষে যে চিন্তা ধারার সৃষ্টি হয়েছিল ,আর তার প্রতি ভেতরে ভেতরে তারা যে কত বিরুপ
মনোভাব পোষণ করে আসছিলো, আর এই মনোভাবের প্রবল বর্হিপ্রকাশ যে শুধু যুদ্ধাপরাধীর বিচারের
রায় ঘোষণা উপলক্ষে প্রকাশিত হবে এইভাবে,তা কেউই চিন্তা করতে পারেন নাই ।
এখন এই ধারাকে সযত্নে রক্ষা করা দেশ , সমাজ ও রাষ্ট্রেরই কর্তব্য । বর্তমান
প্রচলিত ধারাকে প্রতিহত করে একটা সুষ্ট ধারার রূপান্তরিত করে তা সামনের দিকে এগিয়ে
নেয়া , সরকার ,বিরোধীদল ,সূশীল সমাজ সহ সকল বিবেকবান মানুষের একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য
হওয়া উচিত ,দেশের এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরই স্বার্থেই এবং বাঙলাদেশকে ধীরে ধীরে
একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করা । এর একটা সূবর্ণ সুযোগ বর্তমান
তরুণ প্রজন্ম আমাদেরকে আবার ১৯৭১ এর মত এনে দিয়েছে ।
এই লক্ষ্যে দেশের বর্তমান শাসনতন্ত্রের সাম্প্রদায়িক
রূপ পরিবর্তন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম শাসনতন্ত্র থেকে বাদ দিয়ে দেশটাকে একটা অসাম্প্রদায়িক রূপ
দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের । ভোটের রাজনীতি থেকে সরে এসে দেশ , জাতি এবং ভবিষ্যৎ
প্রজন্মের সৃষ্টভাবে ঠিকে থাকার স্বার্থেই এই ব্যবস্থার প্রয়োজন । না হয় পাকিস্তান
বা আফগানিস্থানের মত এই দেশও একসময় পরিণত হয়ে যাবে এবং মধ্যযুগীয় ধারায় পরিচালিত হবে
একটা অকার্যকর রাষ্ট্ররূপে । বর্তমান সরকারের
কাছে এখন সেই ক্ষমতা আছে, এবং এই ক্ষমতা এবং বর্তমান জণগনের জাগরণের এই ধারা কাজে লাগিয়ে
তা সহজেই করা সম্ভব , প্রয়োজন শুধু সদ-ইচ্চার এবং কিছু স্বার্থ ত্যাগের । দেশ ও জাতীর
স্বার্থে , সরকারের নিজের স্বার্থ ত্যাগ করলে জণগন নিশ্চয় এর প্রতিদানও দিবে, ভোটের
মাধ্যমে ।
গত শতাব্দির চল্লিশ , পঞ্চাশ , ষাট এমনকি
সত্ত্বর দশকে এই দেশে তখন অনেকটা অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ ছিল, মানুষের মুক্তচিন্তা চর্চার
সুযোগ ছিল । তখন দেশের শিক্ষিত ও তরুণ বুদ্ধিজীবীরা ও বিভিন্ন পেশার মানুষ দেশের সূশীল মানুষের সঙ্গে মিলে একটা
মুক্তচিন্তা বিকাশের সমাজ সৃস্টি করতে পেরেছিলেন । সেই সময়কে তখন ইরান তুরান বাগদাদ
ছেড়ে বাঙালীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হিসাবে অভিহিত করা হয়েছিল । আর মানুষিক ভাবে ঐ স্বদেশ
প্রত্যাবর্তনকারিরাই , বিঙালী রাজনৈতিক , বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সহ শিক্ষিত
মানুষের চিন্তা ও চেতনায় যে সুষ্ট চিন্তার বীজ বোপন করতে পেরেছিলেন, তার পরিনামে দেশের
সাধারণ মানুষের চিন্তায় ও চেতনায় যে বিকাশ ঘটেছিল
তার ফলশ্রোতিতে ভাষা আন্দোলনের ধারাকে সুষ্টভাবে পরিচালিত করে , পরবর্তীতে একটা স্বাধীন
বাঙলা দেশের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল ।
তাই যদি আমরা এখন এই তরুণ প্রজন্মের জাগরনী ধারাকে সুষ্টভাবে পরিচালনা করতে পারি তবে
এই স্বাধীন দেশটাকে আবার মানুষের ভালভাবে বসবাসের
উপযোগী করে তোলা যাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটা নতুন আশার আলোর প্রকাশ ঘটানোর পথ সুগম হবে ।
এতদিন
দেশের তরুণ প্রজন্মের দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাওয়ার যে প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল , যারা দেশ
ত্যাগ করতে পারে নাই , তারা বিভিন্ন পার্ঠির ক্যাডারে যোগ দিয়ে রাতারাতি নিজের ভাগ্য
পরিবর্তনের চেষ্টায় নিয়োজিত ছিল, তারাও আজ এই জাগরনি মঞ্চে এসে যোগ দিয়েছে, তাদের নিজের স্বার্থ ত্যাগ
করে । এদেরকে একটা সুষ্টধারায় ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা এখন সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য । এই ধারাকে গত শতাব্দির বাঙালীর ঘরে ফেরা
বা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই তুলনা করা চলে । এই ধারাকে এখন ধীরে ধীরে সঠিক পথে
পরিচালনা করা শুধু সময়েরই দাবী । আর সেটা করতে না পারলে আবার আমরা অন্ধকারে নিম্মজিত
হবার সম্ভাবনা
প্রবল হয়ে উঠবে । দেশে দলাদলীর প্রবণতা থাকবে, স্বাধীনতার যুদ্ধে, ও মুক্তিযুদ্ধের
সময় ও এই দলাদলী ছিল , রাজাকার, আল-বদর ছিল, পাকিস্তানের পক্ষের লোক ও ছিল, আমাদের
প্রবল ইচ্ছা ছিল, , তাই বিভিন্ন প্রতাবন্ধকতা অতিক্রম করে,একটা স্বাধীন বাঙলাদেশ অর্জনে
সক্ষম হয়েছিলাম আমরা ।
তাই তরুণদের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তেনের ধারাকে
রক্ষা করতে হবে , এই ধারাকে ধরে রাখতে হবে । আর এরজন্য যা যা করা প্রয়োজন তা রাষ্ট্র
অর্থাৎ সরকারকেই করতে হবে , দেশের সুষ্ট চিন্তার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ,যারা এই জাগরনী
ট্রেইনের যাত্রী হতে আগ্রহী, তাদের সহ , দল মত নির্বিশেষে, আর এটাই এখন আমাদের একমাত্র
কাজ ৷
আমরা যার যার অবস্থান থেকে এই জাগরণীধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত ৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন