পবিত্র কোরানের সুরা নামল এবং সাবার রানি
বিলকিস এর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজ্য শাসনের বর্ণনা প্রসঙ্গে কিছু কথা ;
পবিত্র কোরানে নাজিলকৃত আয়াতসমূহকে
প্রধানত দুই অংশে বিভক্ত করা হয়েছে বলে কোরানের ৩নং সুরা আল-ইমরানের ৭নং আয়াতে
উল্লেখিত হয়েছে । কিছু আয়াত পরিস্কার বা সুস্পষ্ট, অর্থজ্ঞাপক, যাহা কিতাবের
মূল অংশ । অপর কতক আয়াত উপদেশমূলক বা দৃষ্টান্তমূলক, যাহা কিচ্ছা কাহিনীর মাধ্যমে
বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে- যার ব্যাখ্যা স্বয়ং আল্লাহ্ সংরক্ষণ
করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে । মূল আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো ৷
৩ নং সুরা আল-ইমরান (মদীনায় অবতীর্ণ )
আয়াত নং ৭ ;-তিনিই তোমার প্রতি
গ্রন্থ (এই কিতাব ) অবতীর্ণ করেছেন , যাতে সুস্পষ্ট (মজবুত) আয়াতসমূহ গ্রন্থের জননী স্বরূপ (উম্মূল কিতাব বা কিতাবের মূল অংশ
) এবং অন্যান্য আয়াতসমূহ অস্পষ্ট (রূপক ) ; অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা (বা বিকৃতি ) রয়েছে, ফলতঃ
তারাই অশান্তি উৎপাদন ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে এবং আল্লাহ্
ব্যতীত ওর অর্থ কেউই অবগত নয় ; আর যারা জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত, তারা বলেঃ
আমরা ওতে বিশ্বাস করি , সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সমাগত এবং জ্ঞানবান ব্যতীত
কেউই উপদেশ গ্রহন করে না৷
কিন্তু এখানে আলোচ্য বিষয় ২৭ নং সুরা নাম্ল(মক্কায় অবতীর্ণ)
এর কিছু আয়াত, তবে কোরানের কোন অংশের ঐ আয়াত গুলো সে মিমাংসায় না গিয়ে, এখানে
শুধু নিম্নে উল্লেখিত আয়াত গুলোতে এই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা হবে ৷ নিম্নে আয়াত গুলোর উল্লেখ করা হলো প্রথম
৷
সুরা নামল(মক্কী সুরা
)
আয়াত নং-২০;-সুলাইমান(আ)
পক্ষীকুলের সন্ধান নিলো এবং বললোঃ ব্যাপার কি ? হুদহুদকে দেখছি না যে ! সে অনুপস্থিত
না কি ?
আয়াত নং-২১;-সে উপযুক্ত
কারণ না দর্শালে আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দিবো অথবা যবাহ করবো ৷
আয়াত নং -২২;-অনতিবিলম্বে
হুদহুদ এসে পড়লো এবং বললোঃ আপনি যা অবগত নন আমি তা অবগত হয়েছি । এবং সাবা হতে সুনিশ্চিত
সংবাদ নিয়ে এসেছি ৷
আয়াত নং-২৩;-আমি
এক নারীকে দেখলাম যে সে তাদের (এক জাতির ) উপর রাজত্ব করছে; তাকে সবকিছু দেয়া হয়েছে
এবং তার আছে এক বিরাট সিংহাসন।
আয়াত-২৪;-আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহ্র পরিবর্তে
সূর্যকে সিজদা করছে ; শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের নিকট শোভন করছে এবং তাদেরকে সৎপথ
হতে নিবৃত্ত করছে; ফলে তারা সৎপথ পায় না ৷ ….
আয়াত-২৭;- সুলাইমান(আ) বললোঃ আমি দেখবো তুমি কি সত্য বলেছো, না
তুমি মিথ্যাবাদী ?
আয়াত-২৮;-তুমি
যাও আমার এই পত্র নিয়ে এবং এটা তাদের নিকট অর্পণ কর; অতঃপর তাদের নিকট হতে সরে থেকো
এবং লক্ষ্য করো তাদের প্রতিক্রিয়া কি ?
আয়াত-২৯;- সেই নারী
বললো : হে পরিষদবর্গ
! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে ।
আয়াত-৩০;- এটা সুলাইমান
(আ) এর নিকট হতে এবং এটা এই দয়াময় , পরম দয়ালু
আল্লাহ্র নামে ,
আয়াত- ৩১;- অহমিকা
বশে আমাকে অমান্য করো না , এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও ৷
আয়াত-৩২;- সে নারী বললো : হে পরিষদবর্গ ! আমার এ সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও ; আমি যা
সিদ্ধান্ত করি তা তো তোমাদের উপস্থিতিতেই করি ৷
আয়াত-৩৩;- তারা
বললো : আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা ; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা আপনারই, কি
আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন ৷
আয়াত-৩৪;-সে বললো : রাজা- বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন ওকে(ঐ জন পদকে)
বিপর্যস্ত করে দেয় এবং তথাকার মর্যাদাবান বক্তিদেরকে অপদস্থ করে, এরাও এইরূপই করবে
৷
আয়াত-৩৫;- আমি তাদের নিকট উপটৌকন পাঠাচ্ছি
; দেখি, দুতেরা কি উত্তর নিয়ে ফিরে আসে ! ……
এর পরবর্তী আয়াত গুলো এই
লেখার জন্যে তেমন প্রয়োজনীয় না থাকায় সে গুলো এখানে আর উল্লেখ করা হলো না ৷
উপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহের
বর্ণনা অনুসারে এবং ধর্মীয় তথ্য অনুসারে সেমিটিক ঐতিহ্যবাহী তিনটি মহাধর্মের (ইহুদী ,খৃস্টান
,ও ইসলাম ) একক ও অভিন্ন জনক হযরত ইবরাহীম(আ) এর বংশধর হযরত মুসা(আ)এর উপর অবতীর্ণ তাওরাত
কিতাব এবং হযরত দাউদ(আ) এর উপর অবতীর্ণ যবুর কিতাবের পরবর্তী কোন এক সময়ে এবং
হযরত ঈসা(আ) এর উপর অবতীর্ণ ইঞ্জিল কিতাব অবতীর্ণের পূর্বে তখনকার বৃহত্তর সাবাহ্ (বর্তমান জেরুজালেম) অঞ্চলে বহুদেবতায় বিশ্বাসী নারী রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন । তার
নাম ছিল-রাণী বিলকিস ।তিনি বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারায় তার রাজ্য শাসন করতেন, তার রাজ্যের রাজসভার পরিষদবর্গের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এবং তার বাস্তব
অভিজ্ঞতার আলোকে ৷
তবে তিনি তখনকার অন্য রাজ্যের
রাজা-বাদশাহ্ দিগকে(রাজতন্ত্রকে সম্ভবত) সাধারণ ও সম্মানিত মানুষের অপদস্থকারী ও বিপর্যয়কারী হিসাব দেখতেন ,যাহা উপরে উল্লেখিত
সৃরা নামল এর ৩২ নং আয়াতের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় ৷
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে নব্বই
এর দশকে সৌদী রাজতন্ত্রের প্রশাসন ঐ নামল সুরার ৩২
নং আয়াতটি জনসম্মূখে বা কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রচার
নিষিদ্ধ করেছিল বলে তখনকার বিশ্বপ্রচার মাধ্যমে
প্রচারিত হয়েছিল ৷ রাজতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ধর্মের বিধান পাঠকরা নিষিদ্ধ করতে, তাদের ধর্ম বিশ্বাসের অন্তরায় হয়নি, তবুও তারাই
বর্তমান বিশ্বে একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত দেশ।
ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত মতে,
গ্রীসাধিপতি মহাবীর আলেকাজাণ্ডার ভারতে
আসেন খৃ.পূ.৩৩০ সালে, আর প্রায় এর ৬৪১ বৎসর আগে খৃ.পূ.৯৭১ সালে হযরত সোলায়মান সিংহাসন লাভ করেন বলে জানা যায় ।( সূত্র;-ঐতিহাসিক
অভিধান, অনুচ্ছেদ- ৫ ,লেখক মো. মতিয়র রহমান )
তাঁর সিংহাসন লাভের প্রায় হাজার
বৎসর পর হযরত ঈসা(আ)এর উপর ইঞ্জিল কিতাব এবং
এর আরো প্রায় ছয় শত বৎসর পর হযরত মোহাম্মদ(স)এর উপর পবিত্র কিতাব আল-কোরআন নাজিল হয় ।
সুরা নামল এর১৬ নং আয়াত
অনুসারে হযরত সুলায়মান (আ)হযরত দাউদ(আ) (যার উপর যবুর কিতাব নাজিল হয়েছিল) এর উত্তরাধিকারী
হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে । সুলায়মান(আ)কে পাখিদের ভাষা বুঝবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল
। ঐ সুরার ১৭ নং আয়াতে তার বাহিনীতে জিন , মানুষ ও
পাখিদের সমবেত করে , ওদের বিভিন্ন ব্যূহে বিন্যস্ত করে সাজানোর ও কথা বর্ণনা
করা আছে । আবার ২ নং সুরা বাকারা-তেও ১০২ আয়াতে সুলায়মান (আ)এর রাজত্বের কথা
উল্লেখ আছে ৷
কিন্তু পরবর্তীকালে অর্থাৎ পরবর্তী
আবির্ভূত সেমিটিক ধর্ম খৃস্টান বা ইসলাম ধর্মের কোন নবীদেরকে বা তাদের কোন উম্মতকে
পাখির ভাষা বুঝার ক্ষমতা ছিল না বলেই জানা যায় । অন্যদিকে জিন জাতির কোন
সদস্যকেও পরবর্তীকালে দেখা পাওয়ার কোন
নজীর নাই ।
তাই এই ধারণা করা অমূলক হবে না
যে; পাখিদের ভাষা বুঝার এবং জিন দের বশ করার সময় কালের সমাপ্তি
হয়ে যাওয়ায় এর পর থেকে এই পর্বের ও সমাপ্তি হয়ে গেছে
। অথবা শাসক সুলায়মান(আ) এর অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রাপ্ত বুঝাবার কোন কৌশল হিসাবেই এই ধরনের ধারণা দেওয়া অবতারনা করা হয়েছিল ৷
আর উপরের আলোচনার আয়াতসমূহ কোরান শরিফের স্পষ্ট
না অস্পষ্ট , কোন অংশের তা নির্ধারণের ভার পাঠকদের
ওপর ছেড়ে দিয়ে এই লেখা শেষ করছি ।
সূত্র;- কোরানের আয়াতগুলো ;-বংলা তাফসীর
কুর’আনুল কারীম ,
দারুসসালাম,
জেদ্দা থেকে প্রকাশিত এবং
প্রফেসর ড়ঃ মুঃ মুজীবুর রহমানের অনুবাদ থেকে নেয়া
হয়েছে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন