আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম ( হুমায়ন আজাদের বই থেকে) সঙ্গে সৈয়দ শামসুল হকের - আমার পরিচয় কবিতা সহ ৷

আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম”  


               আমার পরিচয়

____সৈয়দ শামসুল হক

আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?

আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।

এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।

আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।

এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।

আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?

তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।

পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।

এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি। 




মরহুম হুমায়ুন আজাদ ,এর লেখা বই, “ আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম”
থেকে ভাল লাগা কিছু নির্বাচিত অংশ ;

১, 
১৯৭১ ছিলো ১৯৪৭ - এর সংশোধন ; আমরা ওই বছর মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম ,
একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম । আমাদের অজস্র স্বপ্ন ছিলো-
গণতন্ত্রের , সমাজতন্ত্রের ,ধর্মনিরপেক্ষতার , বাঙালিত্বের , এবং সাধারণ মানুষের
আর্থিক সচ্ছলতার ।

আমরা কোনো স্বপ্নকেই সফল করতে পারি নি ।

২ ,
 তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না । জানতে চয়ো না তুমি নষ্টভ্রষ্ট ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের কথা ; তার রাজনীতি , অর্থনীতি , ধর্ম , পাপ ,মিথ্যাচার , পালে পালে মানুষ্যমন্ডলি , জীবনযাপন , হত্যা , ধর্ষণ , মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না , আমি তা মুহূর্তও সহ্য করতে পারি ,- তার অনেক কারণ রয়েছে ।



৩ , 
এখানে সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তচিন্তা , প্রগতিশীলতা , যুক্তিশীলতা ও বাকস্বাধীনতাকে ধ্বংশ করা হচ্ছে , ভয় দেখানো হচ্ছে যে কেউ আর মুক্তচিন্তার সাহস কোরো না ।……………আরো ভয়াবহ হচ্ছে যে তরুণদের বিকৃত ক’রে ফেলা হচ্ছে ; তারা ও মুক্তচিন্তার প্রতি আগ্রহ বোধ করছে না ; তারা অন্ধের মতো শ্লোগান দিচ্ছে নিজেদেরই ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে - নেতাদের

নামে শ্লোগান দিয়ে , বইপুস্তক খাতাপত্র নর্দমায় ছুঁড়ে , তারা নেতা হওয়ার প্রস্তুতি নাচ্ছে ।

একদিন তারা মন্ত্রী হবে , তাই এখনই তাদের সন্ত্রাস করার শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময় ;

 …….পিতামাতারা নস্ট হয়ে গেছে ,এখন তারা নষ্ট ক’রে চলছে সন্তানদের ভবিষ্যৎ , দেশের ভবিষ্যত । 

……….মুক্তচিন্তা বাকস্বাধীনতা ,বিজ্ঞানমনস্কতা , মানবাধিকারই হয়ে উঠেছে রাষ্টের কাছে সবচেয়ে 

আপত্তিকর ;
.
৪ ,
 বাঙালি মুসলমানরা (মধ্য ও উচ্চরা ) বড়ো বেশি দুষিত হয়ে গেছে ,তিরিশ বছরের রাজনীতি তাদের
দুষিত করেছে ,তারা তিরিশটি বছরকে দুষিত করেছে ।

বাঙালি মুসলমানদের মগজে কোনো অচিকিৎস্য রোগ আছে ।

বাঙালি + মুসলমান = এটা কোনো রোগের নাম ? রোগটি নুতন নয় , চ’লে এসেছে মধ্যযুগ থেকেই , এখন 
চরমে পৌচেছে ।


১৯৭১ ছিলো ছিলো আমাদের শ্রেষ্ঠ সময় , তখন আমরা স্বাধীনতার জন্য সব কিছু উৎসর্গ করেছিলাম ।

১৯৭১ - এ যদি আজকের এই বমিজাগানো ,পর্যদস্ত ,মিথ্যাচারগ্রস্ত ,কলস্কিত মৌলবাদী , সুবিধাবাদী ,

শয়তানাক্রান্ত ,উন্মাদশাসিত অবস্থায় থাকতাম , তাহলে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতাম না , মুক্তিযুদ্ধে যেতাম না
; এ অবস্থায় স্বপ্ন হাস্যকর - এখন আমাদের স্বপ্ন মাত্রই দুঃস্বপ্ন ; আমরা আজ ১৯৭১ - এর থেকে পেছনে

চ’লে গেছি , কতোটা পিছিয়েছি তা হিসেব করাও কঠিন , মধ্যযুগেই পৌছে গেছি , এখন আমরা

বাঙলাদেশ নামে আরেকটি অপপাকিস্তান তৈরি করছি । জয়ী হওয়ার পর আমরা মর্মস্পর্শীভাবে পরাজিত

হয়েছি ,

আমরা স্বাধীনতার শোচনীয় অপব্যবহার করেছি ।আমরা আমাদের সমস্ত লক্ষ্য কে পরাজিত করেছি ,

পরাভু ত ক’রে চলছি আমাদের স্বাধীনতাকে ।


৬ ,
শেক্সপিয়র বলছিলেন , জনতার অনেক মাথা , কিন্তু ভেতরে ঘিলু নেই ; এটাকে ব্যবহার করে একনায়কেরা , তাদের মাতিয়ে তোলা ।

কিন্তু , ১৯৭১ -এর মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলেন শুভ দাবানল , শুভ প্লাবন , শুভ অগ্নিগিরি , নুতন 

ভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে , যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম । 
…….
তিনটি রূপকপ্রতীক আমরা পেয়েছলাম একাত্তরের মার্চে । 

একটা জাতীয় সঙ্গীত
 - “ আমার সোনার বাঙলা , আমি তোমায় ভালোবাসি” , যেটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাব্যসৌন্দর্যমন্ডিত জাতীয় সঙ্গীত , যাতে কোন উগ্রতা নেই 
, আছে প্রকৃতিপ্রেম 

; দ্ধিতীয়টি
এক অপূর্ব জাতীয় পতাকা , যাতে ছিলো সবুজের মাঝে সূর্যের মধ্যে বাঙলাদেশের মনচিত্র ,

 তৃতীয়টি
হৃদয় কাঁপানো , স্বদেশজাগানো শ্লোগান ; ‘ জয় বাঙলা” 

এ - তিনটি রূপকপ্রতীক দিয়ে মার্চ ও তার পরের মাসগুলো আলোড়িত ও মুখরিত ছিলো ; এগুলো ছিলো 

পুরোপুরি পাকিস্তানি চেতনার বিপরীত , এবং আবেগ ও শৈল্পিকভাবে অনেক উৎকৃষ্ট ।

পাকসারজমিন সাদবাদ” -


এর পাশে 

“ আমার সোনার বাঙলা , আমি তোমায় ভালোবসি” , চানতারার পাশে সূর্যের ভেতরে বাঙলা
শের মানচাত্র ছিলো চেতনাগতভাবে ভিন্ন ও শৈল্পিক ; “ জয় বাঙলা” শ্লোগানটি ছিলো বাঙালির হৃদয়ের
উল্লাসের মতো

“ নারায়ে তকবির” “ আল্লাহু আকবর” “ পাকিস্তান জিন্দাবাদ”


 -এর মতো মধ্যযুগীয়তার পাশে “ জয় বাঙলা” ছিলো সঙ্গীতের মত ।

এর আগে বাঙালি কখনো এতো তীব্র, সংহত , ও তাৎপর্যূর্ণ শ্লোগান দেয় নি , যাতে একটি পদেই প্রকাশ 


পেয়েছে রাজনীতি , সংস্কৃতি , দেশ , ভাষার সৌন্দর্য ও জাতীয় আবেগ ।




৫,
 ১৯৬o -

এর দশকের কথা আমার খুব বেশি মনে পড়ে ;ওটাকেই মনে হয় আমার দশক । ………..ওই দশকে
আমরা গনতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রের নাম শিখেছিলাম , ওগুলো

কাম্য মনে হয়েছিল আমাদের ,যদিও ছিলাম নিকৃস্টতম পাকিস্তানি সামরিক স্বৈরাচারের অধীনে । বাঙালি

মুসলমানদের কোনো উনিশশতকি জাগরন ঘটেনি , যেমন ঘটেছিল হিন্দু ও ব্রাহ্মদের ; এ সমাজে কোনো

রামমোহন
বিদ্য৷
  সাগর
 মধুসুদন
বঙ্কিমচন্দ্র
বিহারীলাল
রবীন্দ্রনাথ
 জগদীশ
 জন্মেনি ; আমাদের

ও -ধরনের জাগরণ ঘটতে শুরু করেছিলো ১৯৬০ -এর দশকে , ছোটো মাপে ।……
…….
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , শুদ্ধ আধুনিক বাঙালিদের , বিশ্বমানবদের , একজন , উনিশ শতকের মাঝভাগেই

এটা বুঝেছিলেন ; তাঁকে যখন বলা হতো বিধবাবিবাহ প্রবর্তন ও বহুবিবাহ রহিত করার জন্য ইংরেজের

সাহায্যে আইন প্রণয়ন করার দরকার নেই , শিক্ষাই একদিন একাজগুলো করবে ,এসব নোংরামো দুর

করবে , তিনি বলতেন তিনি তরুণ বাঙালিদের বিশ্বাস করেন না , কেননা এরা যৌবনে প্রচন্ড বিপ্লবী ও

নাস্তিক হ’তে পারে , কিন্তু বুড়ো বয়সে এরা হবে ঘোর স্বার্থপর , প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধ । প্রকৃত শিক্ষা

আমাদের মধ্যে কখনোই ঢোকে নি , আমরা পাশটাশ করেছি চাকুরি পাওয়ার জন্য , জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়

,জ্ঞানকে বাস্তবায়িত করার জন্য নয় । ইয়ং বঙ্গলের অনেকেই পরে দুষ্ট বৃদ্ধ হিন্দু হয়েছিল । বঙ্কিমচন্দ্র

পঞ্চাশোত্তর বয়সে , এখন আর যাকে বৃদ্ধকাল বলা যায় না , নিজকে ও হিন্দুদের নস্ট করেছিলেন ধর্মান্ধতা দিয়ে ।

এখানে প্রকৃত বুদ্ধিজীবি খুবই কম ; বুদ্ধিজীবি নামে যারা আছে , তারা মোটামুটি অশিক্ষিত , তবে এটা

কোনো অপরাদ নয় , প্রকৃত শিক্ষা দরিদ্র দেশে অর্জন করতে না পারাই স্বাভাবিক , তবে এদের প্রধান

বৈশিষ্ট্য চরিত্রহীনতা , এরা মুর্খ শক্তিমানের মুঠো থেকে ক্ষুদ্রকুঁড়ো ভিক্ষে পেতে চায় , তাই এরা পেছনের

সারির কর্মী হয়ে ওঠে বিভিন্ন দলের ; এবং দলের মুখের দিকে তাকিয়ে যে- কোনো শ্লোগান দেয় , বাঁধাবুলি

আবৃত্তি করে , তাদের সাধ শক্তিমানদের কাছ থেকে কিছু পাওয়া ।,


শেখ মুজিব ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

৭ ,
 শেখ মুজিব কে পাকিস্তানিরা বন্ধী করেছিল , মুজিব যদি ধরা না দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করতেন , 

কোনো ভাঙা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন , তাহলে কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আরো তীব্র ,

 আরো সফল হতো ? তা হলে কি মুজিব হতেন ? তাহলে তো তিনি হতেন মেজর জিয়া । মুজিব পালিয়ে 

গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না , তিনি মুজিব হতেন না , হতেন সামান্য “বিচ্ছিন্নতাবাদী” 

এবং আমরা একটি বিশাল রাজনীতিক ভাবপ্রতিমাকে হারাতাম , মুক্তিযুদ্ধে আমরা এতো অনুপ্রেরণা বোধ 

করতাম না । যোদ্ধা মুজিবের থেকে বন্দী মুজিব ছিলেন অনেক শক্তিশালী ও প্রেরণাদায়ক , তিনি তখন  

হয়ে উঠেছলেন মহানায়ক , ঘোষকের থেকে অনেক ওপরে যাঁর স্থান । ……..সমগ্র বাঙালির রূপ ধ’রে 

তিনি ক’রে চলছিলেন মুক্তিযুদ্ধ । মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধা ছিলো মুজিবের দ্বিতীয় সত্তা । 

