“ যার বিয়ে তার খবর নাই , পাড়া পড়শির ঘুম নাই ,” ( পবিত্র কোরান শরীফে ইউসুফ নবীর এক বর্ণনার কিছু অংশ )


          যার বিয়ে তার  খবর নাই , পাড়া পড়শির ঘুম নাই ,”   
 
 এই রকম একটা কথা  আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে । অবশ্য বিয়ে বাড়ির কথা অনেক সময় প্রতিকি অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে । কোনো কোনো ঘটনার ব্যাপারে দেখা যায় , যে পরিবারের ঘটনা ,তা  তাদের কাছে এর তেমন কোনো গুরুত্ব না থাকলেও পাড়া প্রতিবেশীর কাছে ইহা অনেক সময় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে । 
          এ রকম একটা ঘটনা আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানশরিফেও দেখতে পাওয়া যায় । মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বাঙলা অনুবাদ   “ কোরানশরিফ , সরল বঙ্গানুবাদ” থেকে  , মক্কায় অবতীর্ণ  ১২ নং সুরা ইউসুফ এর ২১ আয়াত থেকে ৩৪ নং আয়াত পর্যন্ত, নিম্নে আগ্রহী পাঠকদের জন্যে উল্লেখ করা হলো ;-

  সুরা ইউসুফ- আয়াত নং ২১;-মিশরের যে-লোক ওকে কিনেছিল সে তার স্ত্রীকে বলল, ‘একে ভালোভাবে রাখো, হয়তো সে আমাদের উপকারে আসবে বা আমরা ওকে ছেলে হিসাবেও নিতে পারি’ । আর এভাবে আমি ঈউসুফকে ঘটনার (বা স্বপ্নের) ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবার জন্য সেদেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম । সকল কাজেই আল্লাহ্ র অপ্রতিহত ক্ষমতা, কিন্তু অনেক মানুষ তা জানে না ।
 আয়াত ;-২২,- সে (ইউসুফ) যখন পুরো সাবালক হল তখন আমি তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম । আর এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করি।

   আয়াত-২৩;- সে যে-মহিলার বাড়িতে ছিল সে তার চরিত্র নষ্ট করার জন্য তাকে ফুসলাতে লাগলসকল দরজা বন্ধ করে বলল, ‘ এসো’ । সে বলল,  ‘ আমি আল্লাহ্ র স্মরণ নিচ্ছি, আমার প্রভু, তিনি আমাকে সম্মানের সাথে থাকতে দিয়েছেন । যারা সীমালঙ্ঘন করে তারা অবশ্য সফলকাম হয় না’ ।
 
    আয়াত-২৪;- সেই মহিলা তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল, আর সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদিনা সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন  প্রত্যক্ষ করত। তাকে মন্দ কর্ম ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্য আমি এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম । সে ছিল অবশ্যই আমার বিশুদ্ধচিত্ত দাসদের একজন । 


     আয়াত-২৫;-ওরা দুজনে দৌড়িয়ে দরজার দিকে গেল । আর স্ত্রীলোকটি পেছন থেকে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। স্ত্রীলোকটির স্বামীকে তারা দরজার কাছে দেখতে পেল । স্ত্রীলোকটি বলল,   ‘ যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে তার জন্য তাকে কারাগারে পাঠানো বা অন্য কোনো দারুণ শাস্তি ছাড়া আর কী শাস্তি হতে পারে’ ?

      আয়াত-২৬;-ইউসুফ বলল,  ‘ সে-ই আমার কাছ থেকে কুকর্ম কামনা করেছিল’ । স্ত্রীলোকটির  পরিবারের একজন সাক্ষ্য দিল, ‘ যদি ওর জামার সামনের দিক ছেঁড়া থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে , ইউসুফ মিথ্যা বলেছে; 

     আয়াত-২৭;-কিন্তু ওর জামা যদি পিছন দিকে ছেঁড়া থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা কথা বলেছে, ইউসুফ সত্য কথা বলেছে ।

    আয়াত-২৮    গৃহস্বামী যখন দেখল যে তার জামা পেছন দিক থেকে ছেঁড়া তখন সে বলল,   ‘এ তোমাদের নারীদের ছলনা ! তোমাদের ছলনা তো কঠিন। হে ইউসুফ !  
      আয়াত-২৯;- তুমি এ-বিষয়ে কিছু মনে কোরো না । আর হে নারী ! তুমি তোমার অপরাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তুমি অপরাধী’ ।

     আয়াত-৩০;- শহরের মহিলারা বলল,  ‘ আজিজের স্ত্রী তার জওয়ান চাকরটাকে খারাপ করার জন্য ফুসলাচ্ছে, প্রেমে পাগল পাগল হয়ে গেছে , আমরা তো দেখছি সে বড় ভুল করছে’ ।    
    আয়াত-৩১;-সে (আজিজের স্ত্রী) যখন ওদের ষড়যন্ত্রের কথা শুনল তখন সে ওদেরকে নিমন্ত্রণ করল এক ভোজসভায় । ওদের প্রত্যেককে সে একটি করে ছুরি দিল (সালাদ বা খাবার কাটার জন্য) আর ইউসুফকে বলল, ‘ ওদের সামনে এসো’ ।
   তারপর ওরা যখন তাকে দেখল তখন তার রূপ-মাধুর্যে অভিভূত হলো এবং নিজেদের হাত কেটে ফেললো , তারা বললোঃ অদ্ভুত আল্লাহ্র মাহাত্ম্য, এতো মানুষ নয় এতো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা !
  
   আয়াত-৩২;-সে বলল,ইনিই তিনি যার জন্য তোমরা আমার নিন্দা করছ !  আমি তাকে খারাপ করার জন্য ফুসলাবার চেষ্টা করেছি , কিন্তু সে তো নিজকে পবিত্র রেখেছে । আমি তাকে যা বলি সে যদি তা না করে তবে সে কারাগারে যাবেই এবং তাকে অপমান করা হবে’ ।

   আয়াত-৩৩ ;- ইউসুফ বলল,  ‘ হে আমার প্রতিপালক !  এই মহিলারা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার অনেক প্রিয় । আপনি যদি ওদের ছলনা থেকে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি ওদের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং জাহেল ব’নে যাব’।  

   আয়াত-৩৪ ;-তারপর তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন ও তাকে ওদের ছলনা থেকে রক্ষা করলেন । তিনি তো সব শোনেন, সব জানেন ।
……..





      

মন্তব্যসমূহ