মানব সভ্যতার ঊষা লগ্নেও , বর্তমান সময়ের মত কমবেশি যুক্তিবাদীও মুক্তচিন্তার মানুষের আবির্ভাব হয়েছিলো । যাঁরা মানব সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি দুর করে , মানুষ ও সমাজকে সঠিক পথ দেখাতে চেষ্টা ক’রে গেছেন, এবং মানুষের মঙ্গলের জন্য ও সমাজের উন্নতির জন্যে অনেক প্রতিকুল অবস্থায় থেকেও কাজ ক’রে গেছেন । এরকম একজন দার্শনিক ও পণ্ডিত ব্যক্তির নাম ‘চার্বাক’ । আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে, বৈদিক যুগে তাঁর আগমন হয়েছিলো ।এখানে তাঁর কিছু সংস্কারমূলক চিন্তা ও মতবাদের উল্লেখ করা হলো আগ্রহীদের জন্যে, (সৃষ্টি রহস্য বই থেকে ) ।
চার্বাকীয় মত ;
-চার্বাক বৈদিক যুগের একজন দার্শনিক পণ্ডিত, এবং তিনি নাকি বৃহস্পতির শিষ্য ছিলেন । বৃহস্পতির
নিকট থেকে, প্রাপ্ত তাঁহার ঐ মতটিকে বলা হয় চার্বাক দর্শন । তাঁহার এই মতে--সচেতন দেহ ভিন্ন স্বতন্ত্র
আত্মা নাই, পরলোক নাই , সুখই পরম পুরুষার্থ, প্রত্যক্ষমাত্র প্রমান ; মৃত্তিকা, জল ,বায়ু , ও অগ্নি হইতে
সমস্ত পদার্থের উদ্ভব হইয়াছে ইত্যাদি । চার্বাক দর্শনের স্থূল মর্ম ;- ‘ যতদিন জীবন ধারণ করা যায় ,
ততদিন আপনার সুখের জন্য চেষ্টা করা বিধেয় । কারণ সকলকেই একদিন কালগ্রাসে পতিত হইতে
হইবে এবং মৃত্যুর পর এই দেহ ভস্মসাৎ হইয়া গেলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকিবেনা । পরলোক বলিয়া
কিছুই নাই, সুতরাং পারলৌকিক সুখলাভের প্রত্যাশায় ধর্মোপার্জনের উদ্দেশ্যে আত্মাকে ক্লেশ প্রদান করা
নিত্যন্ত মূঢ়ের কার্য । যে দেহ একবার ভস্মীভূত হয়, তাহার পুনর্জন্ম অসম্ভব । এই স্থুল দেহই আত্মা,
দেহাতিরিক্ত অন্য কোনো আত্মা নাই । ক্ষিতি, জল বহ্নি ও বায়ু --এই চারি ভূতের সম্মিলনে দেহের
উৎপত্তি । যেমন পীতবর্ণ হরিদ্রা ও শুভ্রবর্ণ চুনের সম্মিলনে রক্তিমার উদ্ভব হয় , অথবা যেমন
মাদকতাশূন্য গূড়-তণ্ডুলাদি হইতে সুরা প্রস্তুত হইলে উহা মাদক গুণযুক্ত হয় , সেই রূপ দেহের উৎপত্তি
হইলেই তাহাতে স্বভাবত চৈতন্যের বিকাশ হয় । প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান, অনুমানাদি প্রমান বলিয়া গন্য
নহে । উপাদেয় খাদ্য ভোজন, বস্ত্র পরিধান, স্ত্রীসম্ভোগ প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন সুখই পরম পুরুষার্থ । ..দুঃখ
ভোগ থাকবে, তবে দুঃখের ভয়ে সুখ পরিত্যাগ করা অনুচিত’ ।
“ প্রতারক ধুর্ত পণ্ডিতগণ আপনাদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরলোক ও স্বর্গ-নরকাদির কল্পনা করিয়া জনসমাজকে বৃথা ভীত ও অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে । বেদ অধ্যয়ন, অগ্নিহোত্র, দণ্ডধারণ, ভস্মলেপন প্রভৃতি বুদ্ধি ও পৌরুষশূন্য ব্যক্তিবৃন্দের উপজীবকা মাত্র ।
প্রতারক শাস্ত্রকারেরা বলে, যজ্ঞে যে জীবকে বলি প্রদান করা যায় , সেই জীবের স্বর্গলাভ হইয়া থাকে । উত্তম ,কিন্তু তবে তাহারা আপন মাতা-পিতাকে বলি প্রদান করিয়া তাহাদিগকে স্বর্গলাভের অধিকারী করে না কেন ? তাহা না করিয়া আপনাদের রসনাতৃপ্তির জন্য ছাগাদি অসহয় পশুকে বলি দেয় কেন ? এইরূপ মতা-পিতাকে স্বর্গগামী করাইতে পারিলে তজ্জন্য শ্রাদ্ধাদির প্রয়োজন হয় না । শ্রাদ্ধও ধূর্তদিগের কল্পনা । শ্রাদ্ধ করিলে যদি মৃত ব্যক্তির তৃপ্তি হয় , তবে কোনো ব্যক্তি বিদেশে গমন করিলে তাহাকে পাথেয় না দিয়া,তাহার উদ্দেশে বাটীতে কোনো ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইলেই তো তাহার তৃপ্তি হইতে পারে । যখন উহা হয় না, সুতরাং শ্রাদ্ধাদিকার্য কেবল অকর্মণ্য ব্রাহ্মণদিগের জীবনোপায় ব্যতীত আর কিছু নহে । বেদ --ভণ্ড, ধূর্ত রাক্ষস -এই ত্রিবিধ লোকের রচিত ।
স্বর্গ-নরকাদি ধূর্তের কল্পিত, আর পশুবধ ও মাংসাদি নিবেদনের বিধি রাক্ষসপ্রণীত । ‘অশ্বমেদ যজ্ঞে যজমানপত্নী অশ্বশিশ্ন গ্রহন করিবে’ ইত্যাদি ব্যবস্থা ভণ্ডের রচিত । সুতরাং এই বৃথাকল্পিত শাস্ত্রে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বিশ্বাস করিতে পারেন না । এই দেহ ভস্মীভূত হইলে তাহার আর পুনরাগমনের সম্ভাবনা নাই । তাই যতদিন বাঁচিয়া থাকা যায় , ততদিন সুখে কালহরণ করাই কর্তব্য । এই শরীর ব্যতীত আর কোনো আত্মা নাই। যদি থাকিত এবং দেহান্তর গ্রহনের ক্ষমতা থাকিত, তবে সে বন্ধু-স্বজনের স্নেহে বাধ্য হইয়া পুনর্বার ঐ দেহেই প্রবেশ করে না কি জন্য ? অতএব দেখা যাইতেছে--বেদ-শাস্ত্র সকলই অপ্রমাণ্য; পরলোক, স্বর্গ, মুক্তি সকলই অবান্তর ; অগ্নিহোত্র, ব্রহ্মচর্য, শ্রাদ্ধাদিকর্ম সমস্তই নিস্ফল । চার্বাক সেই বেদিক যুগেই এইসব অলীক কল্পনার বিরুদ্ধে অভিযান চালাইয়াছিলেন, তবে বিশাল আকার ধারণ করা সম্ভব হয় নাই ,কিন্তু ইহা নির্মূল হইয়া ও যায় নই । বস্তুত চার্বকীয় মতবাদ ছিল অভিজ্ঞতাভিত্তিক, যাহা পরবর্তীকালে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মতবাদের ভিত্তিরূপে স্বীকৃত । বর্তমান বিজ্ঞান জগতের অনেকেই বাহ্যত না হইলেও কার্যত চার্বাকীয় মতবাদের অনুসারী ।
সংস্কার ও কুসংস্কার এবং ‘ধর্ম’ নামের সূচনা প্রসঙ্গে (সৃষ্টি রহস্য বই থেকে)
কুসংসকার কি ?
অল্প কথায় উত্তর হলো, যুক্তিহীন বিশ্বাস বা অসার যুক্তির উপর প্রতিষ্টিত মতবাদে বিশ্বাস; এক কথায় --অন্ধবিশ্বাস । যেখানে কোনো বিষয় বা ঘটনা সত্য কি মিথ্যা, তাহা যাচাই করবার মতো জ্ঞানের অভাব, সেখানেই কুসংস্কারের বাসা। অসভ্য অর্ধসভ্য, অশিক্ষিত ও শিশু মনেই কুসংস্কারের প্রভাব বেশি । শিশু মনে কুসংস্কারের বীজ ছড়ায় তাদের পিতা মাতা ও গুরুজন, নানারূপ দেও , পরী ও ভূতের গল্প বলে, বাস্তব জগতে যার কোনো অস্তিত্ব নেই । এমন এক যুগ ছিলো, যখন মানুষ ছিলো তার জাতিগত জীবনে শিশু । সেই মানব সভ্যতার শিশুকালে তৎকালিন মোড়ল বা সমাজপতিরা যাহা বলতেন, জনসাধারণ তাহা অভ্রান্ত বলে বিশ্বাস ও মান্য করত ; সত্য - মিথ্যা বিচার না করে, এবং গুরুবাক্য শিরোধার্য মনে করে, সংস্কার না কুসংস্কার যাচাই না করেই তা সব মেনে চলতো ।
বিজ্ঞানীগণ বলেন, আমরা বাস করছি বিরাট এক বায়ুচাপের মধ্যে, যাহা আমরা টের পাই না । কেননা আমাদের শরীরের বাহিরে যেমন বায়ু আছে, ভিতরে তেমন বায়ু আছে, ফলে ঐ চাপ কাটাকাটি হয়ে যায় । বিশেষত জন্মবধি বায়ুচাপে বাস করে ঐ চাপ হয়ে গেছে আমাদের অভ্যাসাগত । তাই আমরা অনুভব করতে পারিনা যে, বায়ুর চাপ আছে।
বায়ুচাপের মতোই মানুষের অভ্যাসাগত কুসংস্কার । দূর অতীতের ধর্মবেত্তারা ছিলেন নানাবিধ কুসংস্কারপূর্ণ সমাজের বাশিন্দা । তাঁদের ভিতর ও বাহিরে ছিলো কুসংস্কার এবং জন্মাবধি কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বাস করে কিছুবা হয়েছিলো গা-সহা অভ্যাস । তাই অনেক ধর্মবেত্তাই কুসংস্কার কি ও কোনটি, তাহা অনুধাবন করতেই পারেন নাই । কাজেই কুসংস্কার বর্জনের ইচ্ছা থাকা সত্তেও কতক ধর্মবেত্তা বহুক্ষেত্রে ঝোপ কেটে, জঙ্গল রোপণ করে গছেন । এখন কোনো কুসংস্কারই কুসংস্কার বলে স্বীকৃত হয় না অনেক ক্ষেত্রে।
তবে ধর্মবেত্তারা সকলেই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন কুসংস্কার বর্জনের । তাই যে ধর্ম অপেক্ষাকৃত আধুনিক ও পরের, সেইধর্ম কুসংস্কারমুক্ত এবং যে ধর্ম পুরাতন, সেই ধর্ম কুসংস্কারে ভরপুর ।
প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের সহায়তায় যে মানব ইতিহাস প্রাপ্ত হওয়া গেছে, তাতে জানা যায়, জাতিগত জীবনের শৈশবে মানুষ ও ইতর জীবের আহার-বিহার ও মনোবৃত্তির বিশেষ
কোনো পার্থক্য ছিলো না । সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পার্থক্যটি ও প্রকট হয়েছে । তখনকার দিনে যেমন চলেছিলো পশুবৃত্তি দূরীকরণ অভিযান, অর্থাৎ মানুষের সমাজ সংস্কার , আবার তেমনই ইহার সহগামী হয়ে চলছিলো শত শত কুসংস্কার । যা হাজার হাজার বছর পরেও অনেক মনুষ ঐগুলোকেই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস ক’রে আসছে, আর
তখন থেকেই তৈরী হলো নিত্য-নৈমিত্তিক কর্মতালিকা বনাম ‘ধর্ম’ নামের সূচনা । হুমায়ুন আজাদের ভাষায়; আদিম মানুষের অন্ধ আদিম কল্পনা , আর পরবর্তি অনেকের সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার, কখনো কখনো মত্ততা, নানাভাবে বিধি বদ্ধ হয়ে নিয়েছে যে-বিচিত্র রূপ, তাই পরিচিত ধর্ম নামে, বার্ট্র্যান্ড রাসেলের ভাষায় , ‘ সব ধর্মই ক্ষতিকর ও অসত্য ‘ । তীর্থযাত্রা, পশুবলি ও উপবাস প্রায় সব ধর্মেই রয়েছে ; আরব কবি আল-মারি (৯৭৩--১০৫৭) লিখেছেন, ‘ দশ দিক থেকে মানুষ আসে পাথর ছুঁড়তে আর চুমো খেতে। কী অদ্ভুত কথা তারা বলে, মানুষ কি অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছে না সত্য’ । আর জালালউদ্দিন রুমি লিখেছেন, ‘ আমি পথ খুঁজি , তবে কাবা বা উপাসনালয়ের পথ নয় ,প্রথমটিতে দেখি একদল পৌত্তলিককে আর দ্বিতীয়টিতে একদল আত্নপূজারীকে’।
কিভাবে কুসংস্কার সত্যে পরিণত হয়, তার একটি দৃষ্টান্ত প্রাচীন হিব্রু জাতির রূপ কথার গ্রন্থ ‘ তালমুদিক’ শিক্ষা ।
প্রাচীন হিব্রু জাতির মধ্যে কতগুলি রূপকথা-উপকথা বা কাহিনী প্রচলিত ছিলো । সেই সব কাহিনীর ব্যক্তি বা স্বর্গদূতগণের নাম হয়তো বাইবেলে আছে, কিন্তু সেই নামের সূত্র ধ’রে (উপন্যাসের আকারে) কতগুলি পার্থিব ও অপার্থিব প্রাণীদের কল্পিত কাহিনী আর দীর্ঘকাল ধ’রে হিব্রুদের মুখে মুখে চলে আসছিলো । কালক্রমে ইহুদি পুরোহিত বা রাব্বিগণ ঐ কাহিনীগুলোকে সংকলন ক’রে বিরাট দুইখানা পুস্তক লেখেন । ঐ গ্রন্থদ্বয়ের নাম তালমুদ ও মিদ্রাস । যাহা রূপকথা-উপকথার অফুরন্ত ভাণ্ডার এবং কুসংস্কারের পাহাড় । বর্তমান জগতে যত রকম কুসংস্কার প্রচলিত আছে , বোধহয়, ঐ গ্রন্থ দুইখানাই তার কেন্দ্র । আর তালমুদে বর্ণিত কাহিনীগুলোর মূল সূত্র অর্থাৎ ব্যক্তি বা স্বর্গদূতগণের নাম বাইবেলে লিখিত থাকায় কেহ কেহ ঐসব কল্পিত কাহিনী গ্রহন ক’রেছে ধর্মীয় কাহিনী হিসাবে ,অর্থাৎ সত্য বলিয়া , পরবর্তিতে ,পরের ধর্মগুলোতে ইহা স্থান পেয়েছে সত্য ও ঐশ্বরিক ঘঠনা হিসাবে । আর এইভাবেই, কুসংস্কার, ধর্মীয় বিশ্বাসে পরবর্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বর্তমান রূপ গ্রহন করেছে বলে অনেকেরই বিশ্বাস ।
•
হিন্দু ধর্ম বা বৈদিক ধর্ম প্রসঙ্গে ;-(সত্যের সন্ধান বই থেকে নেওয়া )
ধর্ম গ্রন্থ বেদ হিন্দু বা বৈদিক ধর্ম অনুসারিদের মূল গ্রন্থ , তাদের একান্ত বিশ্বাস, ভগবান, অগ্নি, বায়ু , আদিত্য ও অঙ্গিরা , এই চার জন ঋষিদের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হইয়া,ঈশ্বর তাঁদের মুখ দিয়া, ঋক, সাম , যজু , ও অথর্ব নামক চারখানা বেদ প্রকাশ করেছেন । আবার কেহ কেহ বলেন; বেদ অনাদি অনন্ত ঈশ্বরর নিঃশ্বাসে সৃষ্ট ,কোনো মানষ ইহার রচিয়িতা নন। বেদ অপৌরুষেয় ।
হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত আছে । এই ধর্মের বর্তমান বয়স প্রায় ৫০০০বৎসর । মহর্ষি ব্যাস মন্ত্র সংকলন ও বিভাগ করেন, এবং ইঁহার রচিত মহাভারত ‘পঞ্চম বেদ’ নামে কথিত,এবং অষ্টাদশ পুরাণ ইঁহার রচিত বলে প্রসিদ্ব । এই পুরাণাদি গ্রন্থসমূহও হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলিয়া পরিগণিত হয় । যদিও হিন্দু ধর্মকে বৈদিক ধর্ম বলা হয় , তথাপি বর্তমান হিন্দু ধর্ম হলো বৈদিক ও পৌরাণিক মতের সংমিশ্রণ । যদিও পুরাণের শিক্ষার ফলে বৈদিক ধর্ম ঘোর পৌত্তলিকায় পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই, বৈদিক বা পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে পরবর্তি কিছু ধর্মের অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় , যাহার ভাষা ও রুপগত পার্থক্য থাকলেও ভাবগত পার্থক্য তেমন নাই ।
নিম্নলিখিত বিষয়সমুহে অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় । যথা--
১, ঈশ্বর এক --একমেবাদ্বিতীয়ম( লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ।
২, বিশ্ব- জীবের আত্মাসমুহ এক সময়ের সৃষ্টি ।
৩ , মরণান্তে পরকাল এবং ইহকালের কর্মফল পরকালে ভোগ ।
৪ , পরলোকের দুইটি বিভাগ --স্বর্গ ও নরক (বেহেস্ত - দোজখ ) ।
৫ , স্বর্গ সাত ভাগে এবং নরক সাত ভাগে বিভক্ত ।
৬ , স্বর্গ বাগানময় এবং নরক অগ্নিময় ।
৭ , স্বর্গ ঊর্ধদিকে অবস্থিত ।
৮ , পুণ্যবানদের স্বর্গপ্রাপ্তি এবং পাপীদের নরকবাস ।
৯ , যমদূত (আজ্রাইল ফেরেস্তা ) কর্তৃক মানুষের জীবন হরণ ।
১০ , ভগবানের স্থায়ী আবাস ‘ সিংহাসন’ (আরশ )
১১ , স্তব - স্তূতিতে ভগবান সন্তূষ্ট ।
১২ , মন্ত্র (কেরাত ) দ্বারা উপাসনা করা ।
১৩ , মানুষ জাতির আদি পিতা একজন মানুষ - মনু (আদম )।
১৪ , নরবলি হইতে পশুবলির প্রথা প্রচলন ।
১৫ , বলিদানে পুণ্যলাভ (কোরবানী )।
১৬ , ঈশ্বরের নামে উপবাসে পুণ্যলাভ (রোজা) ।
১৭ , তীর্থভ্রমনে পাপের ক্ষয় -- কাশী - গয়া ( মক্কা - মদিনা )।
১৮ , ঈশ্বরের দুত আছে (ফেরেস্তা ) ।
১৯ , জানু পাতিয়া উপাসনায় বসা ।
২০ , সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত (সেজদা ) ।
২১ , করজোড়ে প্রার্থনা (মোনাজাত ) ।
২২ , নিত্য উপাসনার নির্দিষ্ট স্থান --মন্দির (মসজিদ) ।
২৩ , মালা জপ (তসবিহ্ পাঠ ) ।
২৪ , নির্দিষ্ট সময়ে উপাসনা করা - ত্রিসন্ধ্যা (পাঁচ ওয়াক্ত ) ।
২৫ , ধর্মগ্রন্থপাঠে পুণ্য লাভ ।
২৬ , কার্যারম্ভে ঈশ্বরের নামোচ্চারণ - নারায়ণং সমস্কৃত্যং নবৈষ্ণব
নরোত্তমম (বিসমিল্লা-হির রাহমানির রাহিম ) ।
২৭ , গুরুর নিকট দীক্ষা (তাওয়াজ ) ।
২৮ , স্বর্গে গণিকা আছে - গন্ধর্ব, কিন্নরী, অপ্সরা (হুর - গেলমান ) ।
২৯ , উপাসনার পূর্বে অঙ্গ ধৌত করা (অজু ) ।
৩০ , দিগনির্ণয়পূর্বক উপাসনায় বসা বা দাঁড়ান ।
৩১ , পাপ -পুণ্য পরিমাপে তৌলযন্ত্র ব্যবহার (মিজান )।
৩২ , স্বর্গগামিদের নদী পার হওয়া -বৈতরণী (পোলছিরাত ) ইত্যাদি ।
আরো কিছু সাদৃশ্য -যথা মিথ্যা বলিবেনা ,চুরি করিবে না মাতা -পিতার সেবা করিবে ইত্যাদি বিষয় ও পরের ধর্ম গুলোতে আছে । তাই প্রশ্ন আসে পূর্বের ধর্মের অনেক কিছু , পরের আবির্ভাব হওয়া ধর্মে ও দেখা যায় কি জন্যে ? কিন্তু ইহা নিশ্চিত যে , পূর্ববর্তীগণের নিকট থেকে ই পরবর্তীগণ গ্রহন করিয়াছে । তাহলে সব ধর্মের উৎস কী এক ?
,
ইহুদি ধর্মের কিছু কাহিনী আগ্রহীদের জন্যে উল্লেখিত হলো, ‘সৃষ্টি রহস্য’ বই থেকে ।
পবিত্র বাইবেল গ্রন্থের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) যাঁহারা মানিয়া চলেন, তাঁহাদিগকে বলা হয় ইহুদি, তাঁদের ঐশ্বরিক গ্রন্থের নাম তৌরিত ও জব্বুর, মুসলমানরা যাহাকে তাউরাত জব্বুর কেতাব বলেন ।
ইস্রাইল বংশীয় হজরত মূসা(আঃ) মিসর দেশে জন্ম গ্রহন করেন খ্রী. পূ. ১৩৫১ সালে এবং তূর পর্বতে খোদাতা’লার নূর দেখিতে, বাণী শুনিতে ও দশ আদেশ খচিত প্রস্তরফলক পান খ্রী.পূ.১২৮৫ সালে । অতঃপর ৫৪ বৎসর কাল স্বীয় ধর্মমত (ইহুদি ধর্ম ) প্রচার করিয়া নিবো পাহাড়ে দেহত্যাগ করেন খ্রী.পূ.১২৩১ সালে, এবং সুতরাং তৌরিত গ্রন্থের বর্তমান বয়স প্রায় ৩২৫০ বৎসর ।
ইহুদিদের মতে, একদা হজরত মুসা(আ) তূর পর্বতের চূড়ায় ভগবান জাভে (ইহুদিদের ঈশ্বর) এর দর্শন লাভ করেন ও তাঁহার বাণী শ্রবণ করেন এবং জাবে-এর স্বহস্তে লিখিত দশটি আদেশ সম্বলিত দুইখানা প্রস্তরফলক প্রাপ্ত হন । উহাই তৌরাত গ্রন্থের মূলসুত্র । অতঃপর বহুদিন যাবত বিভিন্ন সময়ে জাভের নিকট হইতে যে সমস্ত আদেশ-উপদেশ প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাহাও উক্ত গ্রন্থে স্থান পাইয়াছে ।
তৌরিত গ্রন্থের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এই ; --
১, ত্বকচ্ছেদ- অর্থাৎ পুরুষর লিঙ্গাগ্রের চর্ম কর্তন করা । ইহা ইহুদিদের জাতীয় চিহ্ন ।
২, খাদ্য ও অখাদ্য নির্ণয়--“ পশুগণের মধ্যে যে কোনো পশু সম্পর্ণ দ্বিখন্ড খুর বিশিষ্ট ও জাবর কাটে, তাহা, তবে শূকর ছাড়া, শূকর জাবর কাটে না তাই । জলজন্তুদের মধ্যে -ডানা ও আঁইশ বিশিষ্ট জন্তু তোমাদর খাদ্য । পক্ষীদের মধ্যে নিষেদ-ঈগল,কাক ইত্যাদি পায় ২১\২২ টা,
৩, অশুতা;-স্ত্রী সন্তান প্রসবের পর সাত দিন অশুচি থাকিবে…..রজস্বলা অবস্তায় সাত দিন অশুচি থাকিবে ইত্যাদী,
৪, রেতস্খলন--হলে সমস্ত শরীর ধৌত ও স্ত্রী সহবাসে উভয়ে জলে স্নান করিতে হইবে,
৫, বিবাহ নিষিদ্ধা নারী- তৌরাত গ্রন্থে নিম্নলিখিত আত্নীয়া রমণীগনের বিবাহ নিষিদ্ধ;
1, মাতা, 2, বিমাতা, 3, ভগিনী, 4, নাতিনী, 5, বৈমাত্র ভগিনী, 6, পিসী, 7, মাসী, 8,চাচী, 9, পুত্রবধু, 10, ভ্রাতৃবধূ, 11, স্ত্রীর নাতিনী, ( পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত) 12, স্ত্রীর কন্যা (পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত) 13, শশুড়ী ।
৬, অশৌচকালে যৌনমিলন নিষিদ্ধ,
৭, ঈশ্বরের নামের নিন্দায় প্রাণদন্ডের বিধান , ৮, খুনের বদলে খুন, ৯ ,সুদের নীতি-ভ্রাতার কাছ থেকে সুদ কিম্বা বৃদ্ধি না লওয়া ,১০, মানত করা যাইবে সদাপ্রভুর নামে ,
১১, উৎসর্গ- পশু দান,ইত্যাদী করা যাবে সদাপ্রভুর নামে, ১২, উত্তরাধিকার ,-বিধান ;-
“ তুমি উহাদের পিতৃকুলের ভ্রাতাদিগের মধ্যে উহাদিগকে স্বত্বাধিকার দিবে ও উহাদের পিতার অধিকার উহাদিগকে সমর্পণ করিবে । …..কেহ যদি অপুত্রক হইয়া মরে,তবে তাহার অধিকার কন্যকে দিবে ,কন্যা না থকলে, ভ্রাতৃগণকে তাহার অধিকার দিবে, ভ্রাতা না থাকিলে পিতৃব্যদিগকে, আর পিতৃব্য না থাকিলে তাহার গোষ্ঠীর নিকটস্থ জ্ঞাতিকে অধিকার দিবে”।
১৩ , বিজাতিবিদ্ধেষ-পরাজিতকে দয়া না করে আঘাত করার বিধান ,
১৪, বলিদানে কলঙ্কমূক্ত গরু বা মেষ হইতে হইবে , ১৫, ব্যাভিচারের ফল ;-অবৈধ মিলনের শাস্তি -প্রস্তরাঘাতে হত্যা , ধর্ষনের শাস্তি-কন্যার পিতাকে পঞ্চাশ রৌপ্য,( শেকেল)দিবে, মানভ্রষ্টাকে যাবজ্জীবন স্ত্রী হিসাবে রাখিতে হইবে ,বাধ্যতামূলক ভাবে ।
১৬, স্ত্রীত্যাগ- বিয়ের পর অনুপযুক্ত বা পসন্দ না হইলে , ত্যাগপত্র দিয়া বাড়ী থেকে বিদায় করার বিধান পুরুষ কে দেওয়া হইয়াছে । ১৭ , দশ আদেশ; -
1, আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য খোদা না থাকুক, 2 , তুমি খোদিত প্রতিমা বানাইও না , 3, তুমি অনর্থক ঈশ্বরের নাম লইও না , 4 , বিশ্রামদিন পালন করিও , 5 , মাতাপিতাকে সমাদর করিও, 6 , নরহত্য করিও না , 7 , ব্যাভিচার করিও না , 8 , চুরি করিও না , 9 , প্রতিবেশীর বিরীদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না , 10 , প্রতিবেশীর গৃহে লোভ করিও না ।
বিখ্যাত দশ আদেশ ভুক্ত তৃতীয় আদেশটি কোনো কোনো মহলে বিস্ময় উৎপাদন করে বটে , কিন্তু অধুনা ঐ আদেশটি ব্যাপকভাবে ই প্রতিপালিত হইতেছে ।
চার্বাকীয় মত ;