……মুজিবের বন্দীত্ব মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণার থেকে অনেক বড়ো ঘটনা । ঘোষণা ক’রে ঘোষক হওয়া  যায় ৷ 

               মুজিব হওয়া যায় না । কিন্তু সত্য হচ্ছে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক , বাঙলাদেশের মহাস্থাপতি

৮ ,
আমি কখনো ভারতীয় হ’তে চাই না ,

 ভারতের আজ্ঞাও মেনে চলতে চাই না 

, কিন্তু আন্তরিক সম্পর্ক পাতাতে আমার কোনো দ্বিধা নেই ;

 আমি কী ক’রে পরিত্যাগ করবো পাণিনি , ব্যাস , বালমীকি , চার্বাক , কালিদাস , কাহুপাদ , চন্ডীদাস ,

ভারতচন্র , বিদ্যারসাগর , মধুসুদন , রবীন্দ্রনাথ , এবং আরো অনেককে ? কালো মাটির দেশের মিশরিরা

মুসলমান হয়েছে , তারা আলেকজান্দ্রিয়ার মহাগ্রন্থাগার ধ্বংস করেছে , আল আজহার তৈরি ক’রে 

অন্ধকারে থাকছে , কিন্তু ফারাওদের পিরামিড এখনো তাদের প্রধান সম্পদ ও ঐতিহ্য । এছাডা আর কী 

আছে তাদের ?

ভারতের রয়েছে মহান ঐতিহ্য , যার অংশী আমরাও এ মিল আমাদের নেই পাকিস্তান, আফগানিস্তান,

পারস্য, ইরাক, কাতর, দুবাই, সৌদি আরব, মিশর, ইয়েমেনের সঙ্গে; এদের সঙ্গে আমাদের মিল আছে শুধূ

ধর্মে । আরবরা তো আমাদের সম্পর্ণ বিপরীত । জ্ঞান ও শিল্পকলা, সৃষ্টিশীলতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা তাদের

শত্রু । ধর্মের ক্ষেত্রেও তারা খুবই কপট, যান্থ্রিক ভাবে নামাজ আদায় করে, এর বেশি কিছু করে না;

একজন খাঁটি বাঙালি মুসলমান যতোটা ধার্মিক এক জন খাঁটি সৌদি মুসলমান ততোটা ধার্মিক নয়, যদিও

তাদেরই আমরা মনে করি ইসলামের বাহক ।

“ পাশ্চাত্য মূল্যবোধ আমাদের এখানে চলে না, পশ্চিমের সংঙ্গে একটু ঠোকাঠুকি হ’লেই বলাহয় ,পশ্চিম

তাদের মূল্যবোধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় ,এটা আমরা মানতে পারি না । আমাদের মূল্যবোধ

পশ্চিমের মূল্যবোধ থেকে মহত্তর” । …… কিন্তু আমাদের এখানে কি কোনো মূল্যবোধ আছে ? আমরা তা

সৃষ্টি করেছি ? আমাদের মূল্যবোধ তো পীড়ন, শোষণ, ক্ষমতাদখল, দুর্নীতি , লুন্ঠন, অন্যায়,অনাচার,

মিথ্যাচার,দাপট, মানুষের অধিকারছিনতাই ।আমরা কি প্রকৃতপক্ষে কোনো মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছি, যেমন

করেছে পশ্চিম ? পশ্চিম ভবিষ্যৎমুখি, মুক্তর মন্ডল; মানবাধিকারের কথাও আমরা শুনেছি পশ্চিমের

কাছেই । প্রকৃত মূল্যবোধ যা কিছু আমরা পেয়েছি, তা সবই পশ্চিম থেকে ।আমাদের আছে আদবকায়দা

,সালামআদাব, পশ্চিমের আছে মূল্যবোধ ।

৯, 
আমাদের কোট কোটি ভ্রান্ত ধারণা কেটেছে পশ্চিমের জ্ঞানের ফলে, যদিও আমরা আজো ভ্রান্তির মধ্যে 

গড়াগড়ি খাচ্ছি । স্বাধীনতা আমাদের জন্যে ছিলো যুগান্তর; স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা পাকিস্তানি মধ্যযুগ 

থেকে আধুনিক যুগে উত্তির্ণ হতে চেয়েছিলাম, অন্তত তাই আমরা মনে করেছিলাম ।

মুজিবের দুর্ভাগ্য তিনি বাঙলাদেশের স্থপতি হ.লেও ওয়াশিংটন বা গান্ধি বা জিন্নার মর্যাদা তিনি পান নি । 

এর জন্যে দায়ী তাঁর সুবিধাবাদী পুজোরীরা ও ঈর্ষাকাতররা; পুজোরীরা মুজিবকে বিধাতা ক’রে তুলতে 

গিয়ে তাঁকে সামান্য মানুষে পরিণত করে, ঈর্ষাকাতররা তাঁকে হাস্যকর উপদেবতায় পরিণত করার চেষ্টা 

করতে থাকে ।

আমরা নিজেদের যতোই বাঙালি বলি, ভেতরে ভেতরে আসলে তো আমরা মুসলমান; এবং মুসলমানদের 

পক্ষে গণতন্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করা খুবই অসম্ভব ব্যাপার । কোন মুসলমান রষ্টেই গণতন্র নেই ; আছে নানা 
ধরনের একনায়ক,স্বৈরাচারী; তারা কোথাও রাজা, কোথাও রষ্ট্রপতি, কোথাও তথাকথিত নির্বাচিত, যা 

চমৎকার কৌতুক ।

১৯৭১ -স্বাধীনতা ছাড়া আমরা আর কিছু অর্জন করি নি । রাষ্টের স্থপতি দেশকে সুপথে নেন নি; তিনি

গনতন্ত্র বর্জন ক’রে এগিয়েছিলেন মহাএকনায়কতন্ত্রের দিকে ।

, আমরা সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি; তারপর মনে

হয়েছে এই বুঝি গণতন্ত্র পেলাম,…..গণতন্ত্র আসেনি ।

আমাদের রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, দারোগাপুলিশ সবাই মিলে দেশটাকে লুঠ ক’রে

চলছে ।

আমরা দেশ জুড়ে প্রতিক্রিয়াশীলতা বিস্তার ক’রে চলছি, দেশ থেকে বিজ্ঞানমনস্কতা দুর করেছি ।আমরা

তরুণতরুণীদের প্রতিক্রিয়াশীল ক’রে তুলছি, তারা আর প্রশ্ন করে না ।

আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছি; আমাদের বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত জ্ঞানের চর্চা

 নেই ।



১০ ,
 আমরা আমাদের একদল তরুণকে বিদেশে শ্রমিক হিসাবে পাঠাতে মেতে উঠেছি; আমরা হয়ে উঠছি বিশ্বকামলার জাতি ।

আমরা ব্যাংক থেকে ৩২,০০০ কোটি টাকা নিয়ে শিল্পপতি, গৃহপতি হয়েছি, জনগনের টাকা নির্বিচারে ছিনতাই করেছি ।


আমরা শিল্পসাহিত্যকে নষ্ট করেছি; লেখক -বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন রাজনীতিক দলের দালাল ও পেছনের

সারির কর্মী হয়ে উঠেছে

আমরা রাস্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠা করছি, আর নিরন্তর ঘুষ খাওয়াকে জাতীয় ধর্মে পরিণত করছি ।

আমরা ধর্ম দিয়ে সরল মানুষের প্রতারণা ক’রে চলেছি; আমাদের রাজনীতিবিদেরা হজ-ওমরাকে

রাজনীতিক কর্মকান্ডে পরিণত করেছে ।

আমরা জনগনকে কোন অধিকার দেই নি ।তাদের জীবিকার ,শিক্ষার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করি নি ।

গণতন্ত্রের নামে আমরা স্বৈরাচার চালিয়ে যাচ্ছি ।

দুর্নীতিতে আমরা বারবার প্রথম স্থান অধিকার করছি ।

এমন দুঃস্থ ,দুর্নীতিকবলিত, মানুষর অধিকারহীন , স্বৈরাচারী বাঙলাদেশ, যেখানে প্রতিমুহুর্তে দম বন্ধ হয়ে
আসতে চায় ?

এই আমাদের বাঙলাদেশ, এই আমাদের সোনার বাঙলা;
কিন্তু আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম ?
 

শেষ .



মন্তব্যসমূহ