-চার্বাক বৈদিক যুগের একজন দার্শনিক পণ্ডিত, এবং তিনি নাকি বৃহস্পতির শিষ্য ছিলেন । বৃহস্পতির
নিকট থেকে, প্রাপ্ত তাঁহার ঐ মতটিকে বলা হয় চার্বাক দর্শন । তাঁহার এই মতে--সচেতন দেহ ভিন্ন স্বতন্ত্র
আত্মা নাই, পরলোক নাই , সুখই পরম পুরুষার্থ, প্রত্যক্ষমাত্র প্রমান ; মৃত্তিকা, জল ,বায়ু , ও অগ্নি হইতে
সমস্ত পদার্থের উদ্ভব হইয়াছে ইত্যাদি । চার্বাক দর্শনের স্থূল মর্ম ;- ‘ যতদিন জীবন ধারণ করা যায় ,
ততদিন আপনার সুখের জন্য চেষ্টা করা বিধেয় । কারণ সকলকেই একদিন কালগ্রাসে পতিত হইতে
হইবে এবং মৃত্যুর পর এই দেহ ভস্মসাৎ হইয়া গেলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকিবেনা । পরলোক বলিয়া
কিছুই নাই, সুতরাং পারলৌকিক সুখলাভের প্রত্যাশায় ধর্মোপার্জনের উদ্দেশ্যে আত্মাকে ক্লেশ প্রদান করা
নিত্যন্ত মূঢ়ের কার্য । যে দেহ একবার ভস্মীভূত হয়, তাহার পুনর্জন্ম অসম্ভব । এই স্থুল দেহই আত্মা,
দেহাতিরিক্ত অন্য কোনো আত্মা নাই । ক্ষিতি, জল বহ্নি ও বায়ু --এই চারি ভূতের সম্মিলনে দেহের
উৎপত্তি । যেমন পীতবর্ণ হরিদ্রা ও শুভ্রবর্ণ চুনের সম্মিলনে রক্তিমার উদ্ভব হয় , অথবা যেমন
মাদকতাশূন্য গূড়-তণ্ডুলাদি হইতে সুরা প্রস্তুত হইলে উহা মাদক গুণযুক্ত হয় , সেই রূপ দেহের উৎপত্তি
হইলেই তাহাতে স্বভাবত চৈতন্যের বিকাশ হয় । প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান, অনুমানাদি প্রমান বলিয়া গন্য
নহে । উপাদেয় খাদ্য ভোজন, বস্ত্র পরিধান, স্ত্রীসম্ভোগ প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন সুখই পরম পুরুষার্থ । ..দুঃখ
ভোগ থাকবে, তবে দুঃখের ভয়ে সুখ পরিত্যাগ করা অনুচিত’ ।
“ প্রতারক ধুর্ত পণ্ডিতগণ আপনাদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরলোক ও স্বর্গ-নরকাদির কল্পনা করিয়া জনসমাজকে বৃথা ভীত ও অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে । বেদ অধ্যয়ন, অগ্নিহোত্র, দণ্ডধারণ, ভস্মলেপন প্রভৃতি বুদ্ধি ও পৌরুষশূন্য ব্যক্তিবৃন্দের উপজীবকা মাত্র ।
প্রতারক শাস্ত্রকারেরা বলে, যজ্ঞে যে জীবকে বলি প্রদান করা যায় , সেই জীবের স্বর্গলাভ হইয়া থাকে । উত্তম ,কিন্তু তবে তাহারা আপন মাতা-পিতাকে বলি প্রদান করিয়া তাহাদিগকে স্বর্গলাভের অধিকারী করে না কেন ? তাহা না করিয়া আপনাদের রসনাতৃপ্তির জন্য ছাগাদি অসহয় পশুকে বলি দেয় কেন ? এইরূপ মতা-পিতাকে স্বর্গগামী করাইতে পারিলে তজ্জন্য শ্রাদ্ধাদির প্রয়োজন হয় না । শ্রাদ্ধও ধূর্তদিগের কল্পনা । শ্রাদ্ধ করিলে যদি মৃত ব্যক্তির তৃপ্তি হয় , তবে কোনো ব্যক্তি বিদেশে গমন করিলে তাহাকে পাথেয় না দিয়া,তাহার উদ্দেশে বাটীতে কোনো ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইলেই তো তাহার তৃপ্তি হইতে পারে । যখন উহা হয় না, সুতরাং শ্রাদ্ধাদিকার্য কেবল অকর্মণ্য ব্রাহ্মণদিগের জীবনোপায় ব্যতীত আর কিছু নহে । বেদ --ভণ্ড, ধূর্ত রাক্ষস -এই ত্রিবিধ লোকের রচিত ।
স্বর্গ-নরকাদি ধূর্তের কল্পিত, আর পশুবধ ও মাংসাদি নিবেদনের বিধি রাক্ষসপ্রণীত । ‘অশ্বমেদ যজ্ঞে যজমানপত্নী অশ্বশিশ্ন গ্রহন করিবে’ ইত্যাদি ব্যবস্থা ভণ্ডের রচিত । সুতরাং এই বৃথাকল্পিত শাস্ত্রে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বিশ্বাস করিতে পারেন না । এই দেহ ভস্মীভূত হইলে তাহার আর পুনরাগমনের সম্ভাবনা নাই । তাই যতদিন বাঁচিয়া থাকা যায় , ততদিন সুখে কালহরণ করাই কর্তব্য । এই শরীর ব্যতীত আর কোনো আত্মা নাই। যদি থাকিত এবং দেহান্তর গ্রহনের ক্ষমতা থাকিত, তবে সে বন্ধু-স্বজনের স্নেহে বাধ্য হইয়া পুনর্বার ঐ দেহেই প্রবেশ করে না কি জন্য ? অতএব দেখা যাইতেছে--বেদ-শাস্ত্র সকলই অপ্রমাণ্য; পরলোক, স্বর্গ, মুক্তি সকলই অবান্তর ; অগ্নিহোত্র, ব্রহ্মচর্য, শ্রাদ্ধাদিকর্ম সমস্তই নিস্ফল । চার্বাক সেই বেদিক যুগেই এইসব অলীক কল্পনার বিরুদ্ধে অভিযান চালাইয়াছিলেন, তবে বিশাল আকার ধারণ করা সম্ভব হয় নাই ,কিন্তু ইহা নির্মূল হইয়া ও যায় নই । বস্তুত চার্বকীয় মতবাদ ছিল অভিজ্ঞতাভিত্তিক, যাহা পরবর্তীকালে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মতবাদের ভিত্তিরূপে স্বীকৃত । বর্তমান বিজ্ঞান জগতের অনেকেই বাহ্যত না হইলেও কার্যত চার্বাকীয় মতবাদের অনুসারী ।
সংস্কার ও কুসংস্কার এবং ‘ধর্ম’ নামের সূচনা প্রসঙ্গে (সৃষ্টি রহস্য বই থেকে)
কুসংসকার কি ?
অল্প কথায় উত্তর হলো, যুক্তিহীন বিশ্বাস বা অসার যুক্তির উপর প্রতিষ্টিত মতবাদে বিশ্বাস; এক কথায় --অন্ধবিশ্বাস । যেখানে কোনো বিষয় বা ঘটনা সত্য কি মিথ্যা, তাহা যাচাই করবার মতো জ্ঞানের অভাব, সেখানেই কুসংস্কারের বাসা। অসভ্য অর্ধসভ্য, অশিক্ষিত ও শিশু মনেই কুসংস্কারের প্রভাব বেশি । শিশু মনে কুসংস্কারের বীজ ছড়ায় তাদের পিতা মাতা ও গুরুজন, নানারূপ দেও , পরী ও ভূতের গল্প বলে, বাস্তব জগতে যার কোনো অস্তিত্ব নেই । এমন এক যুগ ছিলো, যখন মানুষ ছিলো তার জাতিগত জীবনে শিশু । সেই মানব সভ্যতার শিশুকালে তৎকালিন মোড়ল বা সমাজপতিরা যাহা বলতেন, জনসাধারণ তাহা অভ্রান্ত বলে বিশ্বাস ও মান্য করত ; সত্য - মিথ্যা বিচার না করে, এবং গুরুবাক্য শিরোধার্য মনে করে, সংস্কার না কুসংস্কার যাচাই না করেই তা সব মেনে চলতো ।
বিজ্ঞানীগণ বলেন, আমরা বাস করছি বিরাট এক বায়ুচাপের মধ্যে, যাহা আমরা টের পাই না । কেননা আমাদের শরীরের বাহিরে যেমন বায়ু আছে, ভিতরে তেমন বায়ু আছে, ফলে ঐ চাপ কাটাকাটি হয়ে যায় । বিশেষত জন্মবধি বায়ুচাপে বাস করে ঐ চাপ হয়ে গেছে আমাদের অভ্যাসাগত । তাই আমরা অনুভব করতে পারিনা যে, বায়ুর চাপ আছে।
বায়ুচাপের মতোই মানুষের অভ্যাসাগত কুসংস্কার । দূর অতীতের ধর্মবেত্তারা ছিলেন নানাবিধ কুসংস্কারপূর্ণ সমাজের বাশিন্দা । তাঁদের ভিতর ও বাহিরে ছিলো কুসংস্কার এবং জন্মাবধি কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বাস করে কিছুবা হয়েছিলো গা-সহা অভ্যাস । তাই অনেক ধর্মবেত্তাই কুসংস্কার কি ও কোনটি, তাহা অনুধাবন করতেই পারেন নাই । কাজেই কুসংস্কার বর্জনের ইচ্ছা থাকা সত্তেও কতক ধর্মবেত্তা বহুক্ষেত্রে ঝোপ কেটে, জঙ্গল রোপণ করে গছেন । এখন কোনো কুসংস্কারই কুসংস্কার বলে স্বীকৃত হয় না অনেক ক্ষেত্রে।
তবে ধর্মবেত্তারা সকলেই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন কুসংস্কার বর্জনের । তাই যে ধর্ম অপেক্ষাকৃত আধুনিক ও পরের, সেইধর্ম কুসংস্কারমুক্ত এবং যে ধর্ম পুরাতন, সেই ধর্ম কুসংস্কারে ভরপুর ।
প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের সহায়তায় যে মানব ইতিহাস প্রাপ্ত হওয়া গেছে, তাতে জানা যায়, জাতিগত জীবনের শৈশবে মানুষ ও ইতর জীবের আহার-বিহার ও মনোবৃত্তির বিশেষ
কোনো পার্থক্য ছিলো না । সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পার্থক্যটি ও প্রকট হয়েছে । তখনকার দিনে যেমন চলেছিলো পশুবৃত্তি দূরীকরণ অভিযান, অর্থাৎ মানুষের সমাজ সংস্কার , আবার তেমনই ইহার সহগামী হয়ে চলছিলো শত শত কুসংস্কার । যা হাজার হাজার বছর পরেও অনেক মনুষ ঐগুলোকেই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস ক’রে আসছে, আর
তখন থেকেই তৈরী হলো নিত্য-নৈমিত্তিক কর্মতালিকা বনাম ‘ধর্ম’ নামের সূচনা । হুমায়ুন আজাদের ভাষায়; আদিম মানুষের অন্ধ আদিম কল্পনা , আর পরবর্তি অনেকের সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার, কখনো কখনো মত্ততা, নানাভাবে বিধি বদ্ধ হয়ে নিয়েছে যে-বিচিত্র রূপ, তাই পরিচিত ধর্ম নামে, বার্ট্র্যান্ড রাসেলের ভাষায় , ‘ সব ধর্মই ক্ষতিকর ও অসত্য ‘ । তীর্থযাত্রা, পশুবলি ও উপবাস প্রায় সব ধর্মেই রয়েছে ; আরব কবি আল-মারি (৯৭৩--১০৫৭) লিখেছেন, ‘ দশ দিক থেকে মানুষ আসে পাথর ছুঁড়তে আর চুমো খেতে। কী অদ্ভুত কথা তারা বলে, মানুষ কি অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছে না সত্য’ । আর জালালউদ্দিন রুমি লিখেছেন, ‘ আমি পথ খুঁজি , তবে কাবা বা উপাসনালয়ের পথ নয় ,প্রথমটিতে দেখি একদল পৌত্তলিককে আর দ্বিতীয়টিতে একদল আত্নপূজারীকে’।
কিভাবে কুসংস্কার সত্যে পরিণত হয়, তার একটি দৃষ্টান্ত প্রাচীন হিব্রু জাতির রূপ কথার গ্রন্থ ‘ তালমুদিক’ শিক্ষা ।
প্রাচীন হিব্রু জাতির মধ্যে কতগুলি রূপকথা-উপকথা বা কাহিনী প্রচলিত ছিলো । সেই সব কাহিনীর ব্যক্তি বা স্বর্গদূতগণের নাম হয়তো বাইবেলে আছে, কিন্তু সেই নামের সূত্র ধ’রে (উপন্যাসের আকারে) কতগুলি পার্থিব ও অপার্থিব প্রাণীদের কল্পিত কাহিনী আর দীর্ঘকাল ধ’রে হিব্রুদের মুখে মুখে চলে আসছিলো । কালক্রমে ইহুদি পুরোহিত বা রাব্বিগণ ঐ কাহিনীগুলোকে সংকলন ক’রে বিরাট দুইখানা পুস্তক লেখেন । ঐ গ্রন্থদ্বয়ের নাম তালমুদ ও মিদ্রাস । যাহা রূপকথা-উপকথার অফুরন্ত ভাণ্ডার এবং কুসংস্কারের পাহাড় । বর্তমান জগতে যত রকম কুসংস্কার প্রচলিত আছে , বোধহয়, ঐ গ্রন্থ দুইখানাই তার কেন্দ্র । আর তালমুদে বর্ণিত কাহিনীগুলোর মূল সূত্র অর্থাৎ ব্যক্তি বা স্বর্গদূতগণের নাম বাইবেলে লিখিত থাকায় কেহ কেহ ঐসব কল্পিত কাহিনী গ্রহন ক’রেছে ধর্মীয় কাহিনী হিসাবে ,অর্থাৎ সত্য বলিয়া , পরবর্তিতে ,পরের ধর্মগুলোতে ইহা স্থান পেয়েছে সত্য ও ঐশ্বরিক ঘঠনা হিসাবে । আর এইভাবেই, কুসংস্কার, ধর্মীয় বিশ্বাসে পরবর্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বর্তমান রূপ গ্রহন করেছে বলে অনেকেরই বিশ্বাস ।
•
হিন্দু ধর্ম বা বৈদিক ধর্ম প্রসঙ্গে ;-(সত্যের সন্ধান বই থেকে নেওয়া )
ধর্ম গ্রন্থ বেদ হিন্দু বা বৈদিক ধর্ম অনুসারিদের মূল গ্রন্থ , তাদের একান্ত বিশ্বাস, ভগবান, অগ্নি, বায়ু , আদিত্য ও অঙ্গিরা , এই চার জন ঋষিদের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হইয়া,ঈশ্বর তাঁদের মুখ দিয়া, ঋক, সাম , যজু , ও অথর্ব নামক চারখানা বেদ প্রকাশ করেছেন । আবার কেহ কেহ বলেন; বেদ অনাদি অনন্ত ঈশ্বরর নিঃশ্বাসে সৃষ্ট ,কোনো মানষ ইহার রচিয়িতা নন। বেদ অপৌরুষেয় ।
হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত আছে । এই ধর্মের বর্তমান বয়স প্রায় ৫০০০বৎসর । মহর্ষি ব্যাস মন্ত্র সংকলন ও বিভাগ করেন, এবং ইঁহার রচিত মহাভারত ‘পঞ্চম বেদ’ নামে কথিত,এবং অষ্টাদশ পুরাণ ইঁহার রচিত বলে প্রসিদ্ব । এই পুরাণাদি গ্রন্থসমূহও হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলিয়া পরিগণিত হয় । যদিও হিন্দু ধর্মকে বৈদিক ধর্ম বলা হয় , তথাপি বর্তমান হিন্দু ধর্ম হলো বৈদিক ও পৌরাণিক মতের সংমিশ্রণ । যদিও পুরাণের শিক্ষার ফলে বৈদিক ধর্ম ঘোর পৌত্তলিকায় পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই, বৈদিক বা পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে পরবর্তি কিছু ধর্মের অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় , যাহার ভাষা ও রুপগত পার্থক্য থাকলেও ভাবগত পার্থক্য তেমন নাই ।
নিম্নলিখিত বিষয়সমুহে অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় । যথা--
১, ঈশ্বর এক --একমেবাদ্বিতীয়ম( লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ।
২, বিশ্ব- জীবের আত্মাসমুহ এক সময়ের সৃষ্টি ।
৩ , মরণান্তে পরকাল এবং ইহকালের কর্মফল পরকালে ভোগ ।
৪ , পরলোকের দুইটি বিভাগ --স্বর্গ ও নরক (বেহেস্ত - দোজখ ) ।
৫ , স্বর্গ সাত ভাগে এবং নরক সাত ভাগে বিভক্ত ।
৬ , স্বর্গ বাগানময় এবং নরক অগ্নিময় ।
৭ , স্বর্গ ঊর্ধদিকে অবস্থিত ।
৮ , পুণ্যবানদের স্বর্গপ্রাপ্তি এবং পাপীদের নরকবাস ।
৯ , যমদূত (আজ্রাইল ফেরেস্তা ) কর্তৃক মানুষের জীবন হরণ ।
১০ , ভগবানের স্থায়ী আবাস ‘ সিংহাসন’ (আরশ )
১১ , স্তব - স্তূতিতে ভগবান সন্তূষ্ট ।
১২ , মন্ত্র (কেরাত ) দ্বারা উপাসনা করা ।
১৩ , মানুষ জাতির আদি পিতা একজন মানুষ - মনু (আদম )।
১৪ , নরবলি হইতে পশুবলির প্রথা প্রচলন ।
১৫ , বলিদানে পুণ্যলাভ (কোরবানী )।
১৬ , ঈশ্বরের নামে উপবাসে পুণ্যলাভ (রোজা) ।
১৭ , তীর্থভ্রমনে পাপের ক্ষয় -- কাশী - গয়া ( মক্কা - মদিনা )।
১৮ , ঈশ্বরের দুত আছে (ফেরেস্তা ) ।
১৯ , জানু পাতিয়া উপাসনায় বসা ।
২০ , সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত (সেজদা ) ।
২১ , করজোড়ে প্রার্থনা (মোনাজাত ) ।
২২ , নিত্য উপাসনার নির্দিষ্ট স্থান --মন্দির (মসজিদ) ।
২৩ , মালা জপ (তসবিহ্ পাঠ ) ।
২৪ , নির্দিষ্ট সময়ে উপাসনা করা - ত্রিসন্ধ্যা (পাঁচ ওয়াক্ত ) ।
২৫ , ধর্মগ্রন্থপাঠে পুণ্য লাভ ।
২৬ , কার্যারম্ভে ঈশ্বরের নামোচ্চারণ - নারায়ণং সমস্কৃত্যং নবৈষ্ণব
নরোত্তমম (বিসমিল্লা-হির রাহমানির রাহিম ) ।
২৭ , গুরুর নিকট দীক্ষা (তাওয়াজ ) ।
২৮ , স্বর্গে গণিকা আছে - গন্ধর্ব, কিন্নরী, অপ্সরা (হুর - গেলমান ) ।
২৯ , উপাসনার পূর্বে অঙ্গ ধৌত করা (অজু ) ।
৩০ , দিগনির্ণয়পূর্বক উপাসনায় বসা বা দাঁড়ান ।
৩১ , পাপ -পুণ্য পরিমাপে তৌলযন্ত্র ব্যবহার (মিজান )।
৩২ , স্বর্গগামিদের নদী পার হওয়া -বৈতরণী (পোলছিরাত ) ইত্যাদি ।
আরো কিছু সাদৃশ্য -যথা মিথ্যা বলিবেনা ,চুরি করিবে না মাতা -পিতার সেবা করিবে ইত্যাদি বিষয় ও পরের ধর্ম গুলোতে আছে । তাই প্রশ্ন আসে পূর্বের ধর্মের অনেক কিছু , পরের আবির্ভাব হওয়া ধর্মে ও দেখা যায় কি জন্যে ? কিন্তু ইহা নিশ্চিত যে , পূর্ববর্তীগণের নিকট থেকে ই পরবর্তীগণ গ্রহন করিয়াছে । তাহলে সব ধর্মের উৎস কী এক ?
,
ইহুদি ধর্মের কিছু কাহিনী আগ্রহীদের জন্যে উল্লেখিত হলো, ‘সৃষ্টি রহস্য’ বই থেকে ।
পবিত্র বাইবেল গ্রন্থের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) যাঁহারা মানিয়া চলেন, তাঁহাদিগকে বলা হয় ইহুদি, তাঁদের ঐশ্বরিক গ্রন্থের নাম তৌরিত ও জব্বুর, মুসলমানরা যাহাকে তাউরাত জব্বুর কেতাব বলেন ।
ইস্রাইল বংশীয় হজরত মূসা(আঃ) মিসর দেশে জন্ম গ্রহন করেন খ্রী. পূ. ১৩৫১ সালে এবং তূর পর্বতে খোদাতা’লার নূর দেখিতে, বাণী শুনিতে ও দশ আদেশ খচিত প্রস্তরফলক পান খ্রী.পূ.১২৮৫ সালে । অতঃপর ৫৪ বৎসর কাল স্বীয় ধর্মমত (ইহুদি ধর্ম ) প্রচার করিয়া নিবো পাহাড়ে দেহত্যাগ করেন খ্রী.পূ.১২৩১ সালে, এবং সুতরাং তৌরিত গ্রন্থের বর্তমান বয়স প্রায় ৩২৫০ বৎসর ।
ইহুদিদের মতে, একদা হজরত মুসা(আ) তূর পর্বতের চূড়ায় ভগবান জাভে (ইহুদিদের ঈশ্বর) এর দর্শন লাভ করেন ও তাঁহার বাণী শ্রবণ করেন এবং জাবে-এর স্বহস্তে লিখিত দশটি আদেশ সম্বলিত দুইখানা প্রস্তরফলক প্রাপ্ত হন । উহাই তৌরাত গ্রন্থের মূলসুত্র । অতঃপর বহুদিন যাবত বিভিন্ন সময়ে জাভের নিকট হইতে যে সমস্ত আদেশ-উপদেশ প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাহাও উক্ত গ্রন্থে স্থান পাইয়াছে ।
তৌরিত গ্রন্থের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এই ; --
১, ত্বকচ্ছেদ- অর্থাৎ পুরুষর লিঙ্গাগ্রের চর্ম কর্তন করা । ইহা ইহুদিদের জাতীয় চিহ্ন ।
২, খাদ্য ও অখাদ্য নির্ণয়--“ পশুগণের মধ্যে যে কোনো পশু সম্পর্ণ দ্বিখন্ড খুর বিশিষ্ট ও জাবর কাটে, তাহা, তবে শূকর ছাড়া, শূকর জাবর কাটে না তাই । জলজন্তুদের মধ্যে -ডানা ও আঁইশ বিশিষ্ট জন্তু তোমাদর খাদ্য । পক্ষীদের মধ্যে নিষেদ-ঈগল,কাক ইত্যাদি পায় ২১\২২ টা,
৩, অশুতা;-স্ত্রী সন্তান প্রসবের পর সাত দিন অশুচি থাকিবে…..রজস্বলা অবস্তায় সাত দিন অশুচি থাকিবে ইত্যাদী,
৪, রেতস্খলন--হলে সমস্ত শরীর ধৌত ও স্ত্রী সহবাসে উভয়ে জলে স্নান করিতে হইবে,
৫, বিবাহ নিষিদ্ধা নারী- তৌরাত গ্রন্থে নিম্নলিখিত আত্নীয়া রমণীগনের বিবাহ নিষিদ্ধ;
1, মাতা, 2, বিমাতা, 3, ভগিনী, 4, নাতিনী, 5, বৈমাত্র ভগিনী, 6, পিসী, 7, মাসী, 8,চাচী, 9, পুত্রবধু, 10, ভ্রাতৃবধূ, 11, স্ত্রীর নাতিনী, ( পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত) 12, স্ত্রীর কন্যা (পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত) 13, শশুড়ী ।
৬, অশৌচকালে যৌনমিলন নিষিদ্ধ,
৭, ঈশ্বরের নামের নিন্দায় প্রাণদন্ডের বিধান , ৮, খুনের বদলে খুন, ৯ ,সুদের নীতি-ভ্রাতার কাছ থেকে সুদ কিম্বা বৃদ্ধি না লওয়া ,১০, মানত করা যাইবে সদাপ্রভুর নামে ,
১১, উৎসর্গ- পশু দান,ইত্যাদী করা যাবে সদাপ্রভুর নামে, ১২, উত্তরাধিকার ,-বিধান ;-
“ তুমি উহাদের পিতৃকুলের ভ্রাতাদিগের মধ্যে উহাদিগকে স্বত্বাধিকার দিবে ও উহাদের পিতার অধিকার উহাদিগকে সমর্পণ করিবে । …..কেহ যদি অপুত্রক হইয়া মরে,তবে তাহার অধিকার কন্যকে দিবে ,কন্যা না থকলে, ভ্রাতৃগণকে তাহার অধিকার দিবে, ভ্রাতা না থাকিলে পিতৃব্যদিগকে, আর পিতৃব্য না থাকিলে তাহার গোষ্ঠীর নিকটস্থ জ্ঞাতিকে অধিকার দিবে”।
১৩ , বিজাতিবিদ্ধেষ-পরাজিতকে দয়া না করে আঘাত করার বিধান ,
১৪, বলিদানে কলঙ্কমূক্ত গরু বা মেষ হইতে হইবে , ১৫, ব্যাভিচারের ফল ;-অবৈধ মিলনের শাস্তি -প্রস্তরাঘাতে হত্যা , ধর্ষনের শাস্তি-কন্যার পিতাকে পঞ্চাশ রৌপ্য,( শেকেল)দিবে, মানভ্রষ্টাকে যাবজ্জীবন স্ত্রী হিসাবে রাখিতে হইবে ,বাধ্যতামূলক ভাবে ।
১৬, স্ত্রীত্যাগ- বিয়ের পর অনুপযুক্ত বা পসন্দ না হইলে , ত্যাগপত্র দিয়া বাড়ী থেকে বিদায় করার বিধান পুরুষ কে দেওয়া হইয়াছে । ১৭ , দশ আদেশ; -
1, আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য খোদা না থাকুক, 2 , তুমি খোদিত প্রতিমা বানাইও না , 3, তুমি অনর্থক ঈশ্বরের নাম লইও না , 4 , বিশ্রামদিন পালন করিও , 5 , মাতাপিতাকে সমাদর করিও, 6 , নরহত্য করিও না , 7 , ব্যাভিচার করিও না , 8 , চুরি করিও না , 9 , প্রতিবেশীর বিরীদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না , 10 , প্রতিবেশীর গৃহে লোভ করিও না ।
বিখ্যাত দশ আদেশ ভুক্ত তৃতীয় আদেশটি কোনো কোনো মহলে বিস্ময় উৎপাদন করে বটে , কিন্তু অধুনা ঐ আদেশটি ব্যাপকভাবে ই প্রতিপালিত হইতেছে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